Ajker Patrika

পানি পেয়ে খুশির জোয়ার

হিমেল চাকমা ও সুমন্ত চাকমা, রাঙামাটি থেকে
আপডেট : ২৮ আগস্ট ২০২১, ১৪: ০৫
পানি পেয়ে খুশির জোয়ার

প্রায় আড়াই হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ে অবস্থিত রাঙামাটি সদরের বালুখালী ইউনিয়নে লক্ষণ্যাপাড়া। এত দিন পাড়ায় মানুষের পানির একমাত্র উৎস ছিল বৃষ্টি, নয়তো দূর পাহাড়ে পানির খোঁজে বের হতে হতো।

ইউএনডিপির একটি প্রকল্পের মাধ্যমে এবার তাঁদের ঘরের উঠানে পানি পৌঁছে দিচ্ছে জেলা পরিষদ। মাত্র ২ লাখ টাকা ব্যয়ে আড়াই হাজার ফুট উঁচু পাহাড়ে অনর্গল পানি তুলে দিচ্ছে। এতে খুশি লক্ষণ্যাপাড়ার বাসিন্দারা।

পাড়াবাসী জানান, আগে বৃষ্টি না হলে দূর পাহাড়ে পানির খোঁজে বের হতে হতো। পাহাড়ি পথ বেয়ে পানি আনতেন নারীরা। এতে এক ঘণ্টা বা তারও বেশি সময় লাগত। তবে শুষ্ক মৌসুমে এ কষ্ট তিন-চার গুণ বেড়ে যেত। বালুখালি ইউপি চেয়ারম্যান বিজয়গিরি চাকমা বলেন, প্রকল্পটি হওয়ায় লক্ষণ্যাপাড়া শত বছরের পানির কষ্ট দূর করেছে। এ ধরনের আরও অনেক এলাকা রয়েছে। সরকার চাইলে সব এলাকায় এটি বাস্তবায়ন করতে পারে।

লক্ষণ্যাপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, পাড়ার পাশে উঁচু পাহাড়ে বসানো হয়েছে ৮টি সৌর প্যানেল। নিচে একটি ঘরের ভেতরে রাখা হয়েছে ৮টি ব্যাটারি ও একটি আইপিএস। সেখান থেকে পাহাড়ের নিচে ঝিরিতে একটি বৈদ্যুতিক সংযোগ গেছে। সেখানে বসানো ২ হর্স পাওয়ারের পানির মোটর বসানো হয়েছে। সংযোগ দেওয়া হলে দীর্ঘ নল বেয়ে পানি চলে আসছে পাড়ায়।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জলবায়ু সহনশীল প্রকল্পের আওতায় জেলায় ৪টি উপজেলায় ৮টি প্রকল্পের মাধ্যমে ৪৮টি পাড়ার মানুষ এ সুবিধা পাচ্ছে। তবে পাহাড়ে হাজারো গ্রাম আছে সারা বছর পানির কষ্ট লেগে থাকছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে অনেক প্রাকৃতিক পানির উৎস নষ্ট হয়ে গেছে। সরকারি সহযোগিতা থাকলে ভালো থাকা উৎস কাজে লাগিয়ে পাহাড়ে মানুষের শত বছরের পানির কষ্ট লাঘব করা সম্ভব হবে।

প্রকল্পের জেলা সমন্বয় কর্মকর্তা পলাশ খীসা বলেন, ড্যানিডার সহযোগিতা জেলা পরিষদ এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করছে। এ প্রকল্পটি চলতি বছর সেপ্টেম্বরে শেষ হবে। দাতা সংস্থা চাইলে এটি বাড়তেও পারে। কারণ প্রকল্পটি খুব জনমুখী একটি প্রকল্প হিসেবে সুনাম অর্জন করেছে।

পাড়ার কার্বারি গিয়ানানন্দ চাকমান (৫০) বলেন, জেলা পরিষদ খুব ভালো একটি কাজ করেছে। এটা রক্ষণাবেক্ষণ ও দীর্ঘদিন স্থায়িত্বের জন্য আমরা কাজ করছি। 
গ্রামের গীতা চাকমা (২৮) বলেন, ‘ছোটকাল থেকে পানির কষ্ট পাচ্ছি আমরা। শুষ্ক মৌসুমে জুম থেকে ফিরে পানির অভাবে গোসল ছাড়া থাকতে হতো। ছড়ায় পানি কমে যেত। পানি আনতে দুই-আড়াই ঘণ্টা পাহাড়ি পথ হেঁটে যেতে হতো। এখন সে কষ্ট দূর হয়েছে।’

গ্রামের রংগলা চাকমা (৬০) বলেন, ‘সারা জীবন পাহাড়ের নিচে থেকে পানি তুলতে জীবন গেল। বর্ষায় পানি আনতে গিয়ে পা পিছলে গিয়ে অনেকে আহত হয়েছে। আমিও আহত হয়েছি। সে আঘাত নিয়ে এখনো ভুগছি। বুড়ো বয়সে এভাবে পানি পাব ভাবিনি।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বিএসএফের হাতে আটক বাংলাদেশি পুলিশ কর্মকর্তার পরিচয় মিলেছে

মালয়েশিয়ায় স্থায়ী বসবাসের সুযোগ, আবেদন ফি মাত্র ১৪ হাজার টাকা

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কাইরান কাজীর বিষয়ে ইলন মাস্কের মন্তব্যে বিস্ময়

অমীমাংসিত বিষয় সমাধানে পাকিস্তানের দাবি নাকচ করল সরকার

যুক্তরাষ্ট্রের কৌশল বোঝার ভুলের খেসারত দিচ্ছে ভারত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত