Ajker Patrika

অতিকায় ম্যামথ ফিরিয়ে আনার মিশনে জন্ম নিল লোমশ ইঁদুর

ছবি: টাইম
ছবি: টাইম

কোনো প্রাণী বিলুপ্ত হয়ে গেলে সাধারণত তা চিরতরে হারিয়ে যায়। তবে প্রাগৈতিহাসিক লোমশ ম্যামথের ক্ষেত্রে এই নিয়ম কিছুটা ব্যতিক্রম হতে চলেছে। প্রায় ৪ হাজার বছর আগে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া বিশাল এই হাতির মতো প্রাণীর কিছু জিনগত বৈশিষ্ট্য এখন পরীক্ষাগারে তৈরি ছোট্ট ইঁদুরের শরীরে নতুন করে ফিরে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ডালাস-ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘কলোসাল ল্যাবরেটরিজ অ্যান্ড বায়োসায়েন্সেস’-এর বিজ্ঞানীরা এই সাফল্য অর্জন করেছেন।

মঙ্গলবার এই বিষয়ে এক প্রতিবেদনে টাইম বলেছে—সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা এমন কিছু ইঁদুরের জন্ম দিয়েছেন, যাদের শরীরের লোম ম্যামথের মতো লম্বা, ঢেউখেলানো এবং মোটা। এই ইঁদুরগুলোর শরীরে ম্যামথের মতো উচ্চ চর্বিযুক্ত বিপাক প্রক্রিয়াও সক্রিয় রয়েছে। এই প্রক্রিয়া একসময় বরফ যুগে ম্যামথকে বাঁচিয়ে রেখেছিল।

‘কলোসাল ল্যাবরেটরিজ অ্যান্ড বায়োসায়েন্সেস’-এর প্রধান নির্বাহী বেন লাম এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘লোমশ ইঁদুর আমাদের বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতি পুনরুদ্ধার মিশনে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। আমরা প্রমাণ করেছি, জটিল জিনগত পরিবর্তন সম্ভব, যা প্রকৃতিতে সৃষ্টি হতে লাখ লাখ বছর সময় লাগে।’

কলোসাল ল্যাবরেটরিজ ২০২১ সাল থেকে ম্যামথকে ফিরিয়ে আনার প্রকল্পে কাজ করছে। যেহেতু এই প্রাণী তুলনামূলকভাবে কাছাকাছি সময়ে বিলুপ্ত হয়েছে এবং এর দেহাবশেষ বরফাবৃত অঞ্চলে সংরক্ষিত আছে, তাই এর ডিএনএ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। গবেষকেরা প্রায় ৬০টি ম্যামথের জিনোম সংগ্রহ করেছেন।

পদ্ধতিগতভাবে, গবেষকেরা প্রথমে এশীয় হাতির সঙ্গে ম্যামথের পার্থক্য গড়ে দেওয়া জিনগুলো চিহ্নিত করছেন। এরপর সেই জিন এশীয় হাতির স্টেম সেলে যুক্ত করা হয়। পরবর্তী ধাপে, সংশোধিত স্টেম সেল থেকে একটি ভ্রূণ তৈরি করে সেটি একটি হাতির গর্ভে প্রতিস্থাপন করা হবে। তবে হাতির গর্ভধারণের সময়কাল প্রায় ২২ মাস হওয়ায় এবং এশীয় হাতি বিপন্ন প্রজাতি হওয়ায় এই গবেষণা কঠিন হয়ে পড়ছে।

এই সীমাবদ্ধতা কাটানোর জন্য গবেষকেরা ইঁদুরকে পরীক্ষার মডেল হিসেবে বেছে নিয়েছেন। কারণ ইঁদুরের জিনোম সহজে সম্পাদন করা যায় এবং এদের গর্ভধারণকাল মাত্র ২০ দিন। গবেষকেরা ম্যামথের লোমের ধরন নির্ধারণ করা সাতটি জিন, লোমের রং নির্ধারণ করা একটি জিন এবং উচ্চ চর্বি বিপাকের জন্য দায়িত্বশীল একটি জিন চিহ্নিত করেছেন। এরপর ‘ক্রিসপার’ নামক জিন সম্পাদনা প্রযুক্তির মাধ্যমে এই জিনগুলো ইঁদুরের স্টেম সেলে তাঁরা যুক্ত করেন।

গবেষণার অংশ হিসেবে পাঁচটি ধাপে মোট ২৫০টি ভ্রূণ তৈরি করা হয়। এর মধ্যে ৩৮টি ইঁদুর সফলভাবে জন্ম নিয়েছে। এদের প্রত্যেকের শরীরেই ম্যামথের মতো সোনালি উল্কা লোম এবং উচ্চ চর্বি বিপাক সক্রিয় ছিল। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি ম্যামথ পুনরুদ্ধারের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।

গবেষকেরা আরও জানিয়েছেন, একটি ম্যামথ কেবল লোম ও চর্বি বিপাক দ্বারা সংজ্ঞায়িত হয় না। বরফ যুগের পরিবেশে টিকে থাকার জন্য এর রক্ত সঞ্চালন ব্যবস্থা ও ঠান্ডা প্রতিরোধী শারীরিক বৈশিষ্ট্যও ছিল। ভবিষ্যতে এগুলো পুনরুদ্ধার করতে হবে। গবেষকদের মতে, এখন পর্যন্ত তাঁরা ৮৫টি গুরুত্বপূর্ণ জিন চিহ্নিত করেছেন, যা সম্পাদনা করা প্রয়োজন।

ম্যামথ পুনরুদ্ধার প্রকল্প ছাড়াও কলোসাল গবেষকেরা ডোডো ও তাসমানিয়ান টাইগার ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করছেন। গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বিজ্ঞান কর্মকর্তা বেথ শ্যাপিরো বলেছেন, ‘আমরা সংরক্ষণবিজ্ঞানের প্রচলিত পদ্ধতির বিকল্প হিসেবে নয়, বরং সম্পূরক একটি প্রযুক্তি হিসেবে জিন সম্পাদনকে দেখছি। এই প্রযুক্তি বিপন্ন প্রজাতির সংরক্ষণেও সাহায্য করতে পারে।’

পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর প্রায় ৩৫-৫০ শতাংশ প্রজাতি বিলুপ্ত হতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব ঠেকানোর পাশাপাশি বিলুপ্তপ্রায় ও বিপন্ন প্রজাতিগুলোকে রক্ষা করার জন্য এ ধরনের গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

নতুন মেট্রো নয়, রুট বাড়ানোর চিন্তা

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত