রজত কান্তি রায়, ঢাকা
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়েছে সাতচল্লিশ এবং পঞ্চাশ বছর পর বন্ধুদের খুঁজে পাওয়ার দুটি ঘটনা। পুরোনো গ্রুপ ছবি একটি ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া এ বন্ধু ও বান্ধবীদের খুঁজে পাওয়া যায়। খুঁজে দেওয়ার সে কাজটি করেছিল যে ফেসবুক গ্রুপটি সেটির নাম ‘বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র।’ এক মিলিয়ন বা দশ লাখ সদস্যের এ গ্রুপটি ইতিমধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে নেটিজেনদের কাছে।
তবে জানিয়ে রাখা ভালো যে, বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র গ্রুপটি শুধুই ফেসবুক গ্রুপ নয়। বরং ইতিহাস ঐতিহ্য চর্চা বিষয়ে এটি একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। ফেসবুকের এ জনপ্রিয় গ্রুপটি প্রতিষ্ঠা করেন ২৬ বছর বয়সী তরুণ গিরিধর দে। তিনি সম্প্রতি ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ করেছেন।
ফরিদপুর শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা নদী। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ঢাকা থেকে ফরিদপুর শহরে যাওয়ার সময়ও গেছে কমে। এক ছুটির দিন ফরিদপুরে দেখা হয় গিরিধর দের সঙ্গে। পদ্মা তীরের ঘাসে বসে জমিয়ে আড্ডা হয় প্রায় পুরো বিকেল। তুমুল সে আড্ডায় গিরিধর জানান ‘বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র’ গ্রুপটির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কথা।
ছেলে বেলার গল্প
১৯৯৬ সালে ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলার চাঁদহাট গ্রামে জন্ম গিরিধর দের। গ্রামেই বেড়ে ওঠা। ছোটবেলা থেকে ইতিহাস চর্চা, প্রযুক্তি ও অনুসন্ধানীমূলক কর্মের প্রতি ঝোঁক ছিল গিরিধরের। তাঁর এই উৎসাহ সৃষ্টি হয় মূলত বাবা শ্রী সুধীর কুমার দে বণিকের নিয়মিত পত্রিকা পাঠ, ইতিহাসচর্চা ও পুরোনো পত্র-পত্রিকা জমিয়ে রাখার অভ্যাস দেখে। প্রযুক্তি ক্ষেত্রেও সুধীর দে ছিলেন প্রচণ্ড আগ্রহী একজন মানুষ। এ ছাড়া বনেদি পরিবার হওয়ায় পারিবারিক সূত্রে অ্যান্টিকের একটি সমৃদ্ধ সংগ্রহ ছিল তাঁদের। পাশাপাশি নিয়মিত পত্রিকা রাখা, দলিল-দস্তাবেজ নিয়ে চর্চার সুবাদে বাড়িতে গড়ে উঠেছিল ছোটখাটো এক সংগ্রহশালা। আর প্রযুক্তিপ্রিয় বাবার মোবাইল ফোন দিয়ে শুরু হয়েছিল গিরিধরের প্রযুক্তি পাঠ।
কিন্তু ২০০১ সালে গিরিধরদের পরিবার সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার হয়। এ সময় অ্যান্টিকসহ সংগৃহীত প্রচুর কাগজপত্র নষ্ট হয়ে যায় এবং সপরিবারে বাড়ি ছাড়া থাকতে হয় প্রায় এক বছর। সে সময় গিরিধরের বয়স ৪ বছর। এর কিছুদিন পর হৃদ্যন্ত্রের অসুস্থতাজনিত কারণে ছোট ভাই সাগর এবং তার কিছুদিন পর ২০১০ সালে বাবা সুধীর দে বণিক মারা যান। এ অবস্থায় মা রীনা রানি দের উৎসাহ ও প্রশ্রয়ে সংগ্রহশালা তৈরির কাজ চালিয়ে যান গিরিধর।
শুরুর দিনগুলো
২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর সংগ্রহগুলো নিয়ে কাজ শুরু হলেও বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায় তা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনি ভাবতে থাকেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হেলায় নষ্ট করা প্রভূত সময়কে কীভাবে কাজে লাগানো যায়। এ সময় তিনি খেয়াল করেন, বিভিন্ন বিষয়ে প্রচুর তথ্য বিকৃত বা ভুলভাবে উপস্থাপন হচ্ছে অনলাইনে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। দেশীয় ইতিহাস চর্চা, গবেষণা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লালন ও সংরক্ষণ এবং বিকাশের মাধ্যমে তথ্য বিকৃতি রোধের জন্য ২০১৬ সালের আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে গড়ে তোলান ‘বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র’ নামের ফেসবুক গ্রুপটি। খুব অল্প দিনেই দেশ ও দেশের বাইরে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় গিরিধরের এই প্রচেষ্টা। এটি গিরিধরের একেবারে ব্যক্তিগত শ্রম ও অর্থে গড়ে ওঠা একটি প্ল্যাটফর্ম।
বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র
বন্ধু খুঁজে দেওয়ার যে ঘটনা সেগুলো সম্প্রতি আলোচিত হচ্ছে, তা এ গ্রুপটির মূল কাজ নয়। সে রকম কোনো পোস্ট কেউ দিলে মূলত স্বেচ্ছাসেবকদের কাজে লাগিয়ে চেষ্টা করা হয় লোকজনকে খুঁজে পেতে, এমনটাই জানালেন গিরিধর দে। ‘বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র’ গ্রুপটি মুক্তিযুদ্ধ, শিক্ষা, ইতিহাস, শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি, কৃষি, যোগাযোগ, প্রত্নতত্ত্ব ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কাজ করে। মূলত এ গ্রুপের সদস্যরা নিজেদের সংগ্রহে থাকা ছবি কিংবা ভিডিও গ্রুপটিতে আপলোড করে থাকেন। সেগুলোর সঠিক তথ্য যাচাইবাছাই করা হয়। এ কাজটি করে থাকে দেশ ও বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গ্রুপটির প্রচুর স্বেচ্ছাসেবক। পরে সে ছবি ও ভিডিওগুলো সংরক্ষণ করা হয় আগ্রহী মানুষ, গবেষক ও লেখকদের জন্য। এগুলো একেবারে বিনা মূল্যে সরবরাহ করে গ্রুপটি।
প্রায় সত্তর হাজার ছবির সংগ্রহ
শুরুর দিকে গিরিধর দের ব্যক্তিগত সংগ্রহের প্রায় ১০ হাজার ইতিহাস ভিত্তিক ছবি নিয়ে কার্যক্রম শুরু হয়। পরে তাঁর মনে হয়, এই ছবির সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়। সংগ্রহ সংখ্যা বাড়াতে অনলাইন ও অফলাইনে বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করেন গিরিধর। এ সময়ই ফেসবুকে আত্মপ্রকাশ করে ‘বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র’ গ্রুপটি। এর পরেই অফলাইন থেকে এবং গ্রুপের সদস্যদের মাধ্যমে নিয়মিত বৃদ্ধি পেতে থাকে সংগ্রহ সংখ্যা। সেগুলো যাচাই-বাছাই শেষে চর্চা, গবেষণা ও সংরক্ষণের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার শুরু করেন গিরিধর। তথ্য বিকৃতি রোধ, প্রকাশিত ছবির ভেতরের ঘটনা তুলে আনতে এবং প্রকাশের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে শুরু হয় প্রকাশিত বিষয়ের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত ব্যক্তিদের নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন এবং তার সরাসরি সম্প্রচার।
বাংলাদেশের ইতিহাসের বিভিন্ন আন্দোলন, সংগ্রামের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন রণাঙ্গন, যুদ্ধের তথ্য, যুদ্ধাস্ত্রের তথ্য, মুক্তিযোদ্ধাদের মাধ্যমে কিংবা তাঁদের পরিবারের সদস্যদের দেওয়া তথ্য, ছবি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে লেখা ও চিঠি একে একে উপস্থাপিত হতে শুরু করে ‘বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র’ গ্রুপটিতে। হতে থাকে লাইভ অনুষ্ঠান। পাশাপাশি তরুণদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আগ্রহী করে তুলতে আয়োজন করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ধারাবাহিক অনুষ্ঠান ‘বুকের ভেতর যুদ্ধ কথা।’ এ ছাড়াও দেশের প্রথিতযশা বিজ্ঞানী, শিল্পী, লেখক, সাহিত্যিকদের জীবনী ও সৃষ্টিশীল কাজ নিয়ে প্রচার গ্রুপটির অন্যতম উদ্দেশ্য।
শুধুমাত্র অনলাইনেই নয়, আনলাইনের বাইরেও ‘বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র’ গ্রুপটি থেকে চালানো হয় নানা কার্যক্রম। বিভিন্ন স্কুল-কলেজের অনুষ্ঠানে ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক আলোকচিত্র প্রদর্শনী, সভা, সেমিনারের আয়োজন করে গিরিধর ও তাঁর স্বেচ্ছাসেবকেরা।
ছবি, ভিডিও এবং অন্যান্য দলিলপত্র সংগ্রহের কাজ চলছে নিয়মিতভাবে। সেই সঙ্গে চলছে সেগুলো যাচাইবাছাই ও সংরক্ষণের কাজ। স্বেচ্ছাসেবকদের পাশাপাশি এ কাজে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রতিষ্ঠিত মানুষেরা।
শুধু ছবি, ভিডিও এবং বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করাই নয়, সেগুলো যেন তথ্যের বিকৃতি রোধ করতে পারে, সে জন্য সংগৃহীত সব উপাদান সবার জন্য উন্মুক্ত করে রাখা হয়েছে বলে জানান গিরিধর দে। তিনি বলেন, ‘আমরা এমনকি কোনো ডকুমেন্টে আমাদের লোগো বসাইনি। উৎসাহী মানুষ, লেখক কিংবা গবেষকেরা চাইলে সেগুলো নির্দ্বিধায় ব্যবহার করতে পারেন।’
তথ্য চুরি
কথায় কথায় গিরিধর দে জানান, তাঁদের ছবি ও ভিডিও ইতিমধ্যে অনলাইনে ঘুরে বেড়াচ্ছে অন্য কোনো গ্রুপের লোগো নিয়ে। অনেক অনলাইন পোর্টাল তাদের লোগো দিয়ে সেগুলোকে নিজেদের সম্পদ বলেও দাবি করছেন বলে জানান তিনি। এ ছাড়া অনেক লেখক ও গবেষকও যথাযথভাবে গ্রুপের নাম ব্যবহার করছেন না সোর্স হিসেবে। গিরিধর দে সবাইকে সোর্স হিসেবে ‘বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র’ গ্রুপটির নাম ব্যবহার করার অনুরোধ করেন।
পুরস্কার
স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে দেশ ও জাতির কল্যাণে ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সংস্কৃতির চর্চা, গবেষণা, প্রচার, সংরক্ষণ ও তথ্য বিকৃতি রোধে ভূমিকা রাখার কারণে ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড-২০২১’ পুরস্কার পেয়েছে ‘বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র’ গ্রুপটি।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়েছে সাতচল্লিশ এবং পঞ্চাশ বছর পর বন্ধুদের খুঁজে পাওয়ার দুটি ঘটনা। পুরোনো গ্রুপ ছবি একটি ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া এ বন্ধু ও বান্ধবীদের খুঁজে পাওয়া যায়। খুঁজে দেওয়ার সে কাজটি করেছিল যে ফেসবুক গ্রুপটি সেটির নাম ‘বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র।’ এক মিলিয়ন বা দশ লাখ সদস্যের এ গ্রুপটি ইতিমধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে নেটিজেনদের কাছে।
তবে জানিয়ে রাখা ভালো যে, বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র গ্রুপটি শুধুই ফেসবুক গ্রুপ নয়। বরং ইতিহাস ঐতিহ্য চর্চা বিষয়ে এটি একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। ফেসবুকের এ জনপ্রিয় গ্রুপটি প্রতিষ্ঠা করেন ২৬ বছর বয়সী তরুণ গিরিধর দে। তিনি সম্প্রতি ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ থেকে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ করেছেন।
ফরিদপুর শহরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা নদী। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর ঢাকা থেকে ফরিদপুর শহরে যাওয়ার সময়ও গেছে কমে। এক ছুটির দিন ফরিদপুরে দেখা হয় গিরিধর দের সঙ্গে। পদ্মা তীরের ঘাসে বসে জমিয়ে আড্ডা হয় প্রায় পুরো বিকেল। তুমুল সে আড্ডায় গিরিধর জানান ‘বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র’ গ্রুপটির বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কথা।
ছেলে বেলার গল্প
১৯৯৬ সালে ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলার চাঁদহাট গ্রামে জন্ম গিরিধর দের। গ্রামেই বেড়ে ওঠা। ছোটবেলা থেকে ইতিহাস চর্চা, প্রযুক্তি ও অনুসন্ধানীমূলক কর্মের প্রতি ঝোঁক ছিল গিরিধরের। তাঁর এই উৎসাহ সৃষ্টি হয় মূলত বাবা শ্রী সুধীর কুমার দে বণিকের নিয়মিত পত্রিকা পাঠ, ইতিহাসচর্চা ও পুরোনো পত্র-পত্রিকা জমিয়ে রাখার অভ্যাস দেখে। প্রযুক্তি ক্ষেত্রেও সুধীর দে ছিলেন প্রচণ্ড আগ্রহী একজন মানুষ। এ ছাড়া বনেদি পরিবার হওয়ায় পারিবারিক সূত্রে অ্যান্টিকের একটি সমৃদ্ধ সংগ্রহ ছিল তাঁদের। পাশাপাশি নিয়মিত পত্রিকা রাখা, দলিল-দস্তাবেজ নিয়ে চর্চার সুবাদে বাড়িতে গড়ে উঠেছিল ছোটখাটো এক সংগ্রহশালা। আর প্রযুক্তিপ্রিয় বাবার মোবাইল ফোন দিয়ে শুরু হয়েছিল গিরিধরের প্রযুক্তি পাঠ।
কিন্তু ২০০১ সালে গিরিধরদের পরিবার সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার হয়। এ সময় অ্যান্টিকসহ সংগৃহীত প্রচুর কাগজপত্র নষ্ট হয়ে যায় এবং সপরিবারে বাড়ি ছাড়া থাকতে হয় প্রায় এক বছর। সে সময় গিরিধরের বয়স ৪ বছর। এর কিছুদিন পর হৃদ্যন্ত্রের অসুস্থতাজনিত কারণে ছোট ভাই সাগর এবং তার কিছুদিন পর ২০১০ সালে বাবা সুধীর দে বণিক মারা যান। এ অবস্থায় মা রীনা রানি দের উৎসাহ ও প্রশ্রয়ে সংগ্রহশালা তৈরির কাজ চালিয়ে যান গিরিধর।
শুরুর দিনগুলো
২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাঁর সংগ্রহগুলো নিয়ে কাজ শুরু হলেও বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতায় তা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু তিনি ভাবতে থাকেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হেলায় নষ্ট করা প্রভূত সময়কে কীভাবে কাজে লাগানো যায়। এ সময় তিনি খেয়াল করেন, বিভিন্ন বিষয়ে প্রচুর তথ্য বিকৃত বা ভুলভাবে উপস্থাপন হচ্ছে অনলাইনে, বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। দেশীয় ইতিহাস চর্চা, গবেষণা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লালন ও সংরক্ষণ এবং বিকাশের মাধ্যমে তথ্য বিকৃতি রোধের জন্য ২০১৬ সালের আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে গড়ে তোলান ‘বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র’ নামের ফেসবুক গ্রুপটি। খুব অল্প দিনেই দেশ ও দেশের বাইরে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায় গিরিধরের এই প্রচেষ্টা। এটি গিরিধরের একেবারে ব্যক্তিগত শ্রম ও অর্থে গড়ে ওঠা একটি প্ল্যাটফর্ম।
বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র
বন্ধু খুঁজে দেওয়ার যে ঘটনা সেগুলো সম্প্রতি আলোচিত হচ্ছে, তা এ গ্রুপটির মূল কাজ নয়। সে রকম কোনো পোস্ট কেউ দিলে মূলত স্বেচ্ছাসেবকদের কাজে লাগিয়ে চেষ্টা করা হয় লোকজনকে খুঁজে পেতে, এমনটাই জানালেন গিরিধর দে। ‘বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র’ গ্রুপটি মুক্তিযুদ্ধ, শিক্ষা, ইতিহাস, শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতি, কৃষি, যোগাযোগ, প্রত্নতত্ত্ব ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কাজ করে। মূলত এ গ্রুপের সদস্যরা নিজেদের সংগ্রহে থাকা ছবি কিংবা ভিডিও গ্রুপটিতে আপলোড করে থাকেন। সেগুলোর সঠিক তথ্য যাচাইবাছাই করা হয়। এ কাজটি করে থাকে দেশ ও বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গ্রুপটির প্রচুর স্বেচ্ছাসেবক। পরে সে ছবি ও ভিডিওগুলো সংরক্ষণ করা হয় আগ্রহী মানুষ, গবেষক ও লেখকদের জন্য। এগুলো একেবারে বিনা মূল্যে সরবরাহ করে গ্রুপটি।
প্রায় সত্তর হাজার ছবির সংগ্রহ
শুরুর দিকে গিরিধর দের ব্যক্তিগত সংগ্রহের প্রায় ১০ হাজার ইতিহাস ভিত্তিক ছবি নিয়ে কার্যক্রম শুরু হয়। পরে তাঁর মনে হয়, এই ছবির সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়। সংগ্রহ সংখ্যা বাড়াতে অনলাইন ও অফলাইনে বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করেন গিরিধর। এ সময়ই ফেসবুকে আত্মপ্রকাশ করে ‘বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র’ গ্রুপটি। এর পরেই অফলাইন থেকে এবং গ্রুপের সদস্যদের মাধ্যমে নিয়মিত বৃদ্ধি পেতে থাকে সংগ্রহ সংখ্যা। সেগুলো যাচাই-বাছাই শেষে চর্চা, গবেষণা ও সংরক্ষণের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার শুরু করেন গিরিধর। তথ্য বিকৃতি রোধ, প্রকাশিত ছবির ভেতরের ঘটনা তুলে আনতে এবং প্রকাশের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে শুরু হয় প্রকাশিত বিষয়ের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত ব্যক্তিদের নিয়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন এবং তার সরাসরি সম্প্রচার।
বাংলাদেশের ইতিহাসের বিভিন্ন আন্দোলন, সংগ্রামের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন রণাঙ্গন, যুদ্ধের তথ্য, যুদ্ধাস্ত্রের তথ্য, মুক্তিযোদ্ধাদের মাধ্যমে কিংবা তাঁদের পরিবারের সদস্যদের দেওয়া তথ্য, ছবি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে লেখা ও চিঠি একে একে উপস্থাপিত হতে শুরু করে ‘বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র’ গ্রুপটিতে। হতে থাকে লাইভ অনুষ্ঠান। পাশাপাশি তরুণদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আগ্রহী করে তুলতে আয়োজন করেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ধারাবাহিক অনুষ্ঠান ‘বুকের ভেতর যুদ্ধ কথা।’ এ ছাড়াও দেশের প্রথিতযশা বিজ্ঞানী, শিল্পী, লেখক, সাহিত্যিকদের জীবনী ও সৃষ্টিশীল কাজ নিয়ে প্রচার গ্রুপটির অন্যতম উদ্দেশ্য।
শুধুমাত্র অনলাইনেই নয়, আনলাইনের বাইরেও ‘বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র’ গ্রুপটি থেকে চালানো হয় নানা কার্যক্রম। বিভিন্ন স্কুল-কলেজের অনুষ্ঠানে ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক আলোকচিত্র প্রদর্শনী, সভা, সেমিনারের আয়োজন করে গিরিধর ও তাঁর স্বেচ্ছাসেবকেরা।
ছবি, ভিডিও এবং অন্যান্য দলিলপত্র সংগ্রহের কাজ চলছে নিয়মিতভাবে। সেই সঙ্গে চলছে সেগুলো যাচাইবাছাই ও সংরক্ষণের কাজ। স্বেচ্ছাসেবকদের পাশাপাশি এ কাজে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রতিষ্ঠিত মানুষেরা।
শুধু ছবি, ভিডিও এবং বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করাই নয়, সেগুলো যেন তথ্যের বিকৃতি রোধ করতে পারে, সে জন্য সংগৃহীত সব উপাদান সবার জন্য উন্মুক্ত করে রাখা হয়েছে বলে জানান গিরিধর দে। তিনি বলেন, ‘আমরা এমনকি কোনো ডকুমেন্টে আমাদের লোগো বসাইনি। উৎসাহী মানুষ, লেখক কিংবা গবেষকেরা চাইলে সেগুলো নির্দ্বিধায় ব্যবহার করতে পারেন।’
তথ্য চুরি
কথায় কথায় গিরিধর দে জানান, তাঁদের ছবি ও ভিডিও ইতিমধ্যে অনলাইনে ঘুরে বেড়াচ্ছে অন্য কোনো গ্রুপের লোগো নিয়ে। অনেক অনলাইন পোর্টাল তাদের লোগো দিয়ে সেগুলোকে নিজেদের সম্পদ বলেও দাবি করছেন বলে জানান তিনি। এ ছাড়া অনেক লেখক ও গবেষকও যথাযথভাবে গ্রুপের নাম ব্যবহার করছেন না সোর্স হিসেবে। গিরিধর দে সবাইকে সোর্স হিসেবে ‘বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র’ গ্রুপটির নাম ব্যবহার করার অনুরোধ করেন।
পুরস্কার
স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে দেশ ও জাতির কল্যাণে ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংগ্রাম ও সংস্কৃতির চর্চা, গবেষণা, প্রচার, সংরক্ষণ ও তথ্য বিকৃতি রোধে ভূমিকা রাখার কারণে ‘জয় বাংলা ইয়ুথ অ্যাওয়ার্ড-২০২১’ পুরস্কার পেয়েছে ‘বাংলাদেশের দুষ্প্রাপ্য ছবি সমগ্র’ গ্রুপটি।
রসায়ন ও প্রযুক্তির ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার ছিল রসায়নবিদ আলেসান্দ্রো ভোল্টার উদ্ভাবিত রাসায়নিক ব্যাটারি। ১৮০০ সালে এ ব্যাটারির আবিষ্কার ছাড়া আধুনিক বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি ও ইলেকট্রনিকসের অগ্রগতি ভাবা দুষ্কর। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে গবেষণা চলছে নতুন ধরনের ব্যাটারি উদ্ভাবনে। তবে এখন পর্যন্ত সব
১ ঘণ্টা আগেযদি আপনি ইউটিউবে নিয়মিত ভিডিও দেখেন, তবে আপনার সামনে মুভি বা টিভি সিরিজের ভুয়া ট্রেইলার চোখে পড়ার কথা। এসব ভুয়া ট্রেইলার বানানো হয় আসল সিনেমার কিছু ক্লিপের সঙ্গে এআইভিত্তিক কণ্ঠস্বর ও ভিডিও মিশিয়ে ফলে অনেক দর্শকই বিভ্রান্ত হন, ধরে নেন এটা কোনো আসন্ন সিনেমার অফিশিয়াল ট্রেইলার। সাম্প্রতিক সময়ে এই ধরনে
২ ঘণ্টা আগেঅ্যাপল তাদের পরবর্তী অপারেটিং সিস্টেম আইওএস ১৯–এ বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। নতুন এই আপডেটে যুক্ত হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নির্ভর ব্যাটারি ম্যানেজমেন্ট টুল, যা ব্যবহারকারীর তথ্য ব্যবহার করে আইফোনের ব্যাটারি লাইফ বা আয়ু বাড়াবে। এ ছাড়া নতুন অপারেটিং সিস্টেমে আসছে সম্পূর্ণ নতুন ডিজাইন, যা
৪ ঘণ্টা আগেবিশ্ববিখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট আবারও বড় পরিসরে কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি তাদের মোট কর্মীর প্রায় ৩ শতাংশ বা প্রায় ৬ হাজার কর্মীকে ছাঁটাই করছে। খরচ নিয়ন্ত্রণের অংশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে মাইক্রোসফট। আর অন্যদিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) খাতে বিপুল
৫ ঘণ্টা আগে