Ajker Patrika

চেঙ্গী নদীর ভাঙনে হুমকির মুখে বসতবাড়ি, ফসলি জমি

নীরব চৌধুরী বিটন, খাগড়াছড়ি
নদীভাঙনে মন্টু চাকমার ঘর অর্ধেক বিলীন হয়ে গেছে। ঝুঁকি নিয়েই পরিবার নিয়ে বাকি অংশে থাকছেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে খাগড়াছড়ি সদরের যুবরাজ কাবারীপাড়ায় তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
নদীভাঙনে মন্টু চাকমার ঘর অর্ধেক বিলীন হয়ে গেছে। ঝুঁকি নিয়েই পরিবার নিয়ে বাকি অংশে থাকছেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে খাগড়াছড়ি সদরের যুবরাজ কাবারীপাড়ায় তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে খাগড়াছড়িতে চেঙ্গী নদীর পানি বেড়ে আবার কমে যাওয়ার পর নদীর তীর ভাঙন শুরু করেছে। এতে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার হুমকির মুখে পড়েছে বসতবাড়ি, ফসলি জমি, বিভিন্ন বাগান ও রাস্তা। আতঙ্কে দিন কাটছে নদী তীরবর্তী মানুষের।

সদর উপজেলার যুবরাজ কাবারীপাড়া, পল্টনজয়পাড়া, বেলতলীপাড়া, চেঙ্গীব্রীজ, রাজবাড়ি মারমাপাড়া, গঞ্জপাড়া, দক্ষিণ গোলাবাড়ি, রাজ্যমনিপাড়া, কালাডেবাপাড়া, বটতলী, ফুটবিল, কমলছড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় নদী ভাঙন দিয়েছে।

সদর উপজেলার নদীর পাড়ে দক্ষিণ গঞ্জপাড়ার ৬৪ কৃষক ফসল ফলিয়ে সংসার চালান। এখন তাদের সেই ফসলি জমি নদী কেড়ে নিচ্ছে। কৃষক ক্যচিং মর্গ, আপ্রুমা মর্গ ও হেমাচং মর্গ আজকের পত্রিকাকে বলেন, বার মাস সবজি চাষ করে চলি। নদী ভাঙনে জমি বিলীন হচ্ছে। আগাম শীতের বিভিন্ন সবজি বীজ বপন করেছি। নদী ভাঙনে সব শেষ হয়ে গেছে। কেমন ক্ষতি হয়েছে, বলার বাহিরে।

সদরের যুবরাজ কাবারীপাড়ার মন্টু চাকমার ঘর অর্ধেক বিলীন হয়েছে। তারপরও ঝুঁকি নিয়ে সেখানে বসবাস করছেন। তিনি বলেন, দুই মাস হয়েছে ভাঙনে ঘরের অর্ধেক পড়ে গেছে। সাথে বিভিন্ন ফল গাছ বিলীন হয়েছে। দিনমজুরি করে খাই। অন্য জায়গা কিনে ঘর তুলে চলে যাওয়ার সামর্থ্য নেই। দিন-রাত ভয় লাগে, তারপরও থাকতে হচ্ছে।

যুবরাজ কাবারীপাড়ার জীবনপর্ব চাকমা, জিয়দয় চাকমা ও শান্তিপর্ব চাকমা আজকের পত্রিকাকে জানান, গত পাঁচ-সাত বছরে এই গ্রাম থেকে ১৫ পরিবারের ঘর বিলীন হয়েছে। সবাই অন্য জায়গায় বসবাস করছে। এখন পর্যন্ত কেউ তাদের খোঁজখবর নিতে আসেনি।

সদরের রাজবাড়ি এলাকায় তিনটি ঘর বিলীন হওয়ার পথে। এর মধ্যে রান্না ঘর ও গোয়াল ঘর ও ফল গাছ নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত অংগজাই মারমা ও আনাই মর্গ বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি, পাড় ভেঙে রান্না ঘর, গরু গোলায় ঘর, নারকেল, আম ও কাঁঠাল গাছ ও ষোল হাত ভূমি বিলীন হয়েছে। রাতে ঘুমায় আতঙ্কে। এই ঘরটি বিলীন হয়ে যায় কোথায় গিয়ে উঠব। দ্রুত কিছু করে ভাঙন ঠেকানো দরকার।

নদীভাঙনে রাস্তা, ফসলি জমি বিলীন হয়ে পড়েছে। গতকাল বিকালে খাগড়াছড়ি সদরের পল্টনজয়পাড়ায় তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
নদীভাঙনে রাস্তা, ফসলি জমি বিলীন হয়ে পড়েছে। গতকাল বিকালে খাগড়াছড়ি সদরের পল্টনজয়পাড়ায় তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

এই দিকে ভারি বষর্ণে ও পাহাড়ি ঢলে ছড়ার পানি স্রোতে খাগড়াছড়ি সদরের মহালছড়া নামের এক ছড়ার দুই পাড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। মহালছড়া ও দেওয়ানপাড়া এলাকার ছড়া ভাঙনে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি, বাগান, বসতবাড়ি, পোলট্রি খামার। আতঙ্ক রাত কাটাচ্ছে স্থানীয়রা। ভারি বৃষ্টি হলে রাত জেগে পাহারা দিতে হয়। মহালছড়া এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত জ্যোতিময় ত্রিপুরা ও প্রতিময় ত্রিপুরা বনলতা ত্রিপুরা বলেন, ছড়ার দুই পাড় ভাঙনের কারণে আমাদের ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। দুই বছর আগে পাড়ায় যাতায়াতের কালভার্ট ধসে পড়ে গেছে।

এদিকে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা উপজেলার চরপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, বসতবাড়ি, রাস্তা, গাছ ধলিয়া খালে বিলীন হচ্ছে। মাটিরাঙ্গা পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড মন্দির পাড়ার ক্ষতিগ্রস্ত রিপ্রুচাই মারমা ও পাইচাইং মারমা বলেন, গত বছর ধলিয়া খালের প্রবল স্রোতে বাড়ির কিছু অংশ ভেঙে গেছে। এ বছর আমার গোয়ালঘর ভেঙে গেছে। এখন আমার থাকার একমাত্র ঘরটি ভাঙনের পথে।

নদীভাঙনে বসতঘর, রাস্তা, ফসলি জমি বিলীন হয়ে পড়েছে। গতকাল বিকালে খাগড়াছড়ি সদরের পল্টনজয়পাড়ায় তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
নদীভাঙনে বসতঘর, রাস্তা, ফসলি জমি বিলীন হয়ে পড়েছে। গতকাল বিকালে খাগড়াছড়ি সদরের পল্টনজয়পাড়ায় তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনজুর আলম বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতির পরিমাণ খোঁজ খবর নিয়েছি এবং ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করা হবে। তিন পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ক অবহিত করা হবে বলে জানান।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারি প্রকৌশলী নিখিল চাকমা বলেন, বিভিন্ন এলাকার ভাঙন পরিদর্শন করে উপজেলা পযায়সহ সবগুলো মিলে একশ উপরে ভাঙন পয়েন্ট তালিকা করে উধর্তন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। যতটুকু বরাদ্দ হয়ে আসে, তা দিয়ে কাজ শুরু করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত