Ajker Patrika

আরেক কলসিন্দুরের গল্প

আবুল কাসেম, সাতক্ষীরা 
সাতক্ষীরার নারী খেলোয়াড় তৈরি হয় শহরের পিএন হাইস্কুল মাঠে। ছবি: সংগৃহীত
সাতক্ষীরার নারী খেলোয়াড় তৈরি হয় শহরের পিএন হাইস্কুল মাঠে। ছবি: সংগৃহীত

পাহাড়-কোলের ছোট্ট গ্রাম কলসিন্দুর। আমাদের নারী ফুটবল দলের ইতিহাসে এ গ্রামের নাম লেখা থাকবে চিরকাল। এমনই আরেক জনপদ সাতক্ষীরা। জাতীয় পর্যায়ে ফুটবল, ক্রিকেট, কাবাডি ও স্প্রিন্টে ব্যাপক সাফল্য রয়েছে এ জেলার মেয়েদের। বিশেষ করে নারী ফুটবল দলে সাবিনা, সুরাইয়া, আফঈদা, মাসুরার সাফল্য বিশ্বজোড়া।

জাতীয় নারী ফুটবল দলে খেলছেন সাতক্ষীরার সাবিনা, মাসুরা ও আফঈদা। জুনিয়র দলে আছেন তাসপিয়া, সাথী, রুপা, প্রতিমাসহ অনেকেই। দেশের ১৫ বার দ্রুততম মানবী হওয়ার গৌরব অর্জনকারী শিরিন আক্তার ও গোল্ড মেডেল পাওয়া বক্সার আফরা খন্দকার প্রান্তির বাড়িও সাতক্ষীরায়। ক্রিকেটের এ টিমে রয়েছেন সিনথিয়া। এ ছাড়া নারী কাবাডি দলে খেলছেন পাখি, তাসলিমা ও রওশনারা।

বলা হয়ে থাকে, সাতক্ষীরার নারী খেলোয়াড় তৈরি হয় শহরের পিএন হাইস্কুল মাঠে। এ মাঠে সকাল-বিকেল মেয়েদের ফুটবল, ক্রিকেটসহ অন্যান্য খেলার অনুশীলন পথচারীদের নজর কাড়ে। এখানে মেয়েদের ফুটবল, ভলিবল, ক্রিকেট, কাবাডিসহ বিভিন্ন খেলায় অনুশীলন করাতেন প্রয়াত আকবার আলী। আর বর্তমানে সে হাল ধরেছেন খন্দকার প্রিন্স। তিনি জাতীয় ফুটবল দলের ডিফেন্ডার আফঈদার বাবা।

এক শনিবার বিকেলে কথা হয়, পিএন হাইস্কুল মাঠে অনুশীলনরত খুদে খেলোয়াড়দের সঙ্গে। চোখে স্বপ্ন নিয়ে মাঠভর্তি কিশোরী-তরুণীরা অনুশীলন করছেন ফুটবল। তাঁদেরই একজন সোহানা। তার অনুশীলনে বিঘ্ন ঘটিয়ে কথা বলতে হলো। সোহানা জানাল, ‘এই মাঠ থেকে সাবিনা আপু, মাসুরা আপু ও প্রান্তি (আফঈদা) তৈরি হয়েছেন। আমরাও প্র্যাকটিস করি। আমরাও জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখি। তাঁরাই আমাদের আদর্শ।’

পাশে ফুটবল অনুশীলনে ব্যস্ত রোকসানা। তার সঙ্গেও কথা বলতে গেলাম। জানাল, পিএন হাইস্কুলের মাঠ থেকে অনেক খেলোয়াড় উঠে এসেছেন। রোকসানা বা তার মতো যারা এখানে অনুশীলনে আসে, তারাও অনেক দূর যেতে চায়। সে ইতিমধ্যে অনূর্ধ্ব ১৬ ফুটবল খেলছে। এখন তার স্বপ্ন এ মাঠের ‘বড় আপুদের’ মতো বড় জায়গায় খেলা। রোকসানা বলে, ‘তিন আপু অনেক বড় জায়গায় খেলছেন। সাফেও তাঁরা খুব ভালো খেলেছেন। আমরাও সেখানে যেতে চাই। সাতক্ষীরায় দুজন খেলোয়াড় ছিলেন। এবার যোগ হয়েছেন আফঈদা। তিনি এই মাঠে খেলতেন।’ রোকসানা মনে করিয়ে দিল, সাফে ভারতের বিরুদ্ধে প্রথম গোলটা করেছিলেন আফঈদা আপু।

কিন্তু ভয় সেই পুরোনো, পৃষ্ঠপোষকতার অভাব। প্রশিক্ষক খন্দকার আরিফ হাসান প্রিন্স জানেন সেটা। ভালো করেই জানেন, নারী খেলোয়াড় তৈরিতে বড় বাধা পৃষ্ঠপোষকতা।

প্রিন্স বলেন, ‘আপনারা লক্ষ করেছেন, সিনিয়র সাফে ২২ সালে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। এবারও হয়েছে। এবার গেমে সাতক্ষীরার তিনটি মেয়ে খুব ভালো খেলেছে। সিনিয়র সাফে নতুন হিসেবে আফঈদা খন্দকার ভালো করেছে। জুনিয়র হিসেবে তাসপিয়া, সাথী, রুপা, প্রতিমা—এরা সবাই ভালো করছে। ক্রিকেট, কাবাডি ও খোখোতেও মেয়েরা ভালো করছে। কিন্তু আমাদের সমস্যা হলো স্পনসর। মেয়েদের বুট, জার্সি, বল লাগে। বর্ষায় কমপক্ষে ১০০টি বল দরকার। আমার জন্য খরচ জোগানো কঠিন হয়ে যায়।’ নারী ক্রীড়ার পৃষ্ঠপোষকতায় সাতক্ষীরার ধনাঢ্য ব্যক্তিদের এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন প্রিন্স।

সাতক্ষীরার নারী খেলোয়াড় তৈরি হয় শহরের পিএন হাইস্কুল মাঠে। ছবি: সংগৃহীত

নারীদের খেলাকে এগিয়ে নিতে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস আছে জেলা প্রশাসনের।

জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বলেন, সাতক্ষীরার মেয়েরা খেলায় ভালো করছে। ক্রীড়া উপদেষ্টা সম্প্রতি এসেছিলেন। তিনি আশ্বাস দিয়েছেন সাতক্ষীরায় ক্রীড়া কমপ্লেক্স হবে। এ ছাড়া প্রতিটি উপজেলায় স্টেডিয়াম হবে। জেলার সব মাঠ খেলার উপযোগী করা হবে। ক্রীড়াঙ্গনে যেকোনো সমস্যা সমাধানে জেলা প্রশাসন কাজ করে যাবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

পিএন হাইস্কুল মাঠে খেলতে আসা কিশোরী-তরুণী খেলোয়াড়দের স্বপ্ন পূরণ হবে কি? প্রশিক্ষক খন্দকার আরিফ হাসান আশাবাদী মানুষ। তাঁর সঙ্গে আমাদেরও আশায় থাকতে হয়। স্বপ্ন বুনে চলতে হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

নতুন মেট্রো নয়, রুট বাড়ানোর চিন্তা

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত