বর্তমানে বাংলাদেশে চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি একটি সম্ভাবনাময় খাত। এই খাতে ‘পিকার্ড বাংলাদেশ’ তাদের দক্ষতা ও দায়বদ্ধতার মাধ্যমে বিদেশি বাজারে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করেছে। এই প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার, বিশিষ্ট উদ্যোক্তা সাইফুল ইসলাম একজন দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যবসায়ী এবং মানবিক মূল্যবোধের অধিকারী। দেশের শিল্প-বাণিজ্যের সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার বিভুরঞ্জন সরকার।
বিভুরঞ্জন সরকার
প্রথমেই জানতে চাই, আপনার এই চামড়াজাত পণ্যের খাতে আসার পেছনের গল্পটি কেমন ছিল?
আমি ১৯৮৮ সাল থেকে শিপিং ব্যবসা ও উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। যেকোনো পণ্য উৎপাদনে তার কাঁচামালের প্রাপ্যতা ও সহজলভ্যতা একটি বিশেষ ভূমিকা রাখে। চামড়াজাত পণ্যের বেলায় এটা বেশি প্রযোজ্য। বাংলাদেশের চামড়া উন্নতমানের ও সহজলভ্য, যা দেশের অর্থনৈতিক খাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই পরিপ্রেক্ষিতে চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনে আকৃষ্ট হই। শিপিং নিয়ে পড়াশোনা, পরবর্তী সময়ে জাহাজ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার ফলে জার্মানির হামবুর্গ শহরের একটি শিপিং পরিবারের সঙ্গে আমি ব্যবসা শুরু করি। সেই থেকে জার্মানিতে আমার নিয়মিত যাতায়াত এবং ব্যবসায়িক সম্পর্ক তৈরি হয়। ১৯৯০ সালে ৬০ শ্রমিক ও কর্মকর্তা নিয়ে ছোট একটি চামড়াজাত কারখানার যাত্রা শুরু করি।
‘পিকার্ড’ জার্মানিসহ ইউরোপের একটি স্বনামধন্য চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানি; যেটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২৮ সালে জার্মানির ওফেনবার্গ শহরে। তৎকালীন জিআইজেডের কনসালট্যান্ট ফ্রাঞ্জ বাউয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় হয় এবং তার পর থেকেই আমাদের যাত্রা শুরু। এর পর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে আমাদের জনবল প্রায় ২ হাজার এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বছরে ২০ মিলিয়ন ইউএস ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি করছি। পিকার্ড ব্র্যান্ড ছাড়াও আমরা অন্যান্য স্বনামধন্য ব্র্যান্ডের পণ্যও উৎপাদন করছি।
চামড়াজাত পণ্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী?
সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কাঁচামাল প্রক্রিয়াজাতকরণে মান নিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশ রক্ষা। বাংলাদেশের অনেক ট্যানারি এখনো পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করে না। ফলে আমরা শুধু বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা হারাচ্ছি না, বরং দেশের পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের আরও টেকসই ও পরিবেশ-সহনশীল উৎপাদনের দিকে যাওয়া দরকার। এটা করা গেলে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটা সুন্দর পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশ রেখে যেতে পারব।
শ্রমিকদের নিয়ে আপনার নীতিমালা কেমন?
আমার ব্যবসার মূল শক্তি হলেন শ্রমিকেরা। আমরা শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি, স্বাস্থ্যসেবা, মাতৃত্বকালীন ছুটি, তাঁদের সন্তানদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করেছি। আমি বিশ্বাস করি, সুস্থ শ্রমিক মানেই মানসম্পন্ন পণ্য পাওয়ার নিশ্চয়তা। আর শ্রমিক সন্তুষ্ট না হলে কখনোই ভালো মানের পণ্য উৎপাদন সম্ভব নয়। এ জন্য আমরা জার্মান সোশ্যাল অডিটেও নিয়মিত উত্তীর্ণ হই। আমরা ওমেন এমপাওয়ারমেন্ট এবং রিপ্রোডাকটিভ হেলথের ওপর বেশি গুরুত্ব দিই। মালিক-শ্রমিকের সুসম্পর্কই পণ্য উৎপাদনের মূলমন্ত্র এবং একে অপরের পরিপূরক। শ্রমিকের সন্তুষ্টি এবং তাঁদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুশিক্ষা, সুস্বাস্থ্যের নিশ্চয়তা না থাকলে এক দিকে যেমন উৎপাদনশীলতা বাড়তে পারে না, অন্য দিকে পণ্যের মান কখনোই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে না। এ ব্যাপারে মালিকদের আন্তরিক ও অঙ্গীকারবদ্ধ থাকতে হবে। এটা মালিকপক্ষের একটি পবিত্র দায়িত্ব হওয়া উচিত।
আপনার মতে দেশের শিল্প খাতের সম্ভাবনাগুলো কী?
বাংলাদেশের রয়েছে বিশাল জনশক্তি। এ ছাড়া চামড়া, তৈরি পোশাক, হস্তশিল্প, আইটি ও কৃষিভিত্তিক শিল্প খাত উৎপাদন ও রপ্তানিতে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের জনসংখ্যা প্রায় ৬৪ ভাগই কর্মক্ষম তরুণ-তরুণী, যারা কাজ করতে এবং শিখতে আগ্রহী। প্রতিবছর প্রায় ২৫ লাখ তরুণ-তরুণী শ্রমবাজারে আসছে। এটাই আমাদের মূল শক্তি। বর্তমানে সারা বিশ্ব চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। অটোমেশন অ্যান্ড আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকা ছাড়া আমরা বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে পারব না। ফলে আমরা পিছিয়ে পড়ব। আর এসবের মূলমন্ত্র হলো শিক্ষা। অর্থাৎ অ্যাডাপশন এবং তার যথার্থ ব্যবহার করতে হবে। আমাদের শ্রমিকদের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষার অভাব রয়েছে। এ জন্য সেক্টরভিত্তিক সরকারি উদ্যোগে প্রাথমিক শিক্ষা ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
আমরা যদি আজ থেকে এ ব্যাপারে যত্নশীল হই, তবে উৎপাদনশীলতার পাশাপাশি ঘন ঘন শ্রমিক অসন্তোষ থেকেও পরিত্রাণ পেতে পারি। অর্থাৎ প্রাথমিক শিক্ষা শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার এবং অযৌক্তিক ও অপ্রয়োজনীয় শ্রমিক আন্দোলন, ধ্বংসাত্মক আন্দোলন থেকে বিরত রাখতে পারে। উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারলে আমরা আগামী দিনে আরও বেশি প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসার দিকে অগ্রসর হতে পারব।
এ ক্ষেত্রে সমস্যাগুলো কোথায়?
বড় সমস্যা তিনটি—দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং অবকাঠামোগত দুর্বলতা। আপনি যদি একটি কারখানা স্থাপন করতে চান, তাহলে নানা দপ্তরে অনুমোদন নিতে নিতে আপনি ক্লান্ত হয়ে যাবেন। এরপর আসে বিদ্যুৎ ও গ্যাস, যা শিল্পের জন্য অত্যাবশ্যক উপাদান। আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে, নিয়মনীতি পরিবর্তনের অনিশ্চয়তা। হঠাৎ হঠাৎ নিয়ম বদলে যায়, অথচ ব্যবসায়ীরা পাঁচ বছরের জন্য বিনিয়োগ পরিকল্পনা করে থাকেন। এতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও দ্বিধায় পড়েন। এ ধরনের ব্যবসায় পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে কাজ করতে হবে। আর বেশ কিছু অপ্রয়োজনীয় লাইসেন্স বাতিল করতে হবে। এ ছাড়া লাইসেন্সের মেয়াদ ৫ থেকে ১০ বছর বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
আপনি বললেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা দ্বিধায় থাকেন। তাঁদের আকৃষ্ট করার জন্য আমরা কী করতে পারি?
প্রথমেই দরকার দীর্ঘমেয়াদি পলিসি গ্রহণ, যার মধ্যে ন্যূনতম রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, একটি কার্যকর ওয়ান-স্টপ সার্ভিস সেন্টার দরকার, যেখানে বিদেশি বা দেশি উদ্যোক্তা একটি জানালা থেকেই সব অনুমোদন পাবে। তৃতীয়ত, করব্যবস্থায় স্বচ্ছতা দরকার। বিদেশিরা চায় স্বচ্ছ ব্যবসায়িক পরিবেশ। সেটা দিতে পারলে বিনিয়োগ এমনিতেই আসবে।
অনেকেই বলেন উদ্যোক্তা হতে গেলে বড় পুঁজি দরকার। আপনি কী বলবেন?
অবশ্যই। তবে তার চেয়েও বেশি দরকার মানসিক শক্তির। এরপর সাহস ছাড়াও দরকার বাস্তববাদী স্বপ্ন দেখা এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপদান করা। সমষ্টিগতভাবে উক্ত বিষয়গুলোকে ভিত্তি করতে পারলে, আমি মনে করি না আর্থিক পুঁজি কোনো অন্তরায় হতে পারে।
আপনি একজন সফল উদ্যোক্তা। নতুনদের জন্য কী বার্তা দেবেন?
নতুনদের উদ্দেশে আমার বার্তা হলো—সৎ থাকুন, ধৈর্য ধরুন এবং বাস্তব স্বপ্ন দেখুন। আপনি যদি আজ ব্যর্থ হন, তাতে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। বারবার চেষ্টা করুন। আর এককভাবে সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করে ভালো একটা টিম গঠন করুন আগে। শিখতে থাকুন, পরিবর্তন মেনে নিন। আর হ্যাঁ, প্রযুক্তি ও ডিজিটাল মার্কেটিং শেখা খুব জরুরি। নতুনদের জন্য এখন সুযোগ অনেক বেশি। শুধু ধৈর্য দরকার। এ শিল্পের মূলমন্ত্র ‘শ্রমিক ও মালিক একে অপরের পরিপূরক’। মালিক-শ্রমিক একটি পরিবার—এই মন্ত্র আপনাকে লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহায়তা করবে।
আপনি কি মনে করেন নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ সুযোগ থাকা উচিত?
অবশ্যই। অনেক নারী উদ্যোক্তা চমৎকার কাজ করছেন, কিন্তু সামাজিক প্রতিবন্ধকতা, নিরাপত্তা, পারিবারিক চাপ সব মিলিয়ে তাঁরা অনেক সময় এগোতে পারছেন না। সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যদি যৌথভাবে মেন্টরশিপ, সাপোর্ট ও ফান্ডিং করে, তাহলে নারী উদ্যোক্তারাই ভবিষ্যতে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন ঘটাতে পারবে। এ ব্যাপারে আমাদের পুরুষদের সহনশীলতার পরিচয় দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। বিশ্বের কোনো জাতিই নারী-পুরুষ একসঙ্গে কাজ করার নিশ্চয়তা না থাকলে, সার্বিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতির দিকে অগ্রসর হতে পারবে না!
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
প্রথমেই জানতে চাই, আপনার এই চামড়াজাত পণ্যের খাতে আসার পেছনের গল্পটি কেমন ছিল?
আমি ১৯৮৮ সাল থেকে শিপিং ব্যবসা ও উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। যেকোনো পণ্য উৎপাদনে তার কাঁচামালের প্রাপ্যতা ও সহজলভ্যতা একটি বিশেষ ভূমিকা রাখে। চামড়াজাত পণ্যের বেলায় এটা বেশি প্রযোজ্য। বাংলাদেশের চামড়া উন্নতমানের ও সহজলভ্য, যা দেশের অর্থনৈতিক খাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এই পরিপ্রেক্ষিতে চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনে আকৃষ্ট হই। শিপিং নিয়ে পড়াশোনা, পরবর্তী সময়ে জাহাজ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত থাকার ফলে জার্মানির হামবুর্গ শহরের একটি শিপিং পরিবারের সঙ্গে আমি ব্যবসা শুরু করি। সেই থেকে জার্মানিতে আমার নিয়মিত যাতায়াত এবং ব্যবসায়িক সম্পর্ক তৈরি হয়। ১৯৯০ সালে ৬০ শ্রমিক ও কর্মকর্তা নিয়ে ছোট একটি চামড়াজাত কারখানার যাত্রা শুরু করি।
‘পিকার্ড’ জার্মানিসহ ইউরোপের একটি স্বনামধন্য চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানি; যেটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯২৮ সালে জার্মানির ওফেনবার্গ শহরে। তৎকালীন জিআইজেডের কনসালট্যান্ট ফ্রাঞ্জ বাউয়ের সঙ্গে আমার পরিচয় হয় এবং তার পর থেকেই আমাদের যাত্রা শুরু। এর পর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে আমাদের জনবল প্রায় ২ হাজার এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বছরে ২০ মিলিয়ন ইউএস ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি করছি। পিকার্ড ব্র্যান্ড ছাড়াও আমরা অন্যান্য স্বনামধন্য ব্র্যান্ডের পণ্যও উৎপাদন করছি।
চামড়াজাত পণ্যের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী?
সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো কাঁচামাল প্রক্রিয়াজাতকরণে মান নিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশ রক্ষা। বাংলাদেশের অনেক ট্যানারি এখনো পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করে না। ফলে আমরা শুধু বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা হারাচ্ছি না, বরং দেশের পরিবেশও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমাদের আরও টেকসই ও পরিবেশ-সহনশীল উৎপাদনের দিকে যাওয়া দরকার। এটা করা গেলে আমরা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটা সুন্দর পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশ রেখে যেতে পারব।
শ্রমিকদের নিয়ে আপনার নীতিমালা কেমন?
আমার ব্যবসার মূল শক্তি হলেন শ্রমিকেরা। আমরা শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি, স্বাস্থ্যসেবা, মাতৃত্বকালীন ছুটি, তাঁদের সন্তানদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করেছি। আমি বিশ্বাস করি, সুস্থ শ্রমিক মানেই মানসম্পন্ন পণ্য পাওয়ার নিশ্চয়তা। আর শ্রমিক সন্তুষ্ট না হলে কখনোই ভালো মানের পণ্য উৎপাদন সম্ভব নয়। এ জন্য আমরা জার্মান সোশ্যাল অডিটেও নিয়মিত উত্তীর্ণ হই। আমরা ওমেন এমপাওয়ারমেন্ট এবং রিপ্রোডাকটিভ হেলথের ওপর বেশি গুরুত্ব দিই। মালিক-শ্রমিকের সুসম্পর্কই পণ্য উৎপাদনের মূলমন্ত্র এবং একে অপরের পরিপূরক। শ্রমিকের সন্তুষ্টি এবং তাঁদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুশিক্ষা, সুস্বাস্থ্যের নিশ্চয়তা না থাকলে এক দিকে যেমন উৎপাদনশীলতা বাড়তে পারে না, অন্য দিকে পণ্যের মান কখনোই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে না। এ ব্যাপারে মালিকদের আন্তরিক ও অঙ্গীকারবদ্ধ থাকতে হবে। এটা মালিকপক্ষের একটি পবিত্র দায়িত্ব হওয়া উচিত।
আপনার মতে দেশের শিল্প খাতের সম্ভাবনাগুলো কী?
বাংলাদেশের রয়েছে বিশাল জনশক্তি। এ ছাড়া চামড়া, তৈরি পোশাক, হস্তশিল্প, আইটি ও কৃষিভিত্তিক শিল্প খাত উৎপাদন ও রপ্তানিতে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। আমাদের জনসংখ্যা প্রায় ৬৪ ভাগই কর্মক্ষম তরুণ-তরুণী, যারা কাজ করতে এবং শিখতে আগ্রহী। প্রতিবছর প্রায় ২৫ লাখ তরুণ-তরুণী শ্রমবাজারে আসছে। এটাই আমাদের মূল শক্তি। বর্তমানে সারা বিশ্ব চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। অটোমেশন অ্যান্ড আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের (এআই) ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকা ছাড়া আমরা বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে পারব না। ফলে আমরা পিছিয়ে পড়ব। আর এসবের মূলমন্ত্র হলো শিক্ষা। অর্থাৎ অ্যাডাপশন এবং তার যথার্থ ব্যবহার করতে হবে। আমাদের শ্রমিকদের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষার অভাব রয়েছে। এ জন্য সেক্টরভিত্তিক সরকারি উদ্যোগে প্রাথমিক শিক্ষা ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
আমরা যদি আজ থেকে এ ব্যাপারে যত্নশীল হই, তবে উৎপাদনশীলতার পাশাপাশি ঘন ঘন শ্রমিক অসন্তোষ থেকেও পরিত্রাণ পেতে পারি। অর্থাৎ প্রাথমিক শিক্ষা শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার এবং অযৌক্তিক ও অপ্রয়োজনীয় শ্রমিক আন্দোলন, ধ্বংসাত্মক আন্দোলন থেকে বিরত রাখতে পারে। উৎপাদনশীলতা বাড়াতে পারলে আমরা আগামী দিনে আরও বেশি প্রতিযোগিতামূলক ব্যবসার দিকে অগ্রসর হতে পারব।
এ ক্ষেত্রে সমস্যাগুলো কোথায়?
বড় সমস্যা তিনটি—দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এবং অবকাঠামোগত দুর্বলতা। আপনি যদি একটি কারখানা স্থাপন করতে চান, তাহলে নানা দপ্তরে অনুমোদন নিতে নিতে আপনি ক্লান্ত হয়ে যাবেন। এরপর আসে বিদ্যুৎ ও গ্যাস, যা শিল্পের জন্য অত্যাবশ্যক উপাদান। আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে, নিয়মনীতি পরিবর্তনের অনিশ্চয়তা। হঠাৎ হঠাৎ নিয়ম বদলে যায়, অথচ ব্যবসায়ীরা পাঁচ বছরের জন্য বিনিয়োগ পরিকল্পনা করে থাকেন। এতে বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও দ্বিধায় পড়েন। এ ধরনের ব্যবসায় পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে কাজ করতে হবে। আর বেশ কিছু অপ্রয়োজনীয় লাইসেন্স বাতিল করতে হবে। এ ছাড়া লাইসেন্সের মেয়াদ ৫ থেকে ১০ বছর বৃদ্ধি করা যেতে পারে।
আপনি বললেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা দ্বিধায় থাকেন। তাঁদের আকৃষ্ট করার জন্য আমরা কী করতে পারি?
প্রথমেই দরকার দীর্ঘমেয়াদি পলিসি গ্রহণ, যার মধ্যে ন্যূনতম রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকতে হবে। দ্বিতীয়ত, একটি কার্যকর ওয়ান-স্টপ সার্ভিস সেন্টার দরকার, যেখানে বিদেশি বা দেশি উদ্যোক্তা একটি জানালা থেকেই সব অনুমোদন পাবে। তৃতীয়ত, করব্যবস্থায় স্বচ্ছতা দরকার। বিদেশিরা চায় স্বচ্ছ ব্যবসায়িক পরিবেশ। সেটা দিতে পারলে বিনিয়োগ এমনিতেই আসবে।
অনেকেই বলেন উদ্যোক্তা হতে গেলে বড় পুঁজি দরকার। আপনি কী বলবেন?
অবশ্যই। তবে তার চেয়েও বেশি দরকার মানসিক শক্তির। এরপর সাহস ছাড়াও দরকার বাস্তববাদী স্বপ্ন দেখা এবং পরিশ্রমের মাধ্যমে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপদান করা। সমষ্টিগতভাবে উক্ত বিষয়গুলোকে ভিত্তি করতে পারলে, আমি মনে করি না আর্থিক পুঁজি কোনো অন্তরায় হতে পারে।
আপনি একজন সফল উদ্যোক্তা। নতুনদের জন্য কী বার্তা দেবেন?
নতুনদের উদ্দেশে আমার বার্তা হলো—সৎ থাকুন, ধৈর্য ধরুন এবং বাস্তব স্বপ্ন দেখুন। আপনি যদি আজ ব্যর্থ হন, তাতে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। বারবার চেষ্টা করুন। আর এককভাবে সব সিদ্ধান্ত গ্রহণ না করে ভালো একটা টিম গঠন করুন আগে। শিখতে থাকুন, পরিবর্তন মেনে নিন। আর হ্যাঁ, প্রযুক্তি ও ডিজিটাল মার্কেটিং শেখা খুব জরুরি। নতুনদের জন্য এখন সুযোগ অনেক বেশি। শুধু ধৈর্য দরকার। এ শিল্পের মূলমন্ত্র ‘শ্রমিক ও মালিক একে অপরের পরিপূরক’। মালিক-শ্রমিক একটি পরিবার—এই মন্ত্র আপনাকে লক্ষ্যে পৌঁছাতে সহায়তা করবে।
আপনি কি মনে করেন নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষ সুযোগ থাকা উচিত?
অবশ্যই। অনেক নারী উদ্যোক্তা চমৎকার কাজ করছেন, কিন্তু সামাজিক প্রতিবন্ধকতা, নিরাপত্তা, পারিবারিক চাপ সব মিলিয়ে তাঁরা অনেক সময় এগোতে পারছেন না। সরকার ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান যদি যৌথভাবে মেন্টরশিপ, সাপোর্ট ও ফান্ডিং করে, তাহলে নারী উদ্যোক্তারাই ভবিষ্যতে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন ঘটাতে পারবে। এ ব্যাপারে আমাদের পুরুষদের সহনশীলতার পরিচয় দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। বিশ্বের কোনো জাতিই নারী-পুরুষ একসঙ্গে কাজ করার নিশ্চয়তা না থাকলে, সার্বিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নতির দিকে অগ্রসর হতে পারবে না!
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের রাজনীতিতে পালাবদলের হাওয়া বইছে। রাজপথের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় এবার রাজনৈতিক অঙ্গনেও এসেছে জোয়ার। একের পর এক নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটছে। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, সর্বশেষ নিবন্ধনের জন্য ৬৫টি নতুন রাজনৈতিক দল আবেদন করেছে, যার অনেকগুলোই গত ৯ মাসের...
১৭ ঘণ্টা আগেবৌদ্ধধর্মাবলম্বীদের কাছে বুদ্ধপূর্ণিমার তাৎপর্য অত্যধিক। বৈশাখী পূর্ণিমাকে বুদ্ধপূর্ণিমা বলা হয়। মহাকারুণিক তথাগত গৌতম বুদ্ধের জীবনের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বৈশাখী পূর্ণিমা দিনে হয়েছিল...
১ দিন আগেরনো ভাইকে আমরা শেষ বিদায় জানালাম আজ এক বছর হলো। সেই ষাটের দশক থেকে হায়দার আকবর খান রনো গণতান্ত্রিক সংগ্রামে, স্বাধীনতার সংগ্রামে, মানবমুক্তির সংগ্রামে অক্লান্তভাবে ভূমিকা রেখে গেছেন, কখনো রাজপথে আবার কখনো লেখনীর মাধ্যমে।
১ দিন আগেপ্রকল্প মানে উন্নয়ন, নাকি দুর্নীতি-অনিয়ম—এই প্রশ্ন তোলা বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে মোটেও অস্বাভাবিক নয়। উন্নয়ন প্রকল্পের নামে লাগামহীন লুটপাট যেন এখন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাজার কোটি টাকার প্রকল্প থেকে শতকোটি ‘নেই’ হওয়া কোনো ব্যাপারই না!
১ দিন আগে