Ajker Patrika

বাঁশের আগায় ‘পচ্চুর’ কারেন্ট

অর্ণব সান্যাল
আপডেট : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৫: ১২
বাঁশের আগায় ‘পচ্চুর’ কারেন্ট

দুটো বাঁশ, সামান্য নুয়ে আছে। যদিও তাদের মাঝে জোড়া লাগানোর চেষ্টা আছে, আছে সেতুবন্ধ। তবু কী আর করবে বলুন! নুয়ে থাকা ছাড়া তাদের যে আর উপায় নেই। কারণ তাদের আগায় যে ‘পচ্চুর’ কারেন্ট! 

সাধারণত আগার তুলনায় গোড়ায় (বা পেছনে) কারেন্ট থাকলে যেকোনো প্রাণী বা বস্তু লাফায় অনেক। কারেন্টের কারণেই তেমনটা হয় বটে। আর গোড়ার বদলে আগায় কারেন্ট থাকলে মাথা ভারী হয়ে যায়। একবার ভেবে দেখুন—মাথায় যদি হাজার হাজার ভোল্টের কারেন্ট থাকে, তবে আপনি কী করবেন?

একটুও যদি মাথা চক্কর দেয়, তবে এবার অনুভব করার চেষ্টা করুন ছবির বাঁশ দুটোর কী অবস্থা চলছে! ছবিটি তোলা হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা থেকে। আজকের পত্রিকার খবরে প্রকাশ, উপজেলার পাকশিমুল ইউনিয়নের তিতাস নদের পাড়ে এভাবেই বাঁশের খুঁটিতে ঝুলছে বিদ্যুতের তার। নদে দিনরাতে চলছে শত শত নৌকা। আর তাদের মাথার ওপরেই বাঁশের আগায় স্বমহিমায় আছে ১১ হাজার ভোল্টের এই বিদ্যুতের লাইন। স্থানীয়দের বক্তব্য, নৌকার ধাক্কা, পানির স্রোত কিংবা ঝড়-বৃষ্টিতে খুঁটি পড়ে গেলেই ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এসব খুঁটি প্রতিস্থাপনের দাবি জানিয়ে এলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আর কর্তৃপক্ষের কথা, বর্ষার পানিরই সব দোষ, বর্ষার পানির কারণেই এমন বাঁশের টাওয়ার বসানো হয়। 

স্থানীয়দের বক্তব্যের প্রথম অংশ নিয়ে বিশদ আলোচনা হতেই পারে। হ্যাঁ, দুর্ঘটনা তো ঘটতেই পারে। তবে মুফতে কিন্তু কারেন্টও পাওয়া যাবে! হয়তো সেই সম্ভাবনা (!) মাথায় রেখেই স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এমন একটি মহৎ কাজে উদ্যোগী হয়েছে। জনগণের সেবা করাই যেহেতু সরকারি প্রতিষ্ঠানের একমাত্র কাজ, তাই নিশ্চয়ই টেলিভিশনে কারেন্ট দেওয়ার পাশাপাশি স্থানীয় মানুষদেরও সরাসরি বডিতে কারেন্ট দিতে এমন কাজ করা হয়েছে! 

তবে স্থানীয়রা অভিযোগ আকারে বলছেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এই জায়গাটাতেই সমস্যা। যদি স্থানীয়দের সরাসরি বিদ্যুতায়ন করাই কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তবে আবার পাল্টা ব্যবস্থা নেবে কেন? 

আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে সরাইল উপজেলার অরুয়াইল সাব-জোনাল অফিসের দায়িত্বে থাকা এজিএম জহিরুল ইসলাম মোল্লা বলেই দিয়েছেন, বাঁশের খুঁটি না বসালে ওই এলাকার গ্রাহকেরা বিদ্যুৎ পেত না। তাই নিয়ম না থাকলেও বিদ্যুৎ দিতেই পানির মধ্যে বাঁশের অস্থায়ী টাওয়ার নির্মাণ করে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু রাখা হয়েছে। 

অর্থাৎ, কর্তৃপক্ষের দাবি অনুযায়ী, পুরো কাজটাই করা হয়েছে স্থানীয়দের বিদ্যুৎ দিতেই। বুঝুন একবার, কী কষ্টটাই না তাঁরা করছেন! এখানে বিদ্যুৎ দেওয়াটাই আসল উদ্দেশ্য। তা দিতে গিয়ে যদি সরাসরি শরীরেও সরবরাহ করতে হয়, তবে দোষটা কোথায়? বিদ্যুৎ পাওয়াই তো মূল কথা। কোনদিক দিয়ে পাওয়া হলো, তা দিয়ে আর কী হবে!

এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে যায় গোপাল ভাঁড়ের এক গল্প। লোকমুখে প্রচলিত এই গল্প অনুযায়ী, গোপাল একদিন গঙ্গা নদী পার হচ্ছিল। কিন্তু সেই নৌকায় আগে থেকেই ছিল অনেক যাত্রী। তাদের আবার ছিল নানা মালপত্র। গোপাল ওঠার পর একপর্যায়ে নাকি নৌকা প্রায় ডুবু ডুবু অবস্থায় চলে যায়। এই নৌকায় পানি উঠল বলে! আর ঠিক সেই সময়ই এক যাত্রী তার বড় বোঝাটা মাথায় তুলে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল। নৌকার তো তখন টলোমলো অবস্থা। গোপাল বাধ্য হয়ে ওই যাত্রীকে জিজ্ঞেস করল, সে মাথায় বোঝা নিয়ে দাঁড়িয়ে গেল কেন? 

উত্তরে ওই যাত্রী জানিয়ে দিল, তাহলে নাকি নৌকাটি ডুবে যাবে না! সবাই যদি এভাবে বোঝা মাথায় তুলে ধরে, তবে বোঝার ওজন পড়বে যার যার মাথায়। আর কমে যাবে নৌকার ওজন। তাতেই নাকি নৌকা ডুবে যাওয়া থেকে রক্ষা পাবে, আর সেই সঙ্গে বাঁচবে যাত্রীদের জানও!

এ দেশেও খানিকটা তেমন দৃশ্যই আমরা দেখতে পাচ্ছি। ১১ হাজার ভোল্টের কারেন্ট তো আছে বাঁশের আগায়। পানির সঙ্গে দূরত্ব তো আছেই। মোদের ঘটে বুদ্ধি কি কম নাকি? 

সে যাক গে। কর্তৃপক্ষ বলে দিয়েছে, পানি কমে গেলেই বাঁশ ফেলে স্থায়ী খুঁটি বসানো হবে। আর বর্ষার পানি কমার আশায় কেউ বসেও নেই। পানি না কমলেও ঠিকাদারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়ে গেছে। সেই ঠিকাদার নিশ্চয়ই এখন থেকেই খুঁটি বানানো শুরু করে দিয়েছেন। তাতে রড আছে, নাকি বাঁশ—তা নিয়ে না হয় পরে গবেষণা হবে। 

আসল কথা হলো, এ দেশে এখন বাঁশের সঙ্গে সঙ্গে কারেন্ট ফ্রি! এবং এই কার্যক্রম তৃণমূলেও পৌঁছে গেছে সগৌরবে। বাঁশ খাবেন, আর কারেন্ট নেবেন না (যেদিক দিয়েই হোক না কেন)—তা কখনো হয়?

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

৮৩ বছরের দাম্পত্যজীবন, বিশ্ব রেকর্ড গড়লেন শতবর্ষী মার্কিন দম্পতি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ৪২
এই দীর্ঘ পথচলার পেছনে রয়েছে শুধু একে অপরের প্রতি ভালোবাসা। ছবি: লংজেভিকোয়েস্ট
এই দীর্ঘ পথচলার পেছনে রয়েছে শুধু একে অপরের প্রতি ভালোবাসা। ছবি: লংজেভিকোয়েস্ট

১৯৪২ সালে বিয়ে। একসঙ্গে ৮৩ বছর পার করলেন যুক্তরাষ্ট্রে শতবর্ষী দম্পতি এলিনর ও লাইল গিটেনস। এই দীর্ঘ দাম্পত্য জীবনের মধ্য দিয়ে গড়লেন বিশ্বরেকর্ডও। বিশ্বের দীর্ঘতম বিবাহিত জুটি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন ১০৭ বছর বয়সী এলিনর ও ১০৮ বছর বয়সী লাইল গিটেনস।

যেখানে বিশ্বজুড়ে বিপজ্জনকভাবে বাড়ছে বিবাহ বিচ্ছেদের হার সেখানে দীর্ঘ এই দাম্পত্য জীবনের পথচলা বিস্ময়েরই। তবে এই দম্পতি বলেন, তাঁদের এই দীর্ঘ পথচলায় রয়েছে শুধু একে অপরের প্রতি ভালোবাসা।

১০০ বছরের বেশি বয়সের মানুষের তথ্য সংরক্ষণ করে এমন একটি সংস্থা লংজেভিকোয়েস্ট ওয়েবসাইট এলিনর-লাইল দম্পতির বিয়ের শংসাপত্র, মার্কিন আদমশুমারি নথি ও অন্যান্য কাগজপত্র যাচাই করেছে।

এর আগে এই রেকর্ড ছিল ৮৫ বছরের দাম্পত্য জীবনের অধিকারী ব্রাজিলের ম্যানোয়েল অ্যাঞ্জেলিম দিনো (১০৬) এবং তাঁর স্ত্রী মারিয়া দে সোসা দিনো (১০২)-এর দখলে। তাঁদের মৃত্যুর পর গিটেনস দম্পতি এই খেতাব পান।

এলিনর ও লাইলের প্রথম দেখা ১৯৪১ সালে একটি কলেজ বাস্কেটবল ম্যাচে। লাইল ক্লার্ক আটলান্টা ইউনিভার্সিটির পক্ষে খেলছিলেন। আর এলিনর ছিলেন দর্শকের সারিতে।

এই পরিচয় ১৯৪২ সালের ৪ জুন পরিণয়ে গড়াল। জর্জিয়ার সেনা প্রশিক্ষণ থেকে মাত্র তিন দিন ছুটি পেয়ে লাইল বিয়ে করেন এলিনরকে। লাইল যখন ইউএস আর্মির ৯২ তম ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশনে ইতালিতে দায়িত্বরত, এলিনর ভাবছিলেন আর কি হবে দেখা!

প্রথম সন্তানকে গর্ভে। এ সময় এলিনর চলে যান নিউইয়র্ক সিটিতে। সেখানে লাইলের পরিবারের সঙ্গে পরিচিত হন। কাজের পাশাপাশি চিঠির মাধ্যমে লাইলের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখছিলেন এলিনর। স্মৃতিচারণ করে এলিনর জানান, প্রত্যেকটা চিঠি সেনাবাহিনী পরীক্ষা করত। তাই সব কথা বলাও যেত না।

যুদ্ধের পর নিউইয়র্কের স্থায়ী বাসিন্দা হন গিটেনস দম্পতি। একসঙ্গে সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করেন।

৬৯ বছর বয়সে ফোর্ডহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরবান এডুকেশনে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন এলিনর। এরপর তারা ক্লার্ক আটলান্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সক্রিয় সদস্য হিসেবে কয়েক দশক কাটান। পরে তিন সন্তানের একজন অ্যাঞ্জেলার কাছাকাছি থাকতে মিয়ামিতে চলে যান।

লাইল জানান, তিনি এলিনরের সঙ্গে সময় কাটানো ভালোবাসেন। তাঁর সঙ্গে থাকতে পেরে খুশি। তাঁদের দুজনই একসঙ্গে সময় কাটাতে ভালোবাসেন এবং জীবনে একসঙ্গে অনেক কিছু করেছেন।

লংজেভিকোয়েস্ট সংস্থা জানায়, গিটেনস দম্পতির সম্মিলিত বয়স ২১৮ বছরেরও বেশি। তাঁরা বিশ্বের সর্বকালের সবচেয়ে বয়স্ক বিবাহিত দম্পতিও।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সোনার দানা গিলে ফেলল শিশু, বাইরে যেতে নিষেধ মায়ের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০২ নভেম্বর ২০২৫, ১৪: ৫৯
১০ হাজার ইউয়ান মূল্যের সোনার দানা গিলে ফেলেছে শিশু। ছবি: এআই নির্মিত প্রতীকী ছবি
১০ হাজার ইউয়ান মূল্যের সোনার দানা গিলে ফেলেছে শিশু। ছবি: এআই নির্মিত প্রতীকী ছবি

শিশুদের কয়েন মুখে দেওয়া বা গিলে ফেলা নতুন কিছু নয়। চোখের পলকে এই অঘটন অনেক শিশুই ঘটিয়ে ফেলে। পরে অনেককে দৌড়াতে হয় হাসপাতালে, আবার অনেকের স্বাভাবিক নিয়মে তা মলের সঙ্গে বের হয়ে আসে। এদিকে চীনের ১১ বছর বয়সী এক শিশু গিলে ফেলেছে সোনার দানা (গোল্ড বিন)। যার বাজারমূল্য ১০ হাজার ইউয়ান (বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ৭২ হাজার ২৫ টাকা)।

দক্ষিণ-পূর্ব চীনের জিয়াংসু প্রদেশের কুনশানের বাসিন্দা জি গত ১৭ অক্টোবর ১০ গ্রামের একটি সোনার দানা কেনেন। কয়েক দিন পর ২২ অক্টোবর তাঁর ছেলে সোনার দানাটি হাতে পেয়ে খেলতে খেলতে হঠাৎ গিলে ফেলে।

এ সময় জি বারান্দায় কাপড় ধুচ্ছিলেন। তাঁর ছেলে আতঙ্কিত হয়ে ছুটে এসে জানায়, সে গোল্ড বিনটি গিলে ফেলেছে। তার ভয় হচ্ছে সে কি এখন মারা যাবে!

জিকে তাঁর ছেলে আরও জানায়, জিব দিয়ে স্বাদ পরীক্ষা করার সময় সে সোনার দানাটি গিলে ফেলেছে।

প্রথমে জি ভেবেছিলেন, ছেলে মজা করছে। পরে দেখেন সোনার দানাটি নেই। তখন তিনি চিন্তায় পড়ে যান।

জির তখন মনে পড়ে, তাঁর ভাগনিও একবার একটি কয়েন গিলে ফেলেছিল। তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে ডাক্তার বলেছিলেন, এটি গুরুতর কিছু নয়। মলের সঙ্গে বের হয়ে যাবে।

জি মাথা ঠান্ডা করে ভাবতে থাকেন কী করা যায়। ইন্টারনেটে খোঁজাখুঁজি করে তিনি দেখেন, সোনার জিনিসও একইভাবে মলের সঙ্গে বেরিয়ে যেতে পারে।

এরপর জি ছেলেকে চোখে চোখে রাখতে থাকেন হারানো এই মূল্যবান সম্পদ উদ্ধারের আশায়। ছেলেকে সতর্ক করতে থাকেন বাইরে মলত্যাগ না করে ঘরে নির্ধারিত স্থানে করতে। কারণ, মলের সঙ্গে সোনার দানাটি বের হয়ে আসবে। তা সত্ত্বেও টানা পাঁচ দিন ধরে দিনে দুবার পরীক্ষা করেও সোনাটি পাওয়া যায়নি।

পরে গত ২৬ অক্টোবর ছেলেকে কুনশান ফিফথ পিপলস হাসপাতালে নিয়ে যান জি। পরীক্ষা করে চিকিৎসকেরা দেখেন, শিশুটির পেটে একটি বস্তু রয়েছে। তবে শিশুটির কোনো ব্যথা বা বমির লক্ষণ ছিল না।

পরে সেদিন সন্ধ্যায় সোনার দানাটি নিরাপদে বের হয়। তবে এটি কি স্বাভাবিকভাবে বের হয়েছে নাকি চিকিৎসার মাধ্যমে বের করা হয়েছে, তা সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের প্রতিবেদনে স্পষ্ট করে বলা হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হ্যালোইনে সুপারহিরো সেজেছিলেন—সেদিনই একটি জীবন বাঁচালেন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
এই পোশাকেই একটি জীবন বাঁচিয়েছিলেন ক্রিস্টোফার লি টেইলর। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান
এই পোশাকেই একটি জীবন বাঁচিয়েছিলেন ক্রিস্টোফার লি টেইলর। ছবি: দ্য গার্ডিয়ান

২০২০ সালের হ্যালোইন রাতে যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইও অঙ্গরাজ্যের গ্রিনভিলে এক অবিশ্বাস্য ঘটনার মুখোমুখি হন ক্রিস্টোফার লি টেইলর। সেই রাতে স্ত্রীর বোনের বাড়িতে হ্যালোইন পার্টিতে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। আর হ্যালোইনের বিশেষ পোশাক হিসেবে টেইলরের কাছে সেদিন বিকল্প ছিল মাত্র দুটো—তাঁকে হয় যিশুখ্রিষ্ট সাজতে হবে, নয়তো অ্যামাজন প্রাইম সিরিজ দ্য বয়েজ-এর কুখ্যাত সুপারহিরো ‘হোমল্যান্ডার’। কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে শেষ পর্যন্ত সুপারহিরোর পোশাকটিই বেছে নিয়েছিলেন তিনি।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক দ্য গার্ডিয়ানে টেইলর লিখেছেন, সেদিন অন্য এক চরিত্র ‘স্টারলাইট’ সেজে গাড়ি চালাচ্ছিলেন তাঁর স্ত্রী চেলসি। তাঁদের দুই সন্তানও ছিল গাড়িতে—তাদের একজন সেজেছিল ‘আয়রন ম্যান’ আর অন্যজন ‘ড্রাগন’।

যাত্রাপথে হঠাৎ তাঁরা দেখতে পান একটি বাড়ি থেকে আগুনের শিখা বের হচ্ছে। টেইলর তখনই তাঁর স্ত্রী চেলসিকে বলেন, ‘গাড়ি থামাও, আর ৯১১-এ ফোন দাও।’ তিনি দৌড়ে চলে যান জ্বলন্ত বাড়ির দিকে।

বাড়িটির সামনে কয়েকজন মানুষ দাঁড়িয়ে ছিলেন, কিন্তু তাঁরা শুধু আগুনের ধ্বংসযজ্ঞ দেখেই যাচ্ছিলেন, যেন কারওরই কিছু করার নেই। টেইলর তাঁদের কাছে জানতে চান—ভেতরে কেউ আছে কি না। উত্তর আসে, ‘জানি না।’

টেইলর অবশ্য দৌড়ে বাড়িটির আরও কাছে এগিয়ে যান এবং দরজা খুলে ডাক দেন, ‘কেউ আছেন?’ ভেতর থেকে ক্ষীণ একটি আওয়াজও ভেসে আসে। দেরি না করে তখনই দৌড়ে আগুনের ভেতরে ঢুকে পড়েন তিনি।

ভেতরে প্রবল ধোঁয়া ও তাপ সহ্য করেই সিঁড়ি বেয়ে ওপরে গিয়ে টেইলর দেখতে পান এক ব্যক্তি অচেতন হয়ে পড়ে আছেন। সময় নষ্ট না করে তিনি প্রায় ছয় লম্বা ওই লোকটিকে বহন করে রাস্তায় নিয়ে আসেন।

লোকটির জ্ঞান ফিরে আসার পর অবশ্য পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসও আসে। কিন্তু টেইলর তখন নিজের অদ্ভুত বেশ নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে কোনো রকমে পালিয়ে আসেন।

তবে টেইলরের এই জীবন বাঁচানোর খবরটি আর চাপা থাকে না। এই ঘটনার পর সবাই তাঁকে ‘সুপারহিরো’ বলে সবাই ডাকতে শুরু করে। শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে ‘কার্নেগি মেডেল ফর হিরোইজম’ পান তিনি এবং ওহাইও ফায়ার সার্ভিস হল অব ফেমে তাঁর নাম ওঠে। পাঁচ বছর পরও তাঁর সন্তানেরা গর্ব করে বলে—‘আমার বাবা সত্যিকারের সুপারহিরো।’

এমনকি দ্য বয়েজ সিরিজে হোমল্যান্ডারের চরিত্রে অভিনয় করা অ্যান্টনি স্টার তাঁর গল্পটি সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করে লিখেছিলেন, ‘এর চেয়ে গর্বিত মুহূর্ত আর হতে পারে না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ঘুরতে গিয়ে বৃদ্ধাকে রেখেই চলে গেল সহযাত্রীরা, পরে মিলল মৃতদেহ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
লিজার্ড আইল্যান্ডে হাইকিংয়ে গিয়েছিলেন ৮০ বছর বয়সী অস্ট্রেলিয়ান নারী। ছবি: সংগৃহীত
লিজার্ড আইল্যান্ডে হাইকিংয়ে গিয়েছিলেন ৮০ বছর বয়সী অস্ট্রেলিয়ান নারী। ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডের গ্রেট ব্যারিয়ার রিফকে বলা হয় পৃথিবীর দীর্ঘতম প্রবাল রিফ। প্রশান্ত মহাসাগরের কোরাল সাগরের এই প্রবাল রিফের কাছাকাছি এক দ্বীপে ঘটেছে এক মর্মান্তিক ঘটনা। ৮০ বছর বয়সী এক নারী পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে সেখানে।

গত শনিবার কেয়ার্নস শহর থেকে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার বা ১৫৫ মাইল উত্তরে অবস্থিত লিজার্ড আইল্যান্ডে হাইক করতে গিয়েছিলেন ওই নারী। কোরাল অ্যাডভেঞ্চারার নামের একটি ক্রুজ জাহাজে চড়ে আরও অনেকের সঙ্গে সেখানে গিয়েছিলেন তিনি। ওই নারী পর্যটক হাইক করার সময় কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিতে গিয়ে দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সূর্যাস্তের সময় জাহাজটি দ্বীপ ছেড়ে যায়। কয়েক ঘণ্টা পর ক্রুরা বুঝতে পারেন, ওই নারী জাহাজে নেই। পরে জাহাজটি দ্বীপে ফিরে যায়। ব্যাপক তল্লাশি চালানো হয়।

পরদিন রোববার সকালে অনুসন্ধানকারীরা দ্বীপ থেকে ওই নারীর মৃতদেহ উদ্ধার করেন।

অস্ট্রেলিয়ান মেরিটাইম সেফটি অথরিটি (এএমএসএ) জানিয়েছে, তারা ঘটনাটি তদন্ত করছে এবং চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে জাহাজটি ডারউইনে পৌঁছালে ক্রু সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে।

এএমএসএর এক মুখপাত্র জানান, গত শনিবার স্থানীয় সময় রাত প্রায় ৯টার দিকে (জিএমটি অনুযায়ী শুক্রবার সকাল ৫ টা) জাহাজের ক্যাপ্টেন প্রথমবারের মতো ওই নারীর নিখোঁজ হওয়ার খবর দেন।

সংস্থাটি বলেছে, তারা অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যৌথভাবে ঘটনাটি তদন্ত করবে এবং তারা বাণিজ্যিক জাহাজে যাত্রী ও ক্রুদের নিরাপত্তাকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখে।

কোরাল এক্সপেডিশনস-এর প্রধান নির্বাহী মার্ক ফাইফিল্ড জানিয়েছেন, সংস্থার কর্মীরা ওই নারীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এই ‘দুঃখজনক মৃত্যু’-র ঘটনায় পরিবারকে সহায়তা দিচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় তদন্ত এখনো চলছে, তবে যা ঘটেছে তার জন্য আমরা গভীরভাবে দুঃখিত এবং ওই নারীর পরিবারকে সর্বোচ্চ সহায়তা দিচ্ছি।’

কুইন্সল্যান্ড পুলিশ জানিয়েছে, নারীর এই ‘হঠাৎ এবং সন্দেহাতীত’ মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত শেষে একটি প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

কুরিয়ার মেল পত্রিকার প্রতিবেদনে জানা যায়, ওই প্রবীণ নারী দ্বীপের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কুকস লুক-এ ওঠার জন্য দলের সঙ্গে হাইকিংয়ে গিয়েছিলেন, কিন্তু পরে তিনি বিশ্রাম নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

৬০ দিনের ক্রুজে গিয়েছিলেন ওই নারী, যার টিকিটের দাম কয়েক হাজার অস্ট্রেলীয় ডলার। কোম্পানির ওয়েবসাইট অনুযায়ী, কোরাল অ্যাডভেঞ্চারার জাহাজে সর্বোচ্চ ১২০ জন যাত্রী ও ৪৬ জন ক্রু সদস্য থাকতে পারেন। অস্ট্রেলিয়ার উপকূলের দুর্গম এলাকাগুলোতে যাওয়ার জন্য এটি বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে। এই জাহাজে ছোট নৌকা বা ‘টেন্ডার’ রয়েছে যেগুলো দিয়ে দিনের বেলা যাত্রীদের ভ্রমণে ব্যবহার করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত