Ajker Patrika

ঘর হারিয়ে থাকছেন প্রতিবেশীর গোয়াল ঘরে

বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি
ঘর হারিয়ে থাকছেন প্রতিবেশীর গোয়াল ঘরে

বরগুনার বেতাগী উপজেলার ঝিলবুনিয়া গ্রামের মকবুল হাওলাদার। পৈতৃক একখণ্ড একটি ভিটা ছাড়া আর কিছু নেই সত্তরোর্ধ্ব মকবুলের। জমি-জমা যেটুকু ছিল তা হাতছাড়া হয়েছে বহু আগেই। সবশেষ গত বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগে হারিয়েছেন মাথা গোঁজার আশ্রয়টিও। জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে শুধু চিহ্নটুকু। ঘর হারিয়ে তাই ১৩ বছরের মানসিক প্রতিবন্ধী মেয়েকে নিয়ে থাকছেন প্রতিবেশীর গোয়াল ঘরে। তীব্র শীতে গোয়াল ঘরের স্যাঁতসেঁতে মেঝেতে বিছানো খড়কুটা আর ছেঁড়া কম্বলই এখন বাবা মেয়ের ভরসা। রোগাক্রান্ত শরীর নিয়ে কখনো খেয়ে আবার কখনো না খেয়েই দিন মানবেতর জীবন যাপন করছেন তাঁরা। 

জানা যায়, মকবুল হাওলাদারের বাড়ি বেতাগী উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ঝিলবুনিয়া গ্রামে। ছোট মেয়ে মিমের বয়স যখন ছয় বছর তখন তাঁর স্ত্রী মারা যায়। অভাবের সংসারে সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে যেয়ে হাতে বই তুলে দিতে পারেননি মকবুল। পেটের টানে চার ছেলে অনেক আগেই পাড়ি জমায় ঢাকায়। দারিদ্র্যের ঘূর্ণিপাকে বাস করা মকবুলের বসতঘরটি গত বর্ষায় ভেঙে যায়। সেই থেকে প্রতিবেশী খালেক হাওলাদারের গোয়াল ঘরে ঠাঁই হয় বাবা মেয়ের। গোয়াল ঘরের একপাশে এলোমেলো পুরোনো কাপড়-চোপড়, অন্যপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা হাঁড়ি-পাতিল। এসব নিয়েই কাটছে তাঁর শেষ বয়সের সংসার। 

স্থানীয়রা জানান, মকবুলের ছেলেরা তাদের কোনো খোঁজ-খবর নেয় না। দারিদ্র্যের কারণে তাই রোগা শরীর নিয়ে লাঠি এবং মেয়ের কাঁধে ভর দিয়ে পেটের তাগিদে গ্রামে গ্রামে ভিক্ষা করেন তিনি। মানুষের কাছে হাত পেতে যদি কিছু জোটে তা দিয়েই বাবা মেয়ের পেট চলে। কিন্তু যেদিন শরীর ভালো থাকে না, সেদিন মকবুল গ্রামেও বের হতে পারে না। উপোস থাকতে হয় বাবা মেয়েকে। 

কান্না ভেজা চোখে মকবুল বলেন, মেয়ে নিয়ে খুব কষ্টে আছি। এই শীতে রাতে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়। থরথর করে কাঁপি। অসুস্থ থাকলেও টাকার অভাবে ওষুধ কিনতে পারি না। টাকার অভাবে ঘরও তুলতে পারি না। এই জীবন আর ভালো লাগে না। 

স্থানীয় ইউপি সদস্য মোস্তফা কামাল বলেন, বৃদ্ধ মকবুল তার এই ছোট মেয়েকে নিয়ে খুব মানবেতর জীবন যাপন করছে। আমি উপজেলা প্রশাসনের কাছে তাকে আর্থিক সহায়তা এবং একটি সরকারি ঘর দেওয়ার দাবি জানাই। 

বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. সুহৃদ সালেহীন বলেন, বৃদ্ধ মকবুল হাওলাদার এবং তাঁর মেয়ের মানবেতর জীবন যাপনের বিষয়টি জানতে পেরেছি। এই পরিবারকে সামাজিকভাবে পুনর্বাসন করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। পাশাপাশি তাদের মানবিক সহায়তা ও প্রতিবন্ধী বা সামাজিক সুরক্ষা ভাতার আওতায় নিয়ে আসা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত