অনলাইন ডেস্ক
বিজ্ঞানের ভিত্তি বলা হয়ে থাকে গণিতকে। তবে মানুষ ঠিক কবে থেকে গণিত করতে শুরু করে, সেই প্রশ্নের উত্তর জটিল। কারণ, গাণিতিক চিন্তাধারা এবং আবিষ্কারগুলো দীর্ঘ সময়ে ধাপে ধাপে বিকশিত হয়েছে। কাউন্টিং বা গণনা ছিল গণিতের ভিত্তি। কারণ, মানুষ যদি প্রথমে গণনা করতে না শিখত, তবে তারা কখনোই জটিল ও বিমূর্ত গণিতে পারদর্শী হতে পারত না। হাজার হাজার বছর আগে থেকেই গণনা করছিল আমাদের প্রজাতি।
প্রাচীন গণনার প্রমাণ
গণনার শুরু বহু আগেই—সম্ভবত ২০ হাজার বছরেরও আগে। আফ্রিকার কঙ্গো অঞ্চলে পাওয়া ‘ইশাঙ্গো হাড়’ (Ishango Bone) সেই প্রমাণ বহন করে। ৪ ইঞ্চি লম্বা (১০ সেন্টিমিটার) এই হাড়টিতে (সম্ভবত বাবুন বা বন্য বিড়ালের) খোঁচানো ছিল অসংখ্য সমান্তরাল দাগ। গবেষকেরা মনে করেন, এটি ছিল একধরনের ট্যালি বা গণনার রেকর্ড। ১৯৭০ সালে প্রত্নতত্ত্ববিদ আলেকজান্ডার মার্শাক দাবি করেন, এটি সম্ভবত ছয় মাসের একটি চন্দ্র ক্যালেন্ডার।
আরও প্রাচীন এক নিদর্শন হলো ‘লেবোম্বো হাড়’ (Lebombo Bone), যা দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৯৭০-এর দশকে আবিষ্কৃত হয়। প্রায় ৪৩ হাজার বছর পুরোনো এই হাড়েও খোঁচানো ছিল অনেকগুলো দাগ। ধারণা করা হয়, এটি হয়তো ২৯ দিনের চন্দ্র মাস বা নারীর ঋতুচক্রের হিসাব রাখার জন্য ব্যবহৃত হতো।
ডেনমার্কের ইতিহাসবিদ জেন্স হেয়ারুপ বলেন, ‘গণনার সূচনালগ্ন আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব নয়, তবে সম্ভবত তা রাতের আকাশের পর্যবেক্ষণ থেকেই উদ্ভূত হয়েছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘তখন কোনো কৃত্রিম আলো ছিল না, কেবল গুহার আগুন। আর আলোক দূষণহীন সেই আকাশে চাঁদ-তারা দেখাটাই ছিল এক বিস্ময়।’
সুমেরীয়দের গণিতচর্চা
গণিতের পরবর্তী বড় ধাপ এসেছিল প্রাচীন সুমেরীয়দের হাত ধরে। তারা কিউনিফর্ম নামক প্রাচীনতম লেখার পদ্ধতি উদ্ভাবনের কৃতিত্বও পায়। বর্তমান ইরাকের দক্ষিণাংশে অবস্থিত সুমেরীয় নগররাষ্ট্রগুলো খ্রিষ্টপূর্ব ৪ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ সাল পর্যন্ত টিকে ছিল।
তারা কাদার ফলকে লিপিবদ্ধ করত সংখ্যার বিভিন্ন রূপ। তারা যে সংখ্যা পদ্ধতি (সেক্সাজেসিমেল) ব্যবহার করত, সেটিই আজকের যুগের ঘড়ি, ত্রিকোণমিতি ও নেভিগেশনের (পথ নির্দেশনা) ভিত্তি—অর্থাৎ ৬০ ভিত্তিক পদ্ধতি।
সুমেরীয়রা শুধু সাধারণ গণনায় থেমে থাকেনি। তারা অ্যারিথমেটিক (পাটিগণিত) এবং অ্যালজেব্রার (বীজগণিত) প্রাথমিক রূপও তৈরি করেছিল। তারা আয়তক্ষেত্র, ত্রিভুজ ও অনিয়মিত ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের সূত্রও জানত, যা ব্যবহার করে তারা জমি মাপত এবং সেচ ব্যবস্থার নকশা করত।
সেন্ট লরেন্স ইউনিভার্সিটির গণিতবিদ ডানকান মেলভিল বলেন, সুমেরীয়দের আমলাতন্ত্রের চাহিদা থেকেই এই ধরনের গাণিতিক পদ্ধতির আবিষ্কার হয়েছে।
তিনি বলেন, গুদামে যা কিছু ঢুকত বা বের হতো, শুধু তার সংখ্যা নয়—তার পরিমাণও জানতে হতো তাদের।
সুমীয়রা বিভিন্ন এককে হিসাব করত এবং ক্ষেত্রের মাপ থেকে ক্ষেত্রফল বের করার মতো কাজে জ্যামিতি ও গাণিতিক রূপান্তর ব্যবহার করত। এখান থেকেই পাটিগণিত ও গণনামূলক জ্যামিতির সূচনা বলে মনে করেন মেলভিল।
আধুনিক গণিতের উত্থান
সুমেরীয় এবং তাদের উত্তরসূরি ব্যাবিলনীয়দের মতোই, প্রাচীন মিসর, গ্রিস, ভারত ও চীনের সভ্যতাও গণিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। পরবর্তীকালে ইসলামি সভ্যতার সময় গণিতে নতুন ধারা সংযোজিত হয়।
আধুনিক ইউরোপে গণিতের বিকাশ ঘটে দুর্দান্ত গতিতে। বিশেষ করে ক্যালকুলাসের উদ্ভাবন এক নতুন যুগের সূচনা করে। ক্যালকুলাস হলো এমন একটি গাণিতিক পদ্ধতি, যার মাধ্যমে যেকোনো বক্ররেখার নিচের ক্ষেত্রফল নির্ণয় করা যায়—যা আধুনিক প্রকৌশল ও বিজ্ঞানের ভিত্তি।
ক্যালকুলাস আবিষ্কারের দাবিদার ছিলেন দুজন বিজ্ঞানী—ইংরেজ আইজ্যাক নিউটন এবং জার্মান গণিতজ্ঞ গটফ্রিড উইলহেম লাইবনিজ। নিউটন তাঁর ১৬৮৭ সালের গ্রন্থ প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকাতে ‘ফ্লাক্সনের পদ্ধতি’ নামে ক্যালকুলাসের কথা বলেন। অন্যদিকে, লাইবনিজ কিছু বছর আগেই ক্যালকুলাসের ডিফেরেন্সিয়াল (ব্যবকলান) ও ইন্টেগ্রাল-সংক্রান্ত (সমাকলন) পদ্ধতি প্রকাশ করেছিলেন। লাইবনিজের গাণিতিক সংকেত আজও ব্যবহৃত হয়।
দুই বিজ্ঞানীর মধ্যে এই আবিষ্কার নিয়ে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়। নিউটনের অনুসারীরা লাইবনিজের বিরুদ্ধে তাঁর অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি চুরি করার অভিযোগও তোলেন। তবে ইতিহাসবিদদের মতে, তাঁরা পরস্পর স্বাধীনভাবে ক্যালকুলাস আবিষ্কার করেছিলেন।
তথ্যসূত্র: লাইভ সায়েন্স
বিজ্ঞানের ভিত্তি বলা হয়ে থাকে গণিতকে। তবে মানুষ ঠিক কবে থেকে গণিত করতে শুরু করে, সেই প্রশ্নের উত্তর জটিল। কারণ, গাণিতিক চিন্তাধারা এবং আবিষ্কারগুলো দীর্ঘ সময়ে ধাপে ধাপে বিকশিত হয়েছে। কাউন্টিং বা গণনা ছিল গণিতের ভিত্তি। কারণ, মানুষ যদি প্রথমে গণনা করতে না শিখত, তবে তারা কখনোই জটিল ও বিমূর্ত গণিতে পারদর্শী হতে পারত না। হাজার হাজার বছর আগে থেকেই গণনা করছিল আমাদের প্রজাতি।
প্রাচীন গণনার প্রমাণ
গণনার শুরু বহু আগেই—সম্ভবত ২০ হাজার বছরেরও আগে। আফ্রিকার কঙ্গো অঞ্চলে পাওয়া ‘ইশাঙ্গো হাড়’ (Ishango Bone) সেই প্রমাণ বহন করে। ৪ ইঞ্চি লম্বা (১০ সেন্টিমিটার) এই হাড়টিতে (সম্ভবত বাবুন বা বন্য বিড়ালের) খোঁচানো ছিল অসংখ্য সমান্তরাল দাগ। গবেষকেরা মনে করেন, এটি ছিল একধরনের ট্যালি বা গণনার রেকর্ড। ১৯৭০ সালে প্রত্নতত্ত্ববিদ আলেকজান্ডার মার্শাক দাবি করেন, এটি সম্ভবত ছয় মাসের একটি চন্দ্র ক্যালেন্ডার।
আরও প্রাচীন এক নিদর্শন হলো ‘লেবোম্বো হাড়’ (Lebombo Bone), যা দক্ষিণ আফ্রিকায় ১৯৭০-এর দশকে আবিষ্কৃত হয়। প্রায় ৪৩ হাজার বছর পুরোনো এই হাড়েও খোঁচানো ছিল অনেকগুলো দাগ। ধারণা করা হয়, এটি হয়তো ২৯ দিনের চন্দ্র মাস বা নারীর ঋতুচক্রের হিসাব রাখার জন্য ব্যবহৃত হতো।
ডেনমার্কের ইতিহাসবিদ জেন্স হেয়ারুপ বলেন, ‘গণনার সূচনালগ্ন আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব নয়, তবে সম্ভবত তা রাতের আকাশের পর্যবেক্ষণ থেকেই উদ্ভূত হয়েছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘তখন কোনো কৃত্রিম আলো ছিল না, কেবল গুহার আগুন। আর আলোক দূষণহীন সেই আকাশে চাঁদ-তারা দেখাটাই ছিল এক বিস্ময়।’
সুমেরীয়দের গণিতচর্চা
গণিতের পরবর্তী বড় ধাপ এসেছিল প্রাচীন সুমেরীয়দের হাত ধরে। তারা কিউনিফর্ম নামক প্রাচীনতম লেখার পদ্ধতি উদ্ভাবনের কৃতিত্বও পায়। বর্তমান ইরাকের দক্ষিণাংশে অবস্থিত সুমেরীয় নগররাষ্ট্রগুলো খ্রিষ্টপূর্ব ৪ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ সাল পর্যন্ত টিকে ছিল।
তারা কাদার ফলকে লিপিবদ্ধ করত সংখ্যার বিভিন্ন রূপ। তারা যে সংখ্যা পদ্ধতি (সেক্সাজেসিমেল) ব্যবহার করত, সেটিই আজকের যুগের ঘড়ি, ত্রিকোণমিতি ও নেভিগেশনের (পথ নির্দেশনা) ভিত্তি—অর্থাৎ ৬০ ভিত্তিক পদ্ধতি।
সুমেরীয়রা শুধু সাধারণ গণনায় থেমে থাকেনি। তারা অ্যারিথমেটিক (পাটিগণিত) এবং অ্যালজেব্রার (বীজগণিত) প্রাথমিক রূপও তৈরি করেছিল। তারা আয়তক্ষেত্র, ত্রিভুজ ও অনিয়মিত ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল নির্ণয়ের সূত্রও জানত, যা ব্যবহার করে তারা জমি মাপত এবং সেচ ব্যবস্থার নকশা করত।
সেন্ট লরেন্স ইউনিভার্সিটির গণিতবিদ ডানকান মেলভিল বলেন, সুমেরীয়দের আমলাতন্ত্রের চাহিদা থেকেই এই ধরনের গাণিতিক পদ্ধতির আবিষ্কার হয়েছে।
তিনি বলেন, গুদামে যা কিছু ঢুকত বা বের হতো, শুধু তার সংখ্যা নয়—তার পরিমাণও জানতে হতো তাদের।
সুমীয়রা বিভিন্ন এককে হিসাব করত এবং ক্ষেত্রের মাপ থেকে ক্ষেত্রফল বের করার মতো কাজে জ্যামিতি ও গাণিতিক রূপান্তর ব্যবহার করত। এখান থেকেই পাটিগণিত ও গণনামূলক জ্যামিতির সূচনা বলে মনে করেন মেলভিল।
আধুনিক গণিতের উত্থান
সুমেরীয় এবং তাদের উত্তরসূরি ব্যাবিলনীয়দের মতোই, প্রাচীন মিসর, গ্রিস, ভারত ও চীনের সভ্যতাও গণিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। পরবর্তীকালে ইসলামি সভ্যতার সময় গণিতে নতুন ধারা সংযোজিত হয়।
আধুনিক ইউরোপে গণিতের বিকাশ ঘটে দুর্দান্ত গতিতে। বিশেষ করে ক্যালকুলাসের উদ্ভাবন এক নতুন যুগের সূচনা করে। ক্যালকুলাস হলো এমন একটি গাণিতিক পদ্ধতি, যার মাধ্যমে যেকোনো বক্ররেখার নিচের ক্ষেত্রফল নির্ণয় করা যায়—যা আধুনিক প্রকৌশল ও বিজ্ঞানের ভিত্তি।
ক্যালকুলাস আবিষ্কারের দাবিদার ছিলেন দুজন বিজ্ঞানী—ইংরেজ আইজ্যাক নিউটন এবং জার্মান গণিতজ্ঞ গটফ্রিড উইলহেম লাইবনিজ। নিউটন তাঁর ১৬৮৭ সালের গ্রন্থ প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকাতে ‘ফ্লাক্সনের পদ্ধতি’ নামে ক্যালকুলাসের কথা বলেন। অন্যদিকে, লাইবনিজ কিছু বছর আগেই ক্যালকুলাসের ডিফেরেন্সিয়াল (ব্যবকলান) ও ইন্টেগ্রাল-সংক্রান্ত (সমাকলন) পদ্ধতি প্রকাশ করেছিলেন। লাইবনিজের গাণিতিক সংকেত আজও ব্যবহৃত হয়।
দুই বিজ্ঞানীর মধ্যে এই আবিষ্কার নিয়ে তীব্র বিতর্ক সৃষ্টি হয়। নিউটনের অনুসারীরা লাইবনিজের বিরুদ্ধে তাঁর অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি চুরি করার অভিযোগও তোলেন। তবে ইতিহাসবিদদের মতে, তাঁরা পরস্পর স্বাধীনভাবে ক্যালকুলাস আবিষ্কার করেছিলেন।
তথ্যসূত্র: লাইভ সায়েন্স
চাঁদে যৌথভাবে একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়তে চুক্তি করেছে রাশিয়া ও চীন। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ব্যবহার করা হবে তাদের পরিকল্পিত ‘ইন্টারন্যাশনাল লুনার রিসার্চ স্টেশন’ বা আইএলআরএস চালাতে। দুই দেশের মধ্যে সম্প্রতি একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে—বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০৩৬ সালের মধ্যে
৫ ঘণ্টা আগেজীবন বা প্রাণ সত্যিই ‘জ্যোতির্ময়’ বা আলোক বিচ্ছুরণ করে। এমনটাই বলছেন কানাডার ক্যালগারি বিশ্ববিদ্যালয় ও ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিল অব কানাডার গবেষকেরা। ইঁদুর ও দুটি ভিন্ন প্রজাতির গাছের পাতা নিয়ে করা এক অসাধারণ পরীক্ষায় ‘বায়োফোটন’ নামক এক রহস্যময় ঘটনার সরাসরি প্রমাণ মিলেছে। দেখা গেছে, মৃত্যুর পর এই আল
২১ ঘণ্টা আগেপূর্বের ধারণার চেয়ে অনেক অনেক আগেই হয়তো মহাবিশ্ব ধ্বংস হবে। এমনটাই জানিয়েছেন নেদারল্যান্ডসের র্যাডবাউড ইউনিভার্সিটির একদল বিজ্ঞানী। সম্প্রতি প্রকাশের অপেক্ষায় থাকা জার্নাল অব কসমোলজি অ্যান্ড অ্যাস্ট্রোপারটিকাল ফিজিক্স–নামের গবেষণাপত্রে এই চমকপ্রদ তথ্য উঠে এসেছে।
১ দিন আগেপৃথিবীর কক্ষপথে টানা ৫৩ বছর আটকে থাকার পর অবশেষে ভূপাতিত হলো সোভিয়েত আমলের একটি ব্যর্থ মহাকাশযান। শনিবার সকাল ৯টা ২৪ মিনিটে (মস্কো সময়) এটি পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে এবং ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তার পশ্চিমে ভারত মহাসাগরে ভূপাতিত হয় বলে নিশ্চিত করেছে রাশিয়ার মহাকাশ সংস্থা রসকসমস...
৩ দিন আগে