Ajker Patrika

‘না জেনেই’ রিকশাচালকদের উত্তাল আন্দোলন, অসাধু ইন্ধনের আভাস

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি
‘না জেনেই’ রিকশাচালকদের উত্তাল আন্দোলন, অসাধু ইন্ধনের আভাস

কোনো পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ব্যাটারিচালিত রিকশাচালকদের সড়ক অবরোধ, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া নিয়ে উত্তাল সাভারের নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক। তবে আন্দোলনে উপস্থিত হওয়া বেশির ভাগ রিকশাচালকই পরিষ্কার করে জানাতে পারেননি এই আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ও তাদের কি দাবি দাওয়া। প্রাথমিক তথ্যমতে, এ ঘটনায় থানা-পুলিশের সদস্যসহ প্রায় ১৫ জন আহত হয়েছেন। উদ্দেশ্যহীন এই আন্দোলনের পেছনে অসাধু ইন্ধনদাতা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

আজ সোমবার সকাল থেকে আশুলিয়ার বাইপাইলে জমায়েত হতে থাকেন অত্র এলাকার অটো রিকশা চালকগণ। পরে মিছিল নিয়ে বাইপাইল থেকে পল্লিবিদ্যুৎ অভিমুখে যাত্রা করেন তারা। মাঝে পলাশবাড়ি এলাকায় পুলিশি বাধার মুখে পরে ইট পাটকেল ছোড়াছুড়ি শুরু হয়। 

সরেজমিনে দেখা যায়, পলাশবাড়ি এলাকায় সড়কে বিদ্যুতের খুঁটি আড়াআড়িভাবে রেখে সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়। এ সময় সড়কের মাঝে আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করতে থাকেন প্রায় হাজারো শ্রমিক ও চালক। সড়কের উভয় পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সময় আশুলিয়া থানার একজন এসআই ও দুজন এএসআইসহ প্রায় ৭ পুলিশ সদস্যসহ আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে এসআই শ্যামলেন্দু ঘোষ মাথায় মারাত্মক আঘাত পেয়ে শেখ ফজিলাতুন্নেছা কেপিজে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। 

এদিকে একেকজন রিকশাচালকের সঙ্গে কথা হলে তারা একেক ধরনের তথ্য দেন। আন্দোলনে অংশ নেওয়া একজন রিকশাচালক বলেন, ‘আমাদের রিকশা আটকায়, জরিমানা করে এই সব নিয়েই আন্দোলন।’ তাহলে মূল দাবি কি জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘আমরা বাঁধা ছাড়া রিকশা চালাতে চাই।’ এদিকে মহাসড়কে অটোরিকশা চলাচলের অনুমতি নেই তবুও কেন এই আন্দোলন, জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি। 

 রিকশাচালকদের সড়ক অবরোধ, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া নিয়ে উত্তাল সাভারের নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়ক।আরও কয়েকজন আন্দোলনরত রিকশাচালকের কাছে কারণ বা মূল দাবি সম্পর্কে জানতে চাইলেও মেলেনি সদুত্তর। তবে অনেকের সঙ্গেই কথা বলে জানা যায়-মহাসড়কে অটোরিকশা চলাচলের ওপর হাইওয়ে পুলিশের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে তারা রাস্তায় নেমেছেন। 

একাধিক রিকশাচালক বলেন, ‘আমরা রিকশা নিয়ে মহাসড়কে না উঠলেও হাইওয়ে পুলিশ আমাদের রিকশা ধরে ২৬০০ টাকা জরিমানা করেন। এক মাসে কয়েকবার করে জরিমানা আদায় করে পুলিশ। আমরা গরিব মানুষ, কয়দিন পরপর যদি ২৬০০ টাকা দেই, তাহলে আমরা কীভাবে চলব।’ 
 
একজন রিকশাচালক বলেন, ‘গত কালকে নাকি মাইক মারছে যে আজকে সমাবেশ। সব রিকশাওয়ালা আসছে এটা কি সমাধান করা যায়। এসে দেখি তো কিছু না।’

এদিকে গত শনিবার ৫টি দাবিতে প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করেছিল আশুলিয়া থানা রিকশাভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন। এ বিষয়ে সংগঠনটির আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল আলম মিন্টু বলেন, ‘পদ্মা সেতু উদ্বোধনের কারণে ২৫ জুনের সেই কর্মসূচি পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হয়। তবে তার আগে লিফলেট বিলি হওয়াতে সেই দিন কিছু চালক কর্মসূচি করার চেষ্টা করে। তবে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়।’ 

 রিকশাচালকদের সড়ক অবরোধ, অগ্নিসংযোগ, পুলিশের সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া নিয়ে উত্তাল সাভারের নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কখায়রুল আলম আরও বলেন, ‘পরে রোববার রাতে আমাদের সংগঠন বহির্ভূত কে বা কারা আশুলিয়ার বাইপাইলসহ আশপাশের এলাকাতে এমন কর্মসূচির কথা বলে মাইকিং করেন। পরে আজ সোমবার সকাল থেকে কয়েকশ’ রিকশাচালক জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। পরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। রিকশাচালকদের উদ্দেশ্যহীনভাবে এমন জনতাবদ্ধ করে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার পেছনে অসাধু উদ্দেশ্য রয়েছে।’ 

এ বিষয়ে আশুলিয়া থানা রিকশাভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে গত ২৫ জুন কার্যক্রম করার কথা ছিল। তবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিন হওয়ায় আমরা পুলিশের অনুরোধে কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করি। রিকশা চলাচলের জন্য আলাদা লেন নির্মাণ আমাদের মূল দাবি ছিল। পুলিশ হয়রানি করে, হেনস্তা করে, রেকার বিলের ঝামেলা এমন অভিযোগ আমাদেরও আছে। কিন্তু আমরা আজকে সড়কে আন্দোলন করিনি।’ 

ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনই করতে চেয়েছিলাম। কে বা কারা আজকে বিশৃঙ্খলা করেছে আমার জানা নেই। আমাদের কার্যক্রম এখনো স্থগিত। গতকাল পলাশবাড়ি, পল্লিবিদ্যুৎ, কাইচাবাড়ি এ সমস্ত এলাকায় মাইকিং করে আজকের আন্দোলনের ডাক দিয়েছে কেউ। কিন্তু কে বা কারা মাইকিং করেছে আমরাও খুঁজে পাইনি।’ 

এ ঘটনায় সাভার হাইওয়ে থানার পরিদর্শক (ওসি) আতিকুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সামনে যে পড়বে, সে ধরা পড়বে। একদিনে কি আর এ টু জেড ধরা যায়? কোনো সংগঠন হয়ত আছে তাদের সংগঠিত করতে পারে। যারা চাঁদা উঠায়। এমন কিছু থাকতে পারে যে, বিশেষ কোনো মহল বা বিশেষ কোনো সংগঠন যারা কমিটি করে শ্রমিকদের উসকে দিয়ে সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করতে পারে। কোনো একটা সমিতি আছে, শুনেছি ওরা নাকি চাঁদা তোলে। উদ্দেশ্য বা ফায়দা না থাকলে তো এমন কেউ করে না। আইনবহির্ভূত কোনো কার্যক্রম বা টাকা পয়সা লেনদেনের সঙ্গে হাইওয়ে থানার কেউ জড়িত নয়।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত