Ajker Patrika

সেরামেই ভরসা, টিকার জন্য ফের ভারত সরকারকে চিঠি

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : ০৭ মে ২০২১, ২০: ৩৪
সেরামেই ভরসা,  টিকার জন্য ফের ভারত সরকারকে চিঠি

ঢাকা: টিকা সঙ্কটে এরই মধ্যে প্রথম ডোজ দেওয়া স্থগিত করার পাশাপাশি নিবন্ধনও বন্ধ রাখা হয়েছে। কারণ চাহিদের ১ শতাংশ টিকাও নেই সরকারের হাতে। দ্বিতীয় ডোজ পূর্ণ করতে দরকার প্রায় ১৪ লাখ ডোজ। সেটি পাওয়াও অনিশ্চিত। চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে ২০ লাখ ডোজ টিকা আনার আশা দিলেও ব্যর্থ হয়েছে বেক্সিমকো। রাশিয়ার স্পুটনিক–ভি এবং চীনা সিনোফার্মের টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে অক্সফোর্ড–অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজ যারা নিয়েছেন দ্বিতীয় ডোজে তারা এ দুটির কোনোটি নিতে পারবেন কিনা তা অজানা।

ফলে অন্তত দ্বিতীয় ডোজ পূর্ণ করতে আপাতত সেরামেই ভরসা করতে হচ্ছে। সেই টিকা পেতে ভারত সরকারকে নতুন করে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ। চিঠিতে ৩০ লাখ ডোজ টিকা চাওয়া হয়েছে।

এদিকে উদ্বৃত্ত টিকা চেয়ে যুক্তরাষ্ট্র, বেলজিয়াম, সুইডেন ও জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে সরকার। যুক্তরাষ্ট্রের অব্যবহৃত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পেতে চিঠি দেওয়ার পাশাপাশি ঢাকায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে সাক্ষাতও করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। জরুরি অনুমোদন না দিলেও ছয় কোটি ডোজ টিকা মজুদ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু সেটি পাওয়ার বিষয়েও নিশ্চয়তা মেলেনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, এখন পর্যন্ত দুই ডোজ মিলে টিকা নিয়েছেন ৯১ লাখ ৩৩ হাজার ২৭৮ জন। এর মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৮৫৪ জন। দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৩৩ লাখ ১৩ হাজার ৪২৪ জন। আর বর্তমানে টিকা মজুত আছে ১১ লাখ ৬৬ হাজার ৭২২ ডোজ। ফলে দ্বিতীয় ডোজের জন্য ঘাটতি ১৩ লাখ ৩৯ হাজার ৭০৮ ডোজ।

অধিদপ্তর জানায়, কোথাও নিশ্চয়তা পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে দ্বিতীয় ডোজ সম্পন্ন করা নিয়ে সংশয় রয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণের সময়সীমাও বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু এরপরও যদি কোথাও টিকা না পাওয়া যায় সেই শঙ্কা থেকেই সেরামের পাশাপাশি ভারত সরকারের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এবিএম খুরশীদ আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, দ্বিতীয় ডোজের জন্য আমাদের বেশকিছু টিকার ঘাটতি রয়েছে। সেগুলো না পেলে আমরা অনেকটা সংকটে পড়ে যাবো। আগামী ১২ মের মধ্যে চীনের সিনোফোর্মের পাঁচ লাখ টিকা আসছে। কিন্তু সেগুলো আমরা দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে ব্যবহার করতে পারবো কিনা এখনো জানা নেই। এছাড়া বিকল্প উৎসেও এখনো তেমন সুখবর পাইনি। তাই সেরামের টিকাই ভরসা। বেক্সিমকোর পাশাপাশি সরকারও চেষ্টা করছে।

চলতি মাসেই রাশিয়ার স্পুটনিক-ভি ৪০ লাখ, কোভ্যাক্স থেকে ফাইজারের এক লাখ ও চীনের সিনোফোর্মের পাঁচ লাখ ডোজ টিকা আসার কথা রয়েছে। এর মধ্যে আগামী ১২ মের মধ্যে সিনোফোর্মের টিকা পাওয়ার খবর দিয়েছে সরকার। বাকিগুলো কবে নাগাদ আসবে সেটি নিশ্চিত নয়। এছাড়া রাশিয়া আগামী এক বছরে সাড়ে তিন কোটি ডোজ টিকা দেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে। দেশে টিকা উৎপাদনেরও তোড়জোড় চলছে।

গত বছরের নভেম্বরে ভারতের টিকা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে বেক্সিমকোর মাধ্যমে ত্রিপক্ষীয় একটি চুক্তি করে সরকার। অর্থও অগ্রীম পরিশোধ করে বাংলাদেশ। সে অনুযায়ী প্রতিমাসে ৫০ লাখ করে এ বছরের মে মাসের মধ্যে দেড় কোটি ডোজ টিকা দেওয়ার কথা। কিন্তু জানুয়ারিতে প্রথম চালানে ৫০ লাখ এলেও ফেব্রুয়ারি থেকে টিকা সঙ্কটের কথা বলতে থাকে সেরাম। ভারতে করোনা পরিস্থিতির চরম অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি চাপের কথা বলে বারবার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে সেরাম। দুই দফায় মাত্র ৭০ লাখ টিকা দিয়েছে তারা।

চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রাপ্য টিকা আটকে দিলেও তিন দফায় উপহার হিসেবে ৩৩ লাখ ডোজ টিকা দিয়েছে ভারত সরকার। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৩ লাখ ডোজ টিকা পেয়েছে বাংলাদেশ। ৭ ফেব্রুয়ারি দেশে গণটিকাদান শুরু হলেও সেই কার্যক্রম এখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত