Ajker Patrika

শিবচরে মোবাইল হাতিয়ে নিতে এক শিশুকে হত্যা

শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি
শিবচরে মোবাইল হাতিয়ে নিতে এক শিশুকে হত্যা

মাদারীপুর জেলার শিবচরে মোবাইল সেট হাতিয়ে নিতে রতন মোল্লা (৮) নামের এক শিশুকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনায় পৃথক স্থানে নিয়ে সোহান (৯) নামের আরেক শিশুকে গলায় বৈদ্যুতিক তার পেঁচিয়ে হত্যা চেষ্টা করা হয়। মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১২টার দিকে পদ্মাসেতুর অ্যাপ্রোচ সড়কের কাঁঠালবাড়ি সংলগ্ন সীমানা এলাকার নির্জন জায়গা থেকে ওই শিশুর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। 

এ ঘটনায় জড়িত মেহেদী হাসান কায়েস (১৯) নামের এক যুবককে আটক করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিতেই পরিকল্পিত ভাবে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। আটককৃত মেহেদি হাসান উপজেলার দ্বিতীয়াখন্ড ইউনিয়নের কাচাই মাতবরের কান্দি গ্রামের বিদ্যুৎ মিয়ার ছেলে। গত দেড় মাস ধরে কদিরপুর ইউনিয়নের তাহের আকনের চরকান্দী গ্রামে নানা আনছু বেপারির বাড়িতে থাকছে সে। 

শিবচর থানা ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মেহেদী হাসান অনেক দিন ধরেই নানা বাড়িতে থাকছে। সেই সুবাদে প্রতিবেশী জসিম মোল্লার শিশুপুত্র রতন এবং নাসির শিকদারের শিশুপুত্র সোহানের সঙ্গেই খেলাধুলা করে আসছিল। তারা প্রায় প্রতিদিনই এক সঙ্গে সোহানদের মোবাইলে গেমস খেলাসহ নানা খেলাধুলা করত। ঘটনার দিন মঙ্গলবার বিকেলে প্রথমে মোবাইলে লুডু খেলা এবং ভিডিও করা নিয়ে দুই শিশুর সঙ্গে একটু বাগ্বিতণ্ডা হয়। মেহেদীকে গালিও দেয় সোহান ও রতন। এই ঘটনা এবং সোহানের মোবাইল ফোনটি হাতিয়ে নিতে পরিকল্পনা করে মেহেদী হাসান। 

মঙ্গলবার সন্ধ্যার আগে কাঁঠালবাড়ি এলাকায় রেস্টুরেন্টে খেতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে রতন ও সোহানকে নিয়ে বের হয় মেহেদী। সন্ধ্যার সময় অ্যাপ্রোচ সড়কের কাঁঠালবাড়ি সীমানা ও নাওডোবা এলাকার মধ্যবর্তী নির্জন স্থানে নিয়ে যায় ওদের। কৌশলে সোহানের হাত থেকে মোবাইলটিও নিয়ে নেয় সে। সেখানে যাওয়ার পর সোহানকে চানাচুর ও পানি আনতে ১০০ টাকা দিয়ে দোকানে পাঠায়। সোহান যেতেই রতনকে গলায় বেল্ট পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে সে। পরে রাস্তার পাশেই ঝোপঝাড়ের মধ্যে রতনের মৃতদেহ ফেলে দেয়। প্রায় বিশ মিনিট পর সোহান ফিরে এসে রতনকে দেখতে না পেয়ে জিজ্ঞেস করলে মেহেদী জানায়, ‘রতন বাড়ি চলে গেছে।’ 

ওখান থেকে সোহানকে নিয়ে বাংলাবাজার ঘাট এলাকা নিয়ে যায় মেহেদী। অন্ধকারে নির্জন স্থানে দাঁড়িয়ে সোহানের গলায় বৈদ্যুতিক তার পেঁচিয়ে শ্বাসরোধের চেষ্টা করলে সোহান চিৎকার দেয়। আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে মেহেদী দ্রুত পালিয়ে যায়। 
 
খবর পেয়ে সহকারী পুলিশ সুপার (শিবচর সার্কেল) মো. আনিসুর রহমান, ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিরাজ হোসেন, পরিদর্শক (তদন্ত) আমির হোসেন সেরনিয়াবাতসহ পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে মেহেদীকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি স্বীকার করে। মেহেদীকে সঙ্গে নিয়ে রাত ১২টার দিকে কাঁঠালবাড়ি এলাকার অ্যাপ্রোচ সড়কের পাশ থেকে রতনের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এবং লুকিয়ে রাখা মোবাইল ফোন জব্দ করে। 

নিহত রতনের মা জরিনা বেগম বলেন, ' বিকেলে ৫টার দিকে দেখলাম রতন ও সোহান আমাদের বাড়ির পাশে নাচতেছে আর মেহেদী সোহানের মোবাইল দিয়ে ভিডিও করছে। এ সময় আমি ওখানে গেলে ওরা ওখান থেকে চলে যায়। এরপরে আমি বাড়ির কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। পরে ওদের কারো খোঁজ পাইনি। সন্ধ্যা হয়ে গেলে আমরা রতন ও সোহানকে না পেয়ে দুই পরিবারের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করি। পরে জানতে পারি মেহেদী আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছে।' 

শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মিরাজ হোসেন বলেন, ‘মোবাইলে খেলা নিয়ে বাগবিতণ্ডা এবং ওই মোবাইলটি হাতিয়ে নিতেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয় বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গেছে। আটককৃত মেহেদী হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকারও করেছে। অপ্পো ব্রান্ডের মোবাইল সেটটিও আমরা উদ্ধার করি। এ ঘটনায় নিহত রতনের বাবা জসিম মোল্লা বাদী হয়ে শিবচর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেছে।’

সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (শিবচর সার্কেল) মো. আনিসুর রহমান জানান, ‘মঙ্গলবার রাত দশটার দিকে কুতুবপুরে এক শিশু নিখোঁজের খবর পাই। অপর শিশু সোহানকে নিয়ে তার পরিবার আমাদের কাছে আসে এবং বিস্তারিত জানায়। সোহানের দেওয়া তথ্যে আমরা মেহেদীকে আটক করি। সে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছে। তার দেওয়া তথ্যমতে রতন নামের ৮ বছর বয়সী শিশুর লাশ অ্যাপ্রোচ সড়কের পাশ থেকে উদ্ধার করি।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গভর্নর আমাকে বাধ্যতামূলক ছুটি দেওয়ার কে: বিএফআইইউর প্রধান শাহীনুল

সেই রুহুল আমিনের বসুন্ধরা, বনানী ও উত্তরার জমিসহ ৫০০ কোটি টাকার সম্পত্তি ক্রোক

ছাত্রীকে তিন দিন আটকে রেখে ধর্ষণ, গ্রাম্য সালিসের মাধ্যমে বিয়ে

ঠাকুরগাঁওয়ের ৩টি আসনেই জয়ী হবে জামায়াত: মাওলানা হালিম

কেশবপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় স্বর্ণের কারিগরসহ দুই ব্যক্তি নিহত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত