Ajker Patrika

অনলাইনে নিরাপদ লেনদেন

মো. ইকরামুল হাসান
আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০২২, ১৬: ৪৭
অনলাইনে নিরাপদ লেনদেন

মোবাইল ব্যাংকিং এখন সেবা হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে এর ব্যবহারে সুবিধার পাশাপাশি বিভ্রান্তিতেও পড়তে হচ্ছে অনেককে। এ ক্ষেত্রে আর্থিক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি হয়রানির শিকার হওয়ার নজিরও দেখা যাচ্ছে।

নিরাপদে মোবাইল ব্যাংকিং করতে হলে কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে।

গোপন পিন নম্বর 
মোবাইল ব্যাংকিংয়ের যে সেবাই ব্যবহার করুন না কেন, তার গোপন পিন নম্বর কাউকে দেওয়া যাবে না। এমনকি ব্যাংকের কারও কাছেও নয়। কেউ যদি ফোন করে আপনার গোপন পিন নম্বর চায় তাহলে বুঝতে হবে সেটা প্রতারণা। কেউ পিন নম্বরে অ্যাকাউন্ট জেনে গেলে ওই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলে ফেলতে পারে। গোপন নম্বর সব সময়ই গোপন থাকবে। 

ভুয়া মেসেজ বা কল 
অনেক সময় বিভিন্ন জালিয়াত চক্র ফোন করে বা মেসেজ দিয়ে অ্যাকাউন্ট-সংক্রান্ত বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে। এ ক্ষেত্রে জালিয়াত চক্র সিস্টেম আপগ্রেড হচ্ছে বা আপনার নম্বরে সমস্যা দেখা দিয়েছে অথবা আপনি কোনো লটারি বা টাকা পেয়েছেন বা উপহার পেয়েছেন এ-জাতীয় ভুয়া তথ্য দিয়ে থাকে। এসব প্রলোভনে পড়া যাবে না। নইলে আপনি অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়বেন।

অনলাইন পাসওয়ার্ড বা ওটিপি
মোবাইল ব্যাংকিংয়ের বিভিন্ন সেবায় হিসাব খোলার ক্ষেত্রে অথবা যেকোনো একটি ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্ট বা চ্যানেলে প্রবেশের ক্ষেত্রে মোবাইল নম্বরে বা ই-মেইল নম্বরে ওয়ানটাইম পাসওয়ার্ড বা ওটিপি আসে। এ ক্ষেত্রে ওই ভেরিফায়েড পেজ বা অ্যাকাউন্টে ব্যবহার করা ছাড়া অন্য কাউকেই এই ওটিপি বা ওয়ানটাইম পাসওয়ার্ড দেওয়া যাবে না। এই ওটিপি বা পাসওয়ার্ড টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন বা দুই ধাপে পরিচয় তথা মূল হিসাবকারীর পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ওটিপি অন্য কারও সঙ্গে শেয়ার করলে জালিয়াত চক্র অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সরিয়ে নিতে পারে।

অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে ব্যবহার
অনলাইন লেনদেনের বড় একটি অংশ অনলাইন গেটওয়ের মাধ্যমে সম্পাদিত হয়। অনলাইন গেটওয়ে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে রকেট, বিকাশ, নগদ ইত্যাদি ব্যবহারকারীরা তাঁদের অ্যাকাউন্ট নম্বর, পিন নম্বর, ওটিপি ওই সাইটে দিয়ে থাকেন। এ ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে যে সাইটটি কোনো ফিশিং সাইট কি না। যদি কারও সে সাইট-সংক্রান্ত কোনো ধরনের সন্দেহ হয়, তবে সেখানে তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে।

অ্যাকাউন্টের তথ্য সংরক্ষণ 
অনেকেই অ্যাকাউন্টের অ্যাড্রেস, পিন নম্বর বা গোপন নম্বর ভুলে যান। এ ক্ষেত্রে এসব তথ্য গোপন কোথাও সংরক্ষণ করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যে সেই গোপন জায়গাটির সন্ধান কেউ যেন না পায়।

হিসাবসংক্রান্ত তথ্য শেয়ারিং 
হিসাবসংক্রান্ত যেকোনো তথ্য, বিশেষ করে অনলাইন ব্যবহারকারীদের কোনো সমস্যা দেখা দিলে তাঁরা যথাযথ কর্তৃপক্ষ বা ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এ ক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষ বা ব্যাংক অনেক তথ্য বিভিন্ন নম্বর বা ই-মেইলে শেয়ার করে কথা বলে থাকেন। ব্যবহারকারীরা তথ্য দেওয়ার আগে ব্যাংকের ঠিকানা বা ব্যাংকারের সঠিক পরিচয় জেনে নিয়ে তবেই তথ্য শেয়ার করবেন।

অনলাইন ব্যাংকিং বা মোবাইল ব্যাংকিং জীবন সহজ করেছে, সেটা ঠিক। কিন্তু প্রতিটি ধাপে সতর্ক না থাকলে সুবিধাগুলো হয়ে উঠতে পারে অনিরাপদ। কাজেই নিরাপদে এসব সেবা ব্যবহারের জন্য ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়ার সময় সতর্ক থাকতে হবে। না হলে ক্ষতির মুখে পড়বেন ব্যবহারকারী নিজেই।

লেখক: সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার, ক্রেডিট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ডিভিশন, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্যানভার এআই এখন আরও উন্নত

ফিচার ডেস্ক
ক্যানভার এআই এখন আরও উন্নত

গ্রাফিক ডিজাইনে যাঁরা পারদর্শী নন, তাঁদের কাছে ক্যানভা নতুন এক দুয়ার খুলে দিয়েছে। যে কেউ এখন এটি ব্যবহার করে ব্যক্তিগত অথবা পেশাদার কাজ করতে পারেন। সময়ের সঙ্গে আরও উন্নত হয়েছে এই ডিজাইন প্ল্যাটফর্ম। এবার তাতে যোগ হলো তাদের নিজস্ব এআই-চালিত মডেল।

নতুন এই মডেল ডিজাইনের লেয়ার ও ফরম্যাট বুঝে আরও ভালোভাবে কাজ করতে সক্ষম। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটি এনেছে নতুন কিছু ফিচার, স্প্রেডশিট টুলস, মিনি অ্যাপ তৈরির সুবিধা।

ডিজাইন মডেলে বড় পরিবর্তন

ক্যানভা জানিয়েছে, তাদের নতুন ডিজাইন মডেলটি নিজেরাই তৈরি করেছে। এটি সাধারণ বা সমতল ছবি তৈরি করা ছাড়াও লেয়ার, অবজেক্টসহ ডিজাইন করতে পারে। এর ফলে যাঁরা অ্যাপটি ব্যবহার করবেন, তাঁরা চাইলে সহজে নিজের মতো সম্পাদনা করতে পারবেন। এটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পোস্ট, প্রেজেন্টেশন, হোয়াইট বোর্ড বা ওয়েবসাইট—সব জায়গায় কাজ করবে। ক্যানভার প্রোডাক্টের প্রধান রবার্ট কাওয়ালস্কি বলেছেন, ‘আগে আমরা শুধু সাধারণ ছবি তৈরি করতাম। তবে এখন ব্যবহারকারীরা চান প্রম্পট দিয়ে ছবি বা ডিজাইন তৈরি করতে এবং সেটি তাঁদের নিজের মতো সম্পাদনা করতে; যাতে ডিজাইন আরও প্রয়োজন অনুযায়ী হয়।’

আরও উন্নত ক্যানভা এআই

ক্যানভায় এর আগেও এআই-সুবিধা চালু ছিল। যাকে বলা হতো ক্যানভা এআই অ্যাসিস্ট্যান্ট। এখানে শুধু লেখা প্রম্পট দিয়ে ছবি বা ডিজাইন তৈরি করা যেত। কিন্তু নতুন আপডেটে ব্যবহারকারীরা আরও উন্নত উপায়ে ছবি তৈরি করতে পারবেন।

  • টেক্সট বা মিডিয়া সাজেশন: কেউ যদি কোনো ডিজাইনে লেখা, ছবি কিংবা অন্য উপাদান যোগ করতে চান, সেই পরামর্শ নিতে পারবেন নতুন এই মডেল থেকে। যেমন কেউ যদি জানতে চান, ‘এই পোস্টে কোন ছবি ভালো লাগবে? বা শিরোনামের জন্য কোন ফন্ট ভালো হবে?’ সেটা জানিয়ে দেবে ক্যানভার এআই।
  • থ্রিডি অবজেক্ট তৈরি: আগে শুধু ছবি কিংবা গ্রাফিকস ব্যবহার করা যেত ক্যানভায়। নতুন আপডেটে এআইকে বলে থ্রিডি অবজেক্টও বানানো যাবে। এটি ডিজাইনে আরও বাস্তবসম্মত ও প্রাণবন্ত দেখাবে।
  • আর্ট স্টাইল অনুকরণ: এআই এখন আর্ট বা ডিজাইন স্টাইল কপি করতে পারবে। যেমন চাইলে একটি ডিজাইনকে পিকাসোর স্টাইল বা ওয়াটার কালার লুক দেওয়া যাবে।

canva

স্প্রেডশিট ও অ্যাপ সংযুক্তির নতুন সুবিধা

ক্যানভা তাদের স্প্রেডশিট ও মিনি অ্যাপ ফিচার এনেছে একসঙ্গে। এর ফলে স্প্রেডশিটে রাখা তথ্য ব্যবহার করে সহজে চার্ট, গ্রাফ বা অন্যান্য ভিজ্যুয়াল উইজেট তৈরি করা যাবে। এটি ডিজাইন কিংবা প্রেজেন্টেশনে ব্যবহার করা যাবে। ফলে ডেটা উপস্থাপনা অনেক সহজ ও দ্রুত হবে।

ক্যানভা বলছে, এই নতুন উদ্ভাবনের মাধ্যমে তারা শুধু একটি সাধারণ ডিজাইন প্ল্যাটফর্ম নয়, এআই-চালিত সম্পূর্ণ ডিজাইন ইকোসিস্টেমে পরিণত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অ্যাডোবির মতো পেশাদার টুলসের সঙ্গে সরাসরি প্রতিযোগিতায় নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্যানভা।

সূত্র: টেকক্রাঞ্চ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মোবাইল ফোনসেটের ব্যাটারি দুর্বল হয় কেন

ফিচার ডেস্ক
মোবাইল ফোনসেটের ব্যাটারি দুর্বল হয় কেন

মোবাইল ফোনসেট কেনার বছরখানেকের মধ্যে দ্রুত চার্জ ফুরিয়ে যাওয়া কিংবা ব্যাটারি ফুলে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। আবার এক-দুই বছর পর ব্যাটারিতে চার্জ আর আগের মতো থাকে না। প্রথমটির কারণ, সঠিক নিয়মে চার্জ না দেওয়া। অনেকে মনে করেন, ফোনসেটে ১০০ শতাংশ চার্জ দিতে হয়। তাই সারা রাত ধরে শতভাগ চার্জ দেওয়া হয়। বিষয়টি ফোনসেটের ব্যাটারির জন্য ক্ষতিকর।

আর দ্বিতীয় সমস্যাটি হলো, ব্যাটারির স্বাভাবিক বয়স বেড়ে যাওয়ার প্রক্রিয়া।

ফোনসেটে ব্যবহৃত হয় লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি। এই ব্যাটারিগুলোর ভেতরে থাকে দুটি স্তর—একটি গ্রাফাইট, আরেকটি লিথিয়াম-কোবাল্ট অক্সাইড। এই দুই স্তরের মাঝামাঝি থাকে একটি তরল ইলেকট্রোলাইট।

সমস্যার মূল কারণ হলো, ইলেকট্রোলাইট ক্রিস্টালাইজেশন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ব্যাটারির ইলেকট্রোলাইট সলিউশনে থাকা লবণ জমে কঠিন পদার্থে পরিণত হয়। সেগুলো আয়নের পথ আটকে দেয়। আয়ন চলতে না পারলে ইলেকট্রন তৈরি হয় কম। তাতে ব্যাটারি আগের মতো শক্তি দিতে পারে না।

সম্পূর্ণভাবে ব্যাটারি অবক্ষয় রোধ করা সম্ভব হয় না। তবে কিছুটা হলেও এই প্রক্রিয়া ধীর করা যায় কিছু সহজ উপায় অনুসরণ করলে—

  • গরম জায়গায় ফোনসেট রাখবেন না।
  • প্রয়োজনে ফাস্ট চার্জিং বন্ধ রাখুন।
  • রাতভর চার্জ দেবেন না।
  • ব্যাটারি ৮০ শতাংশ পর্যন্ত চার্জ দিন।
  • মোবাইল ফোনসেটের ব্যাটারি হঠাৎ নষ্ট হয় না।

ধীরে ধীরে, প্রতিটি চার্জ সাইকেলের সঙ্গে একটু একটু করে শক্তি হারায়।

সূত্র: পিসিম্যাগ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এআই পাওয়ারহাউস হবে সৌদি আরব, ১ ট্রিলিয়ন ডলারে বানাচ্ছে ডেটা সেন্টার

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
সৌদি আরবের এআই শক্তিতে ক্ষমতাধর হওয়ার লক্ষ্যে বিনিয়োগের ক্ষেত্র ‘হিউমেইন’। ছবি: এএফপি
সৌদি আরবের এআই শক্তিতে ক্ষমতাধর হওয়ার লক্ষ্যে বিনিয়োগের ক্ষেত্র ‘হিউমেইন’। ছবি: এএফপি

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) পাওয়ারহাউস হতে বিশাল বাজি ধরেছে অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ সৌদি আরব। তেলবাণিজ্যে নির্ভরশীল দেশটি এখন নজর দিয়েছে প্রযুক্তির দিকে। এআই খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে দেশটি। ‘হিউমেইন’-এ বিনিয়োগের মাধ্যমে বেশ বড় উদ্যোগ হাতে নিয়েছে দেশটি।

‘হিউমেইন’ হলো সৌদি আরবের এআই শক্তিতে ক্ষমতাধর হওয়ার লক্ষ্যে বিনিয়োগের ক্ষেত্র। এই বিনিয়োগের মাধ্যমে ডেটা সেন্টার, ক্লাউড অবকাঠামো, লার্জ ল্যাঙ্গুয়েজ মডেল ও অ্যাপ্লিকেশনের পরিপূর্ণ এআই ইকোসিস্টেম তৈরি করছে দেশটি। আর এ প্রতিষ্ঠানটি সৌদি আরবের প্রায় এক ট্রিলিয়ন ডলারের সার্বভৌম সম্পদ তহবিলের মালিকানাধীন।

গত মে মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রিয়াদ সফরের আগে হিউমেইনের উদ্বোধন করেন সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। এ সপ্তাহে একই শহরে আয়োজিত ফিউচার ইনভেস্টমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (এফআইআই) সম্মেলনে প্রকল্পটির পরিসর, উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং বিশাল আর্থিক সক্ষমতা আরও স্পষ্টভাবে সামনে আসে।

হিউমেইনের প্রধান নির্বাহী (সিইও) তারেক আমিন জানান, তাঁর লক্ষ্য সৌদি আরবকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পর বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম এআই বাজারে পরিণত করা। শিল্পে নবাগত হয়েও তিনি বিশ্বাস করেন, সৌদি আরবের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতামূলক শক্তি হলো এর প্রচুর ও স্বল্পমূল্যের জ্বালানি সম্পদ, যা আধুনিক কম্পিউটিং শক্তির ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে সহায়ক হবে।

তিনি সিএনএন–এর বেকি অ্যান্ডারসনকে বলেন, “সৌদি আরবে আমাদের বড় সুবিধা হলো এর শক্তিশালী বিদ্যুৎ অবকাঠামো। হিউমেইনকে আলাদা করে সাবস্টেশন বা বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে না। এর মানে, ‘১৮ মাসে বছর’ হওয়ার সমস্যায় পড়তে হবে না। ”

২০৩৪ সালের মধ্যে সৌদি আরবজুড়ে ছয় গিগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ডেটা সেন্টার নেটওয়ার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে হিউমেইন। এ প্রকল্পে তাদের অংশীদার হিসেবে রয়েছে এনভিডিয়া, এএমডি, অ্যামাজন ওয়েব সার্ভিসেস, কোয়ালকম ও সিসকোর মতো বিশ্বের শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো।

গত মঙ্গলবার হিউমেইন ঘোষণা দিয়েছে, তারা সৌদি আরবে নতুন ডেটা সেন্টার নির্মাণের জন্য প্রাইভেট ইকুইটি জায়ান্ট ব্ল্যাকস্টোন-এর সঙ্গে ৩ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছে।

একই দিনে তারা এআইচালিত অপারেটিং সিস্টেম ‘হিউমেইন ওয়ান’ (Humain One) উন্মোচন করেছে। এই অপারেটিং সিস্টেমে প্রচলিত সিস্টেম উইন্ডোজ বা আইওএসের মতো মাউস ক্লিক বা আইকন ব্যবহারের বদলে ব্যবহারকারীরা কম্পিউটারকে ভয়েস বা টেক্সটের মাধ্যমে নির্দেশ দিতে পারবেন।

এরইমধ্যে হিউমেইন মানবসম্পদ (এইচআর), অর্থ, আইন, পরিচালন ও আইটি বিভাগে ব্যাপকভাবে এই এআই সিস্টেমটি ব্যবহার করছে। সিইও তারেক আমিন জানান, এখন তাঁর পে–রোল (বেতন ব্যবস্থাপনা) বিভাগে মাত্র একজন কর্মী আছেন, বাকি সব কাজই পরিচালনা করছে এআই এজেন্টরা।

‘ভিশন ২০৩০’ অর্থনৈতিক রূপান্তর পরিকল্পনার শেষ পর্যায়ে প্রবেশ করছে সৌদি আরব। তবে দেশটি বর্তমানে তেলের দামের পতন এবং নিওম–এর মতো বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্পের বিলম্বের কারণে নতুন চাপে পড়েছে। এ অবস্থায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বজায় রাখতে এআইকে কেন্দ্র করে দেশের এই নতুন উদ্যোগকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

তবে কাছের প্রতিবেশী সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই)-এর এআই প্রতিষ্ঠান ‘জি ৪২’ (G 42)-এর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পড়তে হবে সৌদি আরবকে। সম্প্রতি ‘স্টারগেট ইউএই’ (Stargate UAE) নামে ৫০০ বিলিয়নের এক বিশাল ডেটা সেন্টার প্রকল্প নির্মাণে ইউএই ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে একটি ঐতিহাসিক চুক্তি করেছে। যা যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে সবচেয়ে বড় ডেটা সেন্টার হিসেবে বিবেচিত হবে। এ প্রকল্পে সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে যুক্ত রয়েছে ওপেনএআই, ওরাকল, এনভিডিয়া ও সিসকো।

এ প্রসঙ্গে আমিন জানান, তিনি এআইকে গণতান্ত্রিককরণের পক্ষে, একই সঙ্গে হিউমেইনের দৃঢ় পরিচালন ক্ষমতাকেও তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, ‘মানুষের জন্য ভালো যে জ্ঞান তা এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত না হয়ে ছড়িয়ে থাকাই উচিত। তাই ইউএইতে যা হচ্ছে, তা ভালো। সৌদি আরবে যা হচ্ছে, তাও খুব ভালো।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তা সম্পূর্ণ ভিন্ন... হিউমেইন একটি হোল্ডিং কোম্পানি নয়। আমরা একটি অপারেটিং কোম্পানি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নতুন নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে ইন্টারনেটের খরচ বাড়বে ২০ শতাংশ: আইএসপিএবি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৭: ৩৭
টেলিকম খাতের খসড়া গাইডলাইন নিয়ে আইএসপিএবির সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা
টেলিকম খাতের খসড়া গাইডলাইন নিয়ে আইএসপিএবির সংবাদ সম্মেলন। ছবি: আজকের পত্রিকা

টেলিকম খাতের খসড়া গাইডলাইনে যেসব ফি ও চার্জ আরোপ করা হয়েছে, সেগুলোর কারণে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবার খরচ অতিরিক্ত ২০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে বলে জানিয়েছে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (আইএসপিএবি)। আজ সোমবার রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সভাপতি আমিনুল হাকিম এ কথা জানান।

আইএসপিএবি মহাসচিব নাজমুল করিম ভূঁইয়ার সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে নতুন ও পুরোনো নীতিমালার মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরে ইন্টারনেটের দাম বাড়ার কারণ ব্যাখ্যা করেন আমিনুল হাকিম।

তিনি বলেন, ‘নতুন গাইডলাইন অনুযায়ী ফিক্সড ইন্টারনেটের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) নতুন নিয়ম অনুযায়ী ইন্টারনেট সেবাদাতাদের ওপর নতুন করে রেভিনিউ শেয়ারিং, উচ্চ লাইসেন্স ফি আরোপ সরাসরি ব্রডব্যান্ড প্যাকেজের দাম বাড়াবে। এটি শুধু সাধারণ মানুষের পক্ষেই ক্ষতিকর নয়, বরং শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ডিজিটাল লাইফস্টাইল এবং ব্যবসায়িক কার্যক্রমকেও বাধাগ্রস্ত করবে।’

তিনি আরও জানান, প্রস্তাবিত নীতিমালা অনুযায়ী ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অর্থাৎ এফটিএসপি (ফিক্সড টেলিকম সার্ভিস প্রোভাইডার) অপারেটরদের ক্রয়মূল্য ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে বর্তমানে গ্রাহক ২০ এমবিপিএসের যেই প্যাকেজ ৭০০ টাকায় ব্যবহার করছেন, সেটার মূল্য সাড়ে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা হয়ে যাবে।

গাইডলাইন সংস্কার করে এই খরচগুলো কমানোর ব্যবস্থা নিতে দাবি জানান আইএসপিএবির সভাপতি।

ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে আমিনুল হাকিম বলেন, ‘আমি দেশের প্রত্যেক ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর কাছে অনুরোধ করছি, আপনারা আমাদের পাশে থাকুন। আমাদের দোষারোপ করবেন না। আমরা আপনাদেরই সেবা দিচ্ছি। এই দাবি বা প্রতিবাদ আপনাদের জন্য, আপনাদের ভবিষ্যতের জন্য।’

সংবাদ সম্মেলনে আইএসপিএবির পক্ষ থেকে কয়েকটি প্রস্তাবনা তুলে ধরে বলা হয়।

প্রস্তাবনায় বলা হয়, প্রস্তাবিত খসড়া নীতিমালার আড়ালে মোবাইল কোম্পানিগুলোকে ফিক্সড ওয়্যারলেস একসেস (এফডব্লিউএ) এবং লাস্ট মাইল ফাইবার সংযোগের মাধ্যমে ফিক্সড কানেক্টিভিটি দেওয়ার স্পষ্ট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এটি দেশীয় এবং নিজস্ব বিনিয়োগে গড়ে ওঠা আইএসপিগুলোর জন্য চরম অসম প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করবে।

আইএসপিএবি মনে করে, অযৌক্তিক ফি বৃদ্ধি এবং মোবাইল কোম্পানিগুলোকে ফিক্সড কানেক্টিভিটির সুযোগ দেওয়া দেশীয় বিনিয়োগকে চরম অনিশ্চয়তারমুখে ফেলবে। নতুন খসড়া গাইডলাইনটির সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে সাধারণ গ্রাহকের ওপর।

আইএসপিএবির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রস্তাবিত নীতিমালায় বিভিন্ন ফি ও চার্জ আরোপের কারণে গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেট সেবার খরচ অতিরিক্ত প্রায় ২০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে এবং এফটিএসপি অপারেটরদের ক্রয়মূল্য ১৪ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে।

সরকারের নীতিমালার কারণে গ্রামের ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাদানকারীরা ব্যবসা বন্ধ করে দিতে বাধ্য হবে বলে জানান আমিনুল হাকিম।

তিনি বলেন, ‘তিন মাস পরে যে সরকার নির্বাচিত হয়ে আসবে তাদের পক্ষে এই অস্থিরতা সামাল দেওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। এর ফলে সারাদেশে ডিজিটাল শাটডাউনের শঙ্কা রয়েছে।’

এ অবস্থায় ইন্টারনেট খাতে এখনই রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ দাবি করেন আইএসপিএবি মহাসচিব। তিনি বলেন, ‘ইন্টারনেটের মূল্য নির্ধারণের দায়িত্ব তাদের হাতে ছেড়ে দিন। আমি দেশের সব রাজনৈতিক দলকেও আন্তরিক আহ্বান জানাচ্ছি, দয়া করে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করুন। জনগণের পাশে দাঁড়ান, এই সেবাখাতকে এবং দেশীয় উদ্যোক্তাদের বাঁচিয়ে রাখুন। তাই, ইন্টারনেটের মূল্য নির্ধারণে আমরা দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। মনে রাখবেন, এই প্রজন্ম চুপ করে থাকবে না। তারা সচেতনভাবে, যথাযথ পথে নিজেদের দাবির পক্ষে এগিয়ে আসবে।’

মোবাইল অপারেটরদের প্রচুর সুবিধা দেওয়া হচ্ছে দাবি করে আইএসপিএবি মহাসচিব নাজমুল করিম ভূঁইয়া বলেন, ‘বৈষম্য দূর করার স্লোগান দিয়ে এই সরকার দায়িত্ব নিয়েছিল। অথচ তাদের কার্যক্রমে আমরা এর প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি না। মোবাইল অপারেটরদের প্রচুর সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। দেশের স্বার্থের চেয়ে মোবাইল অপারেটরদের স্বার্থ বেশি দেখা হচ্ছে। একইভাবে স্টারলিংককে অন্যায্য সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। দেশীয় ব্রডব্যান্ড সার্ভিস প্রোভাইডারদের লাইসেন্স পাওয়ার ক্ষেত্রে ২৫ লাখ টাকা একুইজিশন ফি দিতে হয় ৷ সেখানে স্টারলিংককে একুইজিশন ফি দিতে হয় মাত্র ১২ লাখ টাকা।’

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, টেলিকম খাতের খসড়া গাইডলাইনে লাইসেন্স নবায়নের ক্ষেত্রে আড়াই গুণ এবং বার্ষিক ফি সাড়ে তিন গুণ বাড়বে। এর ফলে গ্রাহক পর্যায়ে ফিক্সড ইন্টারনেটের মূল্য মেট্রোপলিটন শহরে অন্তত ১১ শতাংশ এবং বাইরে ১৮ দশমিক ৪০ শতাংশ বাড়বে। টেলিকম খাতের মতো এই খাতেও ৫ শতাংশ রেভিনিউ শেয়ার এবং ১ শতাংশ সামাজিক সুরক্ষা তহবিলে জমা এবং টেলিকম কোম্পানিকে এফডব্লিউ ও হটস্পট সুবিধা দেওয়ায় এইখাতের ২৭০০ দেশীয় উদ্যোক্তা ঝুঁকিতে পড়বে।

সরকার ভুল পথে এগোচ্ছে বলে মনে করেন আইএসপিএবির নেতারা। তাঁরা অভিযোগ করেন, ‘গাইডলাইনে জনআকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয়নি।’

সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন আইএসপিএবির সহসভাপতি নেয়ামুল হক খান, যুগ্ম মহাসচিব–১ মাহবুব আলম, যুগ্ম মহাসচিব–২ ফুয়াদ মুহাম্মদ শরফুদ্দিন ও কোষাধ্যক্ষ মঈন উদ্দিন আহমেদ।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত