Ajker Patrika

নিলামে উঠছে রবীন্দ্রনাথের হাতে লেখা ৩৫টি চিঠি, কাদম্বরী দেবীর স্মৃতি ভাস্কর্য

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৩ জুন ২০২৫, ১৮: ১০
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ছবি: সংগৃহীত
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ছবি: সংগৃহীত

বাংলা সাহিত্যের নক্ষত্র, নোবেলজয়ী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৩৫টি হাতে লেখা চিঠি ও ১৪টি খাম আগামী সপ্তাহে নিলামে উঠছে। এর আনুমানিক মূল্য ধরা হয়েছে ৫-৭ কোটি রুপি। মূল্য ও ব্যাপ্তির দিক থেকে কবির সৃষ্টিকর্মের সবচেয়ে বড় নিলাম হতে চলেছে এটি। এই ঐতিহাসিক নিলামটি ২৬-২৭ জুন অনলাইনে আয়োজন করবে মুম্বাইভিত্তিক অ্যাস্টাগুরু অকশন হাউস।

এই নিলামে আরও একটি দুর্লভ বস্তু নজর কাড়বে—একটি হৃদয়ের আকৃতির ভাস্কর্য। এটিই রবীন্দ্রনাথের একমাত্র পরিচিত ভাস্কর্য শিল্পকর্ম, যা ৫৫-৭০ লাখ রুপিতে বিক্রি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, ভাস্কর্যটি কবিগুরু তাঁর ভ্রাতৃবধূ ও ‘প্রিয় সখী’ কাদম্বরী দেবীর স্মৃতিতে উৎসর্গ করেছিলেন।

অ্যাস্টাগুরু অকশন হাউসের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা মনোজ মনসুখানি ইকোনমিক টাইমসকে বলেছেন, এই নিলাম সংগ্রাহক ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে দুটি অসাধারণ কাজের সুযোগ করে দিচ্ছে, যা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্য, ভিজ্যুয়াল আর্ট, এমনকি ভাস্কর্যজুড়ে তাঁর সৃজনশীল বিবর্তনের অনন্য অন্তর্দৃষ্টি দেবে।

১৯২৭ থেকে ১৯৩৬ সালের মধ্যে লেখা এই চিঠিগুলো সমাজবিজ্ঞানী, সংগীতজ্ঞ ও রবীন্দ্রনাথের আস্থাভাজন বন্ধু ধুরজটি প্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের উদ্দেশে লেখা। অ্যাস্টাগুরু প্রকাশিত ক্যাটালগ অনুসারে, প্রতিটি চিঠিতে একটি স্বতন্ত্র মুহূর্তের ছাপ রয়েছে এবং এর মধ্যে ১২টি বিভিন্ন লেটারহেডে লেখা—যেমন বিশ্বভারতী, তাঁর উত্তরায়ণ নিবাস, দার্জিলিংয়ের গ্লেন ইডেন ও পদ্মাবোটে বসে লেখা। এই চিঠিগুলো রবীন্দ্রনাথের বৌদ্ধিক ও ভৌগোলিক যাত্রার এক অনবদ্য দলিল।

বিশিষ্ট রবীন্দ্র গবেষক অভ্র ঘোষ বলেন, মুখার্জিকে লেখা ঠাকুরের চিঠিগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক মূল্য রয়েছে এবং এগুলো তাঁর সাহিত্যিক দক্ষতা এবং নিজের সংগীত, ছন্দ, সাহিত্যের পথে, সুর ও সংগতি ও সংগীত চিন্তা সম্পর্কে তাঁর প্রতিফলন বোঝার জন্য গুরুত্বপূর্ণ নথি।

অভ্র ঘোষ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘এই চিঠিগুলো শান্তিনিকেতনের রবীন্দ্র ভবনের দখলে থাকা উচিত, যেখানে ঠাকুরের পাণ্ডুলিপি, চিঠিপত্র, ছবি, স্কেচ, তাঁর ব্যক্তিগত জিনিসপত্র সংরক্ষণ করা হয়। আমি নিলাম হাউস বা এই গুরুত্বপূর্ণ নথিগুলোর সংগ্রাহককে এ বিষয়ে চিন্তা করার জন্য অনুরোধ করব।’

কিছু চিঠিতে রবীন্দ্রনাথ বাংলার গোঁড়ামির সমালোচনা করেছেন। তিনি যুক্তি দিয়েছেন, আসল সৃজনশীলতা আসে অভিযোজন থেকে। যেমন বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতকে ছাড়িয়ে বিকশিত হয়েছে, তেমনি তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, বাংলা সংগীতও স্বাধীনভাবে বিকশিত হতে পারে। তবে তিনি ধ্রুপদ বা হিন্দুস্তানি সংগীতের শাস্ত্রীয় কঠোরতার ওপর ভিত্তি করে সুশৃঙ্খল সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।

নিলামে উঠতে যাওয়া হৃদয়ের আকারের ভাস্কর্যটি রবীন্দ্রনাথের বড় ভাই জ্যোতিরিন্দ্র নাথ ঠাকুরের স্ত্রী কাদম্বরী দেবীকে উৎসর্গ করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। কাদম্বরী দেবী ১৮৮৪ সালে আত্মহত্যা করেন। এই ঘটনা রবীন্দ্রনাথের জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।

অ্যাস্টাগুরুর মতে, এই কোয়ার্টজাইট পাথরের ভাস্কর্যটি ১৮৮৩ সালে কর্ণাটকের কারওয়ারে রবীন্দ্রনাথের এক চিন্তাশীল নিভৃতবাসের সময় তৈরি। সে সময় কবির বয়স ছিল মাত্র ২২ বছর।

এই ভাস্কর্য কলকাতার দেবভাষাতে প্রদর্শিত হয়েছে। এটি নানা জল্পনা-কল্পনার জন্ম দিয়েছে। শান্তিনিকেতনের নন্দন মিউজিয়ামের সাবেক কিউরেটর সুশোভন অধিকারী ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা সাহিত্যের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক তাপাব্রত ঘোষ উভয়ই বিভিন্ন প্রকাশনায় এটি সম্পর্কে বিস্তারিত লিখেছেন।

ভাস্কর্যটি রবীন্দ্রনাথের ১৮৮৭ সালের উপন্যাস ‘রাজর্ষি’-তে উল্লেখিত হয়েছে। ‘দ্য ক্যালকাটা মিউনিসিপ্যাল গেজেট- (১৯৪১)-এ এটি নথিভুক্ত করা হয়েছে। প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায়ের রবীন্দ্রনাথের জীবনী ‘রবীন্দ্রজীবনী’ অনুসারে, এই শিল্পকর্ম প্রাথমিকভাবে রবীন্দ্রনাথ তাঁর বন্ধু অক্ষয়চন্দ্র চৌধুরীকে উপহার দিয়েছিলেন। পরে এটি চিত্রশিল্পী অতুল বসুর পরিবারের দখলে আসে, তাঁদের তত্ত্বাবধানেই এটি ছিল। ২০২৪ সালে কলকাতায় প্রদর্শিত হওয়ার পর এটি আবার জনসাধারণের নজরে আসে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ড. ইউনূসের সফরসঙ্গী হয়েও ফখরুল–আখতাররা ভিভিআইপি সুবিধা পাননি কেন—জানাল প্রেস উইং

স্পিকারের বাসভবনই হবে প্রধানমন্ত্রীর অস্থায়ী আবাস

আ.লীগের ঝটিকা মিছিল: মানিকগঞ্জের প্যানেল মেয়র আরশেদ আলীসহ চারজন কারাগারে

ঘরে সদ্য বিবাহিত বিক্রয় প্রতিনিধির লাশ, চিরকুটে লেখা ‘জীবন খুবই কঠিন’

জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আলোচনায় আসনের ভাগ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত