Ajker Patrika

কারাগারে দল গঠনের পর মহাসড়কে ডাকাতি করতেন তাঁরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৪ জুলাই ২০২২, ১৭: ৪৮
কারাগারে দল গঠনের পর মহাসড়কে ডাকাতি করতেন তাঁরা

রংপুর ও গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় গত পাঁচ বছর ধরে ডাকাতি করে আসছিল সংঘবদ্ধ একটি ডাকাত চক্র। প্রথমে চুরি ও ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত ছিল চক্রের সদস্যরা। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর এই চক্রের সদস্যদের পরিচয় হয় কারাগারে। এরপর কারাগার থেকেই গড়ে তোলে ডাকাত চক্র। পরিকল্পনা করা হয় বড় ডাকাতির। ডাকাতির প্রস্তুতির সময় এই চক্রের ৯ সদস্যকে গাজীপুর থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।

র‍্যাব বলছে, ডাকাত চক্রটিতে ১০-১২ জন সদস্য রয়েছে। চক্রের সদস্যরা আগে বিভিন্ন পেশায় যুক্ত থাকলেও কারাগারে গিয়ে হয়ে ওঠে পেশাদার ডাকাত। 

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন মো. শহিদুল ইসলাম (৩৪), মো. আয়নাল মিয়া ওরফে আয়নাল হক (৩৯), মো. আন্ডু মিয়া (৫৭), মো. আজিজুল ইসলাম ওরফে আইনুল (৩২), উজ্জ্বল চন্দ্র মহন্ত (২৭), মো. শাহিন ওরফে সজীব (৩৩), মো. শহিদ (৩৮), মো. রনি সরকার (২৪) ও মো. আব্দুল হাকিম ওরফে গাটু ওরফে আব্দুল গাটু মিয়া (৪০)। 

এ সময় তাঁদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটার গান, একটি ম্যাগাজিন, দুইটি পিস্তলের গুলি, দুটি ওয়ান শুটারগানের গুলি, দুটি ছুরি, একটি রামদা, একটি দা, পাঁচটি গামছা জব্দ করা হয়। 

আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাব-১-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন। 

র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া ডাকাত দলের সদস্যরা। ছবি: আজকের পত্রিকার‍্যাব কর্মকর্তা বলেন, ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি, ছিনতাই চক্রের তৎপরতা সম্প্রতি বেড়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল রোববার রাতে র‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‍্যাব-১-এর আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গাজীপুরের গাছা থানার ঝাঁজর এলাকায় অভিযান চালিয়ে আন্তজেলা ডাকাত দলের ৯ সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। 

কর্নেল মোমেন বলেন, এই চক্রের সদস্যসংখ্যা আনুমানিক ১০-১২ জন। এ ডাকাত চক্রের সর্দার শহিদুল ইসলাম। তাঁর অন্যতম সহযোগী আন্ডু মিয়া ও আয়নাল মিয়া, যাঁরা ডাকাতির পরিকল্পনা ও অন্যান্য ডাকাতদের সংঘবদ্ধ করে থাকেন। তাঁরা পাঁচ বছর ধরে রংপুর এবং গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করে আসছিলেন। প্রথমে তাঁরা চুরি ও ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত থাকলেও বিভিন্ন দফায় জেলে থাকার কারণে গত কয়েক বছর ডাকাতির পেশায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়েন। 

গ্রেপ্তার শহিদুল ইসলামকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, ডাকাত চক্রের মূল হোতা শহিদুল আগে রিকশা চালাতেন। পরবর্তী সময়ে সহজলভ্য ও বেশি অর্থের লোভে ডাকাতির পেশায় জড়িয়ে পড়েন। তাঁরা সাধারণত প্রতি মাসে দুই থেকে তিনবার ছয় থেকে নয়জন দলে সংগঠিত হয়ে প্রথম দিকে রংপুর ও পরে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় সড়ক-মহাসড়কে ডাকাতি করতেন। ডাকাতির কৌশল হিসেবে তাঁরা সড়কগুলোর নির্জন স্থানে রাতের আঁধারে গাছ কেটে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতেন। পরে তাঁরা ইজিবাইক, অটোরিকশা, সিএনজি, মোটরসাইকেল বা ছোট পিকআপসহ ছোট আকারের যানবাহনকে টার্গেট করে অস্ত্রের মুখে ভুক্তভোগীদের জিম্মি করে ডাকাতি করতেন। তাঁর বিরুদ্ধে ডাকাতি, ডাকাতির প্রস্তুতি, ধর্ষণসহ ছয়টি মামলা রয়েছে। 

আবদুল্লাহ আল মোমেন বলেন, গ্রেপ্তার আয়নাল মিয়া ডাকাত সর্দারের অন্যতম সহযোগী ও ডাকাত দলের জন্য গাজীপুরের গাছা থানার ঝাঁজর এলাকায় একটি অস্থায়ী আবাসস্থল ঠিক করেছিলেন। তিনি দীর্ঘ পাঁচ বছর চুরি ও ডাকাত চক্রের সঙ্গে জড়িত। আগে পেশায় একজন অটোরিকশাচালক ছিলেন। তিনি অধিক অর্থের আশায় ছোট ছোট চুরির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। পরে একই এলাকার ডাকাত চক্রের সর্দার শহিদুল ইসলামের সঙ্গে পরিচয়ের পর ডাকাত চক্রে জড়িয়ে পড়েন। আইনালের বিরুদ্ধে চুরি, ডাকাতিসহ চারটি মামলা রয়েছে। 

 ডাকাত দলের কাছ থেকে জব্দ করা দেশি-বিদেশি অস্ত্র। ছবি: আজকের পত্রিকার‍্যাব-১-এর অধিনায়ক বলেন, গ্রেপ্তার আন্ডু মিয়া ডাকাত সর্দারের অন্যতম সহযোগী ও পরামর্শদাতা। তিনি ১৯৯৫ সাল থেকে চুরি ও ডাকাতির চক্রের সঙ্গে জড়িত। এর আগে তিনি পেশায় একজন চা-দোকানি ছিলেন। আগে তিনি অন্য এক ডাকাত দলের সর্দার খোকন মিয়ার সঙ্গে ডাকাতি করলেও পরে খোকন মিয়া ২০১৮ সালে ডাকাতির মামলায় জেলে গেলে তিনি শহিদুলের ডাকাত দলের সঙ্গে যোগ দেন। দীর্ঘদিন ধরে ডাকাতির পেশায় জড়িত থাকায় তিনি সাধারণত এই ডাকাত চক্রের পরামর্শদাতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা ও ডাকাতিসহ চারটি মামলা রয়েছে। 

র‍্যাব কর্মকর্তা জানান, গ্রেপ্তার শহিদ এই ডাকাত চক্রের সঙ্গে তিন বছর ধরে জড়িত। তিনি পেশায় অটোরিকশাচালক হলেও নিজ এলাকায় কুখ্যাত চোর হিসেবে পরিচিত। এই ডাকাত চক্রে তিনি ডাকাতির পর পলায়ন পরিকল্পনাকারী ও পলায়নে সহায়তার জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা করতেন। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা, চুরিসহ ১২টি মামলা রয়েছে। এ ছাড়া ডাকাত চক্রের সদস্য শাহিনের বিরুদ্ধে দস্যুতাসহ দুটি, উজ্জ্বলের বিরুদ্ধে অস্ত্র মামলাসহ দুটি, আজিজুলের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতনের একটি, আব্দুল হাকিম এবং রনি সরকারের বিরুদ্ধে চুরির একটি করে মামলা রয়েছে বলে জানান কর্নেল মোমেন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত