Ajker Patrika

শতবর্ষের আলোয় আলোকিত ঢাবি, গণরুমের অন্ধকারে আক্ষেপ

ফারুক ছিদ্দিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
আপডেট : ০২ ডিসেম্বর ২০২১, ২৩: ১১
শতবর্ষের আলোয় আলোকিত ঢাবি, গণরুমের অন্ধকারে আক্ষেপ

প্রতিষ্ঠার শতবর্ষপূর্তি উদযাপন করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। শতবর্ষপূর্তি উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ২০ কোটি টাকা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে ১ ডিসেম্বর উৎসবের উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ।

শতবর্ষ উপলক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, কলা ভবন, ভিসির বাসভবন, প্রশাসনিক ভাবন, মল চত্বর, সবুজ চত্বর এবং আবাসিক হলগুলোতে করা হয়েছে আলোকসজ্জা।

শিক্ষার্থীরা শতবর্ষের অনুষ্ঠান উপভোগ করছেন। বিভিন্ন জায়গায় প্রিয় মানুষ, বন্ধুবান্ধব নিয়ে ঘুরছেন। স্মৃতি ধরে রাখতে চলছে সেলফি, গ্রুপ ছবি তোলা। এতো আনন্দের মধ্যে রয়েছে আক্ষেপও। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে ক্ষোভ।

অনেকেই লিখছেন, ১০০ বছরের ইতিহাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তার নিজস্ব স্বকীয়তায় প্রশাসনিকভাবে হলে হলে সিট বরাদ্দ দিতে পারেনি। তাহলে এতো বাজেট অর্থহীন! সুষ্ঠু, সুন্দর শিক্ষা ও গবোষণার পরিবেশ তৈরি হয়নি। সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠনের লেজুড়বৃত্তির রাজনীতির ফসল নিপীড়নমূলক গণরুম ও গেস্টরুম কালচার। এ ছাড়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দুপুর গড়িয়ে গেলেও মধ্যহ্নভোজের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় আক্ষেপ প্রকাশ করছেন শিক্ষার্থীরা। এ নিয়ে শিক্ষার্থীরা ফেসবুকে ট্রল করছেন, মিম প্রকাশ করছেন।

এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) অংশগ্রহণ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষের অনুষ্ঠান অসম্পূর্ণ বলে মন্তব্য করে অনুষ্ঠান বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন  বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর। 

প্রথম বর্ষের গণরুমের একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় আজকের পত্রিকার এ প্রতিবেদকের। তাঁরা গাদাগাদি করে চার জনের কক্ষে ২৫-৩০ জন থাকায় পড়াশোনা, ঘুম ও বিশ্রামের সুষ্ঠু পরিবেশ থাকে না বলে আক্ষেপ করেন। 

শর্তবর্ষপূর্তি আয়োজনে রঙিন আলোকসজ্জায় আলোকিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের গণরুমের এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমরা অনেক স্বপ্ন, আশা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। আমার বাবা-মায়ের অনেক স্বপ্ন ছিল আমাকে মানুষের মতো মানুষ করবে। কিন্তু এখানে এসে আমার স্বপ্নভঙ্গ শুরু হয়েছে। আমরা শতবর্ষের সাক্ষী। আমাদের আশা ছিল, শতবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপ নেবে। কিন্তু তা আমরা দেখতে পাচ্ছি না।’

মাস্টার দা সূর্যসেন হলের গণরুমের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমাদের সিনিয়ররা আমাদেরকে রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে। দীর্ঘদিন ধরে চলমান থাকা গণরুম, গেস্টরুম সংস্কৃতি থেকে শতবর্ষে বেরিয়ে আসতে পারেনি এ বিশ্ববিদ্যালয়।’

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘যে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মাথা গোঁজার জায়গা দিতে পারে না, সে বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ দিয়ে আমি কী করবো!’

হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের গণরুমের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘শতবর্ষ উপলক্ষে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ে লাইটিং করা হয়েছে। অনেক বড় বড় অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। কিন্তু আমাদের আবাসন সংকট দূর করতে পারেনি।’ তিনি এটিকে শতবর্ষের আলোয় আলোকিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অন্ধকার’ হিসেবে উল্লেখ করেন। 

উল্লেখ্য, ডিসেম্বরের ৩ ও ৪ তারিখে দেশের শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ এবং সংগঠক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের নিয়ে বিকেলে আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। ১২ ডিসেম্বর বেলা ১১টায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একটি বর্ণাঢ্য র‍্যালি অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে বের হয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শেষ হবে। ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৭টায় মহান বিজয় দিবসে উপাচার্যের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে লেজার শোর আয়োজন করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত