Ajker Patrika

যাঁর গোলে বাংলাদেশের ইতিহাস

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৪: ৩৩
ঋতুপর্ণার জোড়া গোলে মিয়ানমারকে ২-১ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ছবি: বাফুফে
ঋতুপর্ণার জোড়া গোলে মিয়ানমারকে ২-১ গোলে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ছবি: বাফুফে

সময়টা খুব পুরোনো হয়ে যায়নি। গত বছরের সাফের কথা। গ্রুপ পর্বে নিজের পারফরম্যান্স নিয়ে হতাশা কাজ করছিল ঋতুপর্ণা চাকমার মনে। কিছুতেই যে কিছু হচ্ছিল না। কিন্তু সেমিফাইনাল ও ফাইনালে ঠিকই জ্বলে উঠলেন তিনি। নেপালের বিপক্ষে তাঁর শিরোপা জেতানো দৃষ্টিনন্দন গোল এখনো চোখে ভাসে। এরপর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। বাঁ পায়ের জাদুতে মুগ্ধ করে চলেছেন ফুটবলপ্রেমীদের। তাঁর কাঁধে চড়ে বাংলাদেশ নারী ফুটবল প্রথমবারের মতো জায়গা করে নিয়েছে স্বপ্নের এশিয়ান কাপে।

বাহরাইনকে ৭-০ গোলে উড়িয়ে দেওয়ার পর বাছাইয়ে গতকাল মিয়ানমারকেও হারিয়েছে বাংলাদেশ। ইয়াঙ্গুনের থুউনা স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের পরাজয়ের স্বাদ দেয় ২-১ ব্যবধানে। দুটো গোলই এসেছে ঋতুপর্ণার পা থেকে। বাঁ প্রান্তে বল পেলেই আক্রমণে ছুটে যান তিনি। মিয়ানমারের খেলোয়াড়েরা টেকনিক্যালি খুব ভালো। কথাটি বাংলাদেশের কোচ পিটার বাটলারের। সেই খেলোয়াড়দের দক্ষতা ও গতি দিয়ে পরাস্ত করেন ঋতুপর্ণা। মাঝেমধ্যে বাধা পেয়েছেন বটে, তবে দমে যাননি। এ কারণেই কিনা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) ঋতুপর্ণাকে নিয়ে লিখেছে, ‘দুই গোল, এক তারকা।’

টুর্নামেন্টের শুরুতে র‍্যাঙ্কিং নিয়ে কথা হচ্ছিল বেশ। কারণ বাংলাদেশের অবস্থান ১২৮। কিন্তু প্রথম ম্যাচে ৩৬ ধাপ এগিয়ে থাকা বাহরাইনকে ৭-০ গোলে উড়িয়ে বাংলাদেশ বুঝিয়ে দেয় র‍্যাঙ্কিং শুধু সংখ্যা। সেই ম্যাচে বক্সের বাইরে থেকে দারুণ এক গোল করেন ঋতুপর্ণা। ইয়াঙ্গুনের থুউনা স্টেডিয়ামে মিয়ানমারের বিপক্ষেও তাই তাঁকে নিয়ে প্রত্যাশা ছিল তুঙ্গে। হতাশ করেননি তিনি।

বাঁ প্রান্ত দিয়ে সেট পিসগুলো ঋতুপর্ণাই নিয়ে থাকেন। ১৮ মিনিটে প্রথম সেট পিসের দেখা পায় বাংলাদেশ। বক্সের কিছুটা বাইরে থেকে ফ্রি-কিক নিতে আসেন ঋতুপর্ণা। শটে খুব একটা জোর ছিল না বলে মানব দেয়ালে লেগে ফিরে আসে বল। সেটাই যেন পোয়াবারো হয়ে দাঁড়াল। খানিকটা ফাঁকা জায়গা পেয়ে ঋতুপর্ণা এবার নিলেন কোনাকুনি শট। ঠেকানোর সামর্থ্য ছিল না মিয়ানমার গোলরক্ষক মিয়া মিয়া নিয়েনের।

দ্বিতীয় গোলটি আসে ৭১ মিনিটে। এবারও কোণটা দুরূহ ছিল ঋতুপর্ণার জন্য। মিয়ানমার ডিফেন্ডারের ভুল পাসে বাঁ প্রান্ত ধরে এগোতে থাকেন তিনি। সামনে বল দেওয়ার মতো কেউ ছিল না বলে বক্সের বাইরে থেকেই নিলেন শট। সেটাও গোলরক্ষককে করে দিয়েছে অসহায়। তাঁর মাথার ওপর দিয়ে বল আশ্রয় নেয় জালে।

ঋতুপর্ণার সামর্থ্য সম্পর্কে ধারণা বাটলারের চেয়ে ভালো জানা আছে আর কার! বিদ্রোহী ফুটবলারদের তালিকায় থাকার পরও বিরোধ মিটিয়ে দলে জায়গা করে দেন তিনি। সেই বাটলার ম্যাচ শেষে স্তুতিতে ভাসালেন ঋতুপর্ণাকে, ‘সে সাহসী ও কঠিন এক মেয়ে। এখনো তরুণ। তার সামনে সম্ভাবনার বিশাল এক জগৎ খোলা আছে। আমি চাই সে সামনে এগিয়ে যাক, আরও বড় পর্যায়ে খেলুক, কারণ সে এটার যোগ্য।’

ঋতুপর্ণার সৌরভ বিদেশে উচ্চমানের লিগে ছড়িয়ে পড়ুক, চাওয়া বাটলারের, ‘এই মেয়ের (ঋতুপর্ণা) আরও উঁচুমানের লিগে খেলার সামর্থ্য আছে। সবাই সেটা জানে বলে মনে করি। দুর্ভাগ্য যে বাংলাদেশে লিগ হয় না, এ কারণে ভুটানে লিগে গিয়ে খেলতে হয়েছে তাকে। তবে তার সৌদি আরব, মধ্যপ্রাচ্য কিংবা অন্য কোথাও ভালো মানের লিগে খেলা উচিত।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত