Ajker Patrika

১৪ লাখ মানুষের দ্বিতীয় ডোজ পাওয়া অনিশ্চিত

নিজস্ব প্রতিবেদক
আপডেট : ১৭ মে ২০২১, ২০: ৩৫
১৪ লাখ মানুষের দ্বিতীয় ডোজ পাওয়া অনিশ্চিত

ঢাকা: দেশে এখন পর্যন্ত ২১ লাখ ১৯ হাজার ৮২৯ জন মানুষ দ্বিতীয় ডোজের টিকা পাননি। মজুত আছে মাত্র ৬ লাখ ৮০ হাজার ডোজ। ফলে প্রায় ১৪ লাখ মানুষের দ্বিতীয় ডোজ পাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। টিকা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে সরকার বিভিন্ন উৎসের পাশাপাশি ভারত সরকারের সঙ্গেও যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে। তবে কোনো আশা দেয়নি সেরাম ইনস্টিটিউট। অন্যান্য দেশের অব্যবহৃত বা অনুমোদন না দিয়েও মজুত করা অক্সফোর্ডের টিকা পাওয়ার আশাও নেই। ফলে প্রথম ডোজ নেওয়া ৫৮ লাখ ১৯ হাজার ৯১২ জনের মধ্যে ১৪ লাখ ৩৯ হাজার ৮২৯ জনের দ্বিতীয় ডোজ পাওয়ার ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা কাটছেই না।

এ সংকটের কারণে অনেক কেন্দ্রে টিকাদান কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। নতুন নিবন্ধন স্থগিত করা হয়েছে আরও আগেই। এর মধ্যে আজ সোমবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, দ্বিতীয় ডোজের টিকাদান আর মাত্র ৭ থেকে ১০ দিন চলবে। টিকা আনার জন্য জোর চেষ্টা চলছে। বিশেষ করে দ্বিতীয় ডোজ যাতে সম্পন্ন করা যায় সে ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে কথা বলেছেন।

ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিয়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি দেশে গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু করে বাংলাদেশ। দুই চালানে মাত্র ৭০ লাখ ডোজ দিয়েছে সেরাম। অথচ প্রতিমাসে ৫০ লাখ করে জুনের মধ্যে মোট সাড়ে তিন কোটি ডোজ দেওয়ার চুক্তিতে অগ্রীম অর্থ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। টিকা সংকটে গত ২৬ এপ্রিল প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ করে সরকার।

যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে মজুত থাকা অক্সফোর্ডের টিকা চেয়ে সরকার চিঠি দিলেও সাড়া মেলেনি। ফলে আগামী জুলাইয়ের আগে দ্বিতীয় ডোজের সংস্থান হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

এদিকে পুরো টিকাদান কর্মসূচিই এখন হুমকির মুখে। চীন থেকে উপহারের পাঁচ লাখ ডোজ এলেও টিকা আমদানি প্রক্রিয়ার জট খোলেনি। দেশে চীন ও রাশিয়ার টিকা উৎপাদনের কথা বলা হলেও এখনো কোনো প্রতিষ্ঠানকে উৎপাদনের অনুমোদন দেয়নি সরকার। আজ মন্ত্রণালয়ে ব্রিফিংয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, টিকা উৎপাদন চার/পাঁচ মাসের আগে সম্ভব নয়। সরকার কেনার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর রোবেদ আমিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ভারতের করোনা পরিস্থিতি চরম অবনতি হওয়ায় তারা অন্যদেশে টিকা রপ্তানি করতে দিচ্ছে না। বেক্সিমকো টিকা এনে দিতে চাইলেও এখন পর্যন্ত তারা ইতিবাচক কিছু জানায়নি। ফলে সেরামের টিকা পাওয়া এখন অনিশ্চিত। নতুন করে টিকা না পাওয়ায় শিগগিরই দ্বিতীয় ডোজ বন্ধ হচ্ছে। তবে এখনো তারিখ নির্ধারণ হয়নি। অনেক জায়গায় এরই মধ্যে বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।

তবে ঘাটতি টিকার যোগান ও গোটা টিকাদান কর্মসূচি নিয়েই শুরু থেকে কৌশল নির্ধারণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এমনকি সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে একেক সময় একেক সিদ্ধান্তের জন্যও প্রতিষ্ঠানটির কর্তাদের সমালোচনা করেন তারা।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটির সদস্য ড. আবু জামিল ফয়সাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, আমাদের প্রধান ঘাটতি হচ্ছে সবকিছু অনেক দেরিতে করেছি আমরা। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণেও আমরা একেক সময় একেকরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সময়মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারলে হয়তো আমাদের এতটা সমস্যার মুখে পড়তে হতো না। যেহেতু সেরামের ওপর আমরা এককভাবে নির্ভর করেছি, সেজন্য সময়গুলো সেখানেই নষ্ট হয়েছে। আমরা নিশ্চিত ভেবেছিলাম, সেরাম থেকে আমরা চাহিদার সবটুকু টিকা পাব।

তিনি বলেন, ‘গত মার্চে যখন ভারত সরকার টিকা বন্ধ করে দিল, তখনই সরকারের উচিত ছিল টিকা কার্যক্রমে পরিবর্তন আনা। কিন্তু সময় ফুরিয়ে যাওয়ার পর আমরা বিকল্প উৎস খোঁজা শুরু করেছি। ফলে টিকা পেতে এখন বিলম্ব হচ্ছে।’

ত্বরিৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঘাটতির বিষয়ে জানতে চাইলে মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, সামগ্রীক পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হয়। টিকার জটিলতা নিরসনে শুরু থেকেই আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে আসছি।

সেরামের টিকা আটকে যাওয়া সরকারের কল্পনার বাইরে ছিল। এছাড়া ভারতের করোনা পরিস্থিতি ক্রমশ ভয়ানক আকার ধারণ করা হয় আমাদের টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চিয়তা তৈরি হয়েছে। তবে আমরা আশা ছাড়িনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘বিকল্প উপায়ে যুক্তরাষ্টের কাছ থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা চাওয়া হয়েছে। তারা এখনো কোনো সাড়া না দিলেও আমরা আশাবাদী। যেহেতু আমাদের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার মতো হাতে পর্যাপ্ত সময় আছে, তাই এর মধ্যে আমরা টিকা সরবরাহ করতে পারব বলে বিশ্বাস করি। রাশিয়ার টিকা পাওয়া নিয়ে এখনো জটিলতা কাটেনি। চীনের কয়েক কোটি ডোজ টিকা কিনতে সরকার যে চিঠি দিয়েছে শিগগিরই তার সাড়া পাওয়া যাবে বলে আমরা আশা করছি।

পরিকল্পনা অনুযায়ী দেশে করোনা নিয়ন্ত্রণে ১৩ কোটি মানুষকে টিকাকরণের আওতায় আনতে চায় সরকার। কিন্তু এখন সময়মতো সরবরাহ নিশ্চিত করাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত