Ajker Patrika

কেটি পেরিসহ মহাকাশ ঘুরে এলেন ৬ নারী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কেটি পেরির সঙ্গে ছিলেন লরেন সানচেজ, গেইল কিং, আইশা বোয়ে, আমান্ডা নুয়েন ও কেরিয়ান্ন ফ্লিন। ছবি: সংগৃহীত
কেটি পেরির সঙ্গে ছিলেন লরেন সানচেজ, গেইল কিং, আইশা বোয়ে, আমান্ডা নুয়েন ও কেরিয়ান্ন ফ্লিন। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্ববিখ্যাত পপ তারকা কেটি পেরিসহ আরও পাঁচজন নারী সফলভাবে মহাকাশ ভ্রমণ শেষে পৃথিবীতে নিরাপদে ফিরে এসেছেন। জেফ বেজোসের ব্লু অরিজিনের নিউ শেফার্ড রকেটের মাধ্যমে এই অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন তাঁরা।

এই ঐতিহাসিক ঘটনায় কেটি পেরির সঙ্গে ছিলেন বেজোসের বাগদত্তা লরেন সানচেজ, সিবিএস উপস্থাপক গেইল কিং, মহাকাশ উদ্যোক্তা আইশা বোয়ে, নাগরিক অধিকারকর্মী আমান্ডা নুয়েন ও চলচ্চিত্র প্রযোজক কেরিয়ান্ন ফ্লিন।

টেক্সাসের ভ্যান হর্ন এলাকা থেকে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৮টায় রকেটটি উৎক্ষেপণ করা হয়। মাত্র ১১ মিনিট স্থায়ী এই মহাকাশযাত্রায় তাঁরা পৃথিবীর পৃষ্ঠ থেকে ১০০ কিলোমিটার ওপরে উঠে গিয়েছিলেন, যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মহাকাশ সীমার ওপরে।

ক্যাপসুলটি প্যারাশুটের সাহায্যে সফলভাবে অবতরণ করে পৃথিবীতে ফিরে আসে, আর রকেট বুস্টারটিও টেক্সাসে ফিরে নিরাপদে অবতরণ করে।

অভিযান শেষে চোখে পানি নিয়ে সানচেজ বলেন, ‘পৃথিবীকে অন্য চোখে দেখলাম—আমি জানি না কীভাবে বলব। জানালার বাইরে তাকিয়ে আমরা চাঁদ দেখেছি। পৃথিবীকে মনে হচ্ছিল নিঃশব্দ, কিন্তু জীবন্ত।’

কেটি পেরি বলেন, ‘আমি এখন জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে সংযোগ বোধ করছি। ভালোবাসার সঙ্গেও।’ তিনি কন্যার নামে একটি ডেইজি ফুল আকাশের দিকে তুলে ধরেন।

গেইল কিং মাটিতে হাঁটু গেড়ে চুমু খান এবং বলেন, ‘আমি শুধু মাটির সঙ্গে একটি মুহূর্ত কাটাতে চাই, এই গ্রহের জন্য কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই।’

শেষে বেরিয়ে আসা ক্রু সদস্য কেরিয়ান ফ্লিন চিৎকার করে বলেন, ‘আমি মহাকাশে গিয়েছি!’

নিউ শেফার্ড রকেটটি সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিচালিত হয় এবং এতে কোনো পাইলটের প্রয়োজন হয় না। যাত্রার আগে যাত্রীদের দুই দিন ধরে শারীরিক সক্ষমতা, জরুরি অবস্থায় করণীয় এবং শূন্য মাধ্যাকর্ষণের অভিজ্ঞতার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

রকেট ও ক্যাপসুল দুটিই পুনর্ব্যবহারযোগ্য এবং পরিবেশবান্ধব দাবি করা হলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উচ্চ বায়ুমণ্ডলে পানির বাষ্প নির্গমনও পরিবেশের ক্ষতি করতে পারে।

ভূপৃষ্ঠ থেকে উৎক্ষেপণটি প্রত্যক্ষ করেছেন একঝাঁক তারকা।

দর্শক সারি থেকে ক্লোয়ি কারদাশিয়ান বলেন, ‘আমি ভাবতেই পারিনি এটি এত আবেগপূর্ণ হবে, ভাষায় বোঝানো কঠিন। আমার শরীরে যেন অ্যাড্রেনালিন ছুটছে, আর আমি শুধু দাঁড়িয়ে আছি।

তিনি আরও বলেন, ‘আজকের যুগে সব স্বপ্নই হাতের নাগালে। বড় স্বপ্ন দেখো, আকাশের তারা ছোঁয়ার ইচ্ছা রাখো—একদিন হয়তো তোমরাও তাদের মাঝে থাকতে পারবে।’

অপরা উইনফ্রে তাঁর বন্ধু গেইল কিংকে নিয়ে কথা বলেন এবং জানান, গেইল মূলত বিমানে ভ্রমণে বেশ ভয় পান।

তিনি বলেন, ‘আমি বলতে চাই, ওর ক্ষেত্রে ব্যাপারটা এমন—আকাশে সামান্য ঝাঁকুনি হলেই ও কারও কোলের ওপর উঠে বসে পড়ে। ওর বিমান ভ্রমণ নিয়ে সত্যিই বাস্তবিক ভয় কাজ করে। আর এই যাত্রা ওর ভয়কে জয় করার এক বিশাল সাফল্য।’

এর আগে, ১৯৬৩ সালে একক মিশনে মহাকাশে ৭০ ঘণ্টারও বেশি সময় কাটিয়েছিলেন সোভিয়েত নভোচারী ভ্যালেন্তিনা তেরেসকোভা। সে সময় ভস্তোক-৬ মহাকাশযানে এককভাবে মহাকাশে যাত্রা করে ইতিহাস গড়েছিলেন তিনি।

এরপর থেকে আর কোনো সর্বমহিলা মহাকাশযাত্রা হয়নি। তবে মহাকাশ গবেষণায় নারীরা নানাভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন।

সমালোচনার মুখে বিলাসবহুল মহাকাশ পর্যটন

বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার রাজনীতিবিষয়ক বিশেষ উপদেষ্টা ড. কাই-উভে শ্রোগল বলেন, ‘একজন সেলিব্রিটি মানবজাতির প্রতিনিধি নন—তারা নিজেদের কারণেই মহাকাশে যান।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ ধরনের মহাকাশযাত্রা নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ এবং রোমাঞ্চকর। তবে মহাকাশবিজ্ঞানীদের জন্য এগুলো মাঝে মাঝে হতাশার কারণও হতে পারে। আমরা মহাকাশ ভ্রমণকে দেখি বিজ্ঞান, জ্ঞান ও মানবতার কল্যাণে পরিচালিত একটি প্রয়াস হিসেবে।’

ড. কাই-উভে শ্রোগল এর মতে, সেলিব্রিটিরা মূলত আনন্দের জন্য যান, অথচ তারাই সাধারণ মহাকাশচারীদের তুলনায় অনেক বেশি প্রচার ও মনোযোগ পান।

যদিও অনেকেই এই যাত্রাকে অনুপ্রেরণাদায়ক মনে করছেন, সমালোচকেরা বলছেন এটি ধনী ও খ্যাতিমানদের এক বিলাসবহুল শখ, যার সুবিধা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। অভিনেত্রী অলিভিয়া মান বলেন, ‘অনেকে তো ডিমই কিনতে পারছেন না।’

এই মহাকাশযাত্রা সোশ্যাল মিডিয়ায়ও নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া তৈরি করে—কারও আগ্রহ ও উচ্ছ্বাস, আবার কারও বিরূপ সমালোচনা।

তবে গেইল কিং ও লরেন সানচেজ এই সমালোচনার জবাব দিয়েছেন। তাঁরা বলেন, এই মিশনের সঙ্গে হাজারো কর্মীর কঠোর পরিশ্রম জড়িত এবং এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করছে।

২০০০ সালে আমাজন প্রতিষ্ঠাতা বিলিয়নিয়ার জেফ বেজোস গড়ে তোলেন বেসরকারি মহাকাশ সংস্থা ব্লু অরিজিন।

এই প্রতিষ্ঠান মূলত মহাকাশ পর্যটনের ওপর কাজ করলেও ভবিষ্যতের জন্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেট ও চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণের প্রযুক্তিও উন্নয়ন করছে।

তাদের নিউ শেফার্ড রকেট সম্পূর্ণ পুনর্ব্যবহারযোগ্য, প্রতিবার উৎক্ষেপণের পর বুস্টারটি উল্লম্বভাবে অবতরণ করে, যা খরচ কমায়।

যাত্রীদের জন্য দুই দিনের প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক, যেখানে শারীরিক সক্ষমতা, জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং শূন্য মাধ্যাকর্ষণ পরিস্থিতি নিয়ে প্রস্তুতি দেওয়া হয়। সহায়তার জন্য থাকেন ‘ক্রু মেম্বার সেভেন’ নামে পরিচিত দুজন সদস্য।

রকেটের ওপরে থাকে ছয়জন ধারণক্ষম ক্যাপসুল, যা রকেট থেকে আলাদা হয়ে নিরাপদে ফিরে আসে। টিকিটের দাম পুরোপুরি প্রকাশ করা না হলেও একটি আসন সংরক্ষণে ১ লাখ ৫০ হাজার‍ ডলার জমা দিতে হয়।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ডিএনএর গঠন আবিষ্কারক ওয়াটসনের মৃত্যু, বর্ণবিদ্বেষ যাঁকে খ্যাতির শীর্ষ থেকে ডুবিয়েছে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ১১: ৪০
৯৭ বছর বয়সে মারা গেছেন জেমস ওয়াটসন। ছবি: সংগৃহীত
৯৭ বছর বয়সে মারা গেছেন জেমস ওয়াটসন। ছবি: সংগৃহীত

নোবেলজয়ী আমেরিকান বিজ্ঞানী জেমস ওয়াটসন মারা গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর। ডিএনএর (DNA) যুগান্তকারী ডাবল হেলিক্স কাঠামো আবিষ্কারকদের অন্যতম তিনি। তিনি কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরিতে দীর্ঘদিন গবেষণা করেছেন। ল্যাবরেটরি কর্তৃপক্ষ তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে বলে বিবিসির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

ওয়াটসন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী ফ্রান্সিস ক্রিকের সঙ্গে মিলে ১৯৫৩ সালে ডিএনএর কাঠামোগত রহস্য উন্মোচন করেন। এই আবিষ্কারকে ‘বিশ শতকের অন্যতম সেরা অগ্রগতি’ হিসেবে গণ্য করা হয়। এই আবিষ্কার আণবিক জীববিজ্ঞানের দ্রুত বিকাশের পথ প্রশস্ত করেছিল।

ডিএনএ ডাবল হেলিক্স হলো ডিএনএর দুটি সর্পিল বা প্যাঁচানো মইয়ের মতো কাঠামো, যা পরস্পরকে পেঁচিয়ে থাকে। এই কাঠামোতে দুটি শৃঙ্খল থাকে, সেটি আবার হাইড্রোজেন বন্ধনের মাধ্যমে সংযুক্ত। এই শৃঙ্খলগুলো অ্যাডেনিন (A) ও থাইমিন (T) এবং সাইটোসিন (C) ও গুয়ানিনের (G) মতো নাইট্রোজেনাস বেস জোড়া দিয়ে গঠিত।

জেমস ওয়াটসন, ফ্রান্সিস ক্রিক এবং মরিস উইলকিন্স—এই তিনজন বিজ্ঞানী ১৯৬২ সালে ডিএনএর ডাবল হেলিক্স কাঠামো আবিষ্কারের জন্য যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পান। এই আবিষ্কারের সময় তাঁরা বলেছিলেন, ‘আমরা জীবনের রহস্য আবিষ্কার করেছি।’

যদিও এই আবিষ্কারের পেছনে কিংস কলেজের গবেষক রোজালিন্ড ফ্রাঙ্কলিনের তোলা এক্স-রে চিত্র ব্যবহার করা হয়েছিল। সেটি তাঁর সম্মতি ছাড়াই ওয়াটসন ও ক্রিক ব্যবহার করেছিলেন। মরিস উইলকিন্স ফ্রাঙ্কলিনের সঙ্গে ডিএনএ অণুর কাঠামো নির্ণয়ের কাজ করেছিলেন।

এমন যুগান্তকারী বৈজ্ঞানিক সাফল্যের পরও পরবর্তীকালে বর্ণ ও বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের কারণে জেমস ওয়াটসনের খ্যাতি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২০০৭ সালে তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, তিনি ‘আফ্রিকার সম্ভাবনা নিয়ে গভীরভাবে হতাশ’। কারণ, ‘আমাদের সব সামাজিক নীতি এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি যে তাদের (আফ্রিকানদের) বুদ্ধিমত্তা আমাদের মতোই—যদিও সব পরীক্ষামূলক ফলাফলে তেমনটি দেখা যায় না।’ এই মন্তব্যের জেরে নিউইয়র্কের কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরির চ্যান্সেলরের পদ হারান তিনি।

২০১৯ সালে ওয়াটসন পুনরায় একই ধরনের মন্তব্য করেন, যেখানে তিনি আরও একবার বর্ণ ও বুদ্ধিমত্তার মধ্যে যোগসূত্র টেনেছিলেন। এর ফলস্বরূপ, ল্যাবরেটরি তাঁর চ্যান্সেলর ইমেরিটাসসহ সমস্ত সম্মানসূচক পদ কেড়ে নেয়। ল্যাবরেটরি সেই সময় এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল, ‘ড. ওয়াটসনের বক্তব্য নিন্দনীয় এবং বিজ্ঞানের দ্বারা অসমর্থিত।’

২০১৪ সালে বৈজ্ঞানিক মহলে একঘরে হওয়ার অনুভূতির কথা বলে ওয়াটসন তাঁর নোবেল পদকটি ৪৮ লাখ ডলারে (প্রায় ৩৬ কোটি টাকা) নিলামে বিক্রি করে দেন। যদিও পদকটি ক্রয় করা এক রুশ বিলিয়নিয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সেটি আবার তাঁকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।

১৯২৮ সালের এপ্রিলে শিকাগোতে জন্মগ্রহণ করেন জেমস ওয়াটসন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে তিনি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য স্কলারশিপ পান। ডিএনএ নিয়ে গবেষণার জন্য তিনি কেমব্রিজে যান, যেখানে ফ্রান্সিস ক্রিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। ডিএনএর গঠন আবিষ্কারের পর তিনি হার্ভার্ডে জীববিজ্ঞানের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৬৮ সালে কোল্ড স্প্রিং হারবার ল্যাবরেটরির দায়িত্ব নেন। এই প্রতিষ্ঠানকে বিশ্বের অন্যতম প্রধান বৈজ্ঞানিক গবেষণা কেন্দ্রে পরিণত করার কৃতিত্ব তাঁর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রথম কবে মানুষের বন্ধু হলো কুকুর—একটি খুলি ঘিরে নতুন বিতর্ক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ২১
বেলজিয়ামের জীবাশ্মবিজ্ঞানী মিৎসে গেরমোঁপ্রের হাতে সেই খুলি। ছবি: দ্য টাইমস
বেলজিয়ামের জীবাশ্মবিজ্ঞানী মিৎসে গেরমোঁপ্রের হাতে সেই খুলি। ছবি: দ্য টাইমস

বেলজিয়ামের জীবাশ্মবিজ্ঞানী মিৎসে গেরমোঁপ্রে দাবি করেছেন, তাঁর আবিষ্কার মানুষের সঙ্গে কুকুরের বন্ধুত্বের ইতিহাসকে নতুন করে লিখতে পারে। তাঁর মতে, কুকুরের গৃহপালিত হওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল আজ থেকে প্রায় ৩৫ হাজার বছর আগে, যা প্রচলিত ধারণার চেয়ে প্রায় ২০ হাজার বছর আগে!

শুক্রবার (৭ অক্টোবর) যুক্তরাজ্যভিত্তিক দ্য টাইমস জানিয়েছে, গেরমোঁপ্রে ছোটবেলা থেকেই বরফযুগের প্রাণীদের নিয়ে মুগ্ধ ছিলেন। ২০০৯ সালে তিনি বেলজিয়ান ইনস্টিটিউট অব ন্যাচারাল সায়েন্সেসে কাজ করার সময় গ্রামের একটি গুহা থেকে পাওয়া প্রাগৈতিহাসিক কিছু প্রাণীর হাড় পরীক্ষা করছিলেন।

এই কাজ করতে গিয়ে একটি মাথার খুলির দিকে মনোযোগী হন গেরমোঁপ্রে। দীর্ঘদিন ধরে খুলিটিকে বরফযুগের কোনো নেকড়ের বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গেরমোঁপ্রে বুঝতে পারেন—এটির নাক বা মুখের অংশটি ছোট ও চওড়া এবং এগুলো গৃহপালিত প্রাণীর বৈশিষ্ট্য।

পরে রেডিওকার্বন পরীক্ষায় দেখা যায়, ওই খুলির বয়স প্রায় ৩৫ হাজার বছর। আর বৈশিষ্টগুলোই বলে দিচ্ছে, এটি সেই সময়ের কোনো নেকড়ে নয়, বরং মানুষের সান্নিধ্যে থাকা প্রাচীন কোনো কুকুর হতে পারে।

গেরমোঁপ্রে বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম, কেউ বিশ্বাস করবে না।’ তবে তাঁর এই গবেষণা প্রকাশের পর থেকে বিজ্ঞানমহলে বিতর্ক শুরু হয়েছে। অনেকে মনে করেন, এটি আসলে অস্বাভাবিক আকৃতির একটি নেকড়ের মাথার খুলি। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, এটি সত্যিই গৃহপালিত কুকুরের সবচেয়ে পুরোনো নিদর্শন।

গেরমোঁপ্রে মনে করেন, এটি এমন এক যুগের চিহ্ন, যখন মানুষ প্রথমবারের মতো প্রাণীদের সঙ্গে সহাবস্থান শুরু করেছিল। তিনি বিশ্বাস করেন, কুকুর গৃহপালিত হওয়ার প্রক্রিয়া মানুষের উদ্যোগেই ঘটেছিল। প্রাচীন মানুষেরা নেকড়ে শাবক লালন করত, আক্রমণাত্মকদের বেছে হত্যা করত আর শান্তগুলোকে নিজেদের সঙ্গী বানাত। এভাবেই ধীরে ধীরে জন্ম নেয় প্যালিওলিথিক কুকুর।

বরফযুগের বেলজিয়াম ছিল খোলা তৃণভূমি—চারপাশে ম্যামথ, ঘোড়া, রেইনডিয়ার আর বন্য সিংহ-ভালুকের ভিড়। এমন বিপজ্জনক পৃথিবীতে কুকুর ছিল মানুষের সহচর, রক্ষক ও পথপ্রদর্শক।

গেরমোঁপ্রের মতে, এই প্রাচীন খুলি শুধু একটি প্রাণীর নয়, মানবসভ্যতার প্রথম বন্ধুত্বের প্রতীকও বটে—যখন মানুষ আর কুকুর একে অন্যের ভরসা হয়ে উঠেছিল বরফে ঢাকা নীরব পৃথিবীর প্রান্তরে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মহাকাশে বিশেষ চুলায় রান্নাবান্না, বারবিকিউ পার্টি করলেন চীনা নভোচারীরা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বারবিকিউ হাতে এক নভোচারী। ছবি: চায়না ডেইলি
বারবিকিউ হাতে এক নভোচারী। ছবি: চায়না ডেইলি

বারবিকিউ পার্টি চলছে এখন মহাকাশেও! তিয়ানগং স্পেস স্টেশনে চীনের ছয়জন নভোচারী এই আয়োজন করেছেন। চীনের অ্যাস্ট্রোনট সেন্টার (এসিসি) প্রকাশিত এক ভিডিওতে দেখা যায়, শেনঝো–২০ ও শেনঝো–২১ মিশনের নভোচারীরা একটি নতুন ধরনের ওভেন ব্যবহার করে রান্না করছেন, যা মহাকাশের মাইক্রোগ্র্যাভিটি পরিবেশে ব্যবহারের উপযোগী প্রথম ওভেন হিসেবে ইতিহাস গড়েছে।

স্পেস ডট কম-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই ওভেন ব্যবহার করে নভোচারীরা ২৮ মিনিটে রোস্টেড চিকেন উইংস রান্না করতে সক্ষম হন। মাধ্যাকর্ষণ না থাকায় তাপ সমভাবে ছড়ায় না বলে মহাকাশে রান্না করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

চীনা রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ওভেনটি এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যাতে এটি তিয়ানগং স্টেশনের বিদ্যুৎ সরবরাহে কোনো চাপ সৃষ্টি না করে এবং ধোঁয়াবিহীন ও স্থিতিশীল তাপমাত্রায় রান্না করা যায়।

ভিডিওতে দেখা যায়, নভোচারীরা বিশেষভাবে তৈরি একটি গ্রিল কেস-এ চিকেন উইংস নিয়ে স্পেস স্টেশনের দেয়ালের একটি ছোট কেবিন আকৃতির অংশে স্থাপন করছেন।

অ্যারোস্পেস নলেজ সাময়িকীর প্রধান সম্পাদক ওয়াং ইয়ানান চায়না ডেইলিকে বলেন, ‘পৃথিবীতে যেমন ওভেনের ভেতর বাতাস ঘুরে তাপ সঞ্চালন ঘটায়, মহাকাশে তা হয় না। কারণ সেখানে কনভেকশন নামের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া অনুপস্থিত। তাই প্রকৌশলীদের এমন একটি বিশেষ পদ্ধতি বের করতে হয়েছে যাতে খাবার সমভাবে গরম হয় এবং রান্নার ধোঁয়াও নিরাপদভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। নভোচারীদের সুরক্ষাও নিশ্চিত থাকে।’

ওভেনটির সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও রাখা হয়েছে ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ১৯০ ডিগ্রিতে। এর ফলে নভোচারীরা প্রসেসড ফুড গরম করার পাশাপাশি খাবার রান্নাও করতে পারছেন।

এর আগে ২০২০ সালে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশন (আইএসএস)-এ প্রথমবারের মতো মহাকাশে খাবার বেক করার একটি পরীক্ষা চালানো হয়েছিল। ন্যানোরেকস ও জিরো জি কিচেন যৌথভাবে তৈরি একটি প্রোটোটাইপ ওভেন ব্যবহার করে ওই পরীক্ষা চালায়। তখন পাঁচটি চকলেট চিপ কুকি বেক করা হয়। এটি ছিল মহাকাশে প্রথমবারের মতো কোনো খাবার বেক করার ঘটনা। পরবর্তীতে স্পেসএক্স ড্রাগন মহাকাশযানে করে এর মধ্যে তিনটি কুকি পৃথিবীতে ফেরত আনা হয়।

গত ৩১ অক্টোবর তিয়ানগং স্পেস স্টেশনে পৌঁছান শেনঝো-২১ মিশনের তিন নভোচারী। তাঁরা সেখানে প্রায় ছয় মাসের জন্য অবস্থান করবেন। শেনঝো-২০ দলের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন তাঁরা। শেনঝো-২০ এর সদস্যরা গত এপ্রিল থেকে স্টেশনে অবস্থান করছেন এবং আগামী ৫ নভেম্বর পৃথিবীতে ফিরে আসবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শনির চাঁদে ‘অসম্ভব’ ঘটনা: তেল-জল মিশে যায় সেখানে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১১: ৩৪
শনি গ্রহ ও পার্শ্ববর্তী উপগ্রহ। ছবি: ব্রিটানিকা
শনি গ্রহ ও পার্শ্ববর্তী উপগ্রহ। ছবি: ব্রিটানিকা

শনি গ্রহের বৃহত্তম এবং রহস্যময় উপগ্রহ টাইটান। চরম শীতল পরিবেশের এই উপগ্রহ রসায়ন শাস্ত্রের এক অতি মৌলিক নিয়মকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েছে। একটি নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব বস্তু সাধারণত একে অপরের সঙ্গে মেশে না, যেমন পৃথিবীতে তেল ও পানি—টাইটানের তীব্র ঠান্ডায় (মাইনাস ১৮৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস) দুটো একসঙ্গে মিলেমিশে থাকতে পারে।

সুইডেনের চালমার্স ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি এবং নাসার বিজ্ঞানীদের এই আবিষ্কার মহাকাশ গবেষণায় নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। গবেষণাটির নেতৃত্ব দিয়েছেন চালমার্সের রসায়ন ও রাসায়নিক প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মার্টিন রাম।

সাধারণত পৃথিবীতে পোলার এবং নন-পোলার অণুগুলো একে অপরের সঙ্গে মেশে না। এটি ‘লাইক ডিসলভস লাইক’ নীতি নামে পরিচিত। পানির মতো পোলার অণুগুলোতে আধানের বণ্টন অসম থাকে, আর তেলের মতো নন-পোলার অণুগুলোতে আধান সুষম থাকে। এই ভিন্নতার কারণেই এরা একে অপরকে বিকর্ষণ করে এবং আলাদা স্তর তৈরি করে।

পিএনএএস জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রটিতে দেখানো হয়েছে, টাইটানের চরম শীতল পরিস্থিতি এই নিয়মকে উল্টে দেয়। গবেষকেরা ল্যাবরেটরিতে টাইটানের পরিবেশ তৈরি করে পরীক্ষা করেন এবং দেখেন যে পোলার হাইড্রোজেন সায়ানাইড এবং নন-পোলার হাইড্রোকার্বন (যেমন মিথেন ও ইথেন) কঠিন রূপে একসঙ্গে ক্রিস্টালাইজড (স্ফটিক) হতে পারে।

অধ্যাপক রাম জানান, হাইড্রোজেন সায়ানাইড ক্রিস্টালগুলোর মধ্যে আন্তঃআণবিক শক্তি অস্বাভাবিকভাবে শক্তিশালী হয়ে ওঠে। এই শক্তির কারণেই নন-পোলার অণুগুলো ক্রিস্টাল কাঠামোর ভেতরে প্রবেশ করে একসঙ্গে থাকতে পারে। এই ঘটনা পৃথিবীতে প্রায় অসম্ভব।

অধ্যাপক রাম বলেন, ‘এই আবিষ্কার টাইটানের ভূতত্ত্ব এবং এর অদ্ভুত সব ল্যান্ডস্কেপ—যেমন হ্রদ, সমুদ্র এবং বালিয়াড়ি—বোঝার ক্ষেত্রে খুবই সহায়ক হবে।’

তিনি আরও মন্তব্য করেন, টাইটানের মতো চরম, প্রতিকূল পরিবেশে প্রাণের উৎপত্তির আগে রসায়ন কীভাবে কাজ করতে পারত, এই গবেষণা সেই বিষয়েও নতুন অন্তর্দৃষ্টি যোগ করবে। হাইড্রোজেন সায়ানাইডের এই ভূমিকা প্রাণ সৃষ্টির মৌলিক উপাদান, যেমন প্রোটিন তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড এবং জেনেটিক কোডের জন্য প্রয়োজনীয় নিউক্লিওবেস অজৈবিকভাবে তৈরি হওয়ার প্রক্রিয়া বুঝতে সাহায্য করতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত