Ajker Patrika

গৃহবধূকে ধর্ষণের অভিযোগে ১, ভিডিও ছড়ানোয় গ্রেপ্তার ৪

  • মূল অভিযুক্ত পুলিশ হেফাজতে হাসপাতালে
  • ফজর আলীর রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে বিভ্রান্তি
  • ছবি-ভিডিও সরানোর নির্দেশ হাইকোর্টের
 কুমিল্লা প্রতিনিধি 
কুমিল্লার আদালতে গ্রেপ্তার আসামিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
কুমিল্লার আদালতে গ্রেপ্তার আসামিরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

কুমিল্লার মুরাদনগরের একটি গ্রামে দরজা ভেঙে এক সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীকে (২৫) ধর্ষণের অভিযোগে ফজর আলী (৩৮) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া ঘটনার ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে চারজনকে গতকাল রোববার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্ত ফজর আলী পুলিশ হেফাজতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এদিকে ফজর আলীর রাজনৈতিক পরিচয় ঘিরে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় সূত্র বলছে, তিনি আগে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আর গত ৫ আগস্টের পর বিএনপির নেতাদের সঙ্গে চলাফেরা শুরু করেন। তবে আওয়ামী লীগ বা বিএনপির কোনো কমিটিতে তাঁর পদ নেই।

ফজর আলী ছাড়াও গ্রেপ্তার বাকি ব্যক্তিরা হলেন মুরাদনগরের স্থানীয় মোহাম্মদ আলী ওরফে সুমন, রমজান আলী, মো. আরিফ ও মো. অনিক। তাঁদের পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র বলেছে, ভুক্তভোগী ওই নারী মুরাদনগর থানায় শুক্রবার দুপুরে ধর্ষণের অভিযোগে এবং গতকাল পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেছেন। পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় চারজনের নামোল্লেখ এবং অজ্ঞাত পরিচয়ের ২০-২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। ধর্ষণ মামলার অভিযোগে বলা হয়, প্রায় ১৫ দিন আগে তিনি সন্তানদের নিয়ে মুরাদনগরে বাবার বাড়ি বেড়াতে যান। গত বৃহস্পতিবার রাতে ভুক্তভোগীর বাবা-মা একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যান। ভুক্তভোগীর ভাইও বাড়িতে ছিলেন না। বাড়িতে ছিলেন তাঁর বোন, বোনের ছোট দুই ছেলেমেয়ে। তারা ঘুমিয়ে ছিল। রাত ১০টার দিকে ফজর আলী ঘরের দরজা ভেঙে ঢুকে তাঁকে ধর্ষণ করেন।

স্থানীয় সূত্র বলেছে, বিষয়টি টের পেয়ে আশপাশ থেকে লোকজন এসে ফজর আলীকে পেটাতে থাকেন। পুলিশ যে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে, তাঁরা ভিডিও ধারণ করে ছড়িয়ে দিয়েছেন। এদিকে ফজর আলীকে পেটানোর পর তাঁর স্বজনেরা তাঁকে কুমিল্লা শহরের একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। মামলা হওয়ার খবর শোনার পর তিনি সেখান থেকে পালিয়ে যান।

পুলিশ সূত্র বলেছে, গতকাল ভোরে রাজধানীর সায়েদাবাদ এলাকা থেকে ফজর আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ছাড়া ভিডিও ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে মুরাদনগরের স্থানীয় মো. সুমন, রমজান আলী, মো. আরিফ ও মো. অনিককে।

মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুর রহমান বলেন, ‘ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় পর্নোগ্রাফি এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়েছে। মূল অভিযুক্ত ফজর আলীকে (রোববার) ভোরে ঢাকার সায়েদাবাদ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার সময় তাঁকে মারধর করা হয়। তিনি পুলিশ হেফাজতে কুমিল্লা জেলা পুলিশ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।’ তিনি আরও বলেন, ভুক্তভোগীকে বিবস্ত্র অবস্থায় নির্যাতন ও ভিডিও ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে সুমন, রমজান, আরিফ ও অনিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে মোহাম্মদ আলী সুমন নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের ওয়ার্ড কমিটির সাবেক নেতা।

আদালতের পুলিশ পরিদর্শক মো. সাদেকুর রহমান বলেন, গতকাল সন্ধ্যায় চার আসামি সুমন, রমজান, আরিফ ও অনিককে কুমিল্লার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

ফজর আলীর রাজনৈতিক পরিচয় ঘিরে বিভ্রান্তি

মুরাদনগর রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি আল-আমিন বলেন, ‘ফজর আলী দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন। তিনি সাবেক এমপি ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুনের মিছিল-সমাবেশে সক্রিয় ছিলেন এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়ার দেহরক্ষী হিসেবেও কাজ করেছেন।’

উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন অঞ্জনের দাবি, ‘ফজর আলীর সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই। তাঁকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিএনপির কর্মী বানানোর অপচেষ্টা চলছে।’

এ বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া খোকন বলেন, ‘আমি জনপ্রতিনিধি হিসেবে সবার সঙ্গে চলাফেরা করি। ফজর আলীকে ভালোভাবে চিনি না।’

বিএনপির সংবাদ সম্মেলন: অপপ্রচারের প্রতিবাদ

কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড়ে গতকাল বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে উপজেলা বিএনপির নেতারা বলেন, ‘ফজর আলী আওয়ামী লীগ নেতা, অথচ বিএনপির নাম জড়িয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।’ তাঁরা অভিযোগ করেন, অতীতেও বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা ও হয়রানি হয়েছে। এখন সংখ্যালঘু ইস্যুকে ব্যবহার করে নতুনভাবে ষড়যন্ত্র চলছে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কামাল উদ্দিন ভূঁইয়া, সদস্যসচিব মোল্লা মুজিবুল হক, দুলাল দেবনাথ ও দয়ানন্দ ঠাকুর।

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতিবাদ মিছিল

মুরাদনগরের ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল বিকেল ৫টার দিকে কুমিল্লা নগরীর রাণীর বাজার রামঠাকুর আশ্রম থেকে সংখ্যালঘু ঐক্য মঞ্চের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি নগরীর প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে কান্দিরপাড় পূবালী চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য দেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ কুমিল্লার সভাপতি চন্দন কুমার রায়, সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ তাপস কুমার বকসী, আইনজীবী বিকাশ সাহা, অমল দত্ত প্রমুখ।

ছবি-ভিডিও সরানোর নির্দেশ হাইকোর্টের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা জানান, মুরাদনগরে ধর্ষণের শিকার নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে ভুক্তভোগীর সব ছবি ও ভিডিও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আর এ ঘটনায় করা মামলার তদন্তের অগ্রগতি আগামী ১৪ জুলাই জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

কুমিল্লার ঘটনায় করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি সৈয়দ জাহেদ মনসুরের হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। এর আগে গণমাধ্যমে প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন যুক্ত করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মীর এ কে এম নূরুন্নবী গতকাল রিটটি করেন। রিটের পক্ষে তিনি নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শফিকুর রহমান ও তানিম খান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চিৎকার শুনে ছুটে আসা স্থানীয়রা ধর্ষণের শিকার নারীকেই মারধর করে

বিমানবন্দরের প্রকল্পে ‘অসম’ চুক্তি, স্বার্থের সংঘাতে জড়িয়েছেন ঢাকায় ইউএই রাষ্ট্রদূত

মন্ত্রীর আত্মীয়তাই ‘যোগ্যতা’

আদানিকে আরও ৩৮৪ মিলিয়ন ডলার দিল বাংলাদেশ, মোট পরিশোধ ১.৫ বিলিয়ন

অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে স্কুলছাত্রীকে দুই বন্ধুর ধর্ষণ

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত