Ajker Patrika

খামারের বর্জ্যে খাল ভাগাড়

  • উপজেলার ১২০০ খামারের বর্জ্য বিভিন্ন খাল হয়ে যাচ্ছে কর্ণফুলী নদীতে
  • খালে ফেলা বর্জ্য থেকে তীব্র দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী, স্বাস্থ্যঝুঁকি
  • আগে সেচের জন্য খালের পানি ব্যবহার করতেন স্থানীয় কৃষকেরা
  • দূষণে মৃতপ্রায় এ খাল এখন কৃষকদের কোনো কাজে আসছে ন
মো. ইমরান হোসাইন,কর্ণফুলী (চট্টগ্রাম)
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে তোলা গরুর খামারের বর্জ্য গিয়ে মিশছে শিকলবাহা খালে। এতে খালটি ভরে গেছে গোবর আর গোমূত্রে। নেই আগের সেই অবাধ পানিপ্রবাহ। ছবিটি সম্প্রতি উপজেলার শিকলবাহা ইউনিয়নের চরফরিদ এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে তোলা গরুর খামারের বর্জ্য গিয়ে মিশছে শিকলবাহা খালে। এতে খালটি ভরে গেছে গোবর আর গোমূত্রে। নেই আগের সেই অবাধ পানিপ্রবাহ। ছবিটি সম্প্রতি উপজেলার শিকলবাহা ইউনিয়নের চরফরিদ এলাকা থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার শিকলবাহা খালে একসময় ছিল পানির অবাধ প্রবাহ। চলত বড় বড় সাম্পান, বজরা, ময়ূরপঙ্খি, পালতোলা পানসি, সওদাগরি নৌকা। তবে এখন এসব শুধুই স্মৃতি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দখল-দূষণে জৌলুশ হারিয়েছে খালটি। খালের আশপাশে গড়ে ওঠা গরুর খামারের গোবর-মূত্রসহ বিভিন্ন বর্জ্য অবাধে মিশছে পানিতে। বর্তমানে খালটি গোবরের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে।

এদিকে শুধু শিকলবাহা খালই নয়, বিষাক্ত বর্জ্যে হুমকিতে পড়েছে কর্ণফুলী নদীও। বিভিন্ন খাল হয়ে উপজেলার ১ হাজার ২০০ খামারের বর্জ্য গিয়ে মিশছে কর্ণফুলীতে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার শিকলবাহা মাজার গেট এলাকা থেকে শুরু হয়ে আলী হোসেন মার্কেট পর্যন্ত কয়েক কিলোমিটার এলাকায় খালের দুই পাশে গড়ে উঠেছে গরুর খামার। এসব খামারের কয়েক হাজার গরুর গোবর আর মূত্র সরাসরি ফেলা হয় শিকলবাহা খালে। এতে খালটি এখন নোংরা ডোবা ও গোবরের ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। খালে ফেলা বর্জ্য থেকে তীব্র দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। রয়েছে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিও।

সরেজমিনে দেখা যায়, খালের দুই পাশে গড়ে ওঠা গরুর খামারের বর্জ্য পাইপ-ড্রেনের মাধ্যমে সরাসরি খালে ফেলা হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দা বৃদ্ধ আবুল কাশেম বলেন, উপজেলার চারদিকঘেরা কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে মিলিত ছিল শিকলবাহা খালটি। নব্বই দশকের দিকে নৌপথে পণ্য আনা-নেওয়া করা হতো এটি দিয়ে। নৌপথে ছিল বাণিজ্যিক যোগাযোগও। কিন্তু ভূমিদস্যু ও প্রভাবশালীদের দখল-দূষণে এখন সংকটাপন্ন উপজেলার খালগুলো। শিকলবাহা খালের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ।

আব্বাস আলী নামের এক বৃদ্ধ বলেন, ‘ছোটকালে আমরা এই খাল থেকে মাছ ধরেছি, গোসলসহ ব্যবহারের জন্য ঘরে পানিও নিয়ে গেছি। কিন্তু এক যুগ ধরে ভয়াবহ দূষণের কারণে এটি এখন আর খাল নেই, গোবরের খালে পরিণত হয়েছে।’

তবে এ বিষয়ে কোনো খামারি কথা বলতে রাজি হননি।

প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ের তথ্যমতে, কর্ণফুলী উপজেলায় ১ হাজার ২০০টি খামার রয়েছে। এসব খামারের বড় একটা অংশ কর্ণফুলী নদীর সঙ্গে সংযুক্ত খালের পাড় কিংবা আশপাশে গড়ে উঠেছে।

স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, খামারের বর্জ্যে ভরাট হয়ে গেছে শিকলবাহা খাল। কৃষকেরা আগে তাঁদের চাষাবাদে খালের পানি ব্যবহার করতেন, এখন তা সম্ভব হচ্ছে না। তাঁদের দাবি, বর্জ্যে দূষিত হয়ে খাল-বিল ও জলাশয়গুলো বিষের খনিতে পরিণত করেছে। এতে চরলক্ষ্যা ও শিকলবাহা ইউনিয়নের কৃষকদের বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভর করেই চাষাবাদ করতে হয়।

জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কর্ণফুলীর খামারি হারুন চৌধুরী বলেন, বিগত সরকারের আমলে খালটি খনন করা হয়েছিল। খালের বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিত কালভার্ট নির্মাণসহ ঠিকাদার যেসব বাঁধ দিয়েছিল, সেগুলো এখনো রয়ে গেছে, যে কারণে কর্ণফুলী নদী থেকে পানি ঢুকছে না খালে। এ ছাড়া মইজ্জ্যারটেক এলাকায় পশুর বাজারের বর্জ্য ফেলাসহ খালের বিভিন্ন স্থান দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে বিভিন্ন স্থাপনা। অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে খালটি খননে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) আওতাধীন শিকলবাহা খালটি এই জনপদকে বন্যার পানি থেকে রক্ষা করে। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার কৃষক সেচের জন্য এই খালের পানিই ব্যবহার করতেন। কিন্তু দূষণে মৃতপ্রায় এই খাল এখন কৃষকদের কোনো কাজে আসছে না। দুই বছর আগে ২ কোটি ৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা ব্যয়ে খালটি পুনঃখনন করে পাউবো। মেসার্স গরিবে নেওয়াজ এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান খননকাজ বাস্তবায়ন করে। তবে এ নিয়ে স্থানীয়দের অভিযোগ, অপরিকল্পিত খননে কোটি টাকা খরচ করেও রক্ষা হয়নি খালটি। সে সময় খালের প্রায় ৯ কিলোমিটার অংশে খননকাজে অনিয়মের অভিযোগও তুলেছিলেন স্থানীয়রা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শওকত ইবনে শাহিদ বলেন, পাউবোর ডেল্টাপ্ল্যানের আওতায় খালটি পুনর্জীবিত ও চাষাবাদে কৃষকদের উপকারের উদ্দেশে খনন করা হয়েছিল। কিন্তু এরই মধ্যে এটি আগের অবস্থায় রূপ নিয়েছে। খালটি রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসনের এগিয়ে আসা প্রয়োজন।

কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাসুমা জান্নাত আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘খালটি রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ৯ মে শিকলবাহা খালকে দূষণমুক্ত করা ও ডেইরি ফার্ম থেকে সৃষ্ট বর্জ্য জৈব সার হিসেবে ব্যবহারের পরিকল্পনা নিয়ে একটি বিশেষ সভা চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। করা হয় একটি কমিটিও। তবে খাল দূষণমুক্ত করতে নানা পরিকল্পনা নেওয়া হলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গৌরীপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়কসহ ৫ নেতা বহিষ্কার

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী স্বাক্ষরিত বহিষ্কারাদেশ পরিপত্র। ছবি: সংগৃহীত
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী স্বাক্ষরিত বহিষ্কারাদেশ পরিপত্র। ছবি: সংগৃহীত

দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ, অভ্যন্তরীণ হাঙ্গামা, সহিংসতা, রক্তপাত এবং সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভিযোগে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলা বিএনপির পাঁচজন শীর্ষ নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কৃতরা হলেন গৌরীপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আহাম্মদ তায়েবুর রহমান (হিরন), যুগ্ম আহ্বায়ক তাজুল ইসলাম খোকন, সদস্য মাসুদ পারভেজ কার্জন এবং গৌরীপুর পৌর বিএনপির সদস্যসচিব সুজিত কুমার দাস ও যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান পলাশ।

তাঁদের প্রাথমিক সদস্যপদসহ দলের সব পর্যায়ের পদ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। রোববার (৯ নভেম্বর) রাতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী স্বাক্ষরিত এক পরিপত্রে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। পরিপত্রটি দলের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে প্রকাশ করা হয়েছে।

বহিষ্কারাদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, এই নেতারা দলের অভ্যন্তরে সহিংসতা, রক্তপাত ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন, যা বিএনপির শৃঙ্খলা ও নীতির পরিপন্থী। এখন পর্যন্ত বহিষ্কৃত কোনো নেতার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গৌরীপুরে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছিল। এই বহিষ্কারের মধ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব দলের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কঠোর বার্তা দিল।

উল্লেখ্য, মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত হিরন সমর্থকেরা মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে লাগাতার কর্মসূচি দিয়ে আসছিলেন। রোববার দুই পক্ষই আলাদা স্থানে সমাবেশের আয়োজন করে। এ সময় মনোনয়নপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসাইনের সমর্থকেরা হিরনের সভামঞ্চ ভাঙচুর করে। এতে উভয় পক্ষের ১৫-২০ জন আহত হয়। সংঘর্ষের সময় হৃদ্‌যন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল সমর্থক ছাত্রদল নেতা তানজিন আহমেদ আবিদ (২৪) ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে গৌরীপুরে উত্তেজনা বিরাজ করে। এদিকে রাতে দুই পক্ষই আলাদা একে অপরকে দোষারোপ করে সংবাদ সম্মেলন করে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জনগণের চিন্তাভাবনাকে ধারণ করে আগামী দিনের রাজনীতি এগিয়ে নিতে চাই: নুর

সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) প্রতিনিধি 
পথসভায় বক্তব্য দেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর। ছবি: আজকের পত্রিকা
পথসভায় বক্তব্য দেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর। ছবি: আজকের পত্রিকা

জনগণের বিরুদ্ধে যারাই দাঁড়াবে, জনগণের সঙ্গে যারাই তামাশা করবে, তারাই রাজনীতি থেকে আওয়ামী লীগের মতো নাই হয়ে যাবে। আমরা এই তরুণ প্রজন্ম জনগণের সঙ্গে আছি এবং থাকতে চাই। জনগণের চিন্তাভাবনাকে ধারণ করেই আগামী দিনের রাজনীতি এগিয়ে নিতে চাই। গতকাল রোববার রাত ৯টার দিকে উপজেলার বাহিরগোলা চত্বরে আয়োজিত এক পথসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর।

তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ একটি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল ছিল। সেই আওয়ামী লীগ গত ১৬ বছরে ভিন্নমত দমনে জামায়াত-বিএনপি নেতা-কর্মীদের ওপর চালিয়েছিল অত্যাচার, নিপীড়ন ও নির্যাতন। তাদের নেতা-কর্মীদের খুঁজে খুঁজে বের করে দেওয়া হয়েছিল মামলা। করা হয়েছিল তাদের ঘরছাড়া। সর্বশেষ এ দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু এ দেশের সচেতন নতুন প্রজন্ম, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এবং তাদের সঙ্গে যোগ হয়ে ছাত্র-জনতার মিলিত অভ্যুত্থানে এ দেশে আওয়ামী লীগের রাজনীতি নাই হয়ে গেছে।’

ডাকসুর সাবেক ভিপি আরও বলেন, ‘আপনাদের কারও সন্তান, কারও ভাই এই তরুণেরা গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে যে অসাধ্যকে সাধন করেছে, তা গত ৫০ বছরে সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশে গত ৫০ বছরে যে বিভাজন, হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানি, মারামারির রাজনীতি চলেছে তাতে সাধারণ মানুষ, আমজনতা নেতাদের জন্য রক্ত ঝরিয়েছে। নেতাদের জন্য লাশ হয়েছে। কিন্তু নেতায়-নেতায় ঠিকই থাকে। নেতায়-নেতায় ফোনে কথা হয়, আলাপ-আলোচনা হয় আর কর্মীরা রাস্তাঘাটে মারামারি করে জীবন দেয়। তাই জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী আগামীর রাজনীতি ও বাংলাদেশের গতিপথ কী হবে, তা নির্ধারণ করবে এ দেশের নতুন প্রজন্ম ও সাহসী তরুণেরা।’

নুর আরও বলেন, ‘যে তরুণেরা বুলেটের সামনে দাঁড়িয়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিল, এই পরিবর্তন এনেছিল, সেই তরুণেরাই আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবে, ইনশা আল্লাহ।’

পরে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রংপুরের গঙ্গাচড়া আসনে গণঅধিকার পরিষদের প্রার্থী হানিফ খান সজিব, সুন্দরগঞ্জ আসনের প্রার্থী মাসুদ রানা মোন্নাফ এবং সাদুল্লাপুর-পলাশবাড়ী আসনে মো. সুরুজ্জামান সরকারকে পরিচয় করিয়ে দিয়ে সবাইকে পাশে থাকার আহ্বান জানান নুরুল হক নুর।

গণঅধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় উচ্চতর পরিষদের সদস্য মো. হানিফ খান সজিব এবং গণঅধিকার পরিষদের প্রতিষ্ঠাকালীন সংগঠক ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মাসুদ রানা মোন্নাফ, জেলা গণঅধিকার পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার আহ্বায়ক রুমন বসুনিয়া ও উপজেলা গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাসেল মিয়াসহ অনেকে বক্তব্য দেন এ পথসভায়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাবি রেজিস্ট্রার ও রাকসু জিএসের উত্তপ্ত বাগ্‌বিতণ্ডা: ‘বিএনপি নেতা’দের সঙ্গে বৈঠকের অভিযোগ

রাবি প্রতিনিধি  
বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে রাবি রেজিস্ট্রার রাকসু জিএসের দিকে তেড়ে আসেন। ছবি: সংগৃহীত
বাগ্‌বিতণ্ডার একপর্যায়ে রাবি রেজিস্ট্রার রাকসু জিএসের দিকে তেড়ে আসেন। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. ইফতেখারুল আলম মাসউদ এবং রাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সালাউদ্দিন আম্মারের মধ্যে উত্তপ্ত বাগ্‌বিতণ্ডার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রোববার (৯ নভেম্বর) দুপুরে রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। পরে রাতে সেই বাগ্‌বিতণ্ডার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তা আলোচনার জন্ম দেয়।

জানা গেছে, গতকাল দুপুরে জরুরি কাজে রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে যান রাকসু জিএস সালাউদ্দিন আম্মার। সেখানে পৌঁছানোর পর তাঁকে জানানো হয়, রেজিস্ট্রার ‘বিএনপি নেতা’দের সঙ্গে বৈঠকে ব্যস্ত আছেন। আম্মার এরপর ভেতরে প্রবেশ করে তাঁর কাজের বিষয়ে জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার ও তাঁর মধ্যে বাদানুবাদ শুরু হয়।

জিএস সালাউদ্দিন আম্মার জানান, চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের একটি ফাইল নিয়ে জটিলতা ছিল, যা উপাচার্যের স্বাক্ষরের পরও রেজিস্ট্রার দপ্তরে আটকে ছিল। এ বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে তিনি প্রথমবার কল করলেও রেজিস্ট্রার ধরেননি। দ্বিতীয়বার সরাসরি দপ্তরে গেলে তাঁর পিএস তাঁকে জানান যে রেজিস্ট্রার ‘মহানগর বিএনপির’ নেতাদের সঙ্গে মিটিং করছেন।

আম্মার বলেন, ‘আমি সেখানে গেলে তখনো বলে বিএনপির প্রোগ্রাম চলছে। এখন ভেতরে যাওয়া যাবে না। তারপর আমি ভেতরে ঢুকে যাই। গিয়ে বললাম এই চিঠিটা কখন ইস্যু হচ্ছে? তখন উনি বলল আজকে। তারপর বাগ্‌বিতণ্ডা শুরু হলো।’

সালাহউদ্দিন আম্মার আরও বলেন, ‘রেজিস্ট্রার প্রায়ই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। উনি মেয়েদের হলের আন্দোলনে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেছেন। আজ (গতকাল) একপর্যায়ে তিনি আমার দিকেও তেড়ে আসেন। যিনি ভিডিও করছিল তাঁর দিকেও তেড়ে এসে ফোনটা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। ভিডিওতেও স্পষ্ট দেখা যায়—তিনি আমাকে বারবার “গেট আউট” বলে চিৎকার করছেন এবং বলছেন, “এটা আমার কক্ষ, তুমি এখানে কেন?” আমি যদি কোনো অপ্রয়োজনীয় কাজে সেখানে যেতাম, তাহলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতাম না। আমাকে জানানো হয়েছিল, তিনি একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে একান্ত বৈঠক করছেন। তাই দায়িত্বের জায়গা থেকে আমি বিষয়টি যাচাই করতে গিয়েছিলাম। আমি কোনো রাজনৈতিক দলের অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য রাকসুতে নির্বাচিত হইনি; আমি নির্বাচিত হয়েছি শিক্ষার্থীদের স্বার্থ ও অধিকার রক্ষার জন্য।’

অন্যদিকে অধ্যাপক ড. ইফতিখারুল আলম মাসুদ বলেন, ‘চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি নিয়োগ বিষয়ে গতকাল (শনিবার) একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেটা কার্যকর করা নিয়ে আমি আজকে (রোববার) সকাল থেকেই কাজ করছিলাম। এর মধ্যে এক সপ্তাহ আগে এনসিপির রাজশাহী মহানগরের নতুন কমিটির নেতারা আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করার জন্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিয়েছিলেন। ওনারা সাক্ষাৎ করতে এসেছিলেন আজ। ওনাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার সময় বাইরে দুজন ডিন অপেক্ষা করছিলেন।’

তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে জিএস সালাহউদ্দিন আম্মারও দেখা করার জন্য এসেছিল। তাকেও কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সে অপেক্ষা না করে বেয়াদবি করে হঠাৎ আমার চেম্বারে ঢুকে পড়ে। তার দাবি, আমি নাকি ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সভাপতি নিয়োগের চিঠি আটকে রেখেছি। অথচ সকাল থেকেই আমরা বিষয়টির সুরাহা করার জন্য কাজ করছিলাম। ওই সময়ও নতুন সভাপতির নিয়োগ অনুমোদন হওয়ার পরের কাজ করছিল অন্যরা।’

রেজিস্ট্রার আরও বলেন, ‘এই অবস্থায় সে হঠাৎ চেম্বারে ঢুকে পড়ে। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের সভাপতি নিয়োগ হবে। এখানে তাঁর কাজ কী? রাকসুর ভিপি সৌজন্য সাক্ষাৎ করার জন্য এক সপ্তাহ আগে আমাকে মেসেজ দিয়েছে। আমি এখনো বেচারাকে রিপ্লাই দিতে পারিনি। আর এই ছেলে সব জায়গায় গিয়ে মাতব্বরি করে। একটা বেহায়া ছেলে। ভিডিওতেই এর প্রমাণ রয়েছে। আমি তাকে গেট আউট বলে বের করে দিয়েছি। সে কেন একটা অফিস অর্ডার নিয়ে কথা বলতে যাবে? এটা তো আমি বরদাশত করব না। ছাত্র রিলেটেড কোনো বিষয় হলে সে যেতে পারে।’

এ ঘটনায় নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি রাজশাহী মহানগর শাখার আহ্বায়ক মোবাশ্বের রাজ। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘সালাউদ্দিন আম্মার ও রেজিস্ট্রার স্যারের সঙ্গে উত্তপ্ত বাগ্‌বিতণ্ডার সময় সেখানে বিএনপির কেউ ছিল না। আমার উপস্থিতিতে রাজশাহী মহানগর এনসিপির নেতৃত্ব ছিল। আমরা সেখানে সৌজন্য সাক্ষাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু রেজিস্ট্রার স্যারের পিএস সম্ভবত আমাদের বিএনপির নেতা-কর্মী ভেবে তাদের ইনফর্ম করে। এখান থেকেই ভুল-বোঝাবুঝির সূচনা হয়।’

এদিকে, জিএস আম্মার বিএনপিকে জড়িয়ে বক্তব্য দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় রাবি শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী বলেন, ‘আম্মার ও শিক্ষক পরস্পরকে ধমকাচ্ছেন, বিএনপির নাম টেনে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন, অথচ সেখানে বিএনপির কেউই ছিল না। এনসিপির সঙ্গে নিয়মিত দেখা যায় আম্মারকে, অথচ আজ তিনি তাদের চিনলেন না। গণতান্ত্রিক সমাজে যে কেউ আলোচনা করতেই পারে, এতে আমাদের আপত্তি নেই। তবে বিএনপির নাম ব্যবহার করে বিভ্রান্তি ছড়ানো অনৈতিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শ্রমিক দল সভাপতির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগে বিক্ষোভ

চাটমোহর (পাবনা) প্রতিনিধি 
মোন্তাজ আহমেদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, জমি ও জলাশয় দখলসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে বিক্ষোভ মিছিল (ইনসেটে মোন্তাজ আহমেদ)। ছবি: আজকের পত্রিকা
মোন্তাজ আহমেদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, জমি ও জলাশয় দখলসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে বিক্ষোভ মিছিল (ইনসেটে মোন্তাজ আহমেদ)। ছবি: আজকের পত্রিকা

পাবনার চাটমোহর উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি মোন্তাজ আহমেদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, জমি ও জলাশয় দখলসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের একাংশের নেতা-কর্মীরা। রোববার (৯ নভেম্বর) রাতে উপজেলার মূলগ্রাম ইউনিয়নের রেলবাজার এলাকায় এ বিক্ষোভে ইউনিয়ন বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলসহ বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী অংশ নেন।

সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করেন, শ্রমিক দলের সভাপতি পরিচয় ব্যবহার করে মোন্তাজ আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি, এলাকায় সালিসের নামে অর্থ আদায়, জমি ও জলাশয় দখল, থানায় দালালি এবং নিজ দলের নেতা-কর্মীদের ওপর নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপকর্ম করছেন। এসব কর্মকাণ্ডের কারণে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। বিশেষ করে ৫ আগস্টের পর থেকে তাঁর কারণে মূলগ্রাম ইউনিয়নসহ উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রমে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে।

তাঁরা অভিযোগ করেন, মোন্তাজ আহমেদের অপকর্মে ক্ষুব্ধ হয়ে অনেক নেতা-কর্মী দলীয় কর্মসূচি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। দ্রুত দলীয় শৃঙ্খলার স্বার্থে মোন্তাজের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান বক্তারা। সমাবেশ থেকে মূলগ্রাম ইউনিয়নে তাঁকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করা হয়।

এ ব্যাপারে মূলগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি মোহাব্বত মল্লিক বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে মোন্তাজ বিএনপির নাম ব্যবহার করে চাঁদা আদায় ও ভুক্তভোগীদের ওপর বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি করে আসছে। অমৃতকুণ্ডা হাটে অতিরিক্ত টোল আদায়, রেলবাজার এলাকায় শ্রমিকদের কাছ থেকে অর্থ নেওয়া হয়। শ্রমিকেরা আপত্তি জানালে তাদের ঘরবাড়িতে হামলা করা হয়। এসব অভিযোগ এলাকাবাসীর মুখে মুখে। এসব কারণে অনেকেই দল থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন।’

তবে শ্রমিক দল সভাপতি মোন্তাজ আহমেদ সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘চাঁদাবাজির কোনো ঘটনা ঘটেনি। বরং কিছু ব্যক্তি অনুমতি ছাড়াই বিভিন্ন ট্রাক ও যানবাহন থেকে টাকা নিচ্ছিল। বিষয়টি জানার পর আমি তাদের নিষেধ করেছি। এ কারণে তারাই ক্ষিপ্ত হয়ে আমার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে। আমাদের ইজারা নেওয়া হাটের শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কাজ করছি। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের একটি মহল পরিকল্পিতভাবে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত