২৮ বছর বয়সী দৌড়বিদ দিমা আমিনা সিরিয়ার যুদ্ধে বোমার আঘাতে হারিয়েছেন তাঁর পা। সয়েছেন ভয়াবহ বাস্তবতা। ভেঙে পড়েছেন, কেঁদেছেন কিন্তু ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর সেই সংগ্রামের গল্প তিনি বলেছিলেন উইমেনস হেলথ ম্যাগাজিনের ফিটনেস এডিটর ব্রিডি উইলকিনসের কাছে। ২০২২ সালের ২৫ অক্টোবর প্রকাশিত হয়েছিল সেই সাক্ষাৎকার। অনুবাদ করেছেন শাকেরা তাসনীম ইরা।
যখন বিকট শব্দে বোমাটা এসে আমাদের ওপর পড়ল, সে সময় আমি মা-বাবার সঙ্গে বসে টিভি দেখছিলাম। কালো ধোঁয়ায় পুরো ঘর অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল। আমি চিৎকার করে মাকে ডাকছিলাম। মা যখন এসে আমাকে টেনে তুলতে গেল, ঠিক সেই মুহূর্তে রক্তে ভিজে যাওয়া আমি বুঝতে পারলাম, আমি পা হারাতে চলেছি! আমার মাথা কাজ করছিল না, পাগলের মতো শরীর থেকে ছুটে যাওয়া পা দুই হাতে আঁকড়ে ধরে অ্যাম্বুলেন্স পর্যন্ত গিয়েছিলাম। আমরা সবাই অ্যাম্বুলেন্সে ওঠার পর দরজা বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীটা যেন নিস্তব্ধ হয়ে গেল!
পরদিন অপারেশনের দিন ছিল। চিকিৎসকেরা চেষ্টা করছিলেন পা জোড়া লাগানোর। তবে এটাও বলে দিয়েছিলেন যে পা জোড়া লাগলেও এর কর্মক্ষমতা থাকবে না। আমি আর কখনোই হাঁটতে পারব না। কৃত্রিম পা লাগানোর অর্থের ব্যবস্থা করতে না পারলে বাকি জীবন আমাকে ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটতে হবে।
কিছুদিন পরেই আমরা লেবানন চলে যাই। লেবানন সিরিয়ার চেয়ে নিরাপদ ছিল। তবে মনে হচ্ছিল, আমরা এক খাদ থেকে উঠে এসে আরেক খাদে পড়েছি। কারণ, লেবানন আমাদের আশ্রয় দিয়েছিল, কিন্তু আমার ভাইবোনেরা স্কুলে ভর্তি হতে পারছিল না। কোনো স্কুল তাদের ভর্তি করাচ্ছিল না। শরণার্থী বলে কেউ আমাদের কাজও দিচ্ছিল না। আমার তখন শুধু একটাই কাজ ছিল— জিমে যাওয়া।
২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে আমি প্রতিদিনই দৌড়াতাম। আমি আবার আগের মতো মাঠে দৌড়াতে চাইতাম। সে জন্যই আমি ডান পায়ের জোর বাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। নতুন করে আবার শুরুটা করেছিলাম ক্রাচ ছাড়া দাঁড়ানোর আর সপ্তাহে দুদিন কিছু স্বাভাবিক ব্যায়ামের চর্চা দিয়ে।
লেবাননে আমরা প্রায় ছয় বছর ছিলাম। এরপর আমরা বেডফোর্ডশায়ারে চলে যাই ২০১৮ সালে। সেখানকার সরকারি স্বাস্থ্যসেবার সাহায্যে আমি কৃত্রিম পা স্থাপন করি। এটা আমার কাছে এতটাই স্বস্তির ছিল যে আমি প্রায়ই এটাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়তাম!
শুরুতে কৃত্রিম পা নিয়ে চলতে অসুবিধা যে হতো না, তা নয়। এমনকি শুরুর দিকে তো ওই নকল পা পরে হাঁটলে পুরো শরীরে ব্যথা হতো। ফিজিওথেরাপিস্টের সাহায্যে এই সমস্যা দূর করতে হয়েছে। ফিজিওথেরাপিস্ট আমার পিঠের ব্যথা উপশমের জন্য নানা রকমের ব্যায়াম করিয়েছেন।
আরও অগ্রগতির জন্য কয়েক মাস পর আমি আরও একজন ফিজিক্যাল থেরাপিস্টের সাহায্য নিই। তাঁর সঙ্গে কৃত্রিম পা নিয়েই সপ্তাহে তিন দিন ৫০ মাইল রাস্তা ট্রেনে যাতায়াত করতাম এবং অন্যান্য দিন ওয়েট ট্রেনিংয়ের মতো ব্যায়ামগুলো করতাম। ওয়েট লিফটিংয়ের চর্চা শরীরের সব ধরনের ব্যথা কমিয়ে দিয়েছিল।
এসবের মধ্যেই আমি আরেকটু হালকা এবং আরামদায়ক ‘অটোবক সি-লেগ’ লাগিয়ে নিই এবং এর দুই বছর পর তহবিল সংগ্রহ করে ‘রানিং ব্লেড’ কিনে ফেলি। প্রথম যেদিন সেটা পরেছিলাম, নিজেকে প্রজাপতি মনে হচ্ছিল, মনে হচ্ছিল আমি আকাশে উড়ে বেড়ানোর ক্ষমতা অর্জন করে ফেলেছি!
এরপর থেকে প্রতিদিন দৌড়ানো শুরু করি। প্রস্তুতি নিই আমার প্রথম হাফ ম্যারাথনের জন্য। সেদিন আমি দৌড়েছিলাম যুদ্ধের ভয়াবহতায় পা হারানো শিশুদের কৃত্রিম পায়ের জন্য অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে। কিন্তু মনে হচ্ছিল পারব না। কৃত্রিম পা নিয়ে এতটাই অসুবিধা হচ্ছিল যে আমাকে থামতে হয়েছিল, সেটি খুলে ফেলতে হয়েছিল। কিন্তু চূড়ান্ত লাইন অতিক্রম করা ছাড়া আমি অন্য কোনো কিছু ভাবতেও চাইছিলাম না।
প্রতিবন্ধকতা জয় করে এখন পর্যন্ত যতটুকু এগিয়েছি, সেটুকুই আমাকে অনুপ্রেরণা দেয় আরও দূরে যাওয়ার। পরবর্তী লক্ষ্য ২০২৪ সালের প্যারা অলিম্পিকে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে অংশ নেওয়া। সে জন্য আমাকে স্থানীয় এবং জাতীয় প্রতিযোগিতাগুলোতে অংশ নিতে হবে। আশা করি, যারা দুর্ঘটনায় নিজের অঙ্গ হারিয়েছে, তাদের কাছে এটা প্রমাণিত হয়ে যাবে যে অঙ্গ হারানো মানে জীবন ‘শেষ’ হয়ে যাওয়া নয়; বরং এটা কেবল শুরু।
২৮ বছর বয়সী দৌড়বিদ দিমা আমিনা সিরিয়ার যুদ্ধে বোমার আঘাতে হারিয়েছেন তাঁর পা। সয়েছেন ভয়াবহ বাস্তবতা। ভেঙে পড়েছেন, কেঁদেছেন কিন্তু ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। তাঁর সেই সংগ্রামের গল্প তিনি বলেছিলেন উইমেনস হেলথ ম্যাগাজিনের ফিটনেস এডিটর ব্রিডি উইলকিনসের কাছে। ২০২২ সালের ২৫ অক্টোবর প্রকাশিত হয়েছিল সেই সাক্ষাৎকার। অনুবাদ করেছেন শাকেরা তাসনীম ইরা।
যখন বিকট শব্দে বোমাটা এসে আমাদের ওপর পড়ল, সে সময় আমি মা-বাবার সঙ্গে বসে টিভি দেখছিলাম। কালো ধোঁয়ায় পুরো ঘর অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল। আমি চিৎকার করে মাকে ডাকছিলাম। মা যখন এসে আমাকে টেনে তুলতে গেল, ঠিক সেই মুহূর্তে রক্তে ভিজে যাওয়া আমি বুঝতে পারলাম, আমি পা হারাতে চলেছি! আমার মাথা কাজ করছিল না, পাগলের মতো শরীর থেকে ছুটে যাওয়া পা দুই হাতে আঁকড়ে ধরে অ্যাম্বুলেন্স পর্যন্ত গিয়েছিলাম। আমরা সবাই অ্যাম্বুলেন্সে ওঠার পর দরজা বন্ধ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবীটা যেন নিস্তব্ধ হয়ে গেল!
পরদিন অপারেশনের দিন ছিল। চিকিৎসকেরা চেষ্টা করছিলেন পা জোড়া লাগানোর। তবে এটাও বলে দিয়েছিলেন যে পা জোড়া লাগলেও এর কর্মক্ষমতা থাকবে না। আমি আর কখনোই হাঁটতে পারব না। কৃত্রিম পা লাগানোর অর্থের ব্যবস্থা করতে না পারলে বাকি জীবন আমাকে ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটতে হবে।
কিছুদিন পরেই আমরা লেবানন চলে যাই। লেবানন সিরিয়ার চেয়ে নিরাপদ ছিল। তবে মনে হচ্ছিল, আমরা এক খাদ থেকে উঠে এসে আরেক খাদে পড়েছি। কারণ, লেবানন আমাদের আশ্রয় দিয়েছিল, কিন্তু আমার ভাইবোনেরা স্কুলে ভর্তি হতে পারছিল না। কোনো স্কুল তাদের ভর্তি করাচ্ছিল না। শরণার্থী বলে কেউ আমাদের কাজও দিচ্ছিল না। আমার তখন শুধু একটাই কাজ ছিল— জিমে যাওয়া।
২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে আমি প্রতিদিনই দৌড়াতাম। আমি আবার আগের মতো মাঠে দৌড়াতে চাইতাম। সে জন্যই আমি ডান পায়ের জোর বাড়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। নতুন করে আবার শুরুটা করেছিলাম ক্রাচ ছাড়া দাঁড়ানোর আর সপ্তাহে দুদিন কিছু স্বাভাবিক ব্যায়ামের চর্চা দিয়ে।
লেবাননে আমরা প্রায় ছয় বছর ছিলাম। এরপর আমরা বেডফোর্ডশায়ারে চলে যাই ২০১৮ সালে। সেখানকার সরকারি স্বাস্থ্যসেবার সাহায্যে আমি কৃত্রিম পা স্থাপন করি। এটা আমার কাছে এতটাই স্বস্তির ছিল যে আমি প্রায়ই এটাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়তাম!
শুরুতে কৃত্রিম পা নিয়ে চলতে অসুবিধা যে হতো না, তা নয়। এমনকি শুরুর দিকে তো ওই নকল পা পরে হাঁটলে পুরো শরীরে ব্যথা হতো। ফিজিওথেরাপিস্টের সাহায্যে এই সমস্যা দূর করতে হয়েছে। ফিজিওথেরাপিস্ট আমার পিঠের ব্যথা উপশমের জন্য নানা রকমের ব্যায়াম করিয়েছেন।
আরও অগ্রগতির জন্য কয়েক মাস পর আমি আরও একজন ফিজিক্যাল থেরাপিস্টের সাহায্য নিই। তাঁর সঙ্গে কৃত্রিম পা নিয়েই সপ্তাহে তিন দিন ৫০ মাইল রাস্তা ট্রেনে যাতায়াত করতাম এবং অন্যান্য দিন ওয়েট ট্রেনিংয়ের মতো ব্যায়ামগুলো করতাম। ওয়েট লিফটিংয়ের চর্চা শরীরের সব ধরনের ব্যথা কমিয়ে দিয়েছিল।
এসবের মধ্যেই আমি আরেকটু হালকা এবং আরামদায়ক ‘অটোবক সি-লেগ’ লাগিয়ে নিই এবং এর দুই বছর পর তহবিল সংগ্রহ করে ‘রানিং ব্লেড’ কিনে ফেলি। প্রথম যেদিন সেটা পরেছিলাম, নিজেকে প্রজাপতি মনে হচ্ছিল, মনে হচ্ছিল আমি আকাশে উড়ে বেড়ানোর ক্ষমতা অর্জন করে ফেলেছি!
এরপর থেকে প্রতিদিন দৌড়ানো শুরু করি। প্রস্তুতি নিই আমার প্রথম হাফ ম্যারাথনের জন্য। সেদিন আমি দৌড়েছিলাম যুদ্ধের ভয়াবহতায় পা হারানো শিশুদের কৃত্রিম পায়ের জন্য অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যে। কিন্তু মনে হচ্ছিল পারব না। কৃত্রিম পা নিয়ে এতটাই অসুবিধা হচ্ছিল যে আমাকে থামতে হয়েছিল, সেটি খুলে ফেলতে হয়েছিল। কিন্তু চূড়ান্ত লাইন অতিক্রম করা ছাড়া আমি অন্য কোনো কিছু ভাবতেও চাইছিলাম না।
প্রতিবন্ধকতা জয় করে এখন পর্যন্ত যতটুকু এগিয়েছি, সেটুকুই আমাকে অনুপ্রেরণা দেয় আরও দূরে যাওয়ার। পরবর্তী লক্ষ্য ২০২৪ সালের প্যারা অলিম্পিকে ১০০ মিটার স্প্রিন্টে অংশ নেওয়া। সে জন্য আমাকে স্থানীয় এবং জাতীয় প্রতিযোগিতাগুলোতে অংশ নিতে হবে। আশা করি, যারা দুর্ঘটনায় নিজের অঙ্গ হারিয়েছে, তাদের কাছে এটা প্রমাণিত হয়ে যাবে যে অঙ্গ হারানো মানে জীবন ‘শেষ’ হয়ে যাওয়া নয়; বরং এটা কেবল শুরু।
মানুষ স্বপ্নবাজ প্রাণী। যুদ্ধ ও সংঘাতময় পৃথিবীতে ভিটে চ্যুত মানুষও স্বপ্ন দেখে। এই স্বার্থ আর সংঘাতময় পৃথিবীতে মানুষ তার জীবনের চেয়েও বড়। নইলে বেঁচে থাকে কীভাবে! বিশ্ব শরণার্থী দিবসে তেমনি কিছু নারীর গল্প রইল, যাঁরা উদ্বাস্তু জীবনেও স্বপ্ন দেখেছেন জীবনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার।
৪ দিন আগেকারও কোলে শিশুসন্তান, কেউ অন্তঃসত্ত্বা, কারও হাতে স্যালাইনের ক্যানুলা। চাকরি বাঁচাতে এই অবস্থায় ২১ দিন ধরে রাস্তায় আন্দোলন করছেন তাঁরা। করবেন নাই-বা কেন, তাঁদের কেউ সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি, কারও বেতনের টাকায় চলছে পরিবারের অসুস্থ সদস্যের চিকিৎসা; কেউ আবার বেতনের টাকায় সন্তানের জন্য...
৬ দিন আগেযুদ্ধের কারণে তৈরি হওয়া অনিশ্চয়তা, নিরাপত্তাহীনতা এবং দৈনন্দিন আতঙ্ক ইসরায়েলি নারীদের গভীরভাবে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে। ইসরায়েলি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে এমন তথ্যের আভাস পাওয়া গেছে।
৬ দিন আগেঅনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ার সময় মাত্র ২০ হাজার টাকায় বোরকার ব্যবসা শুরু করেন। ডিজাইন, কাপড় সংগ্রহ, ডেলিভারি—সবই এক হাতে সামলাতেন তিনি। বর্তমানে ঢাকায় তাঁর দুটি শোরুম রয়েছে। বিনিয়োগের পরিমাণ বহু আগেই কয়েক কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। আমেরিকা, কানাডা, জাপান, সৌদি আরব, অস্ট্রেলিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে...
৬ দিন আগে