Ajker Patrika

‘বাবা আর কয়েকটা বছর, তারপর কষ্ট করতে হবে না’, বলেছিলেন হৃদয়

জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম
আপডেট : ২৫ জুলাই ২০২৪, ১৬: ৫৩
‘বাবা আর কয়েকটা বছর, তারপর কষ্ট করতে হবে না’, বলেছিলেন হৃদয়

বাবা কাঠমিস্ত্রি। মা হার্টের রোগী হয়েও বাসাবাড়িতে কাজ করেন। দিনের পর দিন হাড়ভাঙা পরিশ্রমের টাকায় তাঁরা মানুষ করতে চেয়েছিলেন একমাত্র ছেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হৃদয় চন্দ্র তরুয়াকে। কিন্তু একটি বুলেটে তাঁদের সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল। যে বুলেট হৃদয়ের বুকের এক পাশ দিয়ে ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বের হয়ে গেছে। 

১৮ জুলাই চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ, ছাত্রলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষ হয়। সেই সংঘর্ষের একপর্যায়ে গুলিতে আহত হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এই শিক্ষার্থী। চার দিন আইসিইউতে থাকার পর ২৩ জুলাই (মঙ্গলবার) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। এর আগে তিনি চিকিৎসা নেন চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসকেরা জানান, গুলিতে হৃদয়ের ফুসফুস ফুটো হয়ে গেছে। 

হৃদয়ের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলায়। রতন চন্দ্র তরুয়া ও অর্থনা রানী দম্পতির ছেলে। হৃদয়ের এক বড় বোন বিয়ে হয়ে গেছে। তাঁর নাম মিতু রানী। তাঁদের বাড়ি মির্জাগঞ্জ হলেও পটুয়াখালীর সদরে নতুন বাজার এলাকায় ভাড়া থাকেন। 

একমাত্র ছেলে হৃদয়কে হারিয়ে পাগলপ্রায় তাঁর বাবা-মা। কোনোভাবেই কান্না থামানো যাচ্ছে না। হৃদয়ের মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো কেউ মামলা করেনি। 

হৃদয়ের বড় বোন মিতু রানী আজকের পত্রিকাকে জানান তাঁদের পরিবারের জীবনযুদ্ধের কাহিনি। হৃদয়ের মা বাড়িতে বাড়িতে কাজ করে জমানো টাকা ছেলের জন্য পাঠাতেন। ছেলে একদিন বড় হবে। চাকরি করবে, পরিবারের দুঃখ-দুর্দশা মুছবে, সেই আশায় ছিলেন তাঁরা। 

মিতু রানী বলেন, ‘আমার ভাইটা খুবই মেধাবী ছিল। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স যখন পায়, আমার বাবা-মা প্রতিবেশী সবাইকে মিষ্টি খাওয়াই ছিল। হৃদয়ও জানত, তাঁর ওপর কত বড় দায়িত্ব। বাবাকে ফোন করলেই বলত, ‘‘বাবা আর কয়েকটা বছর। তারপর আর কষ্ট করতে হবে না।’’’

কান্না করে করে মিতু রানী বলেন, ‘আমার ভাই তো কোনো অস্ত্র তুলে নেয়নি। কাউকে আঘাতও করেনি। হয়তো কোটা আন্দোলনে শরিক হয়েছিলেন। তাঁকে এভাবে গুলি করতে হবে। আমরা এর বিচার চাই।’ 

ছেলের মৃত্যুর খবরে কয়েকবার অজ্ঞান হয়েছেন মা অর্থনা রানী। জ্ঞান ফিরলেই বিলাপ ধরে কান্না করছেন। কোনো কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না। 

হৃদয়ের সহপাঠীরা জানান, হৃদয় বিভাগে সবচেয়ে মেধাবী ছিলেন। তাঁর ফলাফলও ভালো। নম্র-ভদ্র এমন ছেলেটিকে গুলি করে মেরে ফেলবে তা বিশ্বাস হচ্ছে না তাঁদের। এই ঘটনায় ইতিহাস বিভাগও শোকাহত। 

চবির ইতিহাস বিভাগের সভাপতি শামীমা হায়দার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আহত হওয়ার পরদিন পার্কভিউতে দেখতে গিয়েছিলাম। ওইখানকার চিকিৎসকেরা জানান হৃদয় চন্দ্র তরুয়ার বুকে গুলি এক পাশ দিয়ে ঢুকে অন্য পাশ দিয়ে বের হয়ে গেছে। আমরা তাঁকে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করছিলাম। কিন্তু সে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। চবির ইতিহাস বিভাগের পক্ষ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করছি।’ 

চট্টগ্রামের কোটা আন্দোলনের এক সমন্বয়ক মো. আরেফিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। এটির সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’ 

১৮ জুলাই বিকেলে চট্টগ্রামের বহদ্দারহাটে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগ-যুবলীগের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এ সময় পুলিশ গুলি, টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। পুলিশের পাশাপাশি যুবলীগকেও অস্ত্র হাতে গুলি করতে দেখা গেছে। রিভলবার ও শটগান ব্যবহার করে অন্তত চারজন যুবলীগের কর্মী গুলি ছোড়েন। ওই দিন সন্ধ্যায় হৃদয় চন্দ্র তরুয়া গুলিবিদ্ধ হন। 

গুলি তাঁর বুকের এক পাশ দিয়ে ঢুকে পেছন দিক দিয়ে বের হয়ে গেছে। দ্রুত চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতাল পার্কভিউতে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানকার দায়িত্বরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে রেফার করেন। পরে ১৯ জুলাই ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। ঢামেকে আইসিইউতে চার দিন থাকার পর তিনি গত মঙ্গলবার সকালে মারা যান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৬১৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ: এক্সিম ব্যাংকের নজরুল ইসলাম মজুমদারসহ ৩০ জনের নামে মামলা

‘কথিত আওয়ামী লীগ সদস্যদের’ বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতার বিষয়ে ভারত অবহিত নয়: মুখপাত্র

কলকাতার নিউটাউনে বসে আয়েশ করছেন আওয়ামী লীগ নেতারা

চাকরি না ছেড়েই বিদেশে পাড়ি, ৪৮ শিক্ষক বরখাস্ত

ভিসা ছাড়া পাকিস্তান সফরের চুক্তি হতে পারে শিগগির

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত