Ajker Patrika

তেঁতুলিয়া গিলে খাচ্ছে ফসলি জমি, ভিটেমাটি, নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ

শিমুল চৌধুরী, ভোলা 
তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে মানুষের বাড়িঘর, জমিজমা। ছবি: আজকের পত্রিকা
তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙনে বিলীন হচ্ছে মানুষের বাড়িঘর, জমিজমা। ছবি: আজকের পত্রিকা

ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙন ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। অব্যাহত ভাঙনে বিলীন হয়েছে উপজেলার নীলকমল ইউনিয়নের প্রায় ২ কিলোমিটার এলাকা। নদীতে তলিয়ে গেছে মানুষের ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি। নদীভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে তেঁতুলিয়া নদীতীরবর্তী নীলকমল, নুরাবাদ ও মুজিবনগর ইউনিয়নের বাসিন্দারা। নদীভাঙন রোধে সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

স্থানীয়রা জানান, নীলকমল ইউনিয়নের দুটি ওয়ার্ডের প্রায় দুই শ পরিবারের তেঁতুলিয়াপারে ঘরবাড়ি ছিল। গত কয়েক মাসে ভাঙনে বসতবাড়ি ও ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। অনেক গরিব জেলে ও প্রান্তিক কৃষক পরিবার ঘরবাড়ি, জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। অনেকে নদীভাঙনের কারণে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। ফলে জনপদের জনসংখ্যা কমছে এবং সামাজিক কাঠামো ভেঙে পড়ছে।

সবচেয়ে বেশি ভাঙনের কবলে পড়েছে নুরাবাদ ইউনিয়নের গাছিরখাল, আহাম্মদপুর ইউনিয়নের ভারানি বাজার, নজরুল নগর ইউনিয়নের বাবুর হাট ও নীলকমল ইউনিয়নের ঘোষের হাট এলাকা।

নীলকমল ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আ. রহিম দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে পরিবার নিয়ে নদীপারে বসবাস করেছেন। তিনি জানান, নদীতে বসতবাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়ে তিনি এখন নিঃস্ব। ৯ নম্বর ওয়ার্ডের তেঁতুলিয়া নদীর পারে ২ একর জমি বন্দোবস্ত সূত্রে মালিক হয়ে পরিবার নিয়ে বসতি গড়েছিলেন দুলারহাট থানার নীলকমল ইউনিয়নের চর নুরুল আমিন গ্রামের বাসিন্দা ৮০ বছর বয়সী জয়নাল আবেদিন। তিনি জানান, গত কয়েক বছরে তেঁতুলিয়ার ভাঙনে ভিটেবাড়ি ও কৃষিজমি হারিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি। কৃষক আ. মতিন জানান, তেঁতুলিয়াতীরে তাঁর ১২ একর জমি ছিল। ৫ একর জমি লগ্নি করে বাকি জমিতে তিনি বিভিন্ন ফসল চাষাবাদ করতেন। জমিতে বিভিন্ন ফসল ফলিয়ে সংসার চালাতেন। নদীভাঙনে তাঁর ১২ একর জমি বিলীন হয়ে গেছে।

জেলে সামসুদ্দিন জানান, তিনি পরিবার নিয়ে দীর্ঘদিন এই নদীতীরে বসবাস করতেন। নদীতে মাছ ধরে চালাতেন পাঁচজনের সংসার। তেঁতুলিয়া ভাঙনের ফলে বসতভিটা হারিয়েছেন তিনি। এখন বেড়ির ঢালে একটি ঝুপড়ি ঘর তুলে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। সরকারের কাছে মাথা গোঁজার ঠাঁই চান তিনি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. আলম জানান, তেঁতুলিয়া নদীভাঙন এখানকার মানুষের জন্য একটি দুঃস্বপ্নের নাম। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানে সরকারের জরুরি পদক্ষেপ প্রয়োজন। যথাযথ পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই ভাঙন রোধ করা গেলে তেঁতুলিয়া নদীতীরের মানুষ ঘুরে দাঁড়াতে পারবে এবং মানুষের মুখে আবারও ফুটবে আশার আলো।

এদিকে, এলাকাবাসীর পক্ষে চরফ্যাশন উপজেলায় ব্লক স্থাপনসহ নদীভাঙন প্রতিরোধে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে গত ১৪ জুন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও সচিব বরাবর একটি আবেদন করেছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের (আপিল বিভাগ) আইনজীবী মোহাম্মদ সিদ্দিক উল্লাহ মিয়া। তাঁর সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপসচিব সুজিত হাওলাদার ২৩ জুন চরফ্যাশন উপজেলার নদীভাঙন রোধে জরুরি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশ দেন। জানতে চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ড-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আসফাউদদৌলা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি সম্প্রতি ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবও পাঠিয়েছি। এ ছাড়া ভাঙন রোধে জরুরি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে একটি নির্দেশনাও এসেছে। এ ব্যাপারে দ্রুত কাজ শুরু করা হবে বলে তিনি জানান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত