Ajker Patrika

স্কুলে ফেরা হলো না ওদের

শিমুল চৌধুরী, ভোলা
আপডেট : ১৭ ডিসেম্বর ২০২১, ১৪: ০৮
স্কুলে ফেরা হলো না ওদের

উপকূলীয় দ্বীপ জেলা ভোলা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের শান্তিরহাট এলাকায় মেঘনা পাড়ের বেড়ির ওপরে গড়ে ওঠা একটি ওয়ার্কশপে শ্রমিকের কাজ করতে দেখা গেছে ১২ / ১৩ বছরের এক শিশুকে। তার নাম মো. আরিফ। বাড়ি দৌলতখান উপজেলার মেদুয়া ইউনিয়নের মাঝিরহাট এলাকায়। আরিফের সঙ্গে কয়েক মিনিট আলোচনায় উঠে আসে তার দুঃখগাথা জীবনের কথা। 

ছোটবেলা থেকে ঢাকা মীরের বাগ এলাকায় বসবাস করছিল তারা। সেখানে একটি স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করতে আরিফ। বাবা আচমত আলী নদীতে মাছ শিকার করতেন। কিন্তু মহামারি করোনাভাইরাস এসে তাঁদের জীবনকে যেন এলোমেলো করে দিল। তিন ভাই আর এক বোনের সংসারে দেখা দেয় অভাব অনটন। বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যত্র চলে যান। মা একজন মানসিক রোগী। ফলে অভাবের তাড়নায় এবং অনেকটা বাধ্য হয়েই গত প্রায় ১ বছর আগে গ্রামের বাড়ি ও নানা বাড়ি ভোলায় চলে আসে। সেখানে এসে ভোলা সদরের শিবপুরের শান্তিরহাট মেঘনা নদীর পাড়ে অবস্থিত হাফিজ ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপে দুই হাজার টাকা মাসিক বেতনে শ্রমিকের কাজ শুরু করে। 

ওয়ার্কশপের মালিক মো. বাচ্চু জানান, করোনার কারণে দরিদ্র আরিফের সংসারে অভাব দেখা দিলে সে পড়াশোনা বন্ধ করে ঢাকা থেকে ভোলায় নিজ গ্রামের বাড়ি চলে আসে। ওদের ৪ ভাই-বোনের অভাবী সংসারের অসহায়ত্ব দেখে তিনি আরিফকে দুই হাজার টাকা বেতনে ওয়ার্কশপে শ্রমিকের কাজ করতে দেন। তার সঙ্গে তিন বেলা খাবারের ব্যবস্থাও করে দেন। 

ভোলা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের রতনপুর এলাকায় গড়ে ওঠা মিনার প্লাস্টিকের কারখানায় ৪-৫ জন শিশুকে সুতার কাজ করতে দেখা গেছে। তাদের সবাই সম্প্রতি করোনাভাইরাসের কারণে স্কুল-মাদ্রাসা থেকে ঝরে পড়া শিক্ষার্থী। 

এদের মধ্যে ১৪ বছরের শিশু মো. জোনায়েদ জানায়, সে সদর উপজেলার ইলিশা ইউনিয়নের ইলিশা বাজার সংলগ্ন আল এহসান হোসাইনিয়া মাদ্রাসার পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। করোনার কারণে স্কুল বন্ধ থাকায় গত প্রায় দুই সপ্তাহ আগে এ কারখানায় এসে দুই হাজার টাকা মাসিক বেতনে সুতার কাজ করছে সে। সঙ্গে তিন বেলা খাবারের ব্যবস্থাও রয়েছে। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে জোনায়েদ সবার বড়। 

প্লাস্টিকের এ কারখানায় একই কাজ করছে ১৩ বছরের শিশু জিসান। তার বাবা মো. হেলাল উদ্দিন একজন কৃষক। জিসান ওই এলাকার রতনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র। তিন ভাইয়ের মধ্যে সে সবার বড়। আর তাই এ দরিদ্র বড় ভাইয়ের ওপর দায়িত্বও বড়। সেই চিন্তা করে করোনায় স্কুল বন্ধ থাকায় অভাবের সংসারে আয় করতে গত প্রায় ১ বছর আগে স্কুল থেকে দূরে সরে গিয়ে দুই হাজার টাকা মাসিক বেতনে এ কারখানায় সুতার কাজ করছে সে।

স্কুল থেকে দূরে সরে ভোলা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের শান্তিরহাট এলাকায় মেঘনা নদীর বেড়ির পাড়ে গড়ে ওঠা একটি ওয়ার্কশপে শ্রমিকের কাজ করছে আরিফস্কুলের পড়াশোনা বন্ধ রেখে একই কাজ করছে রতনপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র মেহেদী (১৪)। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী হতদরিদ্র মেহেদীর জন্মের পর পরই তার বাবা জসিম মারা যান। আর মা লাইজুর অন্যত্র বিয়ে হওয়ায় পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে সংসারের হাল ধরে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মেহেদী। তাই মিনার প্লাস্টিকের কারখানায় সুতার কাজ করতে হচ্ছে এ শিশুটির। তিন বেলা খাবারের পর মাস শেষে যে দুই হাজার টাকা বেতন পায় তা দিয়েই কোনোমতে চলে যায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশু মেহেদীর সংসার। 

স্কুল ছেড়ে দিয়ে এ কাজে জড়িয়ে পড়েছে মো. ওমর নামের আরেক স্কুলছাত্র। সে রতনপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। গত প্রায় ২ মাস আগে স্কুল ছেড়ে এ কাজে যোগ দেয়। ওমরের বাবা বাবুল একজন দরিদ্র দিন মজুর। 

দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই এ কাজে নেমেছে এসব শিশুরা। স্কুল ছেড়ে এখন এটাই তাদের একমাত্র কাজ। একদিকে ব্যাপক সমারোহে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে স্কুল থেকে ছিটকে পড়া এমন বহু শিশু-কিশোরের দীর্ঘশ্বাস বাড়ছে। যেই হাতে বই-খাতা আর কলম থাকার কথা, করোনাভাইরাস সে হাতে তুলে দিয়েছে লোহালক্কড়ের কঠিন কাজ। স্কুলগামী এসব কোমলমতি শিশুদের পরিণত করেছে ইস্পাতের কাঠামোয়। স্কুল থেকে ঝরে পড়া উপকূলের অধিকাংশ অসহায় শিশুর গল্পগুলো প্রায় একই রকম। 

এ ব্যাপারে রতনপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা বলছেন, কোনো শিক্ষার্থী স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে কি’না সেটা এক সপ্তাহ পর বোঝা যাবে। এই মুহূর্তে এ বিষয়ে তেমন কিছু বলা যাচ্ছে না। 

এ বিষয়ে ভোলা সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শেখর রঞ্জন ভক্ত মঙ্গলবার আজকের পত্রিকাকে বলেন, কি পরিমাণ শিক্ষার্থী স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে সেটা এক বছর পর জানা যাবে। তবে গত দুই দিনে ৭৩ থেকে ৭৫ শতাংশ শিক্ষার্থী স্কুলে উপস্থিত পাওয়া যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, যে সব শিক্ষার্থী অভাবের কারণে বিভিন্ন জায়গায় কাজে জড়িয়ে পড়েছে তাদের স্কুলে ফিরিয়ে আনতে আপ্রাণ চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া সেকেন্ড চান্স নামে একটি প্রকল্প চালু করা হয়েছে। যেখানে ১৪ ক্লাস পর্যন্ত ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের শনাক্ত করে তাদের পাঠদানের ব্যবস্থা করা হবে। 

এ বিষয়ে ভোলার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ নাজিউর রহমান ডিগ্রি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এম ফারুকুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলেই হবে না। দ্বীপ ও উপকূলীয় এলাকার অনেক শিক্ষার্থী গরিব ও অসহায়। দীর্ঘ সময় স্কুল বন্ধ থাকার কারণে অনেক শিক্ষার্থী স্কুল থেকে দূরে সরে গেছে। অনেকে কাজে জড়িয়ে পড়েছে। এসব শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফেরাতে হলে সরকারকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। প্রয়োজনে আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফেরানোর কর্মসূচি নিতে হবে। সেই সঙ্গে এনজিওগুলোও শিশুদের স্কুলে ফেরাতে বিভিন্নভাবে পদক্ষেপ নিতে পারে। 

এ দিকে ভোলায় কর্মরত ড্রপ ইনটিগ্রিটি ইন স্কুল ওয়াশ প্রকল্পের স্কুল মোবিলাইজার শান্তা মুনিয়া আজকের পত্রিকাকে জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে ১৯ ও মাধ্যমিক পর্যায়ে ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পড়াশোনার বাইরে চলে গেছে। ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত এই জরিপ পরিচালিত হয়। তিনি বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড গভর্ন্যান্সের (বিআইজিডি) ও পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেটরি রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও যৌথ গবেষণার বরাত দিয়ে এসব কথা বলেন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মাদারীপুর-১ আসন: মনোনয়ন পুনর্বহালের দাবিতে জামান মোল্লার সমর্থকদের সড়ক অবরোধ

শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি
শিবচর পৌর এলাকার ৭১ সড়কে কামাল জামান মোল্লার সমর্থক নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভ। ছবি: আজকের পত্রিকা
শিবচর পৌর এলাকার ৭১ সড়কে কামাল জামান মোল্লার সমর্থক নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভ। ছবি: আজকের পত্রিকা

মাদারীপুর-১ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী কামাল জামান মোল্লার মনোনয়ন স্থগিত রাখার ঘটনায় তাঁর কর্মী-সমর্থকেরা বিক্ষোভ করছেন। মনোনয়ন পুনর্বহালের দাবিতে আজ বুধবার (৫ নভেম্বর) সকাল থেকে শিবচর পৌর এলাকার ৭১ সড়কে অবস্থান নেন কামাল জামান মোল্লার সমর্থকেরা।

জানা গেছে, গত সোমবার বিকেলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) সারা দেশের ২৩৭টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করে। এর মধ্যে মাদারীপুর-১ আসনে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয় কামাল জামান মোল্লার নাম। এর প্রতিবাদ জানিয়ে সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকা-ভাঙ্গা মহাসড়ক অবরোধ করেন মনোনয়ন না পাওয়া সাজ্জাদ হোসেন সিদ্দিকী লাভলুর সমর্থকেরা। পরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দলীয় দপ্তর থেকে জানানো হয়, অনিবার্য কারণে মাদারীপুর-১ (শিবচর উপজেলা) আসনের মনোনয়ন স্থগিত রাখা হয়েছে। বিএনপির দপ্তর সম্পাদক রুহুল কবির রিজভী এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

শিবচর পৌর এলাকার ৭১ সড়কে কামাল জামান মোল্লার সমর্থক নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভ। ছবি: আজকের পত্রিকা
শিবচর পৌর এলাকার ৭১ সড়কে কামাল জামান মোল্লার সমর্থক নেতা-কর্মীদের বিক্ষোভ। ছবি: আজকের পত্রিকা

এদিকে মনোনয়ন স্থগিত করার প্রতিবাদ জানিয়ে বুধবার সকাল থেকে শিবচর সদরের ৭১ সড়কে বিক্ষোভ করছেন কামাল জামান মোল্লার সমর্থকেরা। তাঁরা মনোনয়ন পুনর্বহালের দাবি জানিয়ে সড়ক অবরোধ করে রেখেছেন। এ সময় বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে মনোনয়ন স্থগিতের প্রতিবাদ জানান তাঁরা। প্রতিবাদে নারী-পুরুষসহ অসংখ্য সমর্থক অংশ নিয়েছে।

জামান মোল্লার সমর্থিত একাধিক নেতা-কর্মী বলেন, ‘জামান মোল্লা একজন জননন্দিত নেতা। শিবচরে তাঁর প্রচুর সমর্থক রয়েছে। তিনি বিএনপিকে টিকিয়ে রেখেছেন। তাঁর মনোনয়ন স্থগিত মেনে নেওয়া হবে না। মনোনয়ন পুনর্বহাল করতে হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিয়ে নির্বাচনে নামতে চায়: আলতাফ হোসেন চৌধুরী

পটুয়াখালী প্রতিনিধি
জনসভায় বক্তব্য দেন এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী। ছবি: আজকের পত্রিকা
জনসভায় বক্তব্য দেন এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান এবং সাবেক স্বরাষ্ট্র ও বাণিজ্যমন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী বলেছেন, জাতীয় পার্টি এখন চার ভাগে বিভক্ত। এর মধ্যে জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন একটি অংশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে চায়। এমনকি তাদের মধ্যে টাকাপয়সার লেনদেনও হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।

মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) বিকেলে পটুয়াখালী সদর উপজেলার কমলাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ধরান্দী আবাসন মাঠে এক নির্বাচনী জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

আলতাফ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘জি এম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিয়ে এবারের নির্বাচনে অংশ নিতে চায়। শুনেছি, ইতিমধ্যে টাকাপয়সার লেনদেনও হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না। তার ওপর পার্শ্ববর্তী দেশগুলো আওয়ামী লীগকে নিয়ে নির্বাচন করার জন্য চাপ দিচ্ছে।’

বিএনপি নেতা আরও বলেন, ‘এই নির্বাচন যতটা সহজ মনে হচ্ছে, বাস্তবে ততটা সহজ নয়। জনাব তারেক রহমানও একাধিকবার বলেছেন—এই নির্বাচনের পেছনে রয়েছে বিভিন্ন চাপ, পার্শ্ববর্তী দেশের, আওয়ামী লীগের, জাতীয় পার্টির এমনকি গোপনে গোয়েন্দা সংস্থারও।’

দলীয় কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, এখন শুধু মঞ্চে বক্তৃতা দিয়ে হবে না, ঘরে ঘরে যেতে হবে। মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হবে—কেন ভোট হবে, কাকে ভোট দেবে, কেন দেবে, তা জনগণকে বোঝাতে হবে।

ভোটের পরিবেশ নিয়ে আলতাফ হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আমরা এমন এক অবস্থায় পৌঁছেছি, যেখানে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট প্রায় ইতিহাস হয়ে গেছে। গত ১৫ বছরে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। রাতে ভোট হয়েছে, দিনের ভোট কেড়ে নেওয়া হয়েছে। প্রকৃত নির্বাচন না হয়ে ‘সিলেকশন’ হয়েছে। এতে অযোগ্য ও অদক্ষ লোক সংসদে গেছে, পবিত্র সংসদকে অপবিত্র করা হয়েছে।

সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন পটুয়াখালী জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আহমেদ বায়জিদ পান্না। সভাপতিত্ব করেন কমলাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম মৃধা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

গাংনীতে সাপের কামড়ে যুবকের মৃত্যু

গাংনী (মেহেরপুর) প্রতিনিধি 
সাপের কামড়ে মৃত্যুর খবরে স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা
সাপের কামড়ে মৃত্যুর খবরে স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর ভিড়। ছবি: আজকের পত্রিকা

মেহেরপুরের গাংনীতে বিষধর সাপের কামড়ে শামীম হোসেন (১৫) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার (৫ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। নিহত শামীম হোসেন তেঁতুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের মাঠপাড়া করমদি গ্রামের মিজানুর রহমান হারানের ছেলে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সাপে কামড় দেওয়ার পর দ্রুত হাসপাতালে না নিয়ে ওঝা বা কবিরাজের কাছে যাওয়াই এই মৃত্যুর কারণ।

স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার রাতে শামীম হোসেন নিজের কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত আড়াইটার দিকে ঘুমন্ত অবস্থায় তাঁকে বিষধর সাপে কামড় দেয়। বিষয়টি জানতে পেরে বাড়ির লোকজন তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে না নিয়ে কয়েকজন কবিরাজ বা ওঝার কাছে নিয়ে যায়। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে আজ বুধবার সকালে তাঁকে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে কিছুক্ষণ চিকিৎসার পর তাঁর মৃত্যু হয়।

রোহান আহমেদ নামের একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘সকালে আমি খেলার উদ্দেশ্যে বের হয়ে দেখি একজনকে সাপে কেটেছে। দ্রুত লোকজন নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাই। তাঁর অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গিয়েছিল। হাসপাতালে নিতে আমাদের অনেক দেরি হয়ে যায়।’

আকাশ আহমেদ জানান, তাঁরা সকালে ঘর খুঁড়ে অত্যন্ত বিষধর মনে হওয়া সাপটিকে পান এবং সঙ্গে সঙ্গে মেরে ফেলেন।

নিহত শামীম হোসেনের বাবা মিজানুর রহমান হারান বলেন, ‘যখন জানতে পারি আমার ছেলেকে সাপে কেটেছে, তখনই আমরা কয়েক জায়গায় (কবিরাজের কাছে) নিয়ে যাই। কিন্তু অবস্থা খুবই খারাপ হতে থাকে। বুক বন্ধ হয়ে আসছিল। তখন কয়েকজনকে নিয়ে আজ সকালে গাংনী উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে কিছুক্ষণ থাকার পর আমার ছেলে মারা যায়। বাবার কাঁধে সন্তানের লাশ যে কত বেদনার, তা কাউকে বলে বোঝানো সম্ভব না।’

স্থানীয় বাসিন্দা সবুজ আহমেদ আক্ষেপ করে বলেন, ‘সাপে কামড়ালে মানুষ কেন যে ওঝা বা কবিরাজের কাছে নিয়ে যায়, তা বুঝি না। সাপের অ্যান্টিভেনম হাসপাতালে পাওয়া যায়। দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে গেলে রোগী অনেকটা সুস্থ হয়ে যায়। আমাদের পাড়ায় আজ একজন মারা গেল। কারণ, হাসপাতালে নিয়ে যেতে অনেক দেরি করে ফেলেছিল।’

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল আজিজ এই ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘সাপে কাটা রোগীকে আমাদের কাছে সকাল সাড়ে ৭টার সময় আনা হয়। তাঁকে আমাদের কাছে শেষ মুহূর্তে আনা হয়েছিল। তাঁর অবস্থা খুবই খারাপ ছিল।’ তিনি বলেন, রোগীকে অ্যান্টিভেনম দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু এক ঘণ্টা পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।

আব্দুল্লাহ আল আজিজ আরও বলেন, ‘আমরা জানতে পারি সাপে কামড় দেওয়ার পর তাঁকে ওঝা বা কবিরাজের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আসলে মানুষের উচিত যখন কাউকে সাপে কাটবে, তখন অতি দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসা। আমাদের গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অ্যান্টিভেনম মজুত রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মেঘমুক্ত আকাশে উঁকি দিচ্ছে কাঞ্চনজঙ্ঘা, তিস্তার তীরে দর্শনার্থীর ভিড়

লালমনিরহাট প্রতিনিধি 
তিস্তা ব্যারাজ এলাকা ও সানিয়াজান নদীর তীর থেকে স্পষ্ট দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা। আজ সকালে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
তিস্তা ব্যারাজ এলাকা ও সানিয়াজান নদীর তীর থেকে স্পষ্ট দেখা যায় কাঞ্চনজঙ্ঘা। আজ সকালে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারাজ এলাকা থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা। আজ বুধবার সকালে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ ও সানিয়াজান নদীর তীর থেকে মেঘমুক্ত আকাশে এই পর্বতশৃঙ্গের অপরূপ দৃশ্য দেখা যায়। টানা কয়েক দিনের মেঘলা আবহাওয়ার পর তিন দিন ধরে কাঞ্চনজঙ্ঘার এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য ধরা দিচ্ছে।

আজ ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে দিগন্তজোড়া কাঞ্চনজঙ্ঘার সাদা রুপালি চূড়া নতুন দিনের সৌন্দর্যে এক অন্যরকম আবেশ যোগ করেছে। তিস্তা ব্যারাজ এলাকা থেকে বিনা পাসপোর্টে ভারত বা নেপালে না গিয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাওয়ায় স্থানীয় বাসিন্দা ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা ভিড় জমাচ্ছেন। অনেকে পরিবার-পরিজন নিয়ে এই দৃশ্য উপভোগ করছেন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছবি ও ভিডিও শেয়ার করছেন।

ভূগোলবিদদের মতে, কাঞ্চনজঙ্ঘা হিমালয়ের পূর্বাংশে নেপাল ও ভারতের সিকিম রাজ্যের সীমান্তে অবস্থিত। এর উচ্চতা ৮ হাজার ৫৮৬ মিটার (২৮ হাজার ১৬৯ ফুট), যা এভারেস্ট ও কে-টুর পর বিশ্বের তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। তিস্তা ব্যারাজ থেকে এই শৃঙ্গের দূরত্ব তুলনামূলক কম হওয়ায় আকাশ পরিষ্কার থাকলে প্রায়ই ধরা দেয় এর অপরূপ সৌন্দর্য।

সানিয়াজান নদীর তীর থেকে আজ সকালে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
সানিয়াজান নদীর তীর থেকে আজ সকালে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটে কয়েক দিন ধরে দূর আকাশে দেখা মিলছে কাঞ্চনজঙ্ঘা। বিনা পাসপোর্টে ভারত বা নেপালে না গিয়ে তিস্তা ব্যারাজ থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাওয়ায় উচ্ছ্বসিত স্থানীয় বাসিন্দারা।

মেহেদী হাসান শুভ নামের এক দর্শনার্থী বলেন, ‘১০ কিলোমিটার দূর থেকে এসে সকালে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পেয়েছি, মনে হয় যেন সাদা বরফে মোড়া কোনো স্বপ্নের পাহাড়। এমন দৃশ্য দেখতে পেয়ে আমরা আনন্দিত।’

আরএম রিমন নামের এক প্রকৃতিপ্রেমী মনে করেন, কাঞ্চনজঙ্ঘার এই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য তিস্তার তীরের সৌন্দর্যকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। এই দৃশ্যকে কেন্দ্র করে তিস্তা ব্যারাজকে দ্রুত সময়ের মধ্যে একটি আন্তর্জাতিক মানের পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার সুযোগ রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত