Ajker Patrika

‘বিদেশিদের চেয়ে বাংলাদেশের ফুটবলাররা বেশি পরিশ্রমী’

নাজিম আল শমষের
আপডেট : ২৮ জুন ২০২১, ১৩: ২০
‘বিদেশিদের চেয়ে বাংলাদেশের ফুটবলাররা বেশি পরিশ্রমী’

ঢাকা: ফুটবলাঙ্গনে তাঁকে নিয়ে আলোচনাটা চলছিল গত মার্চ থেকেই। নিজের জন্মভূমি নাইজেরিয়ার নাগরিকত্ব বিসর্জন দিয়ে যখন বাংলাদেশকে আপন করে নিলেন এলিটা কিংসলে। নাইজেরিয়ান এই ফুটবলার অবশ্য চিরসবুজ দেশের প্রেমে পড়েছিলেন আরও অনেক আগে। বিশেষ করে লিজা বেগমের। বাংলাদেশি এই নারীর প্রেম তাঁকে করল সংসারী। বানাল বাংলাদেশিও। পার্থক্য শুধু ছিল একটাই, ছিল না আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি। পাসপোর্টে ছিল না ‘বাংলাদেশি’ সিল। 

অবশেষে গত ১৬ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের ‘কাঙ্ক্ষিত’ পাসপোর্ট এলিটার হাতে তুলে দেয় তাঁর দল বসুন্ধরা কিংস। এলিটা পেলেন আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি। পরশু তো ‘বাংলাদেশি ফুটবলার’ হিসেবে অভিষেকই হয়ে গেল মাঠে। বাংলাদেশি হিসেবে লিগ ফুটবলে নিজের অভিষেকটা রাঙ্গালেন দারুণ এক গোলে। 

গোল পেয়ে নিশ্চয়ই আত্মবিশ্বাস বেড়েছে এলিটার, হয়তো প্রত্যাশা বেড়েছে দেশের ফুটবলপ্রেমীদেরও। অবশ্য তাঁকে নিয়ে আগে থেকেই আশা তৈরি হয়েছে, যখন থেকে হয়েছেন বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের একজন। আন্তর্জাতিক ম্যাচে একজন খাঁটি ‘স্ট্রাইকারের’ যে হাহাকার এই দেশে। সেই প্রত্যাশা কতটুকু মেটাতে পারবেন সদ্য ‘সাবেক’ হওয়া এই নাইজেরিয়ান? পারবেন কি বিপুল প্রত্যাশা পূরণ করতে? 

এলিটার উত্তর, ‘এখনো বাংলাদেশ দলে ডাক পাইনি। আগে আমাকে নিজেকে ক্লাবের হয়ে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। আর চাপ তো থাকবেই। কিন্তু একজন ফুটবলারকে কখনো প্রত্যাশার চাপে ভেঙে পড়তে নেই। যখন আপনি আপনার কাজটা ঠিকঠাক মতো করবেন, মানুষ আপনার হয়ে উল্লাস করবেই। বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে, কোটি মানুষের প্রত্যাশা পূরণে কোনো চাপ দেখছি না।’ 

হয়তো এখনো জাতীয় দলে ডাক পাননি। তবে জাতীয় দলের কোচ জেমি ডে ইঙ্গিত দিয়েছেন, তাঁর ভাবনায় ভালোভাবেই আছেন এলিটা। যদিও ইংলিশ কোচের চাওয়া, ক্লাবে নিজের জায়গা আগে পোক্ত করতে হবে এলিটাকে। প্রমাণ করতে হবে, বছরের বেশি সময় ধরে মাঠের বাইরে থাকলেও পায়ে মরচে পরেনি বসুন্ধরার এই স্ট্রাইকারের। 

বাংলাদেশের হয়ে খেলতে কোনো চাপ দেখছেন না এলিটাচ্যালেঞ্জটা নিচ্ছেন এলিটা। জাতীয় দলে ডাক পেলে নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার প্রত্যয় তাঁর, ‘আমি ফুটবলকে শুধু ফুটবলই মনে করি। যদি ডাক পাই তাহলে নিজের সেরাটাই দেব। সুতরাং এই মুহূর্তে কোন চাপ নেই। আমার মনে হয়, বাংলাদেশের হয়ে খেলার মতো উপযুক্ত পরিবেশ আমার জন্য তৈরি।’ 

এক দশক ধরেই খেলছেন বাংলাদেশে। এ দেশের ফুটবলারদেও ভেতর-বাহিরের খবর ভালোই জানা এলিটার। বাংলাদেশের ফুটবলারদের নিয়ে বসুন্ধরা কিংস ফরোয়ার্ডের মূল্যায়ন, ‘আমি বলব বিদেশি যারা খেলছে তাদের চেয়ে বাংলাদেশের ফুটবলাররা যথেষ্ট পরিশ্রমী। তাঁরা মোটেও অলস নয়। সমস্যা হচ্ছে, ক্লাবগুলোর আর্থিক দৈন্যতা। অনেক ক্লাব খেলোয়াড়দের বেতন তো দূরের কথা, খাবারের খরচটাও দিতে পারে না। উঠতি অনেক ফুটবলার নীরবে কাঁদে। যারা উঠে আসছে তাঁদেরকে তো ফিটনেসের ব্যবস্থা করে দিতে হবে, তাঁদের জন্য ভালো খাবার রান্না করতে হবে, থাকার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। আমি কৃতজ্ঞ বসুন্ধরা কিংস খেলোয়াড়দের এই যত্নটা নেয়। সবার এই সক্ষমতাটা নেই।’ 

বাংলাদেশের নাগরিক হতে গিয়ে মাতৃভূমি নাইজেরিয়াকে পেছনে ফেলে আসতে হয়েছে এলিটাকে। পরিবারের কাছ থেকে অবশ্য খুব বাধা পেতে হয়নি তাঁকে। দুই ভাই এর মধ্যে বাংলাদেশেই আছেন। নাইজেরিয়া থেকে মা জানিয়েছেন, তোমার মনের কথা আগে শোনো। বাংলাদেশেই তোমার সত্যিকারের পরিবার। স্ত্রী-সন্তানের ভালোবাসায় জন্মভূমিকে বিদায় বললেও নাইজরিয়ার মন কাঁদবে না? এলিটা বলছেন, ‘আমার কাছে বাংলাদেশ আর নাইজেরিয়ার মধ্যে এখন একটাই পার্থক্য, কাগজ। আমার শুধু পাসপোর্টই পরিবর্তন হয়েছে। নাইজেরিয়ায় আমার শেকড়। আমি যদি এখন নাইজেরিয়ায় যাই, কেউ আমাকে বের করে দেবে না। বলবে না তুমি আরেক দেশের। শুধু পার্থক্য একটাই, আমার হাতে থাকবে বাংলাদেশের পাসপোর্ট। আমি এখন বাংলাদেশি হতে পারি, কিন্তু আমার হৃদয়ে দুই দেশের স্থান সমানভাবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নিজের প্রস্রাব পান করে ‘আশিকি’ অভিনেত্রী অনু আগারওয়াল বললেন, ‘আহা অমৃত’

মে. জে. ফজলুরের সেভেন সিস্টার্স দখলের মন্তব্য সমর্থন করে না সরকার: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে স্টারলিংকের প্রস্তাবিত কার্যক্রমের বিস্তারিত চায় ভারত

নির্দেশনা মানেননি পাইলট, মদিনা-ঢাকা ফ্লাইটকে নামতে হলো সিলেটে

গায়ে কেরোসিন ঢেলে কলেজছাত্রীর আত্মহনন, পলাতক ইমাম গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত