Ajker Patrika

গাদলা

দীপংকর গৌতম
গাদলা

আষাঢ়ের গাদলা। তিন দিন ধরে বৃষ্টি শেষ না হওয়ায় মলনের ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছে অবিনাশ। পলিথিনেও ধানের সুরক্ষা হচ্ছে না। মাত্র দুই দিন পাল্লায় থাকার পরই ধানের আঁটিতে সিধলা পড়ে যাচ্ছে। কষ্টে তোলা ধান গোলায় ওঠানোর আগেই এ কোন বিপদ এল। ইচ্ছা ছিল ধান ওঠার পর ঘরের টিনগুলো বদল করবে। বাবার কিছু বন্ধক রাখা জমি মুক্ত করবে। কিন্তু এ কোন দুর্যোগে পড়ল সে। ভেবে পায় না। ঘরের দ্বারে বসে লুঙ্গির কাছার ভেতরে পলিথিনে বাঁধা একটা ৫৫০ মার্কা বিড়িতে টান দেয়। বিড়িতেও কড়কড়া স্বাদ নেই। কেমন ড্যাম ড্যাম ভাব গলা পোড়ায়। মাত্রই শুকুর দোকান থেকে আনা বিড়ি কীভাবে ড্যাম হলো, বুঝতে পারে না অবিনাশ। বিড়িতে সুখটান দিতে দিতে ধান নিয়ে কী করবে ভাবতে থাকে। এই কৃষিকাজ করতে আর তার ইচ্ছা করে না। কত ঝামেলা আজকাল। সারের ডিলার পর্যন্ত অনেক ক্ষমতাধর। কোনো কিছুতেই কিছু বলার উপায় নেই। কথায় কথায় পুলিশের ভয় দেখায়। কীটনাশক থেকে সেচের জল, সবখানে রাজনীতি। এতসব কি অবিনাশ সামলাতে পারে? সবকিছুতে দাম বেশি। দাম নেই তার ফসলের। অবিনাশ শীতকালে এবার মেয়ের বাসাবাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। নাতি হয়েছে। না গেলে কেমন দেখায়। ঘরের বউ থেকে পাড়াপড়শি সবাই বললে, অবিনাশ নলিনী খুড়ার কাছ থেকে কিছু টাকা ধার করে গাড়িতে পদ্মা সেতু পার হয়ে ঢাকায় যাওয়ার সময় পাশে বসা এক লোক তাকে বুঝিয়েছিল। এই সেতুতে তারও ভাগ আছে। তাতে অবিনাশ বিস্মিত হয়েছিল। তার যদি ভাগ থাকে, সে এই সেতুতে একটু দাঁড়াবে। তার মেয়ের মোবাইল ফোনটা দিয়ে একটা ফটো তুলবে। কিন্তু এসব চিন্তা তার শেষ হয়ে যায় গুলিস্তানে নেমে। বরিশাল থেকে গুলিস্তান নেমে জামাইয়ের দেখা পেয়ে যারপরনাই আনন্দিত অবিনাশ। অবিনাশ মেয়ের জন্য সবজি কিনতে গেলে তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। সব সবজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা। তার বোনা সবজি এত দামে বিক্রি হয় আর তার জমি চাষের কিস্তি দিতে জীবন যায়। এ কেমন বিচার? ঢাকায় যে কদিন ছিল, সে কদিন খুবই মনমরা ছিল। মেয়ে ময়না বারবার জিজ্ঞেস করে, বাবা তোমার কী অইছে? খাও না কেন? 
অবিনাশ চুপ করে বিড়িতে সুখটান দিয়ে চলে।

এ কেমন দেশ সে বুঝে পায় না। অবিনাশের দাদু ১৯৪৭ সালের দেশভাগের দাঙ্গায় আহত হয়ে দেশে এসে ছেলে মন্মথ বিশ্বাসকে বলেছিলেন, জিন্নাহ-মহাত্মা গান্ধী দেশভাগ করলেও মাটি ভাগ করতে পারবে না। এই মাটি আমাদের মা। আমাদের ভবিষ্যৎ। মাটি ছাড়বি না। বাবার মুখে বারবার সে এ কথা শুনেছে। তার বাবা মাটির সঙ্গে কথা বলত। মাটির ভাষা বুঝত। মাটির ডাকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শরণার্থী ক্যাম্পে মন্মথের বাবা-মা ডায়রিয়ায় মারা যায়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে বাংলাদেশে এলে অবিনাশের জন্ম। অবিনাশও তার বাবার মতো মাটির ভাষা বোঝে। মাটির সুখ-দুঃখ বোঝে, মাটির সঙ্গে কথা বলে। জমিতে ফসলের বীজ বুনে সে জমিনের ওপর শুয়ে মাটিতে কান দিত। অনেকক্ষণ শুয়ে থেকে উঠে অন্যান্য কৃষকদের বলত, মাটির ডাক শুনেছি। এবার ফসল ভালো হবে। বেশি বৃষ্টি হলে বা ফসলে লু হাওয়া বইলেও সে বলতে পারত। চাষিরা তাই সন্ধ্যা হলে অবিনাশের বাড়িতে এসে তামাক খেত, তাসের আসর জমিয়ে যাওয়ার সময় জিজ্ঞেস করত—ও অবিনাশ, মাটির কথা শুনেছিস? কী কইল মাটি? ভালো হবে?

অবিনাশের কথা খুব হেরফের হতো না। তাই কৃষক বিশ্বাস করত অবিনাশের কথা। কিন্তু ইদানীং সময় কেমন বদলে যাচ্ছে। সে ঋণ করে ফসল চাষ করে আর লাভ নিয়ে যায় কারা? তার উৎপাদিত ফসল যেন তাকে চেনে না। ৫ টাকার টমেটো এখন ৮০ টাকা। এতসব ভাবতে ভাবতে দেখে, পাশের বাড়ি শুকদেব টিন নিয়ে আসছে বৃষ্টির মধ্যে। মন্মথ জিজ্ঞেস করে—ও বেডা, টিন দিয়া কী হরবা?

শুকদেব বলে, গাদলা শুরু হইছে, দেখছ না। বইসকা থাকলে তো ধান নষ্ট হবে। তাই গাদলার মধ্যেই ধানের মলন দেব। টিনের ছাপড়া বানাইয়া ধানের মলন দেব। গাদলা হয় হউক। এয়ার মধ্যেই কাজ শেষ করব।

প্রতিবছর গাদলা আসে। তিন-চার দিন ধরে লাগাতার বৃষ্টি হয়। গাদলায় জনজীবনে দুর্ভোগ অন্তহীন। তারপর সদ্য ধান কাটা কৃষকের অবস্থা হয়ে ওঠে আরও করুণ। বেশি বৃষ্টিতে নেতিয়ে যাচ্ছে ধান। ধানের আঁটিতে ছত্রাক পড়ছে। শুকদেব এতক্ষণে অবিনাশের উঠানে ছাপড়া দিতে ব্যস্ত হয়ে যায়। ছাপড়া হলেই শুরু হলো ধানের মলন। গরু দিয়ে ধান মলতে মলতে অবিনাশের মনে পড়ছে, এমনি এক দিনে পাশের বাড়ির ধাত্রী সুরবালা এসে চিৎকার করতে করতে তাকে ডাকছিল, ও অবিনাশ, তাড়াতাড়ি আয়, তোর ছাওয়াল হইছে। বাড়ির বিটিগো ক, ঝাহে ঝাহে জোকার দিতে।

অবিনাশ গিয়ে আঁতুড়ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে দেখছিল চাঁদের মতো ছেলে তার। তার ঘরে কোন ভুলে এসেছে কে জানে? কিন্তু জন্মের তিন দিন পর ছেলেটা মারা গেল। শহরে ডাক্তারের কাছে নিলে ডাক্তার বলেছিল, বাঁশের যে চটা দিয়ে নাড়ি কাটা হয়েছিল, সে চটায় ধনুষ্টঙ্কারের জীবাণু ছিল। তার মায়ের কতজন সন্তান, তাদের জন্ম এভাবেই। শুধু তাই কেন, বাড়ির আশপাশে কত বাচ্চাই তো হচ্ছে এভাবে দিনের পর দিন। অথচ কপাল পোড়া গেল শুধু তার? তার সন্তান ধনুষ্টঙ্কারে মারা গেল, এটা অবিনাশ বিশ্বাসই করতে পারে না। ছেলেসন্তান বলে কথা। সন্তান মারা যাওয়ায় অবিনাশ বজ্রপড়া বৃক্ষের মতো শোকে চুপ হয়ে গেল। এরপরে এক এক করে ছেলে, মেয়ে এসে তার ঘর ভরিয়েছে, তবুও প্রথম সন্তানের কথা সে কোনোমতেই ভুলতে পারে না। এর মধ্যেই এল লক্ষ্মীদীঘা ধানের মৌসুম। এ সময় এলেই তার মাথা ঠিক থাকে না। তার গোঁসাই তাকে বলেছে, এই ছেলে বেঁচে থাকলে তার কোনো দুঃখ থাকত না। তার সংসার ধনে-জনে পূর্ণ হতো। কিন্তু কোন পাপে তার এই রাজসন্তান তার ঘরে থাকল না। তার স্ত্রী সুরবালা তাকে বারবার বুঝিয়েছে, তার জীবনে অপূর্ণ তো কিছু নেই। ধন-জন সবই তো আছে তার। কিন্তু কোনো কথায় তার বুঝ মানে না অবিনাশ। বারবার বিড়িতে সুখটান দিয়ে চলে, একটার পিছে একটা বিড়ি ধরায়। ভাত খাওয়া প্রায় বন্ধ। এবার মেয়ের কাছ থেকে এসে সে তার স্ত্রীকে ডেকে বলেছে, —তুই কস বউ আমার ধনে-জনে পূর্ণ। শহরে যাইয়া দেখ, আমার ৫ টাকার টমেটো আমার কাছে ৮০ টাকা চায়। কত সবজি! সব সবজি আমার দিকে চাইয়া থাহে। আমার খ্যাতের ফসল, আমারে চেনে দূর শহরে যাইয়াও। আমার লগে তারা কথা কয়। আর দোকানদার দাম চাইতেই থাহে। এট্টা লোক নাই এট্টু উচিত কথা কবে। এই কষ্টের কথা আমি কোথায় কই? ধার শোধ করতে পারি না। আর আমার ঘাম ঝরানো, বৃষ্টিভেজা ফসলে অন্য মানুষ সুখ নেয়।

এবারে শুকদেবের জন্য ভালোয় ভালোয় অবিনাশেরও মলন শেষ হয়। ভালো ধান পেয়ে দুজনের দিন ভালোই যাবে মনে হচ্ছে। এখনো সবার ধান কাটা হয়নি। বৃষ্টির জল বাড়ছে। ভাসছে খেত। গাছপালা, বৃক্ষরাজি সব যেন অপরিচিত লাগে অবিনাশের। বৃষ্টিতে রং ধুয়ে আরও ঘন হয়ে উঠেছে। পূর্ণিমার লগ্ন এলে এই বৃষ্টি সহজে থামবে না। বন্যা এলে বড় সংকট হবে। ভাবতে ভাবতে কয়বার হাই তুলে বৃষ্টির মধ্যে শেষ বিড়ি ধরিয়ে সুখটান দিতে দিতে ঘুমিয়ে পড়ে। ঘুমের ভেতরে অবিনাশ দেখে, জোছনার ভেতরে তার বাবা বলছে অবিনাশ, মাটির কথা শুনতে পাস না। মাটি তো কান্দে। কৃষকের অধিকার ছাড়া দেশ বাঁচে না। লাঠি নিয়া বাইর হ অবিনাশ। বজ্জাতে দ্যাশ ভইরে গেছে। লাঠি হাতে ল। ঘুম থেকে উঠে পড়ে অবিনাশ। মুখ শুকিয়ে যাচ্ছে। হাতে লাঠি নিয়ে বের হয়। কেমন ধবল জোছনায় ভেসে যাচ্ছে মাঠ। সে মাটিতে কান পাতে। আবার উঠে দাঁড়ায়। অবিনাশ ঘামছে। তার বউ এসে বলে, তোমার কী অইছে? অবিনাশ বলে, বউ দ্যাশ ভালো নাই, বাজারে নষ্ট লোকের রাজত্ব। মাটির ডাক শোন। পাড়ার সবাইরে ডাক দে। আমাগো সম্পদ লুট হয়ে যাচ্ছে। আমাগো স্বপ্ন লুট করে নিচ্ছে। সুরবালা কাঁদে—তোমার কী অইল? এই রাজনীতি বোঝার দরকার নাই। এসব আমাগো জন্য না। তুমি ঘুমাও। ঘরে আসো। এবার অবিনাশ দেখে জোছনার ভেতরে তার ছায়া যত দূর চোখ যায়, তত দূর দীর্ঘ। বউকে কাছে ডেকে এবার অবিনাশ বলে, আমার বাবা কইত, মানুষের চেয়ে ছায়া বড় হলে সে আর বাঁচে না। আমার ছেলে-মেয়ে-জমি সব তোর রইল। মাটি ডাক দিছে, সবাইরে কইস। আমার বুকে ব্যথা উঠছে, বৃষ্টির মধ্যে তার ঘাম ভেজা আঠালো শরীরের অসুস্থতা কেউ না বুঝলেও অবিনাশ বুঝে ফেলে। সে বুক চেপে ধরে বউকে বলে, আমি চলে গেলাম বউ, মরণব্যথা আমারে ডাক দিছে। গলা কাটা মুরগির মতো অবিনাশ উঠোনের কাদা-জলে গড়াগড়ি খেতে থাকে। টিনের চালে আতাগাছে একটা প্যাঁচা ডাকতে থাকে। দূর থেকে শিয়ালের ডাক আসে। কাউরিয়া বিলের পাশে স্বর্ণগ্রামে কুপির আলো একটার পর একটা জ্বলছে। অবিনাশের চিৎকারে জেগে ওঠে পাড়া। তার সঙ্গে সুরবালার দিশেহারা কান্না অন্ধকার ভেদ করে ছুটে চলে দিগ্‌বিদিক।

গ্রামের পর গ্রাম নিম্নবর্গের কৃষকেরা সব ছুটে আসতে থাকে। এই ভর রাত্তিরে কৃষক অবিনাশের কী হলো? মানুষের দীর্ঘ সারি ক্রমশ দীর্ঘ হয় অবিনাশ ও সুরবালার চিৎকারে। কুপির আলোর সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকে। কৃষকেরা সে আলোতে গাদলায় অসহায় ফসলের খেত দেখতে থাকে। দিনের পর দিন এই ফসল তারা ফলায় আর তাদের ভাগ্য বদলায় না। ধনী হয়ে যায় অন্য মানুষ-মধ্যস্বত্বভোগীরা। এসব দেখে অবিনাশ আগেই সবাইকে বলেছিল—লাঠি হাতে বজ্জাত তাড়াও, নয় সারা জীবন দুঃখের সাগরে ভেসে মানুষের পেটের খাবার ফলাতে হবে—এ বড় অন্যায়। অবিনাশের কাতরানো এক সময় কমে আসে। তাগড়া শরীরটা নিস্তেজ হয়ে বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে। সুরবালা তারস্বরে চিৎকার দিয়ে বলে—ভগবান, এ কেমন বিচার তোমার। আমার সব শ্যাষ হইয়া গেল। গাদলার বৃষ্টি অঝোরে ঝরতে থাকে। অজস্র মানুষ এসে অবিনাশকে চাপড়ায় শুইয়ে নিয়ে চলে। কেঁদে ওঠে সবাই। বৃষ্টির শব্দে তখন আর কিছু শোনা যায় না। বৃষ্টির গতি বাড়ে। অন্ধকার চারদিক। বিল, বৃক্ষ সব যেন কালো পর্দায় ঢেকে আছে। তার মধ্যে সোনালি রঙের আলোর মিছিল বাড়তেই থাকে। শ্মশানে প্রশান্তির বৃষ্টি বয়ে চলে। অবিনাশকেও দাহ করার প্রস্তুতি চলে। গাদলা তখনো শেষ হয় না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘হীরক রাজার দেশে’ মঞ্চস্থ করল স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করেছে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার নাটক, সংগীত ও নৃত্যকলা ক্লাবের উদ্যোগে দুই দিনব্যাপী বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানে এটি মঞ্চস্থ করা হয়।

মঞ্চনাট্যটি স্কলাস্টিকার প্রতিষ্ঠাতা ইয়াসমিন মুরশেদকে উৎসর্গ করা হয়।

গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
গতকাল শুক্রবার প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘হীরক রাজার দেশে’ চলচ্চিত্র মঞ্চস্থ করে স্কলাস্টিকার শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

স্কুলের এসটিএম মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার রজতজয়ন্তী উদ্‌যাপনকে সামনে রেখে আয়োজিত এ নাট্যানুষ্ঠানের সমাপনী দিনে বিশেষ অতিথি ছিলেন নাট্যব্যক্তিত্ব আবুল হায়াত, দিলারা জামান ও আফজাল হোসেন। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্কলাস্টিকা উত্তরা সিনিয়র শাখার অধ্যক্ষ ফারাহ্ সোফিয়া আহমেদ।

হীরক রাজার দেশে নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন। প্রোডাকশন ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেন শৈলী পারমিতা নীলপদ্ম। সংগীত পরিচালনা করেন গাজী মুন্নোফ, ইলিয়াস খান ও পলাশ নাথ লোচন। নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন শাম্মী ইয়াসমিন ঝিনুক ও ফরহাদ আহমেদ শামিম।

নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন নাজিফা ওয়াযিহা আহমেদ, আরিয়াদ রহমান, আজিয়াদ রহমান, বাজনীন রহমান, মোহম্মদ সফির চৌধুরী, ফাহিম আহম্মেদ, সৈয়দ কাফশাত তাইয়ুশ হামদ ও তাজরীবা নওফাত প্রমুখ।

শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকেরা অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের পরিবেশিত অভিনয়, গান ও নাচ উপভোগ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

গবেষণায় বেরিয়ে এল আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’র গল্প

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট বইমেলায় উপস্থাপিত আরবি সাহিত্য নিয়ে সাম্প্রতিক এক গবেষণা ইতিহাসের বহুল প্রচলিত ধারণাকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। এত দিন মনে করা হতো, আব্বাসীয় আমলের (৭৫০-১২৫৮ খ্রিষ্টাব্দ) পর আরবি সাহিত্য প্রায় ৮০০ বছর বছর স্থবির হয়ে ছিল। কিন্তু ভাষাবিদ ও সাহিত্য ইতিহাসবিদদের মতে, এই ধারণা আসলে পশ্চিমা দৃষ্টিকোণ থেকে তৈরি এক ‘ঔপনিবেশিক কল্পনা’ মাত্র। বাস্তবে আরবি সাহিত্য কখনোই থেমে যায়নি।

প্রচলিত ধারণা অনুযায়ী, অষ্টম শতাব্দীতে আব্বাসীয় খলিফাদের অধীনে বিজ্ঞান, দর্শন ও কবিতার কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল বাগদাদ। আবু নুয়াস, আল-মুতানাব্বি, আল-ফারাবি ও ইবনে সিনার মতো কবি ও দার্শনিকদের হাত ধরে শুরু হয়েছিল এক স্বর্ণযুগ। ঊনবিংশ শতাব্দীর ইউরোপীয় গবেষকেরা—যেমন ফরাসি চিন্তাবিদ আর্নেস্ট রেনাঁ ও ডাচ ইতিহাসবিদ রেইনহার্ট দোজি সেই আমলটিকেই আরবি বুদ্ধিবৃত্তিক জীবনের শিখর বলে স্বীকার করেছিলেন এবং দাবি করেছিলেন, একাদশ শতাব্দীর পর এই ধারাবাহিকতার পতন ঘটে। তাঁদের মতে, এরপর প্রায় ৮০০ বছর আরবে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক বা দার্শনিক কাজ হয়নি—যতক্ষণ না ইউরোপে রেনেসাঁ শুরু হয়।

কিন্তু আধুনিক গবেষকেরা বলছেন, এই ধারণা সরলীকৃত ও পক্ষপাতদুষ্ট। ফ্রাঙ্কফুর্ট আন্তর্জাতিক বইমেলায় শেখ জায়েদ বুক অ্যাওয়ার্ডের আয়োজিত এক আলোচনায় ভাষাবিদেরা দাবি করেছেন, আরবি রচনা শৈলী কখনো বিলুপ্ত হয়নি; বরং তা ধারাবাহিকভাবে কপি, অনুবাদ ও পাঠের মাধ্যমে বেঁচে ছিল।

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলার তাঁর ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ গ্রন্থে দাবি করেছেন, আরবি সাহিত্যে ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে যে ধারণাটি প্রচলিত আছে তা আসলে গাল-গল্প। এই বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। গ্রুন্ডলার এতে দেখিয়েছেন, নবম শতাব্দীর বাগদাদে বইয়ের ব্যবসা, কপিকারদের প্রতিযোগিতা, জনসম্মুখে পাঠ ও লেখার প্রচলন—সবই ছিল আধুনিক প্রকাশনা সংস্কৃতির পূর্বসূরি। তিনি মত দিয়েছেন, ‘বাগদাদের রাস্তায় হাঁটলে আপনি দেখতেন লোকেরা হস্তলিপি বিক্রি করছে, বিরামচিহ্ন নিয়ে তর্ক করছে—এ যেন এক জীবন্ত প্রকাশনা বাজার।’

গবেষণা বলছে, আরবি সাহিত্য আসলে কখনো এক জায়গায় স্থির থাকেনি। এর কেন্দ্র এক সময় বাগদাদ থেকে কায়রো, দামেস্ক ও আন্দালুসিয়ায় স্থানান্তরিত হয়। কিন্তু ধারাটি অব্যাহতই থাকে। নতুন ঘরানা তৈরি হয়, পুরোনো ঘরানা রূপান্তরিত হয়।

ফরাসি অধ্যাপক হাকান ওজকান তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, ‘জাজাল’ নামের কথ্য ছন্দভিত্তিক কবিতার ধারা আব্বাসীয় যুগের পরও বিকশিত হতে থাকে। তাঁর মতে, ‘এই কবিরা নিয়ম ভেঙে নতুন রূপ দিয়েছে—তাঁদের ছন্দ ও ব্যঙ্গ আধুনিক র্যাপের মতো প্রাণবন্ত।’

জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল
জার্মান গবেষক বেয়াট্রিস গ্রুন্ডলারের ‘দ্য রাইজ অব দ্য অ্যারাবিক বুক’ বইটি এবারের শেখ জায়েদ পুরস্কারের শর্টলিস্টে রয়েছে। ছবি: দ্য ন্যাশনাল

এদিকে এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে সোমবার (২০ অক্টোবর) আমিরাতভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, আবুধাবির নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ‘আরবি সাহিত্য লাইব্রেরি’ প্রকল্প ইতিমধ্যেই ‘হারানো শতাব্দী’ বলে বিবেচিত সময়ের ৬০ টিরও বেশি আরবি সাহিত্যকর্ম পুনরুদ্ধার করেছে। প্রকল্পটির সম্পাদক অধ্যাপক মরিস পোমেরান্টজ বলেছেন, ‘এই বইগুলো সম্পাদনা করা মানে এক চলমান সংলাপে অংশ নেওয়া—যেখানে প্রজন্মের পর প্রজন্ম লেখক, অনুবাদক ও সমালোচকেরা একে অপরকে উত্তর দিয়ে গেছেন।’

মরিস মনে করেন, আরবি সাহিত্য স্থবির হয়ে যাওয়ার ধারণাটি মূলত অনুবাদের অভাব থেকেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো লেখা অনুবাদ করা হয় না, তখন সেটি বৈশ্বিক অস্তিত্ব হারায়।’

মরিসের মতে, এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই সাহিত্যকে আবার জনসাধারণের কল্পনায় ফিরিয়ে আনা—স্কুলে পড়ানো, মঞ্চে উপস্থাপন করা, অনুবাদের মাধ্যমে বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া। তা না হলে আরবি সাহিত্যের ‘হারানো শতাব্দী’ হিসেবে চিহ্নিত সময়টি অধরাই থেকে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান। ছবি: সংগৃহীত
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান। ছবি: সংগৃহীত

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ তিন গোয়েন্দার স্রষ্টা রকিব হাসান মারা গেছেন। আজ বুধবার রাজধানীর একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস চলাকালে তাঁর মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর।

রকিব হাসানের মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন সেবা প্রকাশনীর উপদেষ্টা মাসুমা মায়মুর। তিনি সেবা প্রকাশনীর প্রতিষ্ঠাতা কাজী আনোয়ার হোসেনের ছোট ছেলে কাজী মায়মুর হোসেনের স্ত্রী।

মাসুমা মায়মুর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘তিন গোয়েন্দা ও সেবা প্রকাশনীর পাঠকদেরকে আন্তরিক দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, কিছুক্ষণ আগে রকিব হাসান সাহেব পরলোক গমন করেছেন। ডায়ালাইসিস চলাকালে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওনার জীবনাবসান ঘটে। আপনারা ওনার পবিত্র আত্মার মাগফেরাত কামনা করুন।’

১৯৫০ সালের ১২ ডিসেম্বর কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন রকিব হাসান। বাবার চাকরির কারণে শৈশব কেটেছে ফেনীতে। সেখান থেকে স্কুলজীবন শেষ করে ভর্তি হন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে। পড়াশোনা শেষে বিভিন্ন চাকরিতে যুক্ত হলেও অফিসের বাঁধাধরা জীবনে তাঁর মন টেকেনি। অবশেষে তিনি লেখালেখিকে বেছে নেন জীবনের একমাত্র পথ হিসেবে।

জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ। ছবি: সংগৃহীত
জনপ্রিয় কিশোর গোয়েন্দা সিরিজ। ছবি: সংগৃহীত

সেবা প্রকাশনী থেকে তাঁর লেখকজীবনের সূচনা হয়। প্রথমদিকে বিশ্বসেরা ক্ল্যাসিক বই অনুবাদ করে লেখালেখির জগতে প্রবেশ করেন তিনি। এরপর টারজান, গোয়েন্দা রাজু, রেজা-সুজা সিরিজসহ চার শতাধিক জনপ্রিয় বই লেখেন। তবে তাঁর পরিচয়ের সবচেয়ে বড় জায়গা হলো তিন গোয়েন্দা সিরিজ। এই সিরিজ বাংলাদেশের অসংখ্য কিশোর-কিশোরীর কৈশোরের সঙ্গী।

মূলত রবার্ট আর্থারের থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ অবলম্বনে তিন গোয়েন্দার সূচনা হয়। তবে রকিব হাসানের লেখনশৈলীতে এটি পেয়েছে একেবারে নতুন রূপ। বাংলাদেশি সাহিত্য হয়ে উঠেছে এটি। এই সিরিজের মাধ্যমে তিনি হয়ে ওঠেন হাজারো কিশোর পাঠকের প্রিয় লেখক।

নিজ নামে লেখার পাশাপাশি তিনি ব্যবহার করেছেন বিভিন্ন ছদ্মনাম। শামসুদ্দীন নওয়াব নামে তিনি অনুবাদ করেছিলেন জুল ভার্নের বইগুলো।

বাংলাদেশের পাঠকদের কাছে রকিব হাসান শুধু একজন গোয়েন্দা লেখক নন, তিনি কয়েক প্রজন্মের শৈশব-কৈশোরের ভালোবাসার মানুষ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল যেন তাঁর দীর্ঘ কোনো বাক্যের সমাপ্তি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
লাসলো ক্রাসনাহোরকাই। ছবি: সংগৃহীত
লাসলো ক্রাসনাহোরকাই। ছবি: সংগৃহীত

হাঙ্গেরির ঔপন্যাসিক লাসলো ক্রাসনাহোরকাই এবার (২০২৫ সালে) সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন তাঁর দীর্ঘ, দার্শনিক বাক্য ও মানবজীবনের বিশৃঙ্খলার গভীর অনুসন্ধানী সাহিত্যকর্মের জন্য। সুইডিশ একাডেমি তাঁকে সম্মান জানিয়েছে ‘শিল্পের শক্তিকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার’ জন্য। লেখক সুসান সনটাগ অবশ্য তাঁকে একসময় ‘মহাপ্রলয়ের হাঙ্গেরিয়ান গুরু’ আখ্যা দিয়েছিলেন।

সাহিত্যজগতে অনেকের কাছে ক্রাসনাহোরকাইয়ের নোবেল পাওয়ার এই ঘোষণাটি যেন কয়েক দশক ধরে চলা একটি বাক্যের সমাপ্তি।

১৯৫৪ সালে হাঙ্গেরির ছোট শহর জিউলা-তে জন্ম নেওয়া ক্রাসনাহোরকাই ১৯৮০-এর দশকের শুরুতে গল্প লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম উপন্যাস স্যাটানট্যাঙ্গো (১৯৮৫) একটি বৃষ্টিস্নাত, ধ্বংসপ্রায় গ্রামের কাহিনি—যেখানে প্রতারক, মাতাল ও হতাশ মানুষেরা মিথ্যা আশায় আঁকড়ে থাকে। পরিচালক বেলা-তার তাঁর এই উপন্যাসটিকে দীর্ঘ ৭ ঘণ্টার এক সাদাকালো চলচ্চিত্রে রূপ দেন। এই বইতেই ধরা পড়ে ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখার বৈশিষ্ট্যসমূহ, যেমন—অবিরাম দীর্ঘ বাক্য, দার্শনিক হাস্যরস ও পতনের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের প্রতিচ্ছবি।

তাঁর পরবর্তী উপন্যাসগুলো—দ্য মেলানকোলি অব রেজিস্ট্যান্স (১৯৮৯), ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার (১৯৯৯) ও সেইবো দেয়ার বিলো (২০০৮)—তাঁর এই দৃষ্টিভঙ্গিকে মহাজাগতিক পরিসরে বিস্তৃত করেছে। ‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’–এ তিনি এক নথি প্রহরীর গল্প বলেছেন, যিনি রহস্যময় এক পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করতে নিউইয়র্কে পালিয়ে যান এবং আত্মহত্যা করেন—যেন ক্রম বিলীন পৃথিবীতে অর্থ ধরে রাখার এক মরিয়া চেষ্টা তাঁর।

ক্রাসনাহোরকাইয়ের লেখায় কাহিনি প্রায় সময়ই বাক্যের ভেতর হারিয়ে যায়। তিনি লিখেছেন এমন বাক্য, যা একাধিক পৃষ্ঠা জুড়ে পাঠককে টেনে নেয় অবচেতনে, অবিরাম প্রবাহে।

তাঁর সাহিত্যে হাস্যরস ও ট্র্যাজেডি পাশাপাশি চলে। স্যাটানট্যাঙ্গো–এর মাতাল নাচের দৃশ্য যেমন নিঃশেষের প্রতীক, তেমনি ‘ব্যারন ওয়েঙ্কহাইমস হোমকামিং’ (২০১৬)-এ দেখা যায়, ফিরে আসা এক পরাজিত অভিজাতকে। যার মাধ্যমে প্রকাশ পায় সভ্যতার পচন ও মানুষের হাস্যকর ভ্রান্তি।

২০১৫ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার পাওয়ার মধ্য দিয়েই প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পান ক্রাসনাহোরকাই। অনুবাদক জর্জ সির্টেস ও ওটিলি মুলজেট তাঁর জটিল হাঙ্গেরিয়ান ভাষাকে ইংরেজিতে রূপ দিতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। ‘হাডসন রিভিউ’ তাঁকে বর্ণনা করেছিল ‘অন্তহীন বাক্যের ভ্রমণশিল্পী’ হিসেবে।

চল্লিশ বছরের সৃষ্টিতে ক্রাসনাহোরকাইয়ের ভুবন চিত্র, সংগীত, দর্শন ও ভাষার মিলনে বিস্তৃত। সাম্প্রতিক উপন্যাস ‘হার্শট ০৭৭৬৯’ (২০২৪)–এ তিনি এক প্রবাহিত বাক্যে লিখেছেন নব্য-নাৎসি, নেকড়ে আর এক হতভাগ্য পদার্থবিদের কাহিনি—আধুনিক ইউরোপের নৈতিক পক্ষাঘাতের রূপক হিসেবে।

তাঁর সমগ্র সাহিত্যজগৎ এক অন্ধকার ও ধ্যানমগ্ন মহাবিশ্ব—যেখানে পতন, শূন্যতা ও করুণা পাশাপাশি থাকে। ‘সেইবো দেয়ার বিলো’ বইটিতে তিনি লিখেছেন, ‘সৌন্দর্য, যত ক্ষণস্থায়ীই হোক না কেন, তা পবিত্রতার প্রতিবিম্ব।’ এই বিশ্বাসই লাসলো ক্রাসনাহোরকাইকে সেই বিরল লেখক করে তুলেছে, যাঁর নৈরাশ্যও মুক্তির মতো দীপ্ত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত