Ajker Patrika

৭ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিলেও ছাড়া পাননি কাদের

মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি
৭ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিলেও ছাড়া পাননি কাদের

খাগড়াছড়ির মানিকছড়িতে গত বছরের ৫ এপ্রিল রাতে অপহরণের শিকার হন চা শ্রমিক সরবরাহকারী ঠিকাদার মো. আবদুল কাদের। অপহরণের পর আঞ্চলিক সংগঠন ইউপিডিএফ পরিচয়ে প্রথমে ৫০ লাখ, পরে ৩০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। অপহরণকারীরা শেষে ৭ লাখ টাকায় রাজি হলে টাকা দিলেও ছাড়া পাননি কাদের। 

এদিকে বাবা আসবে বলে এখনো পথ চেয়ে আছে কাদেরের তিন সন্তান মো. শাহাদাৎ হোসেন (১৩), (যমজ) রবিউল হোসেন (১৩) ও মাহফুজা আক্তার (৭)। স্বামীর অপেক্ষায় স্ত্রী, ভাইয়ের অপেক্ষায় ভাই। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়েও তাঁকে ফিরে না পেয়েও পরিবারের শোক কাটছে না।

পুলিশ ও অপহৃতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার যোগ্যাছোলার খাড়িছড়া এলাকার মো. তোফায়েল আহমেদের ছেলে মো. আবদুল কাদের। দুই ছেলে ও এক মেয়ের জনক তিনি। নেপচুন চা বাগানে শ্রমিক সরবরাহ করতেন কাদের। তাঁর একাধিক জিপ গাড়ি শ্রমিক আনা-নেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হতো।

গত বছরের ৫ এপ্রিল সন্ধ্যায় খাড়িছড়া বাজার থেকে মোটরসাইকেল নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে অপহরণের শিকার হন আবদুল কাদের। পরদিন সকালে খাড়িছড়া ক্যায়াং ঘরসংলগ্ন জঙ্গল থেকে তাঁর ব্যবহৃত মোটরসাইকেল ও মুখ বেঁধে অপহরণের উপকরণ জব্দ করে পুলিশ ও সেনাবাহিনী। এরপর তাঁকে অক্ষত ফিরে পেতে মামলায় না গিয়ে নানা কৌশলে অপহৃতের পরিবার দেন-দরবার চালায়।

একপর্যায়ে ইউপিডিএফ পরিচয়ে ৫০ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়। দর-কষাকষি করে তা ৭ লাখ টাকায় রফা হয়। প্রথমে বিকাশে ৫০ হাজার টাকা ও পরে এক জনপ্রতিনিধির (কাদেরের পরিবার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) অপহৃতের ছোট ভাই গুইমারা উপজেলার গহিন বনে নিয়ে মুক্তিপণের বাকি সাড়ে ৬ লাখ টাকা দিয়ে আসেন। কিন্তু তাতেও কাদেরের মুক্তি মেলেনি।

এক মাস ছয় দিন পর গত বছরের ১১ মে স্থানীয় এক যুবকের তথ্যমতে কাদের অপহরণের সূত্র উদ্ঘাটন করে স্থানীয়রা। বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করলে ওই যুবকের সহযোগিতায় পুলিশ থোয়াইংপ্রু মারমা নামক এক ইউপিডিএফ কর্মীকে গ্রেপ্তার করে। পরে অপহৃতের মামা মো. কবির হোসেন বাদী হয়ে মূল পরিকল্পনা ও অপহরণকারী ইউপিডিএফ সদস্য অলুয়ে মারমাকে প্রধানকে করে থোয়াইংপ্রু মারমাসহ অজ্ঞাতপরিচয় তিন-চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আশিকুল ইসলাম বলেন, মামলার ২ নম্বর আসামি থোয়াইংপ্রু মারমা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলেও কাদের কোথায় আছে এ বিষয়ে কিছুই বলেনি। প্রধান আসামি অলুয়ে মারমাকে গ্রেপ্তার করা গেলে কাদের অপহরণের জট খুলতে পারে। যদিও গত অক্টোবর মাসে মামলাটি পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

মানিকছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনসারুল করিম বলেন, মো. আবদুল কাদের অপহরণ মামলাটি এখন পিবিআই তদন্ত করছে।

মামলার বাদী মো. কবির হোসেন বলেন, ‘পিবিআই থেকে একবার ফোন করে কিছু তথ্য নিয়েছিল। এরপর এ বিষয়ে আর কিছু জানি না।’

এ বিষয়ে পিবিআইয়ের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

এদিকে অপহৃত কাদেরের ছোট ভাই মো. ইউসুফ বলেন, ‘আমার ভাইকে অপহরণের পর জিপ গাড়ি, জমি বিক্রি করে অপহরণকারী চক্রের দাবি করা ৭ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়েও তাকে ফেরত পাইনি। এখন তার স্ত্রী, তিন শিশু সন্তানের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। স্কুল পড়ুয়া শিশু সন্তানেরা তাদের বাবার আসার অপেক্ষায়। প্রতিনিয়ত তারা জানতে চায় তাদের বাবা কখন আসবে?’

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপহৃতের এক নিকটাত্মীয় বলেন, কাদের দীর্ঘ দিন চা বাগানে শ্রমিক সরবরাহের কাজটি আয়ত্তে রাখায় স্থানীয় একটি পক্ষের সঙ্গে কিছুটা মতবিরোধ ছিল। অন্যদিকে পাহাড়ে সশস্ত্র সংগঠন প্রসিত খীসার ইউপিডিএফের সঙ্গে এক দশকের সম্পর্কে হঠাৎ চিড় ধরে। মূল দলের সঙ্গ ছেড়ে ইউপিডিএফ সংস্কারের দাবি তোলেন তিনি। এ নিয়ে ইউপিডিএফ কাদেরের প্রতি কিছুটা অসন্তুষ্ট ছিল। যদিও এ বিষয়ে পরিবারের কেউ মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে ইউপিডিএফের স্থানীয় সংগঠক কেওলা মারমা বলেন, এ ঘটনায় ইউপিডিএফ জড়িত নয়। অহেতুক অপহরণ বা যেকোনো ঘটনায় একটি গোষ্ঠী সব সময় ইউপিডিএফের প্রতি অপবাদ ছড়ায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ না করার প্রস্তাব

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের পেছনেই মানুষের ব্যয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত