গোলাম ওয়াদুদ, ঢাকা

দিন যত যাচ্ছে, রাজনীতির মাঠে উত্তেজনা তত বাড়ছে। প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অপরের জায়গায় অনড়। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর দাবি, সরকার পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিক। তারা নির্বাচনের আয়োজন করুক। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বলছে, সংবিধান অনুযায়ী, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনেই হবে নির্বাচন। সরকার ও বিরোধীদের অনড় অবস্থান রাজনীতির মাঠকে সহিংস করে তুলছে।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সংলাপের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ উপায়ে পরিস্থিতির উত্তরণ না হলে তা দেশের জন্য তো বটেই, রাজনৈতিক দলগুলোর জন্যও আখেরে ভালো হবে না। সহিংস পরিস্থিতি থেকে অশুভ শক্তির উত্থান হবে, তৃতীয় পক্ষ সুবিধা নিতে পারে। চলমান পরিস্থিতি আপাতত তেমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে। সংলাপের বিষয়ে আলোচনা থাকলেও উভয় পক্ষই শর্ত জুড়ে দিয়েছে।
বিএনপি বলছে, সরকার পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে রাজি না হলে কোনো সংলাপ নয়। আর সরকার বলছে, সংবিধান মেনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচনে রাজি না হলে কোনো সংলাপ নয়। এমন অচলাবস্থার মধ্যে রাজপথে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পরিস্থিতি আগুনে ঘি ঢালার মতো।
সোমবার সারা দেশে বিএনপির জনসমাবেশ ছিল। ঢাকার কর্মসূচিতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘গুগলিতে ব্যাটসম্যান যেমন কিছু বুঝে ওঠার আগে বোল্ড আউট হয়ে যায়, বিএনপির দুই দিনের কর্মসূচিতে (২৮ ও ২৯ জুলাই) আওয়ামী লীগের অবস্থা একই হয়েছে। বিএনপির গুগলিতে আওয়ামী লীগ বোল্ড আউট হয়েছে।’ তার মানে তিনি বোঝাতে চাইছেন, বিএনপির ২৮ ও ২৯ জুলাইয়ের কর্মসূচি সফল।

২৮ জুলাই পল্টনে ছিল বিএনপির মহাসমাবেশ; গণমাধ্যমের খবর ও ছবি দেখে মনে হয়েছে বড় জমায়েত করেছিল তারা। একই দিনে পাল্টা সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। দলটি বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ করেছে। তাদেরও আগের সমাবেশের চেয়ে লোকসমাগম বেশি ছিল। সেদিন কোনো সংঘাতের ঘটনা ঘটেনি। সমস্যাটা হয় পরের দিন, মানে ২৯ জুলাই। আগের দিনের মহাসমাবেশ থেকে ঢাকার প্রবেশপথে ‘শান্তিপূর্ণ অবস্থান’ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। সেদিন সকাল থেকেই মাঠ দখলে মরিয়া হয়ে ওঠে দুই দল।
সেদিনও বিএনপির বিপরীতে প্রথমে ঢাকার প্রবেশপথে অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল ক্ষমতাসীন দল। কিন্তু পরে তা পাল্টে থানায় থানায় সতর্ক অবস্থানের কর্মসূচি ঘোষণা করে। কিন্তু বাস্তবে ঢাকার প্রবেশমুখে বিএনপির কর্মসূচির সময় সহিংসতার ঘটনায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি ছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষায় ‘পুলিশকে সহযোগিতার জন্য’ তারা সেখানে ছিল। প্রশ্ন হলো, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ক্ষমতাসীন দল তো দূরের কথা, কোনো নির্দিষ্ট দল বা গোষ্ঠীকে অ্যাডহক ভিত্তিতে ‘সহায়ক শক্তি’ হিসেবে নিতে পারে—সংবিধান বা কোনো আইন কি তা সমর্থন করে?
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘কর্মসূচির নামে বিএনপির লোকজন জ্বালাও-পোড়াও করছিল। পুলিশের ওপর হামলা চালাচ্ছিল। তাই পুলিশকে সহযোগিতা করার জন্যই আওয়ামী লীগের লোকজন রাস্তায় নেমেছিল।’ তাহলে কি ধরে নিতে হবে, পুলিশ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ? তর্কের খাতিরে সেটা ধরে নিলেও পুলিশ ছাড়াও তো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে আরো ফোর্স আছে। তাদের মোতায়েন করা যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাবে বলে বাস্তব আশঙ্কা থাকলে ‘সভা-সমাবেশে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা’ দেওয়া যায়। এটা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের অকার্যকারিতার ইঙ্গিত দেয়, যা গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত।
গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া ব্যাহত করলে ভিসা নিষেধাজ্ঞার বিধান রেখে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার পর দুই দলই রয়েসয়ে সভা-সমাবেশ করছিল। কিন্তু ২৯ জুলাই পরিস্থিতি সহিংস হয়ে ওঠে। বিএনপির কর্মসূচিতে সংঘর্ষ হয়; বিএনপির নেতাদের পিটিয়ে আহত করে পুলিশ। এ সময় ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরাও তাঁদের সঙ্গে ছিলেন। যদিও পুলিশ দাবি করছে, বিএনপির কর্মসূচি থেকে তাদের ওপর হামলা হয় এবং বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হন।
বাস্তবে এদিন রক্ষণাত্মকভাবে খেলতে পারেনি আওয়ামী লীগ। বিএনপির ‘গুগলি’ উড়িয়ে মেরেছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু ক্রিকেটের ধ্রুপদী নিয়ম হচ্ছে, ‘গুগলি’ রক্ষণাত্মকভাবে মোকাবিলা করা। ‘লফটেড শট’ খেলতে গেলে ক্যাচ বা বোল্ড হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। মির্জা ফখরুলের ভাষায়, বিএনপির গুগলিতে আওয়ামী লীগ বোল্ড আউট হয়েছে। যদিও আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যে বোঝা যাচ্ছে, বিএনপির গুগলি কার্যকর নয়, তাঁরা মাঠছাড়া। কারণ, তারা জ্বালাও-পোড়াও করে সহিংসহতা ছড়াতে গিয়ে ২০১৩-১৪ সালের মতো আবারও ধরা খেয়েছে। তাদের সঙ্গে জনগণ নেই।
এদিকে সোমবারের জনসমাবেশে সরকারের প্রতি হুমকি দিয়ে বিএনপির নেতারা বলেছেন, তাঁদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে না দিলে ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে সামনে সমাবেশ করবেন।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘সমাবেশের পরদিন তারা কেন অবস্থান কর্মসূচি দিল? এটা কোন ধরনের গণতন্ত্র? এটা তো নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করা। তারা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়। ভিসা নীতি তো তাদের ওপর প্রয়োগ করা উচিত। তাদের উদ্দেশ্য একটা লাশ ফেলা। লন্ডন থেকে তারেক রহমান সেই নির্দেশ দিয়েছেন।’ তিনি বলেছেন, ‘আমরা উত্তেজনায় যাব না। আমরা নির্বাচন চাই। তারা যে করেই হোক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চায়। নির্বাচন পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি থাকবে, তবে ধরন পাল্টাবে। নির্বাচন পর্যন্ত ছাড়াছাড়ি নেই। আমরা মাঠে আছি।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে বেধড়ক পেটানোর ছবি ও ভিডিও গণমাধ্যমে সয়লাব। সংঘাতের জন্য বিএনপিকে ভিসা নীতির ভয় দেখায় আওয়ামী লীগ। কিন্তু পুলিশের সহযোগী বাহিনী হিসেবে মাঠে থেকে সহিংসতায় অনুঘটক হিসেবে কাজ করলে তারা দায় থেকে রেহাই পাবে? আওয়ামী লীগ বরাবর বলে এসেছে, ‘কিছু অতি উৎসাহী নেতা-কর্মী’ উত্তেজিত হয়ে সংঘাতে জড়ান। ওবায়দুল কাদের দাবি করছেন, বিএনপি নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করছে, ‘লাশ ফেলতে’ চাইছে। কিন্তু সরকার কোনো সহিংসতায় যাবে না।
তিনি নেতা-কর্মীদের উত্তেজিত হতে নিষেধ করছেন। এমন অবস্থান আওয়ামী লীগের জন্যেই ভালো বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। রাজনৈতিকভাবে বিএনপিকে মোকাবিলা করাই এখন বুদ্ধিমানের কাজ হবে। কিন্তু আদতে তা হচ্ছে না, পুলিশ হোক বা ‘অতি উৎসাহী নেতা-কর্মী’ হোক, তারা বিএনপির সঙ্গে সংঘর্ষ থেকে নিবৃত্ত থাকার চেষ্টা করছে বলে দেখা যাচ্ছে না।
এদিকে সোমবার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের বৈঠক হয়েছে। বৈঠক শেষে ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু বলেছেন, ‘আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, বিএনপি সংবিধান পরিবর্তনের কথা বলছে ৷ সাংবিধানিক ধারা ব্যাহত করে অন্য ধারা প্রবর্তন করতে চায়। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যে শর্ত দিক, আমরা মানব ৷ কিন্তু সাংবিধানিক ধারা ব্যাহত করে সংবিধান পরিবর্তন করতে চাইলে সুযোগ দেব না।’ তিনি বলেছেন, ‘ওরা তো আলোচনায় বিশ্বাস করে না। তারা তো উৎখাতের কথা বলে। তাই কিসের সংলাপ?’
১৪ দলের সংলাপ নাকচ করে দেওয়া রাজনীতিতে ভালো কিছু বয়ে আনবে না বলে অনেকের ধারণা। এমন বক্তব্য আরও সহিংসতার দিকে ঠেলে দিতে পারে। দেশের রাজনীতির মাঠ তখন হয়ে উঠতে পারে আরও সহিংস। তাই দুই দলেরই উচিত রাজনৈতিকভাবে সমস্যার সমাধান করা। জনগণ চায় অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সব দলের অংশগ্রহণের নির্বাচন, যেখানে তিনি নিজের ভোট নিজে দিতে পারবেন। তারা ‘গুগলি’ বা ‘লফটেড শট’ কোনোটাই চায় না। তারা চায় তাদের ব্যক্তিগত ফোন কেউ চেক না করুক। তারা চায়, সহিংসতায় তাদের কেউ মারা না যাক। তারা চায় রাস্তায় নামলে তার গাড়িতে কেউ আগুন না দিক, জীবন বাঁচুক।
লেখক: সহ সম্পাদক, আজকের পত্রিকা

দিন যত যাচ্ছে, রাজনীতির মাঠে উত্তেজনা তত বাড়ছে। প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অপরের জায়গায় অনড়। বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর দাবি, সরকার পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিক। তারা নির্বাচনের আয়োজন করুক। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বলছে, সংবিধান অনুযায়ী, বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনেই হবে নির্বাচন। সরকার ও বিরোধীদের অনড় অবস্থান রাজনীতির মাঠকে সহিংস করে তুলছে।
গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সংলাপের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ উপায়ে পরিস্থিতির উত্তরণ না হলে তা দেশের জন্য তো বটেই, রাজনৈতিক দলগুলোর জন্যও আখেরে ভালো হবে না। সহিংস পরিস্থিতি থেকে অশুভ শক্তির উত্থান হবে, তৃতীয় পক্ষ সুবিধা নিতে পারে। চলমান পরিস্থিতি আপাতত তেমন ইঙ্গিতই দিচ্ছে। সংলাপের বিষয়ে আলোচনা থাকলেও উভয় পক্ষই শর্ত জুড়ে দিয়েছে।
বিএনপি বলছে, সরকার পদত্যাগ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে রাজি না হলে কোনো সংলাপ নয়। আর সরকার বলছে, সংবিধান মেনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে নির্বাচনে রাজি না হলে কোনো সংলাপ নয়। এমন অচলাবস্থার মধ্যে রাজপথে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পরিস্থিতি আগুনে ঘি ঢালার মতো।
সোমবার সারা দেশে বিএনপির জনসমাবেশ ছিল। ঢাকার কর্মসূচিতে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘গুগলিতে ব্যাটসম্যান যেমন কিছু বুঝে ওঠার আগে বোল্ড আউট হয়ে যায়, বিএনপির দুই দিনের কর্মসূচিতে (২৮ ও ২৯ জুলাই) আওয়ামী লীগের অবস্থা একই হয়েছে। বিএনপির গুগলিতে আওয়ামী লীগ বোল্ড আউট হয়েছে।’ তার মানে তিনি বোঝাতে চাইছেন, বিএনপির ২৮ ও ২৯ জুলাইয়ের কর্মসূচি সফল।

২৮ জুলাই পল্টনে ছিল বিএনপির মহাসমাবেশ; গণমাধ্যমের খবর ও ছবি দেখে মনে হয়েছে বড় জমায়েত করেছিল তারা। একই দিনে পাল্টা সমাবেশ করেছে আওয়ামী লীগ। দলটি বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে সমাবেশ করেছে। তাদেরও আগের সমাবেশের চেয়ে লোকসমাগম বেশি ছিল। সেদিন কোনো সংঘাতের ঘটনা ঘটেনি। সমস্যাটা হয় পরের দিন, মানে ২৯ জুলাই। আগের দিনের মহাসমাবেশ থেকে ঢাকার প্রবেশপথে ‘শান্তিপূর্ণ অবস্থান’ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। সেদিন সকাল থেকেই মাঠ দখলে মরিয়া হয়ে ওঠে দুই দল।
সেদিনও বিএনপির বিপরীতে প্রথমে ঢাকার প্রবেশপথে অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল ক্ষমতাসীন দল। কিন্তু পরে তা পাল্টে থানায় থানায় সতর্ক অবস্থানের কর্মসূচি ঘোষণা করে। কিন্তু বাস্তবে ঢাকার প্রবেশমুখে বিএনপির কর্মসূচির সময় সহিংসতার ঘটনায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি ছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষায় ‘পুলিশকে সহযোগিতার জন্য’ তারা সেখানে ছিল। প্রশ্ন হলো, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে ক্ষমতাসীন দল তো দূরের কথা, কোনো নির্দিষ্ট দল বা গোষ্ঠীকে অ্যাডহক ভিত্তিতে ‘সহায়ক শক্তি’ হিসেবে নিতে পারে—সংবিধান বা কোনো আইন কি তা সমর্থন করে?
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘কর্মসূচির নামে বিএনপির লোকজন জ্বালাও-পোড়াও করছিল। পুলিশের ওপর হামলা চালাচ্ছিল। তাই পুলিশকে সহযোগিতা করার জন্যই আওয়ামী লীগের লোকজন রাস্তায় নেমেছিল।’ তাহলে কি ধরে নিতে হবে, পুলিশ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ? তর্কের খাতিরে সেটা ধরে নিলেও পুলিশ ছাড়াও তো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে আরো ফোর্স আছে। তাদের মোতায়েন করা যায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাবে বলে বাস্তব আশঙ্কা থাকলে ‘সভা-সমাবেশে সাময়িক নিষেধাজ্ঞা’ দেওয়া যায়। এটা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের অকার্যকারিতার ইঙ্গিত দেয়, যা গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত।
গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়া ব্যাহত করলে ভিসা নিষেধাজ্ঞার বিধান রেখে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণার পর দুই দলই রয়েসয়ে সভা-সমাবেশ করছিল। কিন্তু ২৯ জুলাই পরিস্থিতি সহিংস হয়ে ওঠে। বিএনপির কর্মসূচিতে সংঘর্ষ হয়; বিএনপির নেতাদের পিটিয়ে আহত করে পুলিশ। এ সময় ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীরাও তাঁদের সঙ্গে ছিলেন। যদিও পুলিশ দাবি করছে, বিএনপির কর্মসূচি থেকে তাদের ওপর হামলা হয় এবং বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হন।
বাস্তবে এদিন রক্ষণাত্মকভাবে খেলতে পারেনি আওয়ামী লীগ। বিএনপির ‘গুগলি’ উড়িয়ে মেরেছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু ক্রিকেটের ধ্রুপদী নিয়ম হচ্ছে, ‘গুগলি’ রক্ষণাত্মকভাবে মোকাবিলা করা। ‘লফটেড শট’ খেলতে গেলে ক্যাচ বা বোল্ড হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। মির্জা ফখরুলের ভাষায়, বিএনপির গুগলিতে আওয়ামী লীগ বোল্ড আউট হয়েছে। যদিও আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যে বোঝা যাচ্ছে, বিএনপির গুগলি কার্যকর নয়, তাঁরা মাঠছাড়া। কারণ, তারা জ্বালাও-পোড়াও করে সহিংসহতা ছড়াতে গিয়ে ২০১৩-১৪ সালের মতো আবারও ধরা খেয়েছে। তাদের সঙ্গে জনগণ নেই।
এদিকে সোমবারের জনসমাবেশে সরকারের প্রতি হুমকি দিয়ে বিএনপির নেতারা বলেছেন, তাঁদের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করতে না দিলে ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে সামনে সমাবেশ করবেন।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘সমাবেশের পরদিন তারা কেন অবস্থান কর্মসূচি দিল? এটা কোন ধরনের গণতন্ত্র? এটা তো নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করা। তারা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়। ভিসা নীতি তো তাদের ওপর প্রয়োগ করা উচিত। তাদের উদ্দেশ্য একটা লাশ ফেলা। লন্ডন থেকে তারেক রহমান সেই নির্দেশ দিয়েছেন।’ তিনি বলেছেন, ‘আমরা উত্তেজনায় যাব না। আমরা নির্বাচন চাই। তারা যে করেই হোক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চায়। নির্বাচন পর্যন্ত আমাদের কর্মসূচি থাকবে, তবে ধরন পাল্টাবে। নির্বাচন পর্যন্ত ছাড়াছাড়ি নেই। আমরা মাঠে আছি।’
বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে বেধড়ক পেটানোর ছবি ও ভিডিও গণমাধ্যমে সয়লাব। সংঘাতের জন্য বিএনপিকে ভিসা নীতির ভয় দেখায় আওয়ামী লীগ। কিন্তু পুলিশের সহযোগী বাহিনী হিসেবে মাঠে থেকে সহিংসতায় অনুঘটক হিসেবে কাজ করলে তারা দায় থেকে রেহাই পাবে? আওয়ামী লীগ বরাবর বলে এসেছে, ‘কিছু অতি উৎসাহী নেতা-কর্মী’ উত্তেজিত হয়ে সংঘাতে জড়ান। ওবায়দুল কাদের দাবি করছেন, বিএনপি নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করছে, ‘লাশ ফেলতে’ চাইছে। কিন্তু সরকার কোনো সহিংসতায় যাবে না।
তিনি নেতা-কর্মীদের উত্তেজিত হতে নিষেধ করছেন। এমন অবস্থান আওয়ামী লীগের জন্যেই ভালো বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। রাজনৈতিকভাবে বিএনপিকে মোকাবিলা করাই এখন বুদ্ধিমানের কাজ হবে। কিন্তু আদতে তা হচ্ছে না, পুলিশ হোক বা ‘অতি উৎসাহী নেতা-কর্মী’ হোক, তারা বিএনপির সঙ্গে সংঘর্ষ থেকে নিবৃত্ত থাকার চেষ্টা করছে বলে দেখা যাচ্ছে না।
এদিকে সোমবার আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের বৈঠক হয়েছে। বৈঠক শেষে ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু বলেছেন, ‘আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, বিএনপি সংবিধান পরিবর্তনের কথা বলছে ৷ সাংবিধানিক ধারা ব্যাহত করে অন্য ধারা প্রবর্তন করতে চায়। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যে শর্ত দিক, আমরা মানব ৷ কিন্তু সাংবিধানিক ধারা ব্যাহত করে সংবিধান পরিবর্তন করতে চাইলে সুযোগ দেব না।’ তিনি বলেছেন, ‘ওরা তো আলোচনায় বিশ্বাস করে না। তারা তো উৎখাতের কথা বলে। তাই কিসের সংলাপ?’
১৪ দলের সংলাপ নাকচ করে দেওয়া রাজনীতিতে ভালো কিছু বয়ে আনবে না বলে অনেকের ধারণা। এমন বক্তব্য আরও সহিংসতার দিকে ঠেলে দিতে পারে। দেশের রাজনীতির মাঠ তখন হয়ে উঠতে পারে আরও সহিংস। তাই দুই দলেরই উচিত রাজনৈতিকভাবে সমস্যার সমাধান করা। জনগণ চায় অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও সব দলের অংশগ্রহণের নির্বাচন, যেখানে তিনি নিজের ভোট নিজে দিতে পারবেন। তারা ‘গুগলি’ বা ‘লফটেড শট’ কোনোটাই চায় না। তারা চায় তাদের ব্যক্তিগত ফোন কেউ চেক না করুক। তারা চায়, সহিংসতায় তাদের কেউ মারা না যাক। তারা চায় রাস্তায় নামলে তার গাড়িতে কেউ আগুন না দিক, জীবন বাঁচুক।
লেখক: সহ সম্পাদক, আজকের পত্রিকা

হোয়াইট হাউসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে ইউক্রেনকে নিয়ে একটি নতুন নিরাপত্তা পরিকল্পনার ইঙ্গিত দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রও এ শান্তিরক্ষায় যুক্ত থাকবে।
১১ ঘণ্টা আগে
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের অবসান নিয়ে আলোচনা জোরদার হয়েছে। এ নিয়ে আলাস্কায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও পুতিনের মধ্যে বিরল বৈঠক হয়েছে। গতকাল সোমবার হোয়াইট হাউসে বৈঠক করেছেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গেও ট্রাম্পের বৈঠক হয়েছে। এই আলোচনায় মূল কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে ইউক্রেনের
১৮ ঘণ্টা আগে
২০১৩-১৪ সালে ইউক্রেনে ব্যাপক গণবিক্ষোভ শুরু হলে রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ ক্ষমতাচ্যুত হন। এই রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন কোনো রাষ্ট্রীয় প্রতীকবিহীন সশস্ত্র সৈন্য পাঠিয়ে ক্রিমিয়া দখল করে নেন। পরে পুতিন ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার জন্য একটি
২ দিন আগে
যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, আগামী বছর এক ইতিহাস গড়তে যাচ্ছে এসব ডেটা সেন্টার। ২০২৬ সালে প্রথমবারের মতো আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের তুলনায় বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করবে এআইয়ের এসব ডেটা সেন্টার।
৩ দিন আগে