Ajker Patrika

অদম্য নারীর স্বপ্নজয়: প্রতিকূল আবহাওয়াতেও নেপচুনে কর্মচাঞ্চল্য

আবদুল মান্নান, মানিকছড়ি (খাগড়াছড়ি) 
আপডেট : ১৮ আগস্ট ২০২৫, ০৯: ০৬
মানিকছড়িতে নেপচুন চা-বাগানে চা-পাতা তুলছেন দেশসেরা শ্রমিক জেসমিন আক্তার ও আরও কয়েকজন নারী শ্রমিক। গত শনিবার বিকেলে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
মানিকছড়িতে নেপচুন চা-বাগানে চা-পাতা তুলছেন দেশসেরা শ্রমিক জেসমিন আক্তার ও আরও কয়েকজন নারী শ্রমিক। গত শনিবার বিকেলে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ব্রিটিশ শাসনামলেই উপমহাদেশে চা-শিল্পের সূচনা। সে সময় বাঙালিদের বিনা মূল্যে চা খাইয়ে চা পান জনপ্রিয় করেছিলেন ব্রিটিশরা। এর পর থেকে বাঙালির জীবনে চা অপরিহার্য হয়ে ওঠে। বর্তমানে দেশে ১৭০টি বৃহৎ চা-বাগান রয়েছে। এর মধ্যে বৃহত্তর চট্টগ্রামে আছে ২২টি বাগান। এর মধ্যে অন্যতম স্বনামধন্য শিল্পগ্রুপ এম এম ইস্পাহানি লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান নেপচুন চা-বাগান।

১৯৬০ সালে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির ভুজপুরে ২ হাজার ৬৬০ একর উঁচু-নিচু পাহাড়ি জমিতে গড়ে ওঠে নেপচুন চা-বাগান। এখানে কাজ করেন প্রায় ১ হাজার ৪০০ শ্রমিক। তাঁদের পদচারণায় নেপচুনের সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে দেশ থেকে বিদেশে। গত বছর (জানুয়ারি–ডিসেম্বর ২০২৪) এ বাগানে উৎপাদন হয়েছে ১০ লাখ ৬৭ হাজার ৬০০ কেজি চা। চলতি মৌসুমে দীর্ঘ খরা ও টানা ভারী বৃষ্টির মধ্যেও সাফল্য ধরে রাখতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকেরা।

২০২৩ সাল থেকে চা-শ্রমিকদের উৎসাহ ও দক্ষতা বৃদ্ধিতে চালু হয় ‘দেশসেরা চা পাতা চয়নকারী’ পুরস্কার। এতে টানা তিনবার সেরা হয়েছে নেপচুন চা-বাগান। প্রথমবার পুরস্কার পেয়েছিলেন উপলক্ষে ত্রিপুরা। এরপর টানা দুবার সেরা হয়েছেন এই বাগানেরই সাহসী নারী জেসমিন আক্তার।

৪২ বছর ধরে নেপচুনে কর্মরত জেসমিন আক্তার স্বামী, তিন সন্তান ও এক পুত্রবধূ নিয়ে সুখী পরিবার গড়ে তুলেছেন। সন্তানদের পড়াশোনা করানোর পাশাপাশি তাঁদের বাগানের কাজে যুক্ত করতে পেরে গর্বিত তিনি। আজকের পত্রিকাকে জেসমিন বলেন, ‘৪২ বছর আগে কুমিল্লার বুড়িচং থেকে স্বামীকে নিয়ে এখানে এসেছিলাম। অদম্য বিশ্বাস আর কর্মপ্রচেষ্টাই আমাকে আজ দেশসেরা করেছে। ১৭০টি চা-বাগানের লক্ষাধিক শ্রমিকের মধ্যে সেরা হওয়া সত্যিই সৌভাগ্যের।’

মানিকছড়িতে নেপচুন চা-বাগানে চা-পাতা তুলছেন দেশসেরা শ্রমিক জেসমিন আক্তার ও আরও কয়েকজন নারী শ্রমিক। গত শনিবার বিকেলে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
মানিকছড়িতে নেপচুন চা-বাগানে চা-পাতা তুলছেন দেশসেরা শ্রমিক জেসমিন আক্তার ও আরও কয়েকজন নারী শ্রমিক। গত শনিবার বিকেলে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

তিনি আরও বলেন, ‘এখানে শ্রমিকদের সন্তানদের পড়াশোনা, চিকিৎসা ও খেলাধুলায় সহায়তা করে বাগান কর্তৃপক্ষ। তাঁদের আন্তরিকতা ও সহযোগিতার কারণেই নারী শ্রমিকেরা উৎসাহ নিয়ে কাজ করেন। আমি সব নারী শ্রমিককে বলি, ইচ্ছাশক্তির চেয়ে বড় প্রতিজ্ঞা নেই। কাজকে ভয় না করে জয় মনে করলে স্বপ্ন একদিন সফল হবেই।’

নেপচুন চা-বাগানের ব্যবস্থাপক মো. রিয়াজ উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যেকোনো সাফল্যের জন্য দরকার ইচ্ছাশক্তি, মনোবল ও সাহস। আমরা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়ন, তাঁদের সন্তানদের পড়াশোনা ও স্বাস্থ্যসেবায় আন্তরিক। চলতি শিক্ষাবর্ষে এই বাগানের শ্রমিক পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থী রবি কুমার ত্রিপুরাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়েছি। জাতীয় চা পুরস্কারে টানা তিনবার নেপচুনের শ্রমিকেরাই সেরা হয়েছেন।’

সম্প্রতি নেপচুন টি এস্টেটসের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. আল মুহিত শেখ ছয় দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কোর্সের মূল্যায়নে প্রথম স্থান অর্জন করেছেন। শ্রমিকবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করে ধারাবাহিক সাফল্য ধরে রাখতে বদ্ধপরিকর নেপচুন কর্তৃপক্ষ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৬৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ: ডেলটা গ্রুপের চেয়ারম্যান ফারুকসহ ১৫ জনের নামে মামলা

১ লাখ ৮২২ শিক্ষক নিয়োগ: যোগ্য প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা চলতি সপ্তাহে

‘মুসলিম ফ্রন্টগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করুন, ইন্টেরিম ভেঙে দিন’

সিলেটে পাথর লুটে জড়িত দুই দলের ৩৫ নেতা

‘বউ আমাকে মিথ্যা ভালোবাসত, টাকা না থাকলে ছেড়ে যাবে, তাই মরে গেলাম’

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত