Ajker Patrika

হাসপাতাল আছে ডাক্তার নেই, চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত সেন্টমার্টিনবাসী

প্রতিনিধি, টেকনাফ (কক্সবাজার)
হাসপাতাল আছে ডাক্তার নেই, চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত সেন্টমার্টিনবাসী

দেশের একমাত্র প্রবাল ও বিস্তীর্ণ দ্বীপ সেন্টমার্টিন। এটি একটি ইউনিয়নও। সেন্টমার্টিন দ্বীপটি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলায় অবস্থিত। সেখানে একটি দশ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল থাকলেও ডাক্তার নেই। যুগ যুগ ধরে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত টেকনাফবাসী। ফলে দীর্ঘদিনের ক্ষোভ তাঁদের। 

জানা গেছে, সেন্টমার্টিন যাওয়া আসার জন্য জলপথ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। ট্রলার বা জাহাজ ব্যতীত কোনো মাধ্যমে যাওয়া আসা হয় না। দেশের একমাত্র প্রবাল ও বিস্তির্ণ দ্বীপ হওয়ায় পর্যটন মৌসুমে ভ্রমণ পিপাসুদের উপচেপড়া ভিড় থাকে। মৌসুমে গড় প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি পর্যটক যাওয়া আসা করেন। সেই সঙ্গে সেখানে পুলিশ ফাঁড়ি, টুরিস্ট পুলিশ, নৌ বাহিনী, কোস্টগার্ড, বিজিবি তাঁদের দায়িত্ব পালন করেই যাচ্ছে। 

আকর্ষণীয় পর্যটক স্পট ও বিস্তীর্ণ দ্বীপ হওয়ায় সরকার সামগ্রিক বিবেচনা করে ১৯৯৫ সালে ১০ শয্যার তিন তলা বিশিষ্ট একটি হাসপাতাল নির্মাণ করে। হাসপাতালে রয়েছে একটি অপারেশন থিয়েটার। চিকিৎসা সুবিধার আধুনিক সব যন্ত্রপাতিও রয়েছে। কিন্তু দুই যুগের বেশি হলেও অপারেশন থিয়েটারের তালা এখনো খোলা হয়নি। খোলা হয়নি সরবরাহকৃত যন্ত্রপাতির প্যাকেটও। প্রয়োজনীয় লোকবলের অভাবে অব্যবহৃত দামি সব যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে পড় আছে। সেই সঙ্গে দরজা জানালাও ভেঙে গেছে। টয়লেট ব্যবহারের যোগ্য নয়। সব মিলিয়ে হাসপাতালটির এখন বেহাল অবস্থা। 

সেখানকার ও স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ বসবাস করে দ্বীপটিতে। সেন্টমার্টিন থেকে টেকনাফে নৌ পথের রুট। যার দূরত্ব প্রায় ৩৪ কিলোমিটার। চিকিৎসা সেবার জন্য কয়েকটি ছোটখাটো ফার্মেসি ও পল্লি চিকিৎসকের ওপর নির্ভর করতে হয় তাঁদের। চিকিৎসা বঞ্চিত হয়ে অনেক নারী–পুরুষ মারা গেছেন। এদের মধ্যে ডায়রিয়া ও গর্ভবতী রোগী অন্যতম। বেশ কিছুদিন আগে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের অধিবাসী নুর হোসেনের স্ত্রী আমেনা বেগম ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে যাওয়ার পথে সাগরে মারা যান। একই এলাকার ফাতেমা খাতুন প্রসব বেদনায় হাসপাতালে যাওয়ার পথে স্পিডবোটের মারা যান। 

উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা যায়, দুইটি মেডিকেল অফিসার ওই হাসপাতালে থাকার কথা রয়েছে। কাগজে কর্মরত থাকলেও বাস্তবে কোনো মেডিকেল অফিসার সেখানে নেই। ফার্মাসিস্ট, মেডিকেল টেক (ল্যাব), অফিস সহাকারী কাম ডেটা এন্ট্রি অপারেটরের একজন করে পদ থাকলেও তা শূন্য রয়েছে। সিনিয়র স্টাফ নার্স একজনের মধ্যে একজন কাগজে কর্মরত থাকলেও বাস্তবে নেই। সহকারী নার্স তিনজনই শূন্য। এ ছাড়া আউট সোর্সের ছয়জনের মধ্যে, ওয়ার্ড বয়, আয়া, কুক, ঝাড়–দার, নিরাপত্তা প্রহরী শূন্য তবে একজন এমএলএসএস রয়েছে। এই ভাবে যুগের পর যুগ শূন্য থাকে পদগুলো। তবে নতুন কোনো চিকিৎসক বা নার্স দেওয়া হলে তারা মাস দেড়েকের মধ্যে অন্যত্রে চলে যান। 

এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. টিটু চন্দ্রশীল জানান, হাসপাতালে কেউ নেই বললেই ভুল হবে। সেখানে আউট সোর্সের সবাই রয়েছেন। সেই সঙ্গে একজন উপসহকারী মেডিকেল অফিসার রয়েছেন। তবে মেডিকেল অফিসার পদ শূন্য রয়েছে। যাদেরকে পদায়ন করা হয়েছে, তারা বর্তমানে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোভিড ১৯ নিয়ে কাজ করছেন। সেই সঙ্গে বর্ষাকালে আবহাওয়া খারাপ থাকে তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শক্রমে তাঁরা হাসপাতালে কাজ করছেন। 

তবে ডা. টিটু চন্দ্রশীল জানান, খুব শিগগিরই সেন্টমার্টিন হাসপাতালের অত্যাধুনিক করে কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। সে ক্ষেত্রে জটিল রোগীদের রেফার করার ক্ষেত্রে একটি সি বোটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওই সি বোটের মাধ্যমে প্রতিদিন চিকিৎসক ও রোগীদের আনা নেওয়া করা হবে বলে জানান তিনি। 

স্থানীয় পর্যটক ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন শুভ জানান, গুরুতর রোগীদের চিকিৎসকহীন সেন্টমার্টিনে টেকনাফে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যেতে হয়। কিন্তু নৌপথ দিয়ে সেন্টমার্টিনে পৌঁছাতে ৩ ঘণ্টার কাছাকাছি সময় ব্যয় হয়। এতে চিকিৎসা বঞ্চিত হয়ে অসংখ্য ডায়রিয়া ও গর্ভবতী রোগী মারা যান। 

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান জানান, সেন্টমার্টিনের জন্মলগ্ন থেকে যেমন চিকিৎসাবঞ্চিত ছিলেন। হাসপাতাল হওয়ার ২৫ বছর পরও চিকিৎসা বঞ্চিত রয়েছে। চিকিৎসার অভাবে বেশ কিছু নারী-পুরুষ মারা গেছেন। তাঁর মধ্যে এখন করোনা মহামারি। এখানকার মানুষ চিকিৎসা সেবার পাশাপাশি টিকা নেওয়া থেকেও বঞ্চিত রয়েছে। 

এদিকে দ্বীপের চেয়ারম্যান বিভিন্ন সময়ে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে অনুষ্ঠিত সভায় হাসপাতাল সংক্রান্তে কথা বলেও কোন ধরনের সুরাহা হয়নি। চেয়ারম্যান নিজেই বহুবার সিভিল সার্জনকে বিষয়টি অবহিত করার পরও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. পারভেজ চৌধুরী জানান, দুর্গম পথ হওয়ায় সেখানকার অধিবাসীরা অবশ্যই চিকিৎসা ঝুঁকিতে রয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বাংলাদেশসহ এশিয়ার ৫ দেশে সফর বাতিল করলেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী মেলোনি

স্ত্রীকে হতে হবে নোরা ফাতেহির মতো, না খাইয়ে রেখে তিন ঘণ্টা করে ব্যায়াম করান স্বামী

বাংলা বলায় কলকাতার মার্কেটে ছুরি, বন্দুকের বাঁট ও হকিস্টিক নিয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা

ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুর, আবারও শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, পুলিশের টিয়ার শেল-সাউন্ড গ্রেনেড

২০২৬ সালের পাঠ্যবইয়ে শেখ হাসিনার নামের আগে গণহত্যাকারী, ফেসবুকে আসিফ মাহমুদ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত