Ajker Patrika

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ডাকসু নির্বাচন নিয়ে মুখোমুখি ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধীরা

  • সিন্ডিকেট সভায় ডাকসু নিয়ে আলোচনার বিরোধিতা ছাত্রদলের
  • ‘টালবাহানা’ করার অভিযোগ এনে মিছিল বৈষম্যবিরোধীদের
  • উপাচার্যের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় ছাত্রদলের ৪ নেতাকে শোকজ
অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭: ৩৯
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৯ সালে। এরপর ৫ বছর ধরে কোনো নির্বাচন নেই। জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরশাসনের পতনের পর ডাকসু নির্বাচনের দাবি উঠেছে শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে ছাত্রশিবির, বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোও দ্রুত সময়ের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন চায়। তবে বাদ সেধেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এ নিয়ে ছাত্রদলের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থানে চলে গেছেস বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

গত বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে সিন্ডিকেট সভায় ডাকসু নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত যেন না হয়, সেই দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডায় লিপ্ত হন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। পরে রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে ‘বাগ্‌বিতণ্ডা’ ও ‘ডাকসু নিয়ে টালবাহানা’ করার অভিযোগ এনে ক্যাম্পাসে মিছিল করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মী ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের, মাহিন সরকার, তাহমিদ আল মুদ্দাসসির চৌধুরী, অ্যাকটিভিস্ট মুসাদ্দিক আলী ইবনে মুহাম্মদ, এ বি জোবায়েরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। মিছিল শেষে তাঁরা ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ডাকসুর রোডম্যাপ ঘোষণা করার দাবি জানান।

তবে ছাত্রদলের একাধিক নেতা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শিবিরের নেতা-কর্মীরা শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করে ছাত্রদলের বিরুদ্ধে মব সৃষ্টি ও মিছিল করেছে।’ ছাত্রদলের নেতাদের অভিযোগ সত্য নয় বলে জানিয়েছেন শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি এস এম ফরহাদ। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাতে ছাত্রশিবিরের কোনো সাংগঠনিক মিছিল ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী ডাকসুর দাবিতে মিছিল করেছেন। সেটা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেছি।’ ফরহাদ আরও বলেন, ‘ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে ডাকসুর নীতিমালা সংস্কারসহ বিভিন্ন প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। অন্য ছাত্রসংগঠনগুলোও দিয়েছে। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে ফেব্রুয়ারির মধ্যে ডাকসু নির্বাচন দেওয়া হোক।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের প্ল্যাটফর্ম আছে, কর্মচারীদের আছে, কিন্তু শিক্ষার্থীদের দাবিদাওয়া নিয়ে কথা বলার মতো কোনো প্ল্যাটফর্ম নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী শিক্ষার্থীদের পাঁচটি হল; কিন্তু শিক্ষার্থী বেশি। তারা অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, সে জায়গায় শিক্ষার্থীদের প্রাণের দাবি, ডাকসু নির্বাচনের আয়োজন করা।’

আব্দুল কাদের আরও বলেন, এখন যখন ডাকসু নির্বাচন নিয়ে কথা বলা হচ্ছে, যারা শিক্ষার্থীদের দাসত্বের জীবনে ফিরিয়ে নিতে চায়, হলে হলে গণরুম-গেস্টরুম কালচার প্রতিষ্ঠা করতে চায়, রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়, তাদের ডাকসু নির্বাচনের খবরে গায়ে জ্বালা দিয়ে ওঠে। তারা শিক্ষককে হেনস্তা করে, প্রশাসনকে হেনস্তা করে। ডাকসু নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যে কাজ শুরু করেছে, তার সঙ্গে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার ক্যাম্পাসে মিছিলে যোগ দেওয়া তাহমিদ আল মুদ্দাসসির চৌধুরী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কের পাশাপাশি একতার বাংলাদেশ নামক একটি প্ল্যাটফর্মের সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে শিক্ষার্থীদের কোনো প্রতিনিধি নেই, সে হিসেবে আমাদের দাবি—প্রয়োজনীয় সংস্কার করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ডাকসু নির্বাচন দিয়ে দেওয়া। কারণ, শিক্ষার্থীরা এখন কোনো দাবি নিয়ে গেলে, সেটাকে মব বলা হচ্ছে। আমরা সেটা চাই না।’ তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমান সিন্ডিকেট বহাল রেখে কোনো নির্বাচন নয়, এ রকম কথা ছাত্রদলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। আসলে এ রকম বক্তব্যের কোনো ফিজিবিলিটি নেই। এখন আবার নির্বাচন করে সিন্ডিকেটে শিক্ষক প্রতিনিধি নেওয়া হলে, সেখানে আওয়ামীপন্থীরা জিতবে। আওয়ামী দোসরদের দূরে রেখে, শিক্ষার্থীদের দাবি অনুযায়ী দ্রুততম সময়ে ডাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করার দাবি করছি।’

অ্যাকটিভিস্ট মুসাদ্দিক আলী ইবনে মুহাম্মদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ডাকসু নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন ধরনের চক্রান্ত লক্ষ করা যাচ্ছে। ছাত্রদল প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে ডাকসু নির্বাচনের বিরোধিতা করে যাচ্ছে। কিন্তু শিক্ষার্থীদের দাবি, দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করার। ডাকসুর গঠনতন্ত্রের যে সংস্কার প্রয়োজন, তাও রোডম্যাপের মধ্যে চলে আসে সাধারণত। এ অবস্থায় ৭২ ঘণ্টার মধ্যে যদি ডাকসু নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা না হয়, তাহলে শিক্ষার্থীরা কঠোর কর্মসূচির দিকে যেতে বাধ্য হবে।

ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধন ও অগণতান্ত্রিক ধারাগুলো বাতিল করে দ্রুততম সময়ে ডাকসু নির্বাচনের দাবি জানায় বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলো। গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের সংগঠক সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সালমান সিদ্দিকী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে ডাকসু বন্ধ থাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদী আওয়ামী সরকারের পতনের পর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে গণতান্ত্রিক ভিতের ওপর দাঁড় করানোর আকাঙ্ক্ষা প্রবল হয়েছে। এর অংশ হিসেবেই অবিলম্বে ডাকসু নির্বাচন চালু করতে হবে। ডাকসু নির্বাচনের আগে ক্যাম্পাসে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে, যাতে সব ছাত্রসংগঠন সমানভাবে প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারে। নির্বাচনের আগে ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংশোধন করতে হবে এবং অগণতান্ত্রিক ধারাগুলো বাতিল করতে হবে।

ছাত্রদলের ৪ নেতাকে শোকজ

এদিকে গতকাল উপাচার্যের সঙ্গে বাল্‌বিতণ্ডায় লিপ্ত হওয়ার অভিযোগে ছাত্রদলের ৪ নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশ পাওয়া নেতারা হলেন হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল শাখার প্রচার সম্পাদক মনসুর আহমেদ রাফি, বিজয় একাত্তর হল শাখার দপ্তর সম্পাদক সাকিব বিশ্বাস, মাস্টারদা সূর্য সেন হল শাখার সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মো. আবিদুর রহমান মিশু, বিজয় একাত্তর হল ছাত্রদলের সহদপ্তর সম্পাদক সুলতান মো. সালমান সিদ্দিক।

এ ঘটনায় ছাত্রদলের বিরুদ্ধে একটি দল অপপ্রচার করে ইমেজ ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপনের। তিনি বলেন, ‘ছাত্রদল ডাকসু নির্বাচনকে নিজেদের প্রাণের দাবি হিসেবে বিবেচনা করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনায় বারবার ডাকসু সংস্কার ও নির্বাচনের দাবি জানিয়ে এসেছে। সে পরিপ্রেক্ষিতে ডাকসুর গঠনতন্ত্র সংস্কারের বিষয়ে ছাত্রসংগঠনগুলোসহ সব অংশীদারের প্রস্তাবনা আহ্বান করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ও তাদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে নিয়মিত আলোচনার মাধ্যমে ডাকসুর উপযুক্ত সংস্কার ও নিয়মিত নির্বাচন চালু করার জন্য সর্বোচ্চ সহযোগিতার মনোভাব পোষণ করছে। তারপরও ছাত্রদলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে ইমেজ ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

বগুড়ায় ছাত্রদল নেতার ওপর হামলা, পাঁচ নেতা-কর্মীকে শোকজ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত