Ajker Patrika

দেহের সীমাবদ্ধতা দমাতে পারেনি রিয়াজকে

প্রতিনিধি
আপডেট : ০৩ জুলাই ২০২১, ২০: ১৫
দেহের সীমাবদ্ধতা দমাতে পারেনি রিয়াজকে

নলছিটি (ঝালকাঠি): জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী রিয়াজ মোর্শেদ। কথাবলা থেকে শুরু করে হাঁটাচলা খাওয়া দাওয়া; সবকিছুতে অন্যের সহায়তা নিতে হয়। পায়ে সমস্যা থাকায় ঠিক ভাবে হাঁটতে পারেন না।  শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হওয়ায় নিজে খাওয়া দাওয়া করতে পারেন না। তাঁর মা ছোট বেলা থেকে খাওয়া থেকে শুরু করে গোসলসহ সব কাজ করে দেন। বর্তমানে  ঝালকাঠি জেলার নলছিটি পৌরসভার হাসপাতাল সড়কে একটি ভাড়া বাসায় তাঁর মায়ের সঙ্গে বসবাস করেন। হাসপাতাল সড়কে বাসা নেওয়ার কারণ হিসেবে তাঁর মা বলেন, আমার ছেলের জন্ম থেকেই নানান সমস্যা রয়েছে এখনো হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পরে তাই হাসপাতাল সড়কে বাসা নিয়ে থাকা। এখান থেকে তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়। 

তাঁর মা মিনারা বেগম জানান, আমাদের বাড়ি উপজেলার মগড় ইউনিয়নের করুয়াকাঠি গ্রামে। কিন্তু আমার স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক না থাকায় আমি আমার ছেলেকে নিয়ে নলছিটিতে থাকি। নিজে টুকটাক কাজ করে কোনো  মতে বেঁচে আছি। তবে স্থানীয়দের সহায়তা ছেলের লেখাপড়া চালু রেখেছি। আমার ছেলেও তার এত সমস্যার মাঝেও লেখাপড়া চালিয়ে যেতে আগ্রহী। রিয়াজ নলছিটি সরকারি মার্চেন্টস মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৭ সালে ৩.১১ পয়েন্ট পেয়ে এসএসসি পাস  করেন। তাঁর মা জানান, ২০১৬ সালেই সে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছিল সেইবার রিয়াজ একটি বিষয়ে ফেল করেন। ফেল করার কারণ বলতে গিয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, যে দিন ওর পরীক্ষা ছিল তার আগের দিন আদালতে বসে তাঁর বাবার সঙ্গে আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পর্কছিন্ন হয়। সেদিন ও সেটা সহ্য করতে পারেনি অনেক কান্নাকাটি করে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল। 

তাঁর বাবা মো. আলতাফ হোসেন দ্বিতীয় বিয়ে করে সেই স্ত্রী নিয়ে ঢাকায় বসবাস করতেন। বিগত চার বছর ধরে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। তাঁদের ধারণা তিনি হয়তো ঢাকাতেই মৃত্যুবরণ করেছেন। রিয়াজ বর্তমানে নলছিটি সরকারি ডিগ্রি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে লেখাপড়া করছেন।

নলছিটি সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) কবির হোসেন বলেন, সে প্রতিবন্ধী হলেও কলেজের কোনো  কাজে ভলান্টিয়ার নিয়োগের প্রয়োজন হলে সে সবার আগে এগিয়ে আসে। আবার খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করার জন্য সে উদ্‌গ্রীব থাকে আমরা তাকে সুযোগও দেই। তাঁর মাঝে কোনো  কিছু করার আগ্রহটা প্রবল। এ ছাড়া শারীরিক দুর্বলতার পরও কলেজ খোলাকালীন সময়ে সে নিয়মিত কলেজে আসত। আমাদের কলেজের পক্ষ থেকে তাকে উপবৃত্তির ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এত প্রতিকূলতার মাঝেও সে মসজিদে গিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। করোনার কারণে কলেজ বন্ধ থাকায় এখন সে প্রতিদিন নলছিটি রেনেসাঁ কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারে কম্পিউটার প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করেন। 

রেনেসাঁ কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারের পরিচালক আক্তারুজ্জামান বলেন, রিয়াজ মোর্শেদকে আমরা বিনা মূল্যে কম্পিউটার ট্রেনিং দিয়ে থাকি। সে যত দিন ইচ্ছা এখানে বিনা মূল্যে কম্পিউটার ব্যবহার শিখতে পারবে। নলছিটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুম্পা সিকদার বলেন, রিয়াজ মোর্শেদ ও তাঁর মায়ের সম্পর্কে আমি অবগত তারা আমার কাছে এসেছিলেন। তাঁদেরকে একটি সরকারি ঘর দেওয়ার চেষ্টায় আছি আশা করি তারা একটি সরকারি ঘর পাবেন। এতে তাদের কিছুটা হলেও দুর্ভোগ লাঘব হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফরিদপুরে পালিয়ে যাওয়া আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার, থানার ওসিকে বদলি

‘তুমি ঘুমাও কীভাবে’, সৌদি যুবরাজকে নিয়ে ট্রাম্পের বিস্ময়

বিদায় বিশ্বের দরিদ্রতম প্রেসিডেন্ট

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় ভারতের উদ্বেগ

সৌদি আরবের সঙ্গে ১৪২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির চুক্তি করে নিজের রেকর্ড ভাঙল যুক্তরাষ্ট্র

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত