Ajker Patrika

আপনার এলাকায় খুন হচ্ছে, থানায় বসে করেন কী: গভীর রাতে ওসিকে তরুণের জেরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১২ মার্চ ২০২৫, ০১: ১৪
আপনার এলাকায় খুন হচ্ছে, থানায় বসে করেন কী: গভীর রাতে ওসিকে তরুণের জেরা

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমাগত অবনতি, চুরি, ছিনতাই ও খুনের ঘটনা ঘটছেই। পুলিশ থানায় বসে কী করছে? গতকাল সোমবার গভীর রাতে এক তরুণ এভাবেই পল্লবী থানায় গিয়ে ওসিকে জেরা করেন। এমন জেরার মুখে ডিউটি অফিসারের কক্ষ থেকে ওসি ওই তরুণকে হাত ধরে টেনে তাঁর কক্ষের দিকে নিতে চান। এমন সময় ওসির সঙ্গে তিনি হাতাহাতিতে জড়ান। অন্য পুলিশ সদস্যরা তাঁকে নিবৃত্ত করতে এলে তাঁদের সঙ্গেও তাঁর হাতাহাতি হয়। এরপর পুলিশ তাঁকে ধরে হাজতখানায় নিয়ে রাখে।

ওই তরুণের নাম আবদুর রাজ্জাক ফাহিম। তিনি ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় পুলিশ একটি মামলা করেছে।

সোমবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে আবদুর রাজ্জাক ফাহিম পল্লবী থানায় প্রবেশ করেন। সিঁড়ি ভেঙে তিনি থানার দ্বিতীয় তলায় ডিউটি অফিসারের কক্ষে যান। প্রথমে তিনি ডিউটি অফিসারের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে বিভিন্ন কথা বলেন। বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। এরপর তিনি ওসির কক্ষের দিকে এগোতে থাকেন। বাগ্‌বিতণ্ডা শুনে কক্ষ থেকে বের হন ওসি নজরুল ইসলাম ও এসআই শরীফুল ইসলাম।

ওসিকে দেখেই ওই তরুণ প্রশ্ন করেন, ‘আপনার এলাকায় খুন হচ্ছে, আপনারা থানায় বসে কী করেন?’ ওসি পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘কোথায় খুন হয়েছে?’ তখন ওই তরুণ বলেন, ‘আপনার ডিউটি অফিসার জানে।’ তখন তাঁরা ডিউটি অফিসারের কক্ষে যান। ডিউটি অফিসারের কক্ষে তখন আরও দুজন ব্যক্তি ছিলেন, যাঁরা থানায় পুলিশের সেবা নিতে এসেছিলেন। তাঁরা হলেন হোসেন মল্লিক ও আমির মল্লিক। তাঁদের সামনেই ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির ওই শিক্ষার্থী ওসি, এসআই ও ডিউটি অফিসারকে জেরা করেন। তখন ওসি তাঁর নাম ও পরিচয় জানতে চান।

জবাবে ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘নাম দিয়ে কী করবেন?’ তাঁর এমন উত্তরে ওসি তরুণের হাত ধরে টেনে তাঁর কক্ষের দিকে নিতে চাইলে ওই তরুণ হাতাহাতি শুরু করেন। থানার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বিষয়ে বিভিন্ন অশালীন মন্তব্য করেন। এলোপাতাড়ি কিলঘুষি দিতে থাকেন। এতে এসআই শরীফুল ইসলামের কপালে এবং এএসআই নাসির উদ্দিনের ডান হাতের কনিষ্ঠ আঙুল ভেঙে যায়। এমনকি থানায় সেবা নিতে আসা হোসেন মল্লিককেও তিনি মারধর করেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। এরপর পুলিশ তাঁকে হাতকড়া পরিয়ে হাজতখানায় রাখেন।

মঙ্গলবার দুপুরে পল্লবী থানায় গিয়ে দেখা গেছে, থানার ফটকের সামনে ফাহিমের কয়েকজন বন্ধু দাঁড়িয়ে আছেন। গতকাল রাতের বিষয়ে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তরুণ বলেন, আবদুর রাজ্জাক ফাহিম, সোহাগ ও ওয়াহাব বিন ইয়াহিয়া উত্তরা ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী। তাঁদের মধ্যে ফাহিমের ফুফাতো ভাইয়ের বাসা পল্লবী ২২ তলা এলাকায়। ভাইকে নিয়ে তাঁদের পুরান ঢাকায় বিরিয়ানি খেতে যাওয়ার কথা ছিল। এ জন্য ওই তিন তরুণ গতকাল গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে একটি মাইক্রোবাসে করে পল্লবী আসেন। মাইক্রোবাসটির চালক ছিলেন নাজমুল হাসান দিপু। ফুফাতো ভাইয়ের বাসায় যাওয়ার আগেই ফাহিম পল্লবী থানার বিপরীতে মাইক্রোবাসটি থামাতে বলে অপর দুই বন্ধুকে বলেন, থানায় তাঁর এক ভাই আছেন, একটু দেখা করে ফিরে আসবেন। তিনি দ্রুত থানায় যান। এরপর থানার ভেতরে কী হয়েছে, তা তাঁরা জানাতে পারেননি।

ফাহিমের বাবা মফিজুর রহমান। তিনি গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, তাঁর ছেলে ফাহিম গতকাল রাতে পুরান ঢাকায় সেহরি করার কথা বলে বন্ধুদের নিয়ে বের হন। গভীর রাতে পল্লবী থানা-পুলিশ তাঁকে ফোন দেয়। ফোন দিয়ে জানায়, ফাহিম থানায়। তিনি পুলিশের ফোন পেয়ে ভড়কে যান। তিনি পুলিশের ফোন রেখে ফাহিমের বন্ধুদের ফোন দিয়ে বলেন, ‘ফাহিম থানায় কেন? সে কী করেছে।’ তখন তাঁর বন্ধুরাও কিছু জানেন না বলে জানান।

এদিকে পুলিশ ফাহিমকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। বাইরে থাকা তাঁর দুই বন্ধু ও গাড়িচালককে মাইক্রোবাসসহ থানায় নিয়ে আসেন। তাঁদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করে।

পুলিশ প্রথমে ভাবছিল, এই তরুণেরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো নেতা-কর্মী হবেন। তাঁরা সে রকমই ব্যবহার করছিলেন। তবে তাঁরা কোনো পদের পরিচয় দেননি। কিন্তু তাঁরা আন্দোলনে ছিল বলে পুলিশকে জানিয়েছেন।

পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ফাহিম উত্তরায় তাঁর এক বন্ধুকে নিয়ে সেলুন দিতে চান। এ জন্য তিনি পরিকল্পনা করছিলেন। তাঁর কাছে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় তিনি এটা নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। তাঁর কথাবার্তা অসংলগ্ন।

ফাহিমের বাবা জানিয়েছেন, তাঁর ছেলে তিন দিন ধরে ঘুমাচ্ছেন না। তাঁর কথাবার্তা একটু অসংলগ্ন। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সে ডিপ্রেসড ছিলেন। তাই এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে তাঁর ধারণা।

তবে অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, পথে চেকপোস্টে পুলিশের সঙ্গে তাঁর বাগ্‌বিতণ্ডা হলে তিনি থানায় নালিশ করতে এসে খারাপ আচরণ করেন। তবে এই তথ্য অস্বীকার করেছে পুলিশ।

পল্লবী থানার ওসি নজরুল ইসলাম গতকাল থানায় বসে বলেন, ‘ফাহিম নামের ওই যুবক থানায় এসে দাবি করেন, এলাকায় একটি খুন হয়েছে। এ রকম ঘটনা আমার জানা নেই বললে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। একপর্যায়ে আমি তাঁর হাত ধরে নিয়ে যেতে চাইলে তিনি হঠাৎ আমাকে কিলঘুষি মারতে শুরু করেন। তখন এএসআই নাসির তা ঠেকাতে এলে ওই যুবক মেরে তাঁর একটি আঙুল ভেঙে দেন। এ ছাড়া এসআই শরীফুলের কপালে ঘুষি মারেন। পরে আমরা তাঁকে আটক করি।’

ওসি জানান, আটকের পর ওই যুবককে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, বাইরে একটি গাড়িতে আরও তিনজন রয়েছেন। পরে তাঁদেরও আটক করা হয়। তাঁদের বাড়ি গাজীপুর।

এ ঘটনায় ফাহিমকে আসামি করে একটি মামলা করেছে পুলিশ। মামলার বাদী ঘটনার সময় থানার ডিউটি অফিসার আমিনুল ইসলাম। তিনি মামলায় অভিযোগ করেছেন, ফাহিম থানায় এসে পুলিশকে মারধর করেছেন। সরকারি কাজে বাধা দিয়েছেন। সুযোগ পেলে জুলাই আন্দোলনের মতো পুলিশকে মেরে আবার ঝুলিয়ে রাখবে, এমন হুমকি দিয়েছেন। তাঁকে মঙ্গলবার আদালত কারাগারে পাঠিয়েছেন।

অপর তিনজনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হয়েছে। মাইক্রোবাসটির চালক দীপু পুলিশকে জানিয়েছে, এই গাড়ির ড্যাশ বোর্ডে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের স্টিকার ছিল। ওই চ্যানেলে তিনি ভাড়ায় গাড়ি চালান বলে সেটি রেখেছিলেন। গাড়িটি পুলিশি হেফাজতে রাখা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

নতুন মেট্রো নয়, রুট বাড়ানোর চিন্তা

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত