বিভাস রায় চৌধুরী
জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে গত ৮ জুলাই জাপানের নারা শহরে নিহত হয়েছেন। ৬৭ বছর বয়সী জাপানের অন্যতম জনপ্রিয় এই নেতা রেলস্টেশনের বাইরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভোট প্রচারে এসে স্ট্রিট কর্নারে ভাষণ দিচ্ছিলেন। সেই সময় তাঁর পেছনে রাস্তার উলটো দিকে দাঁড়িয়ে থাকা আততায়ী ৪১ বছর বয়সী তেতসুয়া ইয়ামাগামি তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এই হত্যা প্রচলিত নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। হত্যার প্রায় এক মাসের মাথায় এসেও সেসব প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর মেলেনি।
যেকোনো রাষ্ট্রনায়কের ক্ষেত্রে এ ধরনের হামলা হতেই পারে। কিন্তু শিনজো আবের মতো সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ওপর এ ধরনের হামলা আন্তর্জাতিক রাজনীতি, আর নিরাপত্তাব্যবস্থার বিষয়ে বেশ কতগুলো জটিল প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে।
শিনজো এক রাজনৈতিক পরিবার থেকে উঠে আসা নেতা। তাঁর বাবা ছিলেন জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, দাদু ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সুতরাং নিরাপত্তা হুমকি কতটা এবং তা থেকে কীভাবে সুরক্ষিত থাকতে হয়, তা তাঁর বেশ ভালোভাবেই জানা।
জাপানি পুলিশ আর সরকারি নিরাপত্তা সংস্থা একসঙ্গে তদন্ত করেছে। তবে এর মধ্যেই কীভাবে আততায়ী তাঁর দিকে সঠিক নিশানায় অল্প দূরত্বে এসে গুলি চালাল আর সাবেক প্রধানমন্ত্রী গুলি খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন, তার ভিডিও অসংখ্য সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
নিরাপত্তাব্যবস্থার দিক থেকে দেখলে কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে সেই ভিডিওগুলো সূক্ষ্মভাবে দেখলে বোঝা যায়, আক্রমণকারী কোনো কারখানায় বানানো উন্নত গুণমানের অস্ত্র ব্যবহার করেনি, বরং তাঁর কাছে যা পাওয়া গেছে, তা নেহাতই বাড়িতে বানানো দেশি হ্যান্ডগান, যাকে বলা হয় ‘জিপ গান’। এর রেঞ্জ কম, মারণক্ষমতা আরও কম। এই অস্ত্র ইউটিউবে টিউটোরিয়াল দেখে তৈরি করেছিলেন বলে পরে স্বীকার করেছিলেন আততায়ী।
শিনজো আবের এই প্রোগ্রামের শিডিউল এক দিন আগেই ঠিক হয়। আর তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানানো হয়। ধরে নেওয়া যেতে পারে, আততায়ী তার প্রস্তুতির জন্য হাতে মাত্র এক দিন সময় পায়। এক দিনের মধ্যে এই প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব নয়। তার মানে, অনেক আগে থেকেই তিনি প্রস্তুত হচ্ছিলেন, যাতে হঠাৎ করে সুযোগ এসে গেলে তিনি তা ব্যবহার করতে পারেন।
জাপান এমনিতে বেশ শান্ত দেশ। তেমন কোনো সন্ত্রাসী সংগঠন সেখানে সক্রিয় নেই। এমনকি সেই দেশে রাষ্ট্রনেতাদের ওপর হামলার ইতিহাসও খুব কম। জাপানে আগ্নেয়াস্ত্র রাখাও বেশ ঝামেলার। লাইসেন্সবিহীন অস্ত্র ধরা পড়লে ১৫ বছরের জেল, যদি এ রকম দুটো আগ্নেয়াস্ত্র একজনের কাছে পাওয়া যায়, তবে তার সাজা হবে ৩০ বছর। গান লাইসেন্স দেওয়া হয় খুব কম। যেটুকু দেওয়া হয়, তা কেবল এয়ার রাইফেল আর ১২ বোরের শটগান বা আমরা যাকে সাধারণত বন্দুক বলি তার। হ্যান্ডগানের লাইসেন্স দেওয়া হয় না, বা দিলেও খুবই সামান্য। অর্থাৎ, দেশের আইনব্যবস্থা যখন সাধারণ মানুষের সুরক্ষার দায়িত্ব নেয়, তখন আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার কোনো প্রয়োজন হয় না। আমেরিকার ঠিক বিপরীত মেরুতে জাপানিদের চিন্তাধারা।
যেকোনো হত্যার পেছনে দুটি মূল ফ্যাক্টর থাকে। এর মধ্যে একটা হচ্ছে অস্ত্র, আরেকটা হচ্ছে উদ্দেশ্য। অস্ত্র পাওয়া গেলেও উদ্দেশ্য নিয়ে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো চিন্তিত। এই হামলার উদ্দেশ্য হিসেবে বন্দুকধারী আততায়ী ব্যক্তিগত ক্ষোভের কথা বলেছেন। কিন্তু শিনজো আবের মতো ব্যক্তিত্ব খুব একটা সাধারণ কারণে হামলায় নিহত হওয়ার কথা নয়। একটানা আট বছর প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে জাপানের বৈদেশিক সম্পর্ক পরিবর্তনে তিনি সচেষ্ট হয়েছিলেন। একাধারে যেমন রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি চুক্তি করতে উদ্ধত ছিলেন, তেমনি চীন ও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গেও সম্পর্ক শোধরাতে চেয়েছিলেন। আবার ওদিকে জাপানে ৫০ হাজার আমেরিকান সেনা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই মোতায়েন আছে, তাইওয়ানের সঙ্গেও জাপানের সম্পর্ক ভালো। এই ভারসাম্য রাখতে গিয়ে কি কোথাও সমস্যা হচ্ছিল? তাহলে কি তাতে কোনো বৈদেশিক শক্তির সমস্যা হচ্ছিল? এই প্রশ্ন উঠেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আততায়ীর দেওয়া স্বীকারোক্তি এই প্রশ্নকে আপাতত চাপা দিলেও তা একেবারে উধাও হয়ে যায় না।
আর যে অস্ত্র পাওয়া গেছে, বন্দুকবাজ আততায়ী এই অস্ত্র বানাল কীভাবে, আর সেটা নিয়ে প্রোটেক্টেড পারসন বা সুরক্ষিত ব্যক্তির এত কাছে পৌঁছাল কী করে, সেটা সিকিউরিটি ফেইলিওরের বড় উদাহরণ। ছবি দেখে মনে হচ্ছে, এই অস্ত্র আমাদের দেশি পাইপগানের উন্নত রূপ। এ ক্ষেত্রে দোনলা বন্দুকের ডিজাইনে দুটো পাইপগানকে একসঙ্গে একটা কাঠের কুঁদোতে বাঁধা হয়েছে। আর সেটাও আবার ডাক্ট টেপ দিয়ে। তবে এই হ্যান্ডগানের আসল তাক লাগানো ব্যাপার হচ্ছে এতে একটা লিথিয়াম ব্যাটারি আর বৈদ্যুতিক তার লাগানো ছিল। সাধারণত এই ব্যাটারি আমরা ফোন বা ল্যাপটপে ব্যবহার করি। আততায়ী এই ব্যাটারি কার্তুজের প্রাইমারি এক্সপ্লোসিভ বা ফিউজে আগুন লাগাতে ব্যবহার করেছে। এতে সুবিধা হচ্ছে, ট্রিগারের সঙ্গে মেকানিক্যাল হ্যামার বা ফায়ারিং পিন মেকানিজম লাগাতে হয়নি। স্রেফ একটা ছোট ইলেকট্রিক্যাল সুইচ দিয়েই কার্তুজ ফায়ার করেছে।
দেশি বন্দুক বানাতে লেদ মেশিন, লোহার পাইপ, কাঠ ইত্যাদি লাগে। কিন্তু এ ধরনের হ্যান্ডগান বানাতে বাড়িতে ব্যবহার্য জিনিসপত্রই যথেষ্ট। ফলে আততায়ী এই আগ্নেয়াস্ত্র জাপানের অস্ত্র আইনের চোখ বাঁচিয়ে বানাতে পেরেছে। আর সেটা নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে যেতে সক্ষম হয়েছে। এই ফাঁক সে দেশের নিরাপত্তাব্যবস্থার কাছে বিশাল বড় চ্যালেঞ্জ!
অবশ্য এ ধরনের অস্ত্র দূরপাল্লার টার্গেটে খুব একটা কার্যকর হতে পারে না। কিন্তু যে জায়গায় অস্ত্র নিয়ে যাওয়া মানা বা অস্ত্র জোগাড় করা মুশকিল; যেমন—জেল, বিমানবন্দর, অনুষ্ঠান ভবন, সে ক্ষেত্রে এ ধরনের অভিনব ব্যবস্থা শান্তিকামী মানুষের সুরক্ষাকে একটা বড় প্রশ্নের সামনে এনে দাঁড় করিয়েছে।
আততায়ীর আক্রমণের ভিডিও খুব খুঁটিয়ে দেখলে বোঝা যায়, হ্যান্ডগানের প্রথম গুলি শিনজো আবেকে মিস করে যায়। শব্দ এবং ধোঁয়া দেখা গেলেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী তখন দাঁড়িয়ে ভাষণ দিচ্ছিলেন, শব্দ শুনে তিনি নিজের বাঁ দিকে ঘুরে তাকান। কিন্তু দ্বিতীয় গুলি তাঁকে ধরাশায়ী করে। মেডিকেল রিপোর্ট বলছে, দুটো গুলি তাঁর পিঠে লেগেছে। তার মানে, আততায়ী শটগানের মতো কার্তুজ, যাতে একাধিক পেলেট বা ছররা থাকে, সেই ধরনের কার্তুজ ব্যবহার করেছে।
বিশ্বের সমস্ত সিকিউরিটি এজেন্সি, যারা এ ধরনের ভিআইপি সুরক্ষা দিয়ে থাকে, আগামী দিনে তাদের কাছে এ ঘটনা পুরো ব্যবস্থাকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করবে।
লেখক: ভারতের বিমানবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা, বর্তমানে হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যাল কোম্পানির ফিজিক্যাল সিকিউরিটি কর্মকর্তা
জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে গত ৮ জুলাই জাপানের নারা শহরে নিহত হয়েছেন। ৬৭ বছর বয়সী জাপানের অন্যতম জনপ্রিয় এই নেতা রেলস্টেশনের বাইরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভোট প্রচারে এসে স্ট্রিট কর্নারে ভাষণ দিচ্ছিলেন। সেই সময় তাঁর পেছনে রাস্তার উলটো দিকে দাঁড়িয়ে থাকা আততায়ী ৪১ বছর বয়সী তেতসুয়া ইয়ামাগামি তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এই হত্যা প্রচলিত নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। হত্যার প্রায় এক মাসের মাথায় এসেও সেসব প্রশ্নের সন্তোষজনক উত্তর মেলেনি।
যেকোনো রাষ্ট্রনায়কের ক্ষেত্রে এ ধরনের হামলা হতেই পারে। কিন্তু শিনজো আবের মতো সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ওপর এ ধরনের হামলা আন্তর্জাতিক রাজনীতি, আর নিরাপত্তাব্যবস্থার বিষয়ে বেশ কতগুলো জটিল প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে।
শিনজো এক রাজনৈতিক পরিবার থেকে উঠে আসা নেতা। তাঁর বাবা ছিলেন জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, দাদু ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সুতরাং নিরাপত্তা হুমকি কতটা এবং তা থেকে কীভাবে সুরক্ষিত থাকতে হয়, তা তাঁর বেশ ভালোভাবেই জানা।
জাপানি পুলিশ আর সরকারি নিরাপত্তা সংস্থা একসঙ্গে তদন্ত করেছে। তবে এর মধ্যেই কীভাবে আততায়ী তাঁর দিকে সঠিক নিশানায় অল্প দূরত্বে এসে গুলি চালাল আর সাবেক প্রধানমন্ত্রী গুলি খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন, তার ভিডিও অসংখ্য সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
নিরাপত্তাব্যবস্থার দিক থেকে দেখলে কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে সেই ভিডিওগুলো সূক্ষ্মভাবে দেখলে বোঝা যায়, আক্রমণকারী কোনো কারখানায় বানানো উন্নত গুণমানের অস্ত্র ব্যবহার করেনি, বরং তাঁর কাছে যা পাওয়া গেছে, তা নেহাতই বাড়িতে বানানো দেশি হ্যান্ডগান, যাকে বলা হয় ‘জিপ গান’। এর রেঞ্জ কম, মারণক্ষমতা আরও কম। এই অস্ত্র ইউটিউবে টিউটোরিয়াল দেখে তৈরি করেছিলেন বলে পরে স্বীকার করেছিলেন আততায়ী।
শিনজো আবের এই প্রোগ্রামের শিডিউল এক দিন আগেই ঠিক হয়। আর তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানানো হয়। ধরে নেওয়া যেতে পারে, আততায়ী তার প্রস্তুতির জন্য হাতে মাত্র এক দিন সময় পায়। এক দিনের মধ্যে এই প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব নয়। তার মানে, অনেক আগে থেকেই তিনি প্রস্তুত হচ্ছিলেন, যাতে হঠাৎ করে সুযোগ এসে গেলে তিনি তা ব্যবহার করতে পারেন।
জাপান এমনিতে বেশ শান্ত দেশ। তেমন কোনো সন্ত্রাসী সংগঠন সেখানে সক্রিয় নেই। এমনকি সেই দেশে রাষ্ট্রনেতাদের ওপর হামলার ইতিহাসও খুব কম। জাপানে আগ্নেয়াস্ত্র রাখাও বেশ ঝামেলার। লাইসেন্সবিহীন অস্ত্র ধরা পড়লে ১৫ বছরের জেল, যদি এ রকম দুটো আগ্নেয়াস্ত্র একজনের কাছে পাওয়া যায়, তবে তার সাজা হবে ৩০ বছর। গান লাইসেন্স দেওয়া হয় খুব কম। যেটুকু দেওয়া হয়, তা কেবল এয়ার রাইফেল আর ১২ বোরের শটগান বা আমরা যাকে সাধারণত বন্দুক বলি তার। হ্যান্ডগানের লাইসেন্স দেওয়া হয় না, বা দিলেও খুবই সামান্য। অর্থাৎ, দেশের আইনব্যবস্থা যখন সাধারণ মানুষের সুরক্ষার দায়িত্ব নেয়, তখন আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার কোনো প্রয়োজন হয় না। আমেরিকার ঠিক বিপরীত মেরুতে জাপানিদের চিন্তাধারা।
যেকোনো হত্যার পেছনে দুটি মূল ফ্যাক্টর থাকে। এর মধ্যে একটা হচ্ছে অস্ত্র, আরেকটা হচ্ছে উদ্দেশ্য। অস্ত্র পাওয়া গেলেও উদ্দেশ্য নিয়ে নিরাপত্তা সংস্থাগুলো চিন্তিত। এই হামলার উদ্দেশ্য হিসেবে বন্দুকধারী আততায়ী ব্যক্তিগত ক্ষোভের কথা বলেছেন। কিন্তু শিনজো আবের মতো ব্যক্তিত্ব খুব একটা সাধারণ কারণে হামলায় নিহত হওয়ার কথা নয়। একটানা আট বছর প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে জাপানের বৈদেশিক সম্পর্ক পরিবর্তনে তিনি সচেষ্ট হয়েছিলেন। একাধারে যেমন রাশিয়ার সঙ্গে শান্তি চুক্তি করতে উদ্ধত ছিলেন, তেমনি চীন ও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গেও সম্পর্ক শোধরাতে চেয়েছিলেন। আবার ওদিকে জাপানে ৫০ হাজার আমেরিকান সেনা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই মোতায়েন আছে, তাইওয়ানের সঙ্গেও জাপানের সম্পর্ক ভালো। এই ভারসাম্য রাখতে গিয়ে কি কোথাও সমস্যা হচ্ছিল? তাহলে কি তাতে কোনো বৈদেশিক শক্তির সমস্যা হচ্ছিল? এই প্রশ্ন উঠেছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আততায়ীর দেওয়া স্বীকারোক্তি এই প্রশ্নকে আপাতত চাপা দিলেও তা একেবারে উধাও হয়ে যায় না।
আর যে অস্ত্র পাওয়া গেছে, বন্দুকবাজ আততায়ী এই অস্ত্র বানাল কীভাবে, আর সেটা নিয়ে প্রোটেক্টেড পারসন বা সুরক্ষিত ব্যক্তির এত কাছে পৌঁছাল কী করে, সেটা সিকিউরিটি ফেইলিওরের বড় উদাহরণ। ছবি দেখে মনে হচ্ছে, এই অস্ত্র আমাদের দেশি পাইপগানের উন্নত রূপ। এ ক্ষেত্রে দোনলা বন্দুকের ডিজাইনে দুটো পাইপগানকে একসঙ্গে একটা কাঠের কুঁদোতে বাঁধা হয়েছে। আর সেটাও আবার ডাক্ট টেপ দিয়ে। তবে এই হ্যান্ডগানের আসল তাক লাগানো ব্যাপার হচ্ছে এতে একটা লিথিয়াম ব্যাটারি আর বৈদ্যুতিক তার লাগানো ছিল। সাধারণত এই ব্যাটারি আমরা ফোন বা ল্যাপটপে ব্যবহার করি। আততায়ী এই ব্যাটারি কার্তুজের প্রাইমারি এক্সপ্লোসিভ বা ফিউজে আগুন লাগাতে ব্যবহার করেছে। এতে সুবিধা হচ্ছে, ট্রিগারের সঙ্গে মেকানিক্যাল হ্যামার বা ফায়ারিং পিন মেকানিজম লাগাতে হয়নি। স্রেফ একটা ছোট ইলেকট্রিক্যাল সুইচ দিয়েই কার্তুজ ফায়ার করেছে।
দেশি বন্দুক বানাতে লেদ মেশিন, লোহার পাইপ, কাঠ ইত্যাদি লাগে। কিন্তু এ ধরনের হ্যান্ডগান বানাতে বাড়িতে ব্যবহার্য জিনিসপত্রই যথেষ্ট। ফলে আততায়ী এই আগ্নেয়াস্ত্র জাপানের অস্ত্র আইনের চোখ বাঁচিয়ে বানাতে পেরেছে। আর সেটা নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে যেতে সক্ষম হয়েছে। এই ফাঁক সে দেশের নিরাপত্তাব্যবস্থার কাছে বিশাল বড় চ্যালেঞ্জ!
অবশ্য এ ধরনের অস্ত্র দূরপাল্লার টার্গেটে খুব একটা কার্যকর হতে পারে না। কিন্তু যে জায়গায় অস্ত্র নিয়ে যাওয়া মানা বা অস্ত্র জোগাড় করা মুশকিল; যেমন—জেল, বিমানবন্দর, অনুষ্ঠান ভবন, সে ক্ষেত্রে এ ধরনের অভিনব ব্যবস্থা শান্তিকামী মানুষের সুরক্ষাকে একটা বড় প্রশ্নের সামনে এনে দাঁড় করিয়েছে।
আততায়ীর আক্রমণের ভিডিও খুব খুঁটিয়ে দেখলে বোঝা যায়, হ্যান্ডগানের প্রথম গুলি শিনজো আবেকে মিস করে যায়। শব্দ এবং ধোঁয়া দেখা গেলেও সাবেক প্রধানমন্ত্রী তখন দাঁড়িয়ে ভাষণ দিচ্ছিলেন, শব্দ শুনে তিনি নিজের বাঁ দিকে ঘুরে তাকান। কিন্তু দ্বিতীয় গুলি তাঁকে ধরাশায়ী করে। মেডিকেল রিপোর্ট বলছে, দুটো গুলি তাঁর পিঠে লেগেছে। তার মানে, আততায়ী শটগানের মতো কার্তুজ, যাতে একাধিক পেলেট বা ছররা থাকে, সেই ধরনের কার্তুজ ব্যবহার করেছে।
বিশ্বের সমস্ত সিকিউরিটি এজেন্সি, যারা এ ধরনের ভিআইপি সুরক্ষা দিয়ে থাকে, আগামী দিনে তাদের কাছে এ ঘটনা পুরো ব্যবস্থাকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করবে।
লেখক: ভারতের বিমানবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা, বর্তমানে হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যাল কোম্পানির ফিজিক্যাল সিকিউরিটি কর্মকর্তা
২০১৬ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) প্রথমবার আসামের ক্ষমতায় আসার পর এই বিরোধ আরও বেড়ে গেছে। আসামে ভারতের যেকোনো রাজ্যের তুলনায় মুসলিম জনসংখ্যার হার সবচেয়ে বেশি। ৩ কোটি ১০ লাখ বাসিন্দার রাজ্যটিতে মুসলমান মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের বেশি।
২ ঘণ্টা আগেনাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আরব কর্মকর্তা বলেন, ‘গাজা, লেবানন, সিরিয়া ও এখন ইরান—সবখানেই তিনি (নেতানিয়াহু) নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে। নিয়ন্ত্রণহীন, লাগামছাড়া শক্তি আর আমাদের জন্য সম্পদ নয়। এটি এখন আমাদের জন্য সমস্যা।’
১ দিন আগেডোনাল্ড ট্রাম্পকে খুশি রাখতে ও ন্যাটোকে এক রাখার চেষ্টায় নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে সাম্প্রতিক ন্যাটো সম্মেলনে প্রায় সবকিছুই করেছে জোটটি। ঢালাও প্রশংসা, রাজকীয় আপ্যায়ন আর ট্রাম্পের বিখ্যাত স্লোগান নকল করাও বাদ যায়নি। পরিকল্পনা মোটামুটি সফল। যদিও ইউক্রেনে যুদ্ধ, রাশিয়ার বিরুদ্ধে কৌশল বা ইউরোপে মার্কি
১ দিন আগেইসরায়েল-ইরানের ১২ দিনের যুদ্ধের সবচেয়ে ভয়ংকর ক্ষেপণাস্ত্রটি ছোড়া হয় যুদ্ধ শেষের ঠিক আগ মুহূর্তে। ইরানের লক্ষ্য ছিল দক্ষিণের মরুভূমি শহর বীর শেবা। সেখানে গত মঙ্গলবার ভোর ৬টার কিছু আগে একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানে। বিস্ফোরণে একটি আবাসিক অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের একপাশ সম্পূর্ণ উড়ে যায়। পরে ভবনের
১ দিন আগে