Ajker Patrika

ঝালকাঠিতে পদ স্থগিত নেতাদের নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতার সভা: দলে ক্ষোভ ও বিভক্তি বাড়ছে

আরিফ রহমান, ঝালকাঠি প্রতিনিধি
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ০৭
কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামালের সমাবেশে রাজাপুর উপজেলা বিএনপির পদ স্থগিত সাধারণ সম্পাদক নাসিম উদ্দিন আকন (বাঁয়ে)। ছবি: সংগৃহীত
কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামালের সমাবেশে রাজাপুর উপজেলা বিএনপির পদ স্থগিত সাধারণ সম্পাদক নাসিম উদ্দিন আকন (বাঁয়ে)। ছবি: সংগৃহীত

ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঠালিয়া) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল পদ স্থগিত ও বহিষ্কৃত নেতাদের নিয়ে সভা-সমাবেশ করায় দলে ক্ষোভ ও বিভক্তি দেখা দিয়েছে।

অভিযোগ উঠেছে, সম্প্রতি তিনি রাজাপুর উপজেলা বিএনপির স্থগিত সাধারণ সম্পাদক নাসিম উদ্দিন আকন ও কাঠালিয়া উপজেলা বিএনপির স্থগিত সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন নিজাম মীরবহরসহ পদ স্থগিত হওয়া একাধিক নেতাকে নিয়ে সভা-সমাবেশ করেছেন। এই ঘটনায় দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।

কাঠালিয়া উপজেলা শ্রমিক দলের সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, ‘রাজাপুর ও কাঠালিয়ার বিএনপি এখন দুভাগে বিভক্ত। কেন্দ্র থেকে বহিষ্কৃত বা স্থগিত ব্যক্তিদের কর্মসূচিতে অংশ নিতে নিষেধ থাকলেও এখানে তা মানা হচ্ছে না। মনে হয় রাজাপুর-কাঠালিয়ায় ভিন্ন একটি বিএনপি চলছে।’

জাকির হোসেনের দাবি, বিষয়টি কেন্দ্রীয় নেতাদের অবহিত করা হয়েছে।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, নাসিম উদ্দিন আকন চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশ পান। সন্তোষজনক জবাব না পাওয়ায় ২৫ জানুয়ারি জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে তাঁর পদ স্থগিত করা হয়।

পরে ২ ফেব্রুয়ারি বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে দলীয় গঠনতন্ত্রের ৫(গ) ধারা মোতাবেক তাঁর প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পদ সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়।

একইভাবে কাঠালিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন নিজাম মীরবহরকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে সমর্থন ও নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ার অভিযোগে ৫ এপ্রিল শোকজ করা হয়। পরদিন সন্তোষজনক জবাব না পাওয়ায় তাঁর পদ স্থগিত করা হয় এবং তাঁকে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়।

কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামালের সমাবেশে কাঠালিয়া উপজেলা বিএনপির পদ স্থগিত সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন নিজাম মীরবহর (বাঁয়ে)। ছবি: সংগৃহীত
কেন্দ্রীয় ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামালের সমাবেশে কাঠালিয়া উপজেলা বিএনপির পদ স্থগিত সাধারণ সম্পাদক আখতার হোসেন নিজাম মীরবহর (বাঁয়ে)। ছবি: সংগৃহীত

নাসিম উদ্দিন আকন বলেন, ‘আমাকে বহিষ্কার করা হয়নি, শুধু পদ স্থগিত করা হয়েছে। জেলা বিএনপির রোষানলের কারণে এই সিদ্ধান্ত। রাজাপুরের মানুষ ও নেতা-কর্মীরা আমাকে ভালোবাসেন। তাই রাজনৈতিক, পারিবারিকসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাঁরা আমাকে দাওয়াত দেন। এটা আমার গ্রহণযোগ্যতা। তাই রাজনৈতিক বা সামাজিক অনুষ্ঠানে আমি স্বাভাবিকভাবেই অংশগ্রহণ করি। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণে আমার কোনো বাধা নাই।’

পদ স্থগিত নেতা আখতার হোসেন নিজাম মীরবহরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে কেন্দ্রীয় নেতা রফিকুল ইসলাম জামাল বলেন, ‘বহিষ্কৃত ব্যক্তিদের সঙ্গে কাজ করা যায় না; তবে যাঁদের পদ স্থগিত করা হয়েছে, তাঁরা মিছিল-সমাবেশে অংশ নিতে পারেন। তাঁদের পদ না থাকলেও তাঁরা দলের অংশ, তাই সভায় অংশগ্রহণে সমস্যা নেই।’

রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘যে আওয়ামী লীগ করে, সেও যদি আমার মিছিল-মিটিংয়ে আসে, আমি কি তাকে বের করে দেব? মিছিল-মিটিংয়ে আসা এক জিনিস, কিন্তু পদাধিকার বলে কমিটি বা সংগঠন করা আরেক জিনিস। সাংগঠনিকভাবে যার পদ স্থগিত, সে কমিটিতে থাকতে পারে না। তবে মতবিনিময় সভা বা জনসভায় তার উপস্থিতিতে আমি কোনো সমস্যা দেখি না।’ নাসিম উদ্দিন আকনের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করার বিষয়ে জানতে চাইলে, তিনি ব্যাখ্যা দেন, ‘না, ওটা আমাদের অস্থায়ী কার্যালয়। শাহজাহান ওমর দল থেকে যাওয়ার পর ওটা রাজাপুর বিএনপির অস্থায়ী অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। সেখানে তারেক রহমান ও জিয়াউর রহমানের ছবি আছে। নতুন অফিস এখনো নেওয়া হয়নি।’

রফিকুল ইসলাম জামাল আরও বলেন, ‘নাসিম উদ্দিন আকন একটি স্কুল ও মাদ্রাসার গভর্নিং বডির সভাপতি। আমি যদি সেই জায়গায় যাই, তাহলে কি সে থাকবে না? আমার দলের কেউ যদি দল থেকে বহিষ্কারও হয়, কিন্তু সেই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি বা শিক্ষক হিসেবে থাকে, তাহলে সে উপস্থিত থাকলে সমস্যা কোথায়?’

জেলা বিএনপির সদস্যসচিব অ্যাডভোকেট শাহাদাৎ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যাঁরা পদ স্থগিত নেতাদের নিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছেন, এতে বিভ্রান্তি ও বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে। বিষয়টি কেন্দ্রীয়ভাবে জানানো হয়েছে।’

রাজাপুর ও কাঠালিয়া বিএনপির মধ্যে বিরোধ ও দ্বন্দ্বে মাঠের রাজনীতি আরও জটিল হয়ে উঠছে। কেন্দ্রীয় নেতার অংশগ্রহণে পদ স্থগিত নেতাদের নিয়ে সভা হওয়ায় স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, দলীয় সিদ্ধান্ত মানা না হলে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা কোথায়?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...