Ajker Patrika

‘আদরের ছেলে রেখে চলে যাচ্ছি প্রবাসে’

সবুর শুভ, চট্টগ্রাম 
ছেলেকে কোলে নিয়ে রনি।  ছবি: সংগৃহীত
ছেলেকে কোলে নিয়ে রনি। ছবি: সংগৃহীত

‘আমার আদরের ছেলে রেখে চলে যাচ্ছি প্রবাসে, সবাই দোয়া করবেন’—সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এ স্ট্যাটাস দিয়ে ওমানের উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন এম এইচ রনি। চট্টগ্রামের সাগরবেষ্টিত উপজেলা সন্দ্বীপের সারিকাইত ইউনিয়নে রনিদের বাড়ি।

গত ২৩ আগস্ট ওমানের উদ্দেশে দেশ ছাড়েন রনি। পরিবারের সচ্ছলতার জন্য প্রবাসে পা রাখার আগে সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া ওই স্ট্যাটাসে জুড়ে দিয়েছিলেন দেড় বছরের ছেলেকে কোলে নেওয়া একটি ছবি। ছলছল চোখে ছেলেকে বলে গিয়েছিলেন—আবার দেখা হবে বাবা। এর ৪৬ দিনের মাথায় আদরের ছেলেকে রেখে পৃথিবী ছেড়েই চলে গেলেন রনি।

জীবনের একেবারে অন্য পারে, পরপারে। যেখান থেকে আর কখনো ফিরবেন না তিনি। কোলে নেওয়া হবে না তাঁর আদরের ছেলেকে। দেড় বছরের ছেলেও আর কখনো পাবে না বাবার কোল। কারণ, গতকাল বুধবার ওমানের দুখুমে মাছ ধরে ফেরার পথে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন এম এইচ রনি। শুধু রনি নন, ওই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন আরও সাতজন বাংলাদেশি। যাঁদের সাতজন চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার। তাঁরা হলেন আমিন সওদাগর, আরজু, রকি, বাবলু, শাহাবউদ্দিন, জুয়েল ও এম এইচ রনি।

এ সাতজনের প্রথম পাঁচজন সন্দ্বীপের সারিকাইত ইউনিয়নের বাসিন্দা। তিন বছর আগে বিয়ে করেন রনি। এক সন্তানের জনক। তাঁর স্ত্রী বর্তমানে সন্তানসম্ভবা বলে জানা গেছে।

রনিদের মারা যাওয়ার ঘটনায় মাতম চলছে ওই এলাকায়। রনির দেড় বছরের ছেলেকে নিয়ে কাঁদছেন পরিবারের সদস্যরা। কী হবে এই ফুটফুটে বাচ্চার—এ দুশ্চিন্তায় সামনে অন্ধকার দেখছেন পরিবারের সদস্যরা।

ওমানে নিহত রকির রয়েছে চার মাসের একটি ছেলে। প্রতিদিন ভিডিওকল করে ছেলেকে দেখতেন। মারা যাওয়ার আগের দিনও কল করেছিলেন। এসব কথা বলে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন রকির স্ত্রী।

নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে শাহাবউদ্দিনও গত ১৭ সেপ্টেম্বর দেশ থেকে ওমানে যান। বছর দুয়েক আগে বিয়ে করা শাহাবউদ্দিনেরও এক বছরের একটি কন্যাসন্তান আছে। মাত্র ২৫ দিন আগে বিদায় নেওয়া ছেলে একেবারে বিদায় নিয়েছে—এটি বিশ্বাসই করতে চাইছেন না তাঁর মা।

কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকছেন ভাবলেশহীন আবার চিৎকার করে মাতম করছেন। তাঁকে সান্ত্বনা দিতে আসা পাড়ার মহিলারাও নিজেদের আঁচলে মুখ মুছছেন। শাহাবউদ্দিন, বাবলু, রকি—তিনজনই প্রতিবেশী আত্মীয়স্বজন। শাহাবউদ্দিনের বাচ্চাকে কোলে নিয়ে কাঁদছেন তাঁর দাদা ও পরিবারের সদস্যরা।

একসঙ্গে এত প্রবাসীর মৃত্যুশোকে পাথর করে দিয়েছে সন্দ্বীপের বাসিন্দাদের। সন্দ্বীপ যেন পরিণত হয়েছে শোকের জনপদে। নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে সমবেদনা জানাচ্ছেন সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে অনেকে।

চট্টগ্রাম সিটি কলেজের অধ্যাপক আব্দুর রহিম প্রস্তাব করেছেন, এক দিন সন্দ্বীপে কালো পতাকা উত্তোলনের। পাশাপাশি আগামীকাল শুক্রবার সব মসজিদে দোয়া ও মাহফিলের আয়োজন করতে সব রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতাকে সর্বসম্মভাবে উদ্যোগ নিতেও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।

রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতারা এর মধ্যেই এগিয়ে এসেছেন। তাঁরা নিহত ব্যক্তিদের বাড়িতে গিয়ে পরিবারকে সমবেদনা জানাচ্ছেন। পাশে থাকার আশ্বাস দিচ্ছেন।

উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে নিহত প্রবাসীদের বাড়ি গিয়ে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মংচিংনু মারমা।

আগামীকাল সন্দ্বীপের সব মসজিদে জুমার নামাজের পর বিশেষ দোয়া করার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশন, খতিবসহ সব জুমা মসজিদকে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হয়েছে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

মংচিংনু মারমা জানান, গতকাল এতগুলো তাজা প্রাণ ঝরে গেল ওমানে। ভাবতে কষ্টে বুক ভারী হয়ে যায়। এই পরিবারগুলোর সামনে রয়েছে ঘোর অনিশ্চয়তার ভবিষ্যৎ। এ ক্ষেত্রে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত