Ajker Patrika

মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম বদলের ব্যাখ্যা ও শিক্ষক–শিক্ষার্থী দ্বন্দ্বের অবসান চান চারুকলার শিক্ষার্থীরা

ঢাবি সংবাদদাতা
রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

নববর্ষের শোভাযাত্রার নাম ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’–এর পরিবর্তে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চারুকলার বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা। আয়োজক কমিটিকে নাম পরিবর্তনের যথার্থ কারণ দর্শানোর আহ্বান জানিয়েছেন তাঁরা।

আজ রোববার সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে শিক্ষার্থীরা এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে শোভাযাত্রা আয়োজনে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েও তাঁরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি এবার অন্যান্য বছরের মতো শিক্ষার্থীদের হাতে দায়িত্ব না দিয়ে আয়োজন করার নতুন নিয়মের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেন।

এ সময় শিক্ষার্থীরা দ্বান্দ্বিক পরিস্থিতির সমাধান চাওয়ার পাশাপাশি নববর্ষের আয়োজনের সাফল্য কামনা করে সবাইকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।

সংবাদ সম্মেলনে চারুকলার প্রিন্ট মেকিং বিভাগের ২০২০–২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী জাহরা নাজিফা বলেন, এ বছর মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন করা হচ্ছে, তা এবার ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামে উদ্‌যাপিত হবে। আমরা এই সিদ্ধান্ত সমর্থন করছি না। চারুকলার শিক্ষার্থীদের কোনো মতামত ছাড়াই এই ধরনের সিদ্ধান্তে নিয়ে প্রশ্ন রাখছি।

নাজিফা বলেন, ফ্যাসিবাদের সঙ্গে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামটির ‘মঙ্গল’ অংশটি সম্পর্কিত করে হাস্যকর কিছু কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, ১৯৯৬ সালে এ নাম পরিবর্তন করে আওয়ামী ফ্যাসিবাদের জন্য ব্যবহার শুরু হয়েছে। অথচ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়ই আসে ১৯৯৬–এর বৈশাখের তথা এপ্রিলের আরও তিন মাস পরে জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে।

তিনি বলেন, যে সিনেট সভায় নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, সে সভায় শিক্ষার্থীদের রাখা হয়নি। এ আয়োজনের গুরুত্বপূর্ণ অংশীজন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা না করেই নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

চারুকলার সাবেক শিক্ষার্থী জাহিদ জামিল বলেন, শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দ্বান্দ্বিক পরিস্থিতি তৈরি হলে গত মাসের শেষের দিকে আমরা সবাইকে নিয়ে আলোচনা করি। সেখানে সবাই একমতে আসতে পারি। নামটা নিয়ে সেদিন কথা বলি। সেখানে চারুকলার ডিন বলেছেন, তাঁরা চেষ্টা করছেন যেন নাম অপরিবর্তিত থাকে। পরে অজুহাত দেখিয়ে নাম পরিবর্তন করা হয়। নাম পরিবর্তনের কোনো যৌক্তিক কারণ তিনি জানাননি। নাম পরিবর্তনে আমাদের কোনো সমস্যা নেই। আমরা যৌক্তিক কারণ জানতে চাই। ছিয়ানব্বই সালে (নাম) পরিবর্তন অন্যায় হলে এটাও অন্যায়।

ফ্যাসিবাদের মোটিফে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার বিচার দাবি করে জাহরা নাজিফা বলেন, ‘আমরা ফ্যাসিবাদের মোটিফে আগুন দেওয়ার ঘটনায় অপরাধীর সুষ্ঠু বিচার ও তদন্ত চাই। যাদের গাফিলতি ছিল তাদেরও শাস্তির আওতায় আনার প্রস্তাব রাখছি।’

মোটিফ তৈরির দায়িত্ব পরিবর্তনের নতুন নিয়মের সঙ্গে দ্বিমত করে চারুকলার এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘চারুকলার এই আয়োজন ১৯৮৯ সাল থেকে শিক্ষার্থীদের তত্ত্বাবধানে হয়ে এলেও, একটা অসংলগ্ন যুক্তি দেখিয়ে তা শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের হাত থেকে কেড়ে নিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের অসমর্থিত ফ্যাসিস্ট আমলের প্রস্তাব—দুই ক্রেডিটের কোর্স হিসেবে এটি করা হয়েছে। আমরা এই কারিকুলামের সঙ্গে একমত নই।’

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দ্বন্দ্বের সমাধান দাবি করে জাহরা নাজিফা বলেন, ‘আমরা নববর্ষের আয়োজনের সাফল্য কামনা করি। সবাইকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানাই। পাশাপাশি আমাদের সঙ্গে হওয়া অন্যায়ের সমাধান চাই। আগামীতে প্রতিটি সিদ্ধান্তে প্রধান অংশীজন হিসেবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এ নিয়ে সবার সঙ্গে আলোচনা করে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। এর জন্য বাহাসের প্রয়োজন হলেও আমরা শিক্ষকদের সঙ্গে বসতে প্রস্তুত আছি।’

এর আগে গত শুক্রবার (১১ এপ্রিল) এক সংবাদ সম্মেলনে শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনের কথা জানিয়ে চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আজহারুল ইসলাম চঞ্চল বলেন, নববর্ষে শোভাযাত্রা আয়োজন করার চর্চা শুরু হয় ১৯৮৯ সালে। তখন এর নাম ছিল আনন্দ শোভাযাত্রা। সে সময়ের ইতিহাস খুঁজলে দেখতে পাবেন, সবার অংশগ্রহণ আরও স্বতঃস্ফূর্ত ছিল। পরবর্তীতে এ নাম পরিবর্তন হয়। এবারের বৃহৎ এ আয়োজনে সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করতে আমরা আগের নামটি পুনরুদ্ধার করেছি। এটি কোনো পরিবর্তন নয়, বরং পুনরুদ্ধার।

তিনি বলেন, আগের নামে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো চাপ ছিল না। ‘মঙ্গল’ শব্দ নিয়ে আমার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু প্রতিবছরই এ নাম নিয়ে নানা বিতর্ক হয়। মঙ্গলের ব্যানারের আয়োজন নিয়েও বিতর্কের অভাব ছিল না। গেল বছরগুলোতে এ নামটাকে খারাপভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। এ ভূখণ্ডে যারা বসবাস করে তাদের যে নামে অন্তর্ভুক্ত করা যাবে আমরা সে নামেই ফিরে এসেছি।

শোভাযাত্রা কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক কাউসার হাসান টগর বলেন, ১৯৮৯ এ শোভাযাত্রা যখন শুরু হয় তখন আমি চারুকলার শিক্ষার্থী ছিলাম। আনন্দ শোভাযাত্রা নামে এটি আমরাই শুরু করি। ১৯৯৬ সালে এসে নাম পরিবর্তন হয়ে হঠাৎ করে ‘মঙ্গলবার শোভাযাত্রা’ হয়ে গেল। ‘মঙ্গল’ নিয়ে আমাদের কোনো সমস্যা নাই। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন ‘আনন্দ’–এ সমস্যা কোথায়? আনন্দে সমস্যা না থাকলে আমাদের আগের জায়গায় ফিরে যেতে সমস্যা নেই। আর ‘আনন্দ’–এ সমস্যা থাকলে আমরা মঙ্গলে ফিরে যাব।

শিক্ষার্থীদের হাতে দায়িত্ব না দেওয়া নিয়ে ড. আজহারুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘২০০৬ সাল থেকে মাস্টার্স শেষ করা শিক্ষার্থীদের নববর্ষ আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হতো। কিন্তু এতে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত হতো না। ইউনেসকো স্বীকৃত এ আয়োজনের দায়িত্বে থাকা শিক্ষার্থীদের পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকায় আয়োজনে নানা ঘাটতি থেকে যেতো।’

তিনি বলেন, ‘এসব কারণে এবারের আয়োজনে কেন্দ্রীয়ভাবে উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি নিশ্চিতে কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়াও ৫টি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে। কাজ করতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের তালিকা নেওয়া হয়েছে। মিটিংয়ের আলোচনায় তাদের যুক্ত করা হয়েছে। নির্দিষ্ট একটি ব্যাচকে আধিপত্য না দিয়ে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিতের চেষ্টা করা হয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত মোটরসাইকেল শনাক্ত, মালিক সন্দেহে একজন আটক

হাদির মস্তিষ্কের অবস্থা ‘খুবই খারাপ’, এখনো আশঙ্কাজনক: চিকিৎসক

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

সুদানে নিহত ও আহত শান্তিরক্ষীদের পরিচয় জানাল আইএসপিআর

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

এলাকার খবর
Loading...