Ajker Patrika

চাঁদা না পেয়ে সড়কে দোকান তুলে পথরোধ, ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মদদের অভিযোগ

শিমুল চৌধুরী, ভোলা
আপডেট : ১০ আগস্ট ২০২২, ১১: ৪৭
চাঁদা না পেয়ে সড়কে দোকান তুলে পথরোধ, ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মদদের অভিযোগ

ভোলার সদর উপজেলার চর সামাইয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বড় চর সামাইয়া গ্রামে ৩৫ বছরের পুরোনো মাটির সড়কের মাঝে পাকা দোকানঘর তুলে পথচারীদের পথ রোধ করেছে একটি প্রভাবশালী পরিবার। ওই পরিবারকে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মদদ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

স্থানীয়রা ভোলা জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও ভোলা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বরাবর লিখিত অভিযোগ করলে পুলিশ নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়। অবিলম্বে দোকানঘরটি তুলে দিয়ে সড়কটি পাকা করে জনগণের চলাচলের উপযুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

সরেজমিনে গিয়ে পথচারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভোলা শহর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমের তেঁতুলিয়া নদী থেকে পূর্ব দিকে উঠে আসা প্রবহমান খাল। খালের পাশে একটি সরকারি হালট। গত ৩৫ বছর ধরে ইউনিয়নের বড় চর সামাইয়া গ্রামের প্রায় ৩০টি পরিবারের দুই শতাধিক মানুষ চলাচলের জন্য হালটটি ব্যবহার করে আসছে। হালটটি পরে মাটির সড়কে পরিণত হয়েছে। যার নাম খামারবাড়ি সড়ক। সড়কটি ইউনিয়নের উত্তর-দক্ষিণ বরাবর বিশ্বরোড-ধোপাবাড়ি পাকা সড়কের পাশ দিয়ে পশ্চিম দিকে খামারের দিকে চলে গেছে। কোনো আলোচনা ছাড়াই গত ১৮ জুলাই চর সামাইয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নজরুল ইসলামের (সাবেক ইউপি সদস্য) বোন আঙ্কুরি বেগম ও তাঁর জামাই মো. আলম খামারবাড়ি সড়কের প্রবেশমুখের মাঝে (পাকা সড়কের পাশে) পাকা দোকানঘর তুলেছেন এবং সড়কের মাঝে সুপারিগাছ লাগিয়ে দিয়েছেন। ফলে পথচারীদের চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় রিকশা-ভ্যান চলাচলও। পরে পুলিশ ওই কাজ বন্ধ করে দেয়। সড়কটির মধ্যে হাঁটু সমান কাঁদাপানি জমে গেছে। পথে একটি কালভার্ট রয়েছে। প্রায় এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ওই সড়কের আশপাশে ও দূরে বেশ কয়েকটি পরিবার রয়েছে। রাস্তার পাশ দিয়ে পল্লী বিদ্যুতের খুঁটিতে সঞ্চালন লাইন টানা রয়েছে।

জানতে চাইলে স্থানীয় অটোরিকশাচালক শাহজাহানের স্ত্রী বিউটি বেগম বলেন, ‘আমরা প্রতি বছর টাকা দিতাম। কিন্তু এখন টাকা না দেওয়ায় আমাদের চলাচলের পথ বন্ধ করে দোকানঘর নির্মাণ করেছে আঙ্কুরি বেগম।’ স্থানীয় এক চাকরিজীবী আলমগীর জানান, এটি সরকারি হালট ছিল। পরে হালটের মাথায় খামারবাড়ি হলে রাস্তা চওড়া হয়েছে। শুষ্ক মৌসুমে গাড়িতে মানুষ চলাফেরা করেছে। হঠাৎ আঙ্কুরি বেগম রাস্তার মালিকানা দাবি করে মোটা টাকা দাবি করেন। টাকা না দেওয়ায় রাস্তার মধ্যে তাঁরা পাকা ঘর তুলেছেন। অথচ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) থেকে কয়েকবার এই রাস্তায় মাটি ফেলে সংস্কার করা হয়েছে।

ইউনিয়ন ভূমি অফিস থেকে তোলা কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ধোপাবাড়ির সামনের খালের পাশ দিয়ে খামারবাড়িতে যাওয়ার মাটির সড়কটি (হালট) চর সামাইয়া ইউনিয়ন পরিষদের। জমির পরিমাণ ১ একর ১৮ শতাংশ, যা বিএস জরিপ অনুসারে ৪ নম্বর খতিয়ানের ৩ নম্বর দাগভুক্ত, যা চর সামাইয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সচিবের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।

চর সামাইয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নজরুল ইসলাম ও তাঁর বোন আঙ্কুরি বেগমের দাবি, বিএস জরিপে আঙ্কুরি বেগমের জমির পরিমাণ ১৮ শতাংশ, যা তাঁর ক্রয়কৃত রেকর্ড সম্পত্তি। এখানে কোনো সরকারি বা ইউনিয়ন পরিষদের জমি নেই। সরকারি জমি আরও ২০০ হাত পশ্চিম থেকে শুরু। এখানে যদি সরকারি জমি থেকেও থাকে, তা খালে ভেঙে ফেলেছে। তার নিজেরও (আঙ্কুরি) ২ শতাংশ জমি খালে ভেঙে গেছে। তার মালিকানাধীন জমির ওপর দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে জনগণ হাঁটাহাঁটি করেছে সত্য, কিন্তু তিনি ঢাকায় থাকাকালীন এখানে একটি খামারের মালামাল আনা-নেওয়ায় রাস্তা প্রশস্ত করে ফেলেছে। এতে তাঁর অনেক জমি রাস্তার মধ্যে চলে গেছে।

আঙ্কুরি বেগম বলেন, তিনি তাঁর জমির ওপর দিয়ে গাড়ি চলার মতো রাস্তা দেবেন না। মানুষ হাঁটছে হাঁটুক, এ কারণে দোকানঘর তুলেছেন এবং পায়ে হাঁটা পথ দিয়েছেন।

তবে আঙ্কুরি বেগমের ১৮ শতাংশ জমি বুঝিয়ে দিলে তাঁর বাড়তি জমির দাবি নেই বলে জানান।

স্থানীয়দের দাবি, এখানে ইউনিয়ন পরিষদের হালটের জমি ঠিকই আছে। সম্প্রতি ইউপি চেয়ারম্যান আঙ্কুরি বেগমের জমির দক্ষিণ পাশের জমিটি ক্রয় করেছেন। চেয়ারম্যান তাঁর জমি বুঝে নিতে গিয়ে আঙ্কুরি বেগমকে আরও উত্তরে ঠেলে দিয়েছেন। এ কারণেই যত সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তবে একাধিক ব্যক্তি জানান, দীর্ঘদিন আঙ্কুরি বেগম টাকার বিনিময়ে পথচারীদের চলাচল করতে দিয়েছেন। কিন্তু সম্প্রতি আঙ্কুরি বেগম টাকা না পাওয়ায় চলাচলের পথ বন্ধ করে দোকানঘর নির্মাণ করেন, যাতে স্থানীয়রা তাঁকে বাধ্য হয়ে টাকা দিয়ে চলাচল করতে পরেন।

এ বিষয়ে চর সামাইয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. মহিউদ্দিন হাওলাদার বলেন, যখন পুরো জমি মাপা হবে, তখন বোঝা যাবে রাস্তার জমি ইউনিয়ন পরিষদের, নাকি আঙ্কুরি বেগমের। এর জন্য কাগজপত্র নিয়ে বসতে হবে। তবে আঙ্কুরি বেগম তাঁর জমি না মেপে, রাস্তার মধ্যে পাকা দোকানঘর তুলে পথ রোধ করা অযৌক্তিক। আর যদি তিনি চলাচলের পথ রেখে দোকানঘর নির্মাণ করেন, তবে পথচারীদের সমস্যা না, খামারবাড়ির লোকজনের সমস্যা। কারণ তাদের গাড়ি চলবে না। এখন সবাই যদি এই সমস্যার সমাধান চায়, বসে সমাধান করতে হবে।

ভোলা সদর উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আলী সুজা বলেন, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। কাগজপত্রে রাস্তার জমিটি ইউনিয়ন পরিষদের। এক নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত হলে তিনি সরাসরি ব্যবস্থা নিতে পারতেন। ইউনিয়ন পরিষদের হওয়ার কারণে আবেদনকারীদের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করতে বলেছিলেন। মামলা করলে সরেজমিন তদন্তে গিয়ে সত্যতা পেলে পথরোধকারী ওই স্থাপনা ভেঙে ফেলা যায়। তার পরেও তিনি বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শিক্ষার্থীদের ‘কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে’ সপরিবারে পালিয়েছেন বিএসবির বাশার

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ: পাকিস্তানে নিহত বেড়ে ২৬, ভারতে ১০

সীমান্তে সাদা পতাকা উড়িয়ে আত্মসমর্পণের ইঙ্গিত দিয়েছে ভারত: পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী

পাকিস্তানে হামলায় ‘লোইটারিং মিউনিশনস’ ব্যবহারের দাবি ভারতের, এটি কীভাবে কাজ করে

এনসিপি নেতা সারওয়ার তুষারের বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগের নিষ্পত্তি হয়নি: শহিদুল আলম

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত