Ajker Patrika

কুয়াকাটা সৈকত দখল করে মার্কেট

  • লোহার পাত আর কাঠ দিয়ে তৈরি মার্কেটটি দোতলা করা হচ্ছে।
  • মার্কেট সম্প্রসারণ করতে গিয়ে দখল করা হচ্ছে সৈকত।
  • মার্কেটের কথিত মালিকের দাবি, ওই জমির মালিক তিনি।
কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০২৫, ১০: ৪০
সৈকত দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে মার্কেট। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এই মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করলেও নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা। সম্প্রতি পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত এলাকায়।	ছবি: আজকের পত্রিকা
সৈকত দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে মার্কেট। পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এই মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করলেও নেওয়া হয়নি কোনো ব্যবস্থা। সম্প্রতি পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতঘেঁষা মার্কেটটি একসময় টাইলস মার্কেট নামে পরিচিত ছিল। নিচতলায় রয়েছে ৪০-৫০টি দোকান। অনেক আগেই এই মার্কেটকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে কুয়াকাটা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই চলছে কার্যক্রম। শুধু তাই নয়, সৈকত দখল করে মার্কেটটি সম্প্রসারণ করা হচ্ছে প্রশাসনের নাকের ডগায়ই। টিন আর কাঠের মাচার ওপর ইট-সিমেন্টের ঢালাই দিয়ে দ্বিতীয় তলায় করা হচ্ছে আবাসিক হোটেল ও রেস্টুরেন্ট।

অভিযোগ উঠেছে, মার্কেটটির মালিক দাবি করা মো. সাজিদুল ইসলাম হিরু মিয়া নামের এক ব্যক্তি সৈকত দখল করছেন। তবে প্রশাসন ও এলাকাবাসী বলছেন, হিরু মিয়া নিজেকে জমির মালিক দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে মার্কেটের জমি খাস খতিয়ানের। পাশে তাঁদের একটি বন্দোবস্তের জমি ছিল, যা সমুদ্রে বিলীন হয়ে গেছে।

স্থানীয় সূত্র বলেছে, ২০১১ সালে নির্মিত মার্কেটের ফ্লোর টাইলস দিয়ে তৈরি করায় এটি টাইলস মার্কেট নামে পরিচিতি পায়। মার্কেটের মালিক দাবিদার মো. সাজিদুল ইসলাম হিরু মিয়া সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলের সংশ্লিষ্ট না হলেও যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে, তাদের ‘ম্যানেজ’ করে নিজের ব্যবসা টিকিয়ে রাখেন।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, কুয়াকাটা সৈকতের জিরো পয়েন্টের পশ্চিম পাশে প্রায় ২০০ ফুট লম্বা টাইলস মার্কেটের পশ্চিম পাশটা গিয়ে ঠেকেছে সৈকতের ভেতরে। জোয়ারের পানি মার্কেটে এসে আছড়ে পড়ছে। সেটিকে আরও ২০-৩০ ফুট বর্ধিত করা হচ্ছে। সাগর থেকে বালু তুলে লোহার পাত আর কাঠ দিয়ে তৈরি মার্কেটটি দোতলা করা হচ্ছে। দোতলায় হচ্ছে আবাসিক হোটেল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মার্কেটের এক দোকানি বলেন, ‘বর্ষায় সাগরের ঢেউ এসে আছড়ে পড়ে মার্কেটের পাশে। এভাবে মার্কেট সম্প্রসারণে পর্যটক ও ব্যবসায়ীরা ঝুঁকিতে পড়েছেন। তা-ও এত দিন যেভাবে ছিল, ভয় কম ছিল। কিন্তু এখন মার্কেটটি আরও বড় করা হচ্ছে। ওপরে ঢালাই দেওয়া হচ্ছে। এতে যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। আমরা গবির মানুষ। এটা নিয়ে কথা বললে আমাদের মার্কেট থেকে নামিয়ে দেবে। ব্যবসা না করলে খাব কী?’

কুয়াকাটা ট্যুর গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কে এম বাচ্চু বলেন, কুয়াকাটায় স্থায়ী কোনো মার্কেট না থাকায় এই মার্কেট কিছুটা হলেও পর্যটকদের কেনাকাটার চাহিদা পূরণ করছে। তবে মার্কেটটি ঝুঁকিপূর্ণ। তাই পৌরসভা সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দিয়েছে। তবে পুরোপুরি সৈকতের মধ্যে তিনি (সাজিদুল ইসলাম হিরু মিয়া) মার্কেটটিকে কীভাবে বর্ধিত করছেন, জানা নেই। এতে সৈকতের সৌন্দর্যও নষ্ট হচ্ছে।

তবে অভিযোগের বিষয়ে সাজিদুল ইসলাম হিরু মিয়া বলেন, ‘এই জমির মালিক আমি, আমার জমির অনেকাংশ সমুদ্রের মধ্যে রয়েছে। এটা নিয়ে প্রশাসনের সঙ্গে বারবার বৈঠক হয়েছে, আবারও হবে। আর এই স্থাপনা ঝুঁকিপূর্ণ নয়, প্রকৌশলীর পরামর্শ নিয়ে কাজ করা হয়েছে।’

কুয়াকাটা পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ইয়াসিন সাদেক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এই জমির ওপর আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি। তাই কাগজ হাতে না পেয়ে বিস্তারিত বলতে পারছি না। আগামী রোববারের মধ্যে পেপারস হাতে পেয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ ব্যাপারে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সমুদ্রসৈকতের মালিক একমাত্র সরকার। এখানে ব্যক্তিমালিকানার কোনো সুযোগ নেই। পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে আমরা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন কলাপাড়ার কার্যকরী সদস্য মেজবাহ উদ্দিন মাননু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যতদূর জানি, ২০১১ সালের উচ্চ আদালতের রায়ে উল্লেখ রয়েছে—বেড়িবাঁধের বাইরে এ ধরনের স্থাপনা নির্মাণের কোনো সুযোগ নেই। মূলত প্রশাসনের উদাসীনতার কারণেই তারা এই সাহস পাচ্ছে। এটি সৈকতের জন্য মারাত্মক হুমকি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

নতুন মেট্রো নয়, রুট বাড়ানোর চিন্তা

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত