Ajker Patrika

তিন তারকা এক সম্রাজ্ঞীর গল্প

মইনুল হাসান, ফ্রান্স
তিন তারকা এক সম্রাজ্ঞীর গল্প

গত ২০ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লস সস্ত্রীক তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ফ্রান্সে এসেছিলেন। রাজমুকুট মাথায় নেওয়ার পর সেটাই ছিল তাঁর প্রথম ফ্রান্স সফর। প্রথা অনুসারে ফরাসি প্রজাতন্ত্রের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ এবং ব্রিজিত মাখোঁ তাঁর সম্মানে চোখধাঁধানো ভার্সাই প্রাসাদে এক রাজকীয় নৈশভোজের আয়োজন করেন। এর আগে রাজা চার্লসের মা, রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ ভার্সাই প্রাসাদে প্রথমবার আমন্ত্রিত হয়েছিলেন ১৯৫৭ সালে। সে সময়ে এবং দ্বিতীয়বার ১৯৭২ সালে, দুবারেই তাঁর সম্মানে রাজকীয় নৈশভোজের আয়োজন করা হয়েছিল। তাই বলা হয়, এ ধরনের রাজকীয় ভোজের আয়োজন প্রতি ৫০ বছরে একবার হয়।

এবার অতি উচ্চমার্গের খাবার তৈরির গুরুদায়িত্ব বর্তায় ৫৪ বছর বয়স্ক ফ্রান্সের একমাত্র নারী তিন তারকা শেফ অ্যান-সোফি পিকের ওপর। ৭০ মিটার বা ২৩০ ফুট লম্বা রাজকীয় ভোজের টেবিলের দুই পাশে ১৬০ জন বিশিষ্ট অতিথির খাবারের তালিকায় ছিল নীল গলদা চিংড়ি ও পট কাঁকড়ার নরম অংশ, মিষ্টি তরমুজ, বাদামের গরম-গরম রুটি, ব্রেস অঞ্চলের মোরগের মাংস, গোলাপি ম্যাকারন। অ্যান-সোফির তৈরি এসব সুস্বাদু, মহার্ঘ খাবার খেয়ে রাজ অতিথিরা তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করেন। যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের সংবাদমাধ্যমে রাজা-রানির রাজকীয় সফর ছাপিয়ে শেফ অ্যান-সোফি পিকের নামটি উঠে এসেছে অনন্য মহিমায়।

অ্যান-সোফি পিক রন্ধনশিল্প, কৌশল আর কৌলীন্যের দীপ্তিময় জগতের উজ্জ্বল এক নক্ষত্র। বিশ্বখ্যাত মিশেলিন গাইডের নির্বাচনে ২০০৭ সাল থেকে ‘তিন তারকা’ শেফের মুকুটটি নিজের দখলে রেখেছেন সোফি। ২০১১ সালে ‘বিশ্ব সেরা রন্ধনশিল্পী’র সম্মানে সম্মানিত হন এই অসাধারণ প্রতিভাধর নারী। সে বছরই তাঁকে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ সম্মানসূচক ‘শেভালিয়ে দ্য ল্যা লেজিওঁ ডনার’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

রন্ধনশিল্পের চর্চা প্রজন্ম-পরম্পরায় পিক পরিবারের ঐশ্বর্যময় ঐতিহ্য। অ্যান-সোফি বেড়ে উঠেছেন তারকা শেফ পরিবেষ্টিত পরিবেশে।

ভার্সাই প্রাসাদে শেফ অ্যান-সোফি পিক ও তাঁর দল।বাণিজ্য বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে তিনি তাঁর বাবা জ্যাক পিকের সঙ্গে ফ্রান্সের ভ্যালেন্স শহরে ‘মেজোঁ পিক’ রেস্তোরাঁয় কাজ শুরু করেন। বাবার কাছেই তিনি রান্নার নান্দনিক কলাকৌশলগুলো রপ্ত করেন। ১৯৯৫ সালে বাবার আকস্মিক মৃত্যুর পর তাঁর ভাই অ্যালা পিক রেস্তোরাঁ পরিচালনার দায়িত্ব নেন। দুই বছর পরেই তিনটি থেকে একটি তারকা হারাতে হয় তাঁদের। তখন তাঁর ভাই অ্যান-সোফিকে রেস্তোরাঁর দায়িত্ব দিয়ে নিজেকে আড়াল করেন। ১৯৯৭ সালে রেস্তোরাঁর দায়িত্ব নিয়ে এক দশক পরে হারানো তারকাটি পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হন সোফি। বর্তমানে তাঁর সরাসরি পরিচালনায় মোট ছয়টি রেস্তোরাঁ রয়েছে। সব রেস্তোরাঁ মিলিয়ে মোট ১০টি তারকায় তিনি উজ্জ্বল। পৃথিবীতে তিনিই সর্বাধিক তারকাসমৃদ্ধ একমাত্র শেফ। সৌন্দর্যবোধ আর উদ্ভাবনী চিন্তাশক্তির জোরে সৃষ্টি সুখের উল্লাসে গড়ে তুলেছেন রন্ধনশিল্পের এক বিশাল সাম্রাজ্য। আপন মহিমায় তিনি সেই সীমানাহীন সাম্রাজ্যের একচ্ছত্র সম্রাজ্ঞী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

নতুন মেট্রো নয়, রুট বাড়ানোর চিন্তা

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত