Ajker Patrika

পাহাড়ে রাম্বুটান চাষে নতুন সম্ভাবনা

খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি 
আপডেট : ২৭ জুন ২০২৫, ০৯: ১২
খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার বিহারটিলায় রাম্বুটান গাছে সারি সারি থোকায় ঝুলছে লাল-হলুদ রঙের বিদেশি ফল। গত শুক্রবার তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার বিহারটিলায় রাম্বুটান গাছে সারি সারি থোকায় ঝুলছে লাল-হলুদ রঙের বিদেশি ফল। গত শুক্রবার তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

সবুজ পাহাড়ে শোভা বাড়াচ্ছে বিদেশি এক ফল—রাম্বুটান। লিচুর মতো দেখতে, লোমশ ত্বকের এই রসালো ফল এখন পাহাড়ে নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে। খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার বিহারটিলা এলাকায় আড়াই একর জমিতে গড়ে তোলা হয়েছে রাম্বুটান বাগান। এই ফল পাহাড়ে অর্থনৈতিক সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলছে বলে মনে করছেন কৃষিবিদেরা।

মহালছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক আকেইপ্রু চৌধুরী নিজ বাড়ির পাশে রাম্বুটানের এ বাগান গড়ে তুলেছেন। সারি সারি চার বছর বয়সী গাছে থোকা থোকা ফল ধরেছে। এরই মধ্যে ৩০ শতাংশ ফল পাকতে শুরু করেছে।

খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার বিহারটিলায় রাম্বুটান গাছে সারি সারি থোকায় ঝুলছে লাল-হলুদ রঙের বিদেশি ফল। গত শুক্রবার তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার বিহারটিলায় রাম্বুটান গাছে সারি সারি থোকায় ঝুলছে লাল-হলুদ রঙের বিদেশি ফল। গত শুক্রবার তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

আকেইপ্রু চৌধুরী বলেন, ‘বিদেশ সফরে রাম্বুটান খেয়ে ভালো লাগায় সিদ্ধান্ত নিই দেশে এর চাষ করব। ২০২১ সালে পাঁচটি দেশ থেকে পাঁচ জাতের রাম্বুটান চারা সংগ্রহ করি।’ জাতগুলোর মধ্যে রয়েছে ইন্দোনেশিয়ান ‘লাল বিনজাই’, থাই ‘রং রিয়ান’, ফিলিপাইনের ‘হলুদ কুইজন’, মালয়েশিয়ার ‘স্কুল বয়’ ও ভারতীয়-মালয়েশীয় হাইব্রিড ‘এন-১৮’।

তাঁর বাগানে এখন রয়েছে ২২০টি গাছ, এর মধ্যে ১৮০টিতে ফল এসেছে। একটি গাছ থেকে ১৫ থেকে ২০ কেজি পর্যন্ত ফল মিলবে বলে আশা করছেন তিনি। কিছু কিছু গাছে এক থোকা থেকেই পাওয়া যাচ্ছে প্রায় এক কেজি ফল। ফল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৮০০ টাকা দরে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ফল পাওয়া যাবে। তিনি জানান, গত বছর একটি গাছে ৪০ কেজি পর্যন্ত ফল পেয়েছেন।

আকেইপ্রু বলেন, ‘শুরুতে ছিল শখ, এখন তা বাণিজ্যিক চিন্তায় রূপ নিয়েছে।’ তিনি জানান, গুইমারা উপজেলার জালিয়াপাড়ায় এক হাজার মালয়েশিয়ান ‘স্কুল বয়’ জাতের চারা রোপণ করেছেন। সেখানে এক বছর হয়েছে বাগান গড়ে তোলার।

মহালছড়ি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. সোহরাব হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘পাহাড়ে রাম্বুটান চাষ উপযোগী। আমরা ফলন দেখে আশাবাদী। তবে গাছের গোড়ায় যেন পানি জমে না, তা নিশ্চিত করতে হবে।’

খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার বিহারটিলায় রাম্বুটান গাছে সারি সারি থোকায় ঝুলছে লাল-হলুদ রঙের বিদেশি ফল। গত শুক্রবার তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
খাগড়াছড়ির মহালছড়ি উপজেলার বিহারটিলায় রাম্বুটান গাছে সারি সারি থোকায় ঝুলছে লাল-হলুদ রঙের বিদেশি ফল। গত শুক্রবার তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বাছিরুল আলম বলেন, ‘বিদেশি ফল হিসেবে দেশে রাম্বুটানের চাহিদা ভালো। পাহাড়ে বিছিন্নভাবে চাষ হচ্ছে। এর বাণিজ্যিক চাষ হলে কৃষকরা উপকৃত হবেন এবং কৃষি অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘চাষিরা চাইলে উন্নত জাতের চারা সংগ্রহ করে চাষ শুরু করতে পারেন। কৃষি বিভাগ থেকে প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়া হবে।’

পাহাড়ি কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের উর্ধতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মালেক জুয়েল বলেন, ‘রাম্বুটান চাষে পাহাড়ের মাটি ও জলবায়ু উপযোগী। আরও উন্নত জাত উদ্ভাবনে গবেষণা চলছে।’

আকেইপ্রু জানান, স্থানীয় মানুষের পাশাপাশি ঢাকার বিভিন্ন ফল ব্যবসায়ীরা যোগাযোগ করছেন। সুপারশপে যেখানে এই ফলের দাম প্রতি কেজি ২,৪০০–২,৫০০ টাকা, সেখান থেকে তাঁর বাগানে অনেক কম দামে পাওয়া যাচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত