Ajker Patrika

নিভৃত মননে

মোজাম্মেল হক নিয়োগী
নিভৃত মননে

সন্ধ্যার পর থেকে নিদারুণ অস্থিরতায় ভুগছি। কেন এমন লাগছে বুঝতে পারছি না। বারান্দায় বসে মোবাইল সেটের বাটন টিপছিলাম আনমনে। কোনো অজানা কারণে বুকের ভেতরে একটা গুমোট যন্ত্রণা আমাকে অস্থির করে তুলছে। সেই অস্থিরতা যেন আমার চারপাশেও ছড়িয়ে পড়ছে। বাইরের অস্থিরতা কি মনের ভেতরে চাপ সৃষ্টি করছে, নাকি মনের অস্থিরতা বাইরেটাকে অস্থির করে তুলেছে, ঠিক বুঝতে পারছি না। অনেকক্ষণ হতবিহ্বল হয়ে সন্ধ্যার কালচে আকাশে স্থির ঠান্ডা নক্ষত্রের দিকে নিশ্চল চোখে তাকিয়ে থাকলাম। কত দূর সেই সব নক্ষত্রের বাড়ি? কত দূর?
আমার মনোযোগ ফিরে আসে নৈঃশব্দ্যে জমাট বাঁধা আমাদের বাড়ির বাসার ভেতরে। ছেলেটা হয়তো ঘরে কিছু করছে কিন্তু এরপরও কেন ভয়ংকর নীরবতা! কেন এমন মধুর নিঃসঙ্গতা? হ্যাঁ, মধুরই তো। ইদানীং নিঃসঙ্গতাকেও দারুণভাবে উপভোগ করি। অফিসের কাজে জামিল ঢাকার বাইরে গেলে আমার রাজ্যে আমি নিঃসঙ্গ সম্রাজ্ঞী। নিজের ভেতরে নিজেই থাকি। একাকিত্বে কেন প্রশান্তি অনুভব করি, ভেবে পাই না। কৈশোরের স্বপ্নে সাজানো আকাশটা কোথায় হারিয়ে গেল? কেন সংসারের চার দেয়ালে এভাবে বন্দী হয়ে গেলাম, আমি ভেবে পাই না। এটাই কি তাহলে নিয়তি?
 
মনের গুমোট ভাবটা ক্রমাগত দানা বাঁধছে এবং আমি আরও অস্থির হয়ে উঠছি। মনে হচ্ছে কারও সঙ্গে কথা বলতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু কার সঙ্গে কথা বলব, ভেবে পাচ্ছি না। হঠাৎ আমার মোবাইল সেটে রিং হলো। অজানা নম্বর দেখে লাইন কেটে দিলাম। অচেনা কারও সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছে করে না। অনেকে ফোন থেকে বদমায়েশি কথা বলে। বদমায়েশে ভরে গেছে দেশটা। 
আবার রিং হলো। কল রিসিভ করব কি না, আমি দ্বিধাগ্রস্ত, তারপর অন্যমনস্কভাবেই এবার ধরলাম। 
—হ্যালো, কে বলছেন? 
—আমি... (একটু আমতা-আমতা করছে) আবির। আপনি কি তামান্না? 
—হ্যাঁ, আমি তামান্না। কিন্তু আপনি কে? 
—আমি আবির হাসান, আপনার দূর সম্পর্কের এক ফুফাতো ভাই। আপনাদের গ্রামের বাড়ি মুকুন্দপুর, ভোলা। আমি কি ঠিক বলেছি? 
—হ্যাঁ। ঠিকই তো বলেছেন কিন্তু আপনি...? 
—আপনার বাবার নাম আহমেদ সুলতান কাদেরী। 
—হ্যাঁ। আচ্ছা...আপনি দেখছি সবই চিনেন কিন্তু...
—কিন্তু...আপনি আমাকে চিনতে পারছেন না, এই তো? 
—সত্য কথা বললে, হ্যাঁ, আমি আপনাকে চিনতে পারছি না। একটু বিস্তারিত বলুন। অনেক দিন হয়তো দেখা নেই, কথা নেই। 
—আমার বাবার নাম জায়েদ হাসান। আমার নাম আবির হাসান। আমি ছেলেবেলায় আপনাদের বাসায় অনেকবার গিয়েছি।
 
আবির হাসান নামটি শোনার পর আমি কোনো কথা বলতে পারিনি। আবিরও না। মনে হলো সহস্র বছরের অনুসন্ধানের পর কাঙ্ক্ষিত ফসিল পেয়ে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি। আবিরও কি তাই? এভাবে কিছুক্ষণ সময় কেটে গেল বিমূঢ় ঘোরের মধ্যে। আমি হতবিহ্বল। অজানা শিহরণ অথবা রোমাঞ্চ অথবা কষ্টের দহন কিছু একটা আমার করোটিতে তুমুল ঝড় তুলল। ঝড়ের তাণ্ডব থামতে কিছুক্ষণ সময় লাগল। তারপর আবার স্তব্ধতার ভেতর থেকে উচ্চারিত হলো, 
—আমাকে চিনতে পারছেন না? 
—হ্যাঁ। পেরেছি। সেই যে কবে থেকে তোমাকে খুঁজছি আর তোমার দেখা পাইনি। এভাবে কোথায় কোন সাগরের ঝিনুকের পেটে লুকিয়েছিলে আবির? আমি তুমি করে বলে ফেললাম, কিছু মনে করো না আবির। 
—না, কিছু মনে করিনি। আমিও ভাবছিলাম তুমি যদি আমাকে আগের মতোই বলতে, তাহলে ভালো লাগত। খুব ভালো লাগত। সত্যি...খুব ভালো লাগছে তামান্না। খু... উ... ব।  
—কী করছ? কোথায় আছ? কেমন আছ? 
—কীভাবে তোমাকে বলব বুঝতে পারছি না। ঢাকায় থাকি। জনবহুল দমবদ্ধ বসবাস অযোগ্য এক শহরে। তুমি? 
—কুষ্টিয়াতেই। ঢাকায় স্যাটেলড হয়েছ? 
—হ্যাঁ। 
কী বলব, কিছুই ভাবতে পারছি না আমি। বুকের শব্দপাখিরা হঠাৎ কোথায় যেন উড়ে গেল। কেবল মনে হচ্ছে ডানা ঝাপটানোর শব্দ। নিজেকে মনে হলো সহস্র বছরের ফসিল, যার মধ্যে প্রাণের স্পন্দন নেই। এমন নির্জীবতা কেন, তা বোঝার জন্য যখন নিজের মধ্যে ডুবে বুঁদ হয়ে পড়ে রইলাম, তখন আবিরের কথা শুনে সংবিৎ ফিরে পেলাম। 
—কথা বলছ না কেন তামান্না? 
—ও! হ্যাঁ। এত দিন কোথায় ছিলে? একটি বার খোঁজখবর না নিয়ে থাকতে পারলে? 
—কীভাবে খোঁজখবর নেব বলো? বড়রা সুযোগ না দিলে ছোটরা পারে না। বেহায়াপনা হয়। 
—তত্ত্বকথা। তোমার কথা সব সময় ঠিক নয়। বড়-ছোট কোনো কথা নয়, ছেলেদের যোগাযোগ রাখা যতটা সহজ, মেয়েদের পক্ষে ততটা সহজ নয়। বলো, সত্যি বলিনি? 
—হয়তো সত্যি, হয়তো না। আমি সংশয়বাদী মানুষ। তখন দুজনের দুটি ধারা ছিল। হয়তো অবিমৃশ্যকারী ধারা। তেল আর জলের ধারা। 
—তুমি আগের মতোই আছ। পুরোনো ছাঁচেই কথা বলছ। একটুও বদলাওনি।
 
অনেকটা সময় আমরা দুজনের কেউ কোনো কথা বলতে পারিনি। আমার বুকের ভেতরটা বরফের মতো জমে গেছে। জানি না আবিরেরও সে রকম কিছু হয়েছে কি না। হাজারো কথার ভেতর নিজেকে হারিয়ে ফেললাম। কোনটা বলব? কোন কথাটা বলা উচিত? কোন কথাটা আগে বলব? এত দিন পর তার কথা শুনেই এলোমেলো হয়ে গেছি। ভাবছি, আবিরের কথা এত ভালো লাগে কেন? জীবনের একেক সময় একেক কথা জরুরি হয়ে পড়ে। 
—কী করছ আবির? 
—একটা আর্ট ফার্ম দিয়েছি। ছবি আঁকি। আগামী মাসের ১০ তারিখ আমার একটা এক্সিবিশন আছে। তুমি আসবে, এ জন্যই তোমাকে ফোন করা। 
—আমার ফোন নম্বর কোথায় পেলে? 
—রুহি খালার কাছ থেকে। 
—তুমি অনেক বড় হয়ে গেছ। আমি ছোটবেলায় ভাবতাম তুমি একদিন অনেক বড় হবে। তোমার বুদ্ধিদীপ্ত চোখেই আমি দেখতে পেতাম, তুমি অনেক বড় মাপের মানুষ। হয়তো আমার স্বপ্নেই তুমি বড় হয়েছ। 
—এভাবে বলো না তামান্না। তবে তোমাদের মতো বড় হওয়ার এক স্বপ্নে তাড়িত হতাম আমি। সে অর্থে হয়তো তোমার স্বপ্নেই আমি এতটা পথ এসেছি। আমার সামনে আরও অনেক পথ...অনেক পথ হাঁটতে হবে। তুমি একদিন ফ্রস্টের কথা বলেছিলে, মনে আছে? 
 
— The woods are lovely, dark and deep, 
 But I have promises to keep, 
 And miles to go before I sleep, 
 And miles to go before I sleep.
 
—তোমার কথাগুলো আমার কানে এখনো বাজে। 
—মনে হচ্ছে তুমি ঝিনুকের গর্ভে লুকিয়ে গিয়ে মুক্তোই হয়েছ। খুবই ভালো লাগছে ভাবতে। কিন্তু এই ভালো লাগাটা কোনোভাবেই প্রকাশ করতে পারছি না আবির। জীবন কি আশ্চর্য, তাই না? 
—হ্যাঁ...তাই...। জানো তামান্না, তোমার কথা আমার প্রতিদিনই মনে হতো। বলা যায় প্রতিদিনই, নিভৃত ক্ষণে। কিন্তু আমি সাহস পেতাম না তোমার সঙ্গে দেখা করতে। পাছে তুমি কী ভাবো? তোমার আব্বু, আম্মু তারাই বা কী ভাবেন? তোমরা এত বড়লোক ছিলে যে তোমাদের বাড়ির দিকে তাকালে আমার চোখ ঝলসে যেত। তখন মনে মনে ভাবতাম, তোমাদের মতো যদি কোনো দিন হতে পারতাম! 
—তুমি তো আমাদের চেয়ে অনেক বড় হয়ে গেছ। জানো আবির, আমিও তোমাকে মনে মনে খুঁজতাম। যখন স্কুলে যেতাম, তখন মনে মনে ভাবতাম, তোমাকে যদি কোথাও দেখতে পেতাম। ছোট্ট শহর কুষ্টিয়া। সেই শহরে গাড়ি দিয়ে যেতাম। সামান্য পথ, পাঁচ মিনিটেই পথ শেষ। পথ কিংবা সময় দীর্ঘ হলে হয়তো কোনো দিন পেয়েও যেতাম। নানান কাজে নিশ্চয়ই তুমি কুষ্টিয়া আসতে, তাই না? 
—হ্যাঁ। অনেক সময় কাজ ছাড়াও যেতাম। তোমাকে পথে পথে খুঁজতাম। কোনো দিন তোমাকে দেখিনি। বাবা মারা যাওয়ার পর তোমাদের বাড়িতে যেতে সাহস হতো না। কী অছিলায় যাব? বছরান্তে হিসাব করেছি, তুমি এই ক্লাসে উঠেছ, আগামী বছর এই ক্লাসে উঠবে। যখন কলেজে পা রেখেছ—একদিন মনে মনে ভাবলাম, কলেজে তো আর বাধা নেই। তোমার সঙ্গে একবার দেখা করি। কিন্তু পরে জানলাম তুমি মেয়েদের কলেজে পড়ো। সেখানে গিয়ে কীভাবে তোমার সঙ্গে দেখা করি, বলো? 
—তুমি আসতে পারতে। জানো, আমি ছেলে হলে ঠিকই তোমাকে খুঁজে বের করতাম। 
—সব চেয়ে বড় কথা কী ছিল জানো? 
—কী করে জানব? 
—বড় কথা ছিল, তোমার সঙ্গে দেখা করে আমি কী বলব? সে রকম কোনো কথা বলার ভাষা ও অছিলা পাইনি বলেও যাওয়া হয়নি। তারপর সত্য কথাটা যদি কেউ শুনত, এক হতদরিদ্র পিতার এক ছেলের মনের ভেতরে তোমাকে দেখার এমন বাসনা, তাহলে মানুষে কী ভাবত, বলো? তোমার আব্বা-আম্মুই বা কী ভাবতেন? অকৃতজ্ঞ মানুষের দলে আমাকে ভিড়াতেন। তাই না? 
—তা নিরেট সত্য। তোমাকে কেউ হয়তো সহ্যই করত না। তবে আমার মনে হতো তোমার ভেতরে তেজের নেভা আগুন আছে। তুমি একদিন অনেক বড় হবে। তুমি যখন বাগানে বসে ছবি আঁকতে, তখন আমি তোমাকে দেখতে পেতাম বড় মানুষের দলে। এই সব উচ্ছন্নে যাওয়া তথাকথিত ধনী মানুষের চেয়ে তুমি অনেক ওপরের এক মানুষ।
 
আবির কোনো কথা বলছে না। টেলিফোনে ভারী বাতাসের শোঁ শোঁ শব্দ হচ্ছে। আমিও কথা বলতে পারছি না। মন ও মননে এমন অসাড়তা আমি আর কোনো দিন অনুভব করিনি। দম বন্ধ হয়ে আসা এক গুমোট বদ্ধ ঘরে যেন আটকা পড়লাম। চারপাশের বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। জানালা লাগোয়া বকুলগাছ থেকে টপ টপ করে পাতা ঝরছে। শুধু ভাবছি, দিনে দিনে আমি কেমন করে তার কাছে হেরে গিয়েছিলাম। এ কি পরাজয় নাকি ঈর্ষা? আমি কিছুই বুঝতে পারছি না আজ। ধনী-দরিদ্রের মধ্যকার বিভেদের হিংস্রতা, নাকি আমার বাবা-মা কর্তৃক আরোপিত হতদরিদ্রদের থেকে দূরে থাকার অনপনেয় নির্দেশ, নাকি বস্তুর দ্বান্দ্বিকতা, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। তবে আবিরের কথা শুনে আমার পুঁজিবাদ আশীর্বাদপুষ্ট ঠুনকো আভিজাত্যকে এই মুহূর্তে ঘৃণা হচ্ছে। একজন মানুষের জীবনে বড় হওয়া কোনো বিষয় নয়, যদি তার মধ্যে তেজ থাকে, আকাঙ্ক্ষা থাকে। মৌলিকতা আর তেজহীন মানুষের প্রাচুর্য থাকলেই কী আর না থাকলেই কী। ওই মানুষ আর জড় বস্তুর মধ্যে পার্থক্য কোথায়? 
—হঠাৎ নীরব হয়ে গেলে কেন? কথা বলো তামান্না। নাকি বিরক্ত হচ্ছ? 
—না...না...বিরক্ত হব কেন? এত বছরের জমানো কথা...কোনটা রেখে কোনটা বলি বলো...তাই একটু এলোমেলো লাগছে। 
—তোমার দেওয়া পেনসিল ও রাবারটা এখনো আমি যত্ন করে রেখেছি। 
—সত্যি বলছ? 
—হ্যাঁ। আমার টেবিলে সব সময় থাকে। এই তো আমার সামনেই চকচক করছে। সেদিন আমার মেয়েটা কামড়িয়ে একটু ভেঙে ফেলেছে। ও চকলেট ভেবে খেয়ে ফেলতে চেয়েছিল। 
—এগুলো এখনো রেখেছ? 
—হ্যাঁ। এগুলোই তো আমার আশীর্বাদ। তোমার পেনসিল দিয়েই আমি ছবি আঁকতে শুরু করেছিলাম। হঠাৎ মনে হলো এত সুন্দর পেনসিলটা শেষ করে ফেলা ঠিক হবে না। সুন্দর জিনিস দিয়ে সুন্দর কিছু সৃষ্টি করতে হবে। তাই রেখে দিয়েছিলাম। তখন কী দিয়ে ছবি আঁকব, তা ভেবে পাচ্ছিলাম না। একটা পেনসিল কেনার সামর্থ্য তো আমাদের ছিল না, তুমি ভালো করেই জানো। তারপর কাঠ-কয়লা দিয়ে ছবি আঁকা শুরু করলাম। মাটির বেড়ায়, স্কুলের দেয়ালে, কলেজের দেয়ালে অনেক ছবি এঁকেছি। অনেক পোর্ট্রেট। আর তোমার দেওয়া পেনসিল ও রাবার! আমি এখনো রেখে দিয়েছি একটা সুন্দর ছবি আঁকব বলে। এত সুন্দর পেনসিল দিয়ে কি আলতু-ফালতু ছবি আঁকা যায়, বলো? 
—আমিও রেখেছি যত্ন করে সেই বাবুই পাখির বাসাটা। আমার বিয়ের পর মাঝে মাঝে বদলির কারণে এখানে-সেখানে গেলেও আমি বাবুই পাখির বাসাটি সঙ্গে নিয়ে যাই। আমার বাসা সাজানোর সময় এই বাবুইয়ের বাসাটিও থাকে। কত মানুষে যে নিয়ে যেতে চেয়েছে...! এটা কি কাউকে দেওয়া যায়! এত সুন্দর জিনিস একবার হাতছাড়া হলে জীবনে আর ফিরে পাবো, বলো?
 
অকস্মাৎ আবার নিরেট নীরবতা। আমার বুকের ভেতরটা এক প্রকার কান্নায় ভেসে যাচ্ছে। চোখ দুটি কেন ঝাপসা হয়ে গেল আমি ঠিক বুঝতে পারছি না। আমি বুঝতে পারছি না এখন আর কী বলব? বাবুই পাখির বাসাটি আমার ছোট ছেলেটা একটু নষ্ট করে ফেলেছে। আমি কেন তাকে বলব? সব কথা কি তাকে বলা উচিত? 
—তোমার সঙ্গে আমার কবার দেখা হয়েছিল মনে আছে, তামান্না? 
—আমার মনে নেই। তবে তোমাকে নিয়ে আমাদের বাগানবাড়িতে খেলতাম, তুমি গাছে চড়ে আমাকে জলপাই পেড়ে দিতে, অর্কিড পেড়ে দিতে...তা মনে আছে। তুমি খুবই সাহসী ছিলে। তোমার সাহস দেখে আমি তাজ্জব হয়ে যেতাম। 
—তোমার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে আটবার। আব্বার সঙ্গে যেতাম তোমাদের বাসায়। মামি আমাকে তোমার বড় ভাইয়ের পুরোনো শার্ট দিতেন পরার জন্য। আব্বাকে টাকা দিতেন চলার জন্য। আব্বা খুব খুশি হতো, তোমার আম্মু-আব্বুকে আশীর্বাদ করত প্রাণভরে। 
—এসব কথা বলো না আবির। তুমি শুধু বলো অর্কিডের কথা, জলপাইয়ের কথা...। আর বলো বাবুই পাখির বাসাটির কথা। সেদিন তোমার জামার নিচে লুকিয়ে এই বাবুই পাখির বাসাটি আমার জন্য এনেছিলে, তাই না? তারপর এক বিকেলে তুমি আমাকে আমাদের বারান্দায় নীরবে ডেকে নিয়ে এটা দেবে কি দেবে না এমন ইতস্তত করে এক সময় দিয়ে দিলে। আমি যে এতটা খুশি হব, তা তুমি ভাবতেই পারনি। তারপর...খুশিতে তোমার চোখে পানি এসে গিয়েছিল, তাই না? তখন তুমি ফাইভে পড়তে, আমি ফোরে...তাই না? 
 
আবির আর কোনো কথা বলেনি। মনে হলো দীর্ঘশ্বাস আছড়ে পড়ছে সেল ফোনের সেটে। আমার বুকেও অজস্র ঢেউ আছড়ে পড়ছে। একবার ভাবছিলাম, আবিরকে বলি আমার বাসায় বেড়িয়ে যেতে। তোমাকে দেখতে খুব ইচ্ছা হয়। আমি বলতে পারলাম না। কারণ, ও একদিন বলেছিল, ধনীরা গরিবদের বাড়িতে বেড়াতে যায় না। ওদের বাড়িতে কেউ বেড়াতে যায় না। ওরা শুধু অন্যদের বাড়িতে যায়। আজকে যদি আবির সে রকম কিছু ভেবে বসে, তাহলে এই লজ্জা রাখব কোথায়? 
 
এক সময় লাইন কেটে গেল। আমি শত চেষ্টা করেও আর কানেকশন পাইনি। মানুষ জীবনে সবকিছু পায় না জানি। সব সময় কাঙ্ক্ষিত কানেকশন পায় না। কিন্তু আমি অনেক কিছুই পেয়ে গেছি। আবির এখনো আমার দেওয়া পেনসিল ও রাবারটি রেখে দিয়েছে একটি ভালো ছবি আঁকার প্রত্যাশায়...এর চেয়ে বড় পাওয়া আমার জীবনে আর কী হতে পারে? হঠাৎ মনে হলো, দক্ষিণ মেরুর শব্দহীন কোনো এক অজানা গহ্বরে আমি প্রবেশ করলাম। সেখানে কতক্ষণ ছিলাম, আমার জানা নেই। আমার সমস্ত বিমূঢ়তা কাটিয়ে সংবিৎ ফিরে পেলাম যখন অপু এসে বলল, ‘আম্মু তোমার চোখে পানি কেন?’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘হীরক রাজার দেশে’ মঞ্চস্থ করল স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।

মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্‌যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।

হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।

নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।

শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গবেষণায় বেরিয়ে এল আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’র গল্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।

প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।

কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’

গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।

ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’

মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’

মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান। ছবি: সংগৃহীত
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান। ছবি: সংগৃহীত

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।

রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।

মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’

১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ। ছবি: সংগৃহীত
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ। ছবি: সংগৃহীত

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।

মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।

নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।

বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল যেন তাঁর দীর্ঘ কোনো বাক্যের সমাপ্তি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
লাসলো ক্রাসনাহোরকাই। ছবি: সংগৃহীত
লাসলো ক্রাসনাহোরকাই। ছবি: সংগৃহীত

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।

সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।

১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।

তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।

ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।

তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।

২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।

চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।

তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত