Ajker Patrika

আবাসিক হলের আসন বণ্টনে জটিলতা, আগুন জ্বালিয়ে ছাত্রীদের বিক্ষোভ

জাবি প্রতিনিধি
আবাসিক হলের আসন বণ্টনে জটিলতা, আগুন জ্বালিয়ে ছাত্রীদের বিক্ষোভ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের জন্য নবনির্মিত আবাসিক হলের আসন বণ্টনে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। এতে গতকাল বুধবার (১৬ নভেম্বর) রাত ১১টায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন ফজিলাতুন্নেছা হলের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। 

বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় নতুন হলের আসন বিন্যাসে অগ্রাধিকারের দাবিতে মতবিনিময় সভা করেন হল প্রভোস্ট। কিন্তু ছাত্রীরা ৫টি দাবি উত্থাপন করলে হল প্রশাসন মানতে অপারগতা প্রকাশ করে। ফলে ছাত্রীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। 

মেয়েদের লিখিত পাঁচটি দাবির মধ্যে রয়েছে, আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে ফজিলাতুন্নেসা হলের আবাসন স্থানান্তর নিশ্চিত করা, প্রথম উদ্বোধনকৃত হলের নাম ‘ফজিলাতুন্নেসা’ রাখা, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ফজিলাতুন্নেছার সকল ছাত্রীদের আবাসন নিশ্চিত করে, সকল ছাত্রীদের একসঙ্গে স্থানান্তর করা এবং অতিসত্বর দাবির প্রেক্ষিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো। 

ফজিলাতুন্নেছা হলের ৪৪ ব্যাচের ছাত্রী মুমু বলেন, ‘প্রতিটি হল থেকে ১০০ জন করে নতুন হলে স্থানান্তর করার সিদ্ধান্তে আমাদের সঙ্গে প্রহসন করা হয়েছে। কেননা গত দুই বছর থেকে প্রতিশ্রুতি শুনছি আমাদের দুর্ভোগকে প্রাধান্য দিয়ে সর্বপ্রথম এই হলের ছাত্রীদের নতুন হলে ওঠানো হবে। কিন্তু হঠাৎ করে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে প্রত্যেক হল থেকে ছাত্রী নেওয়া হবে। যা আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।’ 

৪৯ ব্যাচের ছাত্রী তানজিনা তাবাসসুম তন্দ্রা বলেন, ‘নতুন হলে ওঠানোর কথা বলে এখানে দুই বছর ধরে কোনো ধরনের সংস্কার কাজ হয় না। এখানকার ওয়াশরুমগুলো ব্যবহারের অযোগ্য, রিডিং রুম-ডাইনিং রুমে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। তা ছাড়া স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ, বৃষ্টিতে পানির ছিটার কারণে এখানে থাকা আমাদের পক্ষে অসাধ্য হয়ে পড়েছে।’

৪৮ ব্যাচের অর্থনীতি বিভাগের মনি নাসরীন বলেন, ‘আমাদের অনেকেই চতুর্থ বর্ষে এসেও গণরুমে থাকতে হচ্ছে। এই অমানবিক পরিবেশ আমাদের অতিষ্ঠ করে তুলেছে।’ 

এসব বিষয়ে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক এ টি এম আতিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা আগেই শিক্ষার্থীদের যে দাবি তা প্রভোস্ট কমিটির সভায় উপস্থাপন করেছি। কিন্তু আমাদের শিক্ষার্থীরা যে সমস্যার ভুক্তভোগী সেই একই সমস্যায় একটু কম হলেও অন্য হলের শিক্ষার্থীরাও ভুক্তভোগী বলে জানিয়েছেন প্রভোস্টগণ। আসলে প্রত্যেকটি হলে গণরুম বন্ধ করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর এ সিদ্ধান্তের রিভিউ করতে গেলেও পুনরায় মিটিং করতে হবে। মিটিং হলে শিক্ষার্থীদের দাবি তুলে ধরা হবে।’ 

এর আগে সোমবার (১৪ নভেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের কাউন্সিল হলে নবনির্মিত ২টি হলের আসন বণ্টনের বিষয়ে অনুষ্ঠিত সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমের সভাপতিত্বে হল সমূহের প্রভোস্টগণ অংশ নেন। 

এতে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে প্রথম বর্ষের ক্লাস শুরু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি প্রতিটি হলের ২০১৬-১৭ থেকে ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের ১০০ জন শিক্ষার্থী নতুন হলে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। স্থানান্তরকৃত শিক্ষার্থীদের তালিকা আগামী ২২ নভেম্বরের মধ্যে শিক্ষা শাখায় জমা দিতে বলা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ উল হাসান বলেন, ‘আমাদের যে সিদ্ধান্ত এটা উপাচার্য কোনো একক সিদ্ধান্ত নেয়নি, প্রভোস্ট কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে গেলে পুনরায় প্রভোস্ট কমিটির সভায় তা করতে হবে। এটুকু সময় তো আমাদের দিতে হবে।’

নবনির্মিত আবাসিক হলের আসন বণ্টনে এই বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরাপ্রক্টর আরও জানান, ‘এখন আমাদেরকে হয় নতুন হল উদ্বোধন পেছাতে হবে অথবা গৃহীত সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন করতে হবে। যদি সব হল উদ্বোধনের জন্য দেরি করতে হয় তবে গণরুমের মধ্য দিয়েই প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু করতে হবে। আমরা গণরুম কখনোই চাই না। আর এখানে শিক্ষার্থীরা হলের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬০০ জনের কথা বলেও তা প্রকৃতপক্ষে ৩০০ জনের কাছাকাছি।’ 

এদিকে ছাত্রীদের বিক্ষোভ প্রদর্শনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আরও উপস্থিত হন প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হেল কাফি, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মোহা. মুজিবুর রহমান, সুফিয়া কামাল হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মোতাহার হোসেনসহ প্রমুখ। রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করেন শিক্ষকেরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত