Ajker Patrika

দেড় লাখ ভবন ঝুঁকিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
দেড় লাখ ভবন ঝুঁকিতে

চট্টগ্রাম নগরীর প্রায় দেড় লাখ ভবন ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি চিটাগাংয়ের (ইউএসটিসি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইঞ্জিনিয়ার মো. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি গতকাল রোববার সকালে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা সেল আয়োজিত ‘ভূমিকম্প সচেতনতা সৃষ্টি ও করণীয় শীর্ষক’ এক আলোচনা সভায় এ তথ্য জানান।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নগরীতে ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে ১ লাখ ৪২ হাজার ভবন। এ ছাড়া ৭৪০টি স্কুলও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। এসব ভবনের শক্তিমত্তা বৃদ্ধিতে সরকার জিরো ইন্টারেস্টে লোন দিতে পারেন। এতে দ্রুত মালিকেরা তাঁদের ভবনগুলো ঝুঁকিমুক্ত করতে পারবেন।

ড. জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, ৬০ লাখ মানুষের নগর চট্টগ্রামে রিখটার স্কেলে আট বা সাড়ে আট মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঝুঁকিতে থাকা ভবনগুলো ধসে পড়তে পারে। ভবন নির্মাণে বিল্ডিং কোড না মানাসহ অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে ধ্বংসযজ্ঞ ঘটতে পারে বলেও সতর্ক করেন তিনি।

ইউএসটিসি উপাচার্য আরও বলেন, নগরীতে ১ লাখ ৮৩ হাজার ভবন ও ১ হাজার ৩৩টি স্কুল রয়েছে। এসব ভবন ও স্কুল টেকসই করতে খুব শিগগিরই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অনেক ভবনের নিচতলায় ব্যক্তি মালিকানাধীন স্কুল তৈরি হচ্ছে। যেগুলো ভূমিকম্পে ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এ জন্য স্কুল-কলেজের টেবিলগুলো টেকসই করতে হবে, যাতে ভূমিকম্পের সময় সেগুলো কাজে লাগানো যায়। শিক্ষার্থীরা এতে সেখানে আশ্রয় নিতে পারবে।

ইতিমধ্যে তাঁরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের টেবিলগুলো কেমন হবে, তাঁর একটি বর্ণনা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দিয়েছেন উল্লেখ করে ইউএসটিসি উপাচার্য আরও বলেন, তবে এর কোনো প্রতিফলন এখনো দেখতে পাইনি। 
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএসটিসি উপাচার্য মো. জাহাঙ্গীর আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় ২০০৯ সাল থেকে শুরু করে ২০১১ সাল পর্যন্ত কমপ্রিহেনসিভ ডিজেস্টার ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামের আওতায় ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে জরিপ চালায়। ওই জরিপের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ১ লাখ ৮২ হাজার ভবনের মধ্যে ১ লাখ ৪২ হাজারের বেশি ভবন ভূমিকম্পে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। এসব ভবন অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠে। এই কয়েক বছরে আরও অনেক নতুন ভবন উঠেছে। এতে করে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ভূমিকম্পের দিক দিয়ে বাংলাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে পড়েছে। এখানে বড় আকারের ভূমিকম্প হলে আমরা ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হব।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভূমিকম্প আটকানো সম্ভব নয়। ভূমিকম্পে মানুষও মরে না। মানুষ মারা যায় ভূমিকম্পের সময় ঘরবাড়ি ভেঙে পড়লে। তাই মৃত্যু এড়াতে আমাদের আগাম প্রস্তুতি এখন থেকেই নেওয়া প্রয়োজন। আমরা যদি একটু সচেতন হই, তাহলে যে কোনো দুর্যোগ মোকাবিলা করা সম্ভব।’

উপাচার্য বলেন, আগাম প্রস্তুতি দুই ধরনের হতে পারে। একটি হচ্ছে, নতুন বিল্ডিং বা অবকাঠামো নির্মাণের সময় ভূমিকম্প বিষয়ক বিশেষ নিয়ম মেনে চলা। অন্যটি হচ্ছে, যেগুলো পুরোনো বিল্ডিং বা অবকাঠামো আছে সেগুলো ব্যবহারযোগ্য, সংস্কারযোগ্য কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ কিনা তা পৃথকভাবে চিহ্নিত করা।

এ ক্ষেত্রে সংস্কারযোগ্য বিল্ডিং প্রকৌশলগতভাবে শক্তিশালীকরণ ও ঝুঁকিপূর্ণ কাঠামোগুলো যত দ্রুত সম্ভব ভেঙে ফেলার পরামর্শ দেন তিনি।

গত শুক্রবার রিখটার স্কেলে ৬ দশমিক ২ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর নগরীর চকবাজার উর্দু গলি, বহদ্দারহাটের সাবানঘাটা ও হালিশহর এলাকার তিনটি ভবন হেলে পড়ে। এ ঘটনার পর আবারও নগরীর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো বিষয় সামনে আসে। এর আগেও ভূমিকম্পে ভূমিকম্পে একাধিক ভবন হেলে পড়ার তথ্য পাওয়া যায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভবনের সক্ষমতা পরীক্ষা করে সেই অনুযায়ী ভবনটির প্রকৌশলগত শক্তিমত্তা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। ব্যবহারযোগ্য হলে ভবন ভাঙার প্রয়োজন পড়বে না। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফরিদপুরে পালিয়ে যাওয়া আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার, থানার ওসিকে বদলি

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় ভারতের উদ্বেগ

কাতারের রাজপরিবারের দেওয়া বিলাসবহুল বিমান না নেওয়াটা বোকামি: ট্রাম্প

সৌদি আরবের সঙ্গে ১৪২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির চুক্তি করে নিজের রেকর্ড ভাঙল যুক্তরাষ্ট্র

পুলিশ হত্যাকারী ফোর্স হতে পারে না: আইজিপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত