রাজীব কুমার সাহা
বাংলা ভাষায় একটি অতিপরিচিত শব্দ হলো ষড়যন্ত্র। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই এর শিকার হয়েছি। কখনো কখনো ষড়যন্ত্রে লিপ্তও হয়েছি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ষড়যন্ত্র কি আদৌ কোনো যন্ত্র? এ যন্ত্র কীভাবে কাজ করে? আমরা প্রায় সবাই জানি ষড়্ঋতু মানে ছয় ঋতু। কেননা, বলা হয়ে থাকে, ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। তো সেই নিরিখে যদি ‘ষড়যন্ত্র’ শব্দটি বিশ্লেষণ করি, সে হিসেবে তো ষড়যন্ত্র মানে ছয়টি যন্ত্র হওয়া উচিত। তাই নয় কি? যদি উত্তর ‘হ্যাঁ’ হয়, তাহলে মনে প্রশ্ন আসে যে ষড়যন্ত্রের ছয়টি যন্ত্রের নাম কী? আবার মনে হয়, আসলেই কি ষড়যন্ত্র মানে ছয়টি যন্ত্রের সমাহার? এবার তবে চলুন ষড়যন্ত্রের যন্ত্রপাতি খুলে এর খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণ করি।
ষড়যন্ত্র বিশেষ্য পদ। সাধারণভাবে আমরা ষড়যন্ত্র বলতে বুঝি অপরের ক্ষতি করার নিমিত্তে গোপন চক্রান্ত, অন্যায় করে ফাঁদে ফেলার জন্য প্রতিকূল ব্যক্তিবর্গের কুমন্ত্রণা বা কৌশলজাল, কূটকৌশল; দেহমধ্যস্থ ষট্চক্র প্রভৃতি। এবার আসি ষড়যন্ত্র শব্দের ব্যুৎপত্তি প্রসঙ্গে। ষড়্ঋতু শব্দের ‘ষড়্’ এসেছে সংস্কৃত ‘ষট্’= ৬ থেকে; অন্যদিকে ‘ষড়যন্ত্র’ শব্দের ‘ষড়’ এসেছে আরবি ‘শলাহ্’ থেকে। সেই সঙ্গে দুটি শব্দের উচ্চারণগত পার্থক্যও মনে রাখতে হবে। যেমন—ষড়ঋতুর ষড় শব্দের উচ্চারণ হবে [/ষড়্/] আর ষড়যন্ত্রের ষড় শব্দের উচ্চারণ হবে [/শড়ো/]। সে হিসেবে ষড়যন্ত্র/শড়োযন্ত্রো/[আ. শলাহ্+স. যন্ত্র]।
মূলত তান্ত্রিকদের তন্ত্রসাধনায় ব্যবহৃত ছয় রকম আভিচারিক প্রক্রিয়া থেকে ‘ষড়যন্ত্র’ শব্দের উৎপত্তি। আর এই আভিচারিক প্রক্রিয়া মানে হলো নিজের মঙ্গল কিন্তু অন্যের ক্ষতি সাধনের জন্য করা একধরনের তান্ত্রিক প্রক্রিয়া। আর তাই ষড়যন্ত্র শব্দের প্রকৃত অর্থ হলো ছয়টি বন্ধন। আর এ ছয়টি বন্ধনে যাকে বাঁধা যাবে, তার সর্বনাশ অনিবার্য। প্রকৃতপক্ষে এই ছয়টি বন্ধনের সাধনাই হলো ষড়যন্ত্র। এ ছয়টি বন্ধন হলো: ১. মারণ বা প্রাণ হরণ করা; ২. মোহন বা চিত্তবিভ্রম ঘটানো; ৩. স্তম্ভন বা যাবতীয় প্রবৃত্তি নষ্ট করা; ৪. বিদ্বেষণ বা অন্তরে বিদ্বেষ সৃষ্টি করা; ৫. উচ্চাটন বা স্বদেশবিভ্রম ঘটানো এবং ৬. বশীকরণ বা ইচ্ছাশক্তি রোধ করে বশে আনা।
আধুনিক সময়ে পৃথিবীজুড়ে অনেক রকমের ষড়যন্ত্রতত্ত্ব চালু রয়েছে। যদিও ষড়যন্ত্রতত্ত্ব কেন মানুষ বিশ্বাস করে তার অনেক কারণ রয়েছে। ষড়যন্ত্রতত্ত্ব তৈরি হয় একধরনের শূন্যতার ওপর আশ্রয় করে। যখন কিনা কোনো একটা বিষয় ব্যাখ্যা করা যায় না বা কোনো বিষয় সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কিছুই জানা যায় না। লন্ডনের ওপেন ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানের প্রভাষক ড. জোভান বায়ফোর্ড বলেন, ‘কোনো ষড়যন্ত্রতত্ত্বের বৈশিষ্ট্য হলো এর পেছনে একটি হীন বা শয়তানি পরিকল্পনা থাকা। এই পরিকল্পনা করা হবে খুবই কঠোর গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে। এর পেছনে থাকবে ক্ষমতাবান কিছু ব্যক্তি বা একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী।’ তাঁর মতে, প্রতিটি ষড়যন্ত্রতত্ত্বে তিনটি প্রধান উপাদান থাকে। ষড়যন্ত্রকারী, পরিকল্পনা এবং গণমানুষকে প্রভাবিত করার কৌশল।
বর্তমানকালে আমাদের প্রচলিত সমাজব্যবস্থায় তান্ত্রিকতার প্রয়োগ অতীতের মতো না থাকলেও ষড়যন্ত্রতত্ত্ব বরাবরের মতোই অব্যাহত আছে। আর যাপিত জীবনে আমরা দিনে দিনে যন্ত্রকৌশলী না হয়ে হয়ে উঠছি ষড়যন্ত্রকৌশলী!
লেখক: আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
বাংলা ভাষায় একটি অতিপরিচিত শব্দ হলো ষড়যন্ত্র। যাপিত জীবনে কমবেশি আমরা সবাই এর শিকার হয়েছি। কখনো কখনো ষড়যন্ত্রে লিপ্তও হয়েছি। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ষড়যন্ত্র কি আদৌ কোনো যন্ত্র? এ যন্ত্র কীভাবে কাজ করে? আমরা প্রায় সবাই জানি ষড়্ঋতু মানে ছয় ঋতু। কেননা, বলা হয়ে থাকে, ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। তো সেই নিরিখে যদি ‘ষড়যন্ত্র’ শব্দটি বিশ্লেষণ করি, সে হিসেবে তো ষড়যন্ত্র মানে ছয়টি যন্ত্র হওয়া উচিত। তাই নয় কি? যদি উত্তর ‘হ্যাঁ’ হয়, তাহলে মনে প্রশ্ন আসে যে ষড়যন্ত্রের ছয়টি যন্ত্রের নাম কী? আবার মনে হয়, আসলেই কি ষড়যন্ত্র মানে ছয়টি যন্ত্রের সমাহার? এবার তবে চলুন ষড়যন্ত্রের যন্ত্রপাতি খুলে এর খুঁটিনাটি পর্যবেক্ষণ করি।
ষড়যন্ত্র বিশেষ্য পদ। সাধারণভাবে আমরা ষড়যন্ত্র বলতে বুঝি অপরের ক্ষতি করার নিমিত্তে গোপন চক্রান্ত, অন্যায় করে ফাঁদে ফেলার জন্য প্রতিকূল ব্যক্তিবর্গের কুমন্ত্রণা বা কৌশলজাল, কূটকৌশল; দেহমধ্যস্থ ষট্চক্র প্রভৃতি। এবার আসি ষড়যন্ত্র শব্দের ব্যুৎপত্তি প্রসঙ্গে। ষড়্ঋতু শব্দের ‘ষড়্’ এসেছে সংস্কৃত ‘ষট্’= ৬ থেকে; অন্যদিকে ‘ষড়যন্ত্র’ শব্দের ‘ষড়’ এসেছে আরবি ‘শলাহ্’ থেকে। সেই সঙ্গে দুটি শব্দের উচ্চারণগত পার্থক্যও মনে রাখতে হবে। যেমন—ষড়ঋতুর ষড় শব্দের উচ্চারণ হবে [/ষড়্/] আর ষড়যন্ত্রের ষড় শব্দের উচ্চারণ হবে [/শড়ো/]। সে হিসেবে ষড়যন্ত্র/শড়োযন্ত্রো/[আ. শলাহ্+স. যন্ত্র]।
মূলত তান্ত্রিকদের তন্ত্রসাধনায় ব্যবহৃত ছয় রকম আভিচারিক প্রক্রিয়া থেকে ‘ষড়যন্ত্র’ শব্দের উৎপত্তি। আর এই আভিচারিক প্রক্রিয়া মানে হলো নিজের মঙ্গল কিন্তু অন্যের ক্ষতি সাধনের জন্য করা একধরনের তান্ত্রিক প্রক্রিয়া। আর তাই ষড়যন্ত্র শব্দের প্রকৃত অর্থ হলো ছয়টি বন্ধন। আর এ ছয়টি বন্ধনে যাকে বাঁধা যাবে, তার সর্বনাশ অনিবার্য। প্রকৃতপক্ষে এই ছয়টি বন্ধনের সাধনাই হলো ষড়যন্ত্র। এ ছয়টি বন্ধন হলো: ১. মারণ বা প্রাণ হরণ করা; ২. মোহন বা চিত্তবিভ্রম ঘটানো; ৩. স্তম্ভন বা যাবতীয় প্রবৃত্তি নষ্ট করা; ৪. বিদ্বেষণ বা অন্তরে বিদ্বেষ সৃষ্টি করা; ৫. উচ্চাটন বা স্বদেশবিভ্রম ঘটানো এবং ৬. বশীকরণ বা ইচ্ছাশক্তি রোধ করে বশে আনা।
আধুনিক সময়ে পৃথিবীজুড়ে অনেক রকমের ষড়যন্ত্রতত্ত্ব চালু রয়েছে। যদিও ষড়যন্ত্রতত্ত্ব কেন মানুষ বিশ্বাস করে তার অনেক কারণ রয়েছে। ষড়যন্ত্রতত্ত্ব তৈরি হয় একধরনের শূন্যতার ওপর আশ্রয় করে। যখন কিনা কোনো একটা বিষয় ব্যাখ্যা করা যায় না বা কোনো বিষয় সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কিছুই জানা যায় না। লন্ডনের ওপেন ইউনিভার্সিটির মনোবিজ্ঞানের প্রভাষক ড. জোভান বায়ফোর্ড বলেন, ‘কোনো ষড়যন্ত্রতত্ত্বের বৈশিষ্ট্য হলো এর পেছনে একটি হীন বা শয়তানি পরিকল্পনা থাকা। এই পরিকল্পনা করা হবে খুবই কঠোর গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে। এর পেছনে থাকবে ক্ষমতাবান কিছু ব্যক্তি বা একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী।’ তাঁর মতে, প্রতিটি ষড়যন্ত্রতত্ত্বে তিনটি প্রধান উপাদান থাকে। ষড়যন্ত্রকারী, পরিকল্পনা এবং গণমানুষকে প্রভাবিত করার কৌশল।
বর্তমানকালে আমাদের প্রচলিত সমাজব্যবস্থায় তান্ত্রিকতার প্রয়োগ অতীতের মতো না থাকলেও ষড়যন্ত্রতত্ত্ব বরাবরের মতোই অব্যাহত আছে। আর যাপিত জীবনে আমরা দিনে দিনে যন্ত্রকৌশলী না হয়ে হয়ে উঠছি ষড়যন্ত্রকৌশলী!
লেখক: আভিধানিক ও প্রাবন্ধিক
আজকের পত্রিকায় ১৩ আগস্ট একটি সংবাদ পড়ে এবং এ বিষয়ে টিভি চ্যানেলের সংবাদ দেখে মর্মাহত হয়েছিলাম। এভাবে কেউ কোনো দেশের একটি প্রাকৃতিক সম্পদের বিনাশ ঘটাতে পারে? আজকের পত্রিকায় ‘সাদাপাথরের সৌন্দর্য হারানোর কান্না’ শিরোনামের সে প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই শুরু হয় পাথর
২ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশের পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা এখন শতাধিক। প্রতিবছর এখানে হাজারো গবেষণা হয়, যার বড় অংশের উদ্দেশ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশ। নিঃসন্দেহে বৈজ্ঞানিক প্রকাশনা একটি বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষকের মর্যাদা এবং বৈশ্বিক পরিচিতি বৃদ্ধির অন্যতম মাধ্যম।
২ ঘণ্টা আগেখবরটি খুবই লজ্জার। বাংলাদেশ বিমানের একজন কেবিন ক্রু সোনা পাচারের দায়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন। ৪ আগস্ট বিকেলে সৌদি আরবের রিয়াদ থেকে বিজি-৩৪০ ফ্লাইটে ঢাকায় অবতরণ করার পর গ্রিন চ্যানেল অতিক্রমের সময় এই কেবিন ক্রুর গতিবিধিতে সন্দেহ জাগে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের। স্ক্যানিং মেশিনের নিচে তিনি পা দিয়ে কিছু লুকানোর
২ ঘণ্টা আগেসম্প্রতি ঢাকায় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সম্মেলনে জাপানি বিনিয়োগ পরামর্শক তাকাও হিরোসে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও রাজনীতির জন্য অশনিসংকেত দিয়েছেন। তাঁর স্পষ্ট ভাষ্য, তাঁরা দ্রুত মুনাফার খোঁজে থাকা আগ্রাসী বিনিয়োগকারী, খামখেয়ালিও।
১৩ ঘণ্টা আগে