এম আর খায়রুল উমাম
‘সাড়ে ১৭ কোটি মানুষের বাংলাদেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর প্রায় ৬৩ লাখই বেকার। আর এই বেকারদের মধ্যে ৮৭ শতাংশই শিক্ষিত বেকার। এই ৮৭ শতাংশের মধ্য থেকে ২১ শতাংশ আবার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েও কোনো কাজের সঙ্গে যুক্ত নয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৩-এ এই তথ্য উঠে এসেছে। জরিপের তথ্য বলছে, ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী তরুণেরাই বেশি বেকার। যার সংখ্যা ৩৮ লাখ। তারা কোনো কাজকর্ম না করেই বছরের পর বছর চাকরির পেছনে ছুটছে।’ ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার আজকের পত্রিকার শীর্ষ সংবাদে এমন খবর প্রকাশিত হয়েছিল।
দেশের অনেক বিজ্ঞ ও জ্ঞানী ব্যক্তিদের মুখে শোনা যায়, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা মূলত বেকার তৈরির কারখানা। কিন্তু এই বেকার তৈরির কারখানা নামক চক্রব্যূহ থেকে বের হওয়ার শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না কাউকে। শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কথা তুললেই শুনতে হয় কর্মমুখী শিক্ষার কথা, বৃত্তিমূলক শিক্ষার কথা। তবে এমন শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা বা যেটুকু আছে তাকে লালন করার কোনো ব্যবস্থা বা আগ্রহ কোনো পর্যায়েই দেখা যায় না। দেশের ক্ষমতার বলয়ের মানুষদের কথা এবং কাজের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্যের কারণেই আজ কর্মক্ষম তরুণদের একটা বিশাল অংশ হয় বছরের পর বছর চাকরির পেছনে ঘুরে জীবনের ব্যর্থতার লজ্জাকে মাথায় নিয়ে বিপথগামী হয়ে পড়ছে, অথবা ছোট্ট একটি নৌকা বা জাহাজের খোলে লুকিয়ে বিদেশে পাড়ি জমাতে গিয়ে অকালে প্রাণ হারাচ্ছে। অবস্থা দেখে প্রায়ই মনে হয়, আমাদের মসনদপ্রেমী ক্ষমতাবানরা সত্যিই কি জনগণকে দেশ ও জাতির কল্যাণে শিক্ষিত করতে চান?
দেশের সাধারণ জনগণ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত দেশে যে বৈষম্যহীন সমাজ প্রত্যাশা করেছিল, তার ধারেকাছে কেউ যায়নি এ পর্যন্ত। বরং ক্ষমতালোভী মানুষেরা দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে এক অভিজাত সমাজ গড়ে তুলছে। দেশের সাধারণ শিক্ষা নিয়ে গিনিপিগের চেয়েও বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চলেছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা এবং আরও দুর্ভাগ্যের বিষয়, এই বিচিত্র পরীক্ষার সবটুকুই স্বপ্ন থেকে পাওয়া। কোনো সমীক্ষা বা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে এ পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুপারিশ এসেছে, তা দাবি করতে পারবে না কেউ।
এই অবস্থাদৃষ্টেই সাধারণ মানুষকে বুঝে নিতে হবে ক্ষমতাসীনেরা দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে কীভাবে এবং কোন দৃষ্টিতে মূল্যায়ন করে থাকেন। তাই সাধারণ জনগণের একটা অংশ অভিজাত শ্রেণিভুক্ত হওয়ার জন্য সন্ত্রাস, মাদক কারবারি, চাঁদাবাজি ও সিন্ডিকেট বাণিজ্যের মতো ন্যক্কারজনক কাজে নিজেদের নিয়োজিত করছে। সাধারণ মানুষের আজকের এই বিপথগামিতায় সমাজের ভূমিকাকে অস্বীকার করা যাবে না কোনোভাবেই। শিক্ষাব্যবস্থার পরিসংখ্যানের দিকে চোখ রাখলে আমরা দেখি, সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত মাত্র ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী কাঙ্ক্ষিত মান অর্জনে সমর্থ হয়। যদি এই পরিসংখ্যানকে বিশ্বাস করা যায় তাহলে দেশের মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই সামনে এসে দাঁড়ায়। এহেন মানের শিক্ষায় শিক্ষিতরা বেকার হবে না তো কী? অন্য কোনো প্রত্যাশা কি দেশবাসী করতে পারে?
স্বাধীনতার ৫৩ বছরে কোনো সরকারই দেশ ও জাতির কল্যাণ বিবেচনায় শিক্ষার উন্নয়নে ব্রতী হয়নি। সরকার যদি জনগণের জন্য ভাবত, যদি জনকল্যাণের কথা বিন্দুমাত্র মনে রাখত, তাহলে মানবসম্পদ পরিকল্পনা করতে উদ্যোগী হতো, শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে সার্বিক পরিকল্পনার কথা ভাবত। কিন্তু অর্ধ শতকে কোনো সরকারের মাথায়ই আসেনি দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে কোন পেশার জন্য কতজন জনশক্তি প্রয়োজন, তার হিসাব অত্যন্ত জরুরি। জনগণ বিশ্বাস করে, সরকার এই হিসাব করলেই প্রকৃত শিক্ষার দাঁত বের হয়ে পড়বে। যেমন ধরা যাক, দেশের কারিগরি কর্মক্ষেত্রে স্থপতি, নকশাকার ও পরিকল্পনাবিদদের কাজ ১০ শতাংশের বেশি নয়। বাকি ৯০ শতাংশ কাজ মধ্যম স্তরের দক্ষ জনশক্তির যাঁরা তত্ত্বাবধান, মেরামত ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু আমাদের অভিজাত সমাজ বেহিসাবিভাবে উচ্চ শ্রেণির জনশক্তি তৈরির উপযোগী শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে নিবেদিত। ফলে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিতরা তাঁদের শিক্ষা অনুযায়ী কর্ম না করে নিম্ন পদের কাজে নিয়োজিত। তবে সে উচ্চস্তরের শিক্ষাও এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে উচ্চ শ্রেণির জনশক্তির সিংহভাগ তাদের কাজের ক্ষেত্রে বিদেশনির্ভর হয়ে পড়েছে। এখানে কর্মক্ষেত্রের পিরামিড উল্টো হয়ে গিয়েছে।
আবার একজন চিকিৎসক যিনি সেবা দিতে পারেন তার বিপরীতে কতজন নার্স ও অন্যান্য দক্ষ জনশক্তি প্রয়োজন, সে ধরনের কোনো হিসাব না থাকায় জনগণের চিকিৎসাসেবারও অবস্থা বেহাল। এখানেও পিরামিড উল্টো হওয়ায় দুইজন চিকিৎসকের বিপরীতে একজন নার্স এবং অন্যান্য দক্ষ জনশক্তির কর্মীও পাওয়া যায় না। কোনো ধরনের কোনো অনুপাতই হিসাবের মধ্যে নেই। মানবসম্পদ পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা বিবেচনার ক্ষেত্র হিসেবে এই দুই কর্মক্ষেত্রের উদাহরণই যথেষ্ট মনে হয়। আরও অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়, তাতে শুধু কলেবর বৃদ্ধি পাবে। তাই সব কর্মক্ষেত্রে পিরামিড ঠিক করে শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন।
দেশে পরিকল্পিত শিক্ষাব্যবস্থা না থাকায় মধ্যম শ্রেণির কারিগরি জনশক্তি সৃষ্টিতে ৪৯টি সরকারি পলিটেকনিক এবং পাঁচ শতাধিক বেসরকারি পলিটেকনিক স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি টিটিসিতেও এই কোর্স পড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু সরকার এই ব্যাপক আয়োজনে কত টাকা বাজেট বরাদ্দ করেছে বা বাজেট বৃদ্ধি করেছে? কতজন প্রশিক্ষিত শিক্ষক নিয়োগ করেছে? ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য আধুনিক যুগোপযোগী যন্ত্রপাতি এবং কাঁচামালের ব্যবস্থা করেছে? এসব প্রশ্ন কিন্তু এসেই যায়। উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা যায় সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের ট্যাকফুল হওয়ার উপদেশ দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছে। ফলে মানহীন জনশক্তির একটা বিশাল বোঝা জনগণের ঘাড়ে চেপে বসেছে। এরা না পারছে দেশের কলকারখানা রক্ষা করতে, না পারছে নিজেদের বেকার জীবন থেকে বের হতে। শুধু বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ঢাল-তলোয়ারবিহীন হওয়ার পর অর্থের বিনিময়ে সনদ বিক্রি করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। বিপরীতে সরকার গ্রামে গ্রামে সাধারণ শিক্ষার কলেজ খুলে বেকার সৃষ্টির প্রক্রিয়া বেগবান করছে আর নিজেদের জয়জয়কার শুনে আনন্দে বগল বাজাচ্ছে।
সরকার পরিকল্পনাবিহীন শিক্ষাব্যবস্থা চালু রেখে দেশকে মানহীন শিক্ষার ক্ষেত্র হিসেবে তৈরি করে শুধু শিক্ষিত বেকারই তৈরি করেনি, পাশাপাশি দেশের প্রধান জনশক্তিকে অবহেলার শিকারে পরিণত করছে। এই স্বপ্নে পাওয়া শিক্ষাব্যবস্থা দেশ ও জাতির স্বার্থে চলতে পারে না। আজকের তরুণেরাই আগামীর ভবিষ্যৎ, সে বিবেচনায় মানবসম্পদ পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে কোন পেশায় কত জনশক্তির প্রয়োজন, সে সম্ভাব্য সংখ্যা নির্ধারণ করা জরুরি। তারপর মানসম্মত শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনে সরকার শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ে রূপান্তর করতে পারে। সাদা কলারের জনশক্তির চেয়ে যে তেল-কালিমাখা জনশক্তির প্রয়োজনীয়তা বেশি, তা যত তাড়াতাড়ি দেশের ক্ষমতাবানেরা অনুধাবন করতে সক্ষম হবেন, ততই মঙ্গল। দেশের কর্মক্ষেত্রের জন্যই শুধু নয়, বিদেশি রেমিট্যান্স পাওয়ার ক্ষেত্রেও বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ।
লেখক: সাবেক সভাপতি, ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ
‘সাড়ে ১৭ কোটি মানুষের বাংলাদেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর প্রায় ৬৩ লাখই বেকার। আর এই বেকারদের মধ্যে ৮৭ শতাংশই শিক্ষিত বেকার। এই ৮৭ শতাংশের মধ্য থেকে ২১ শতাংশ আবার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েও কোনো কাজের সঙ্গে যুক্ত নয়। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৩-এ এই তথ্য উঠে এসেছে। জরিপের তথ্য বলছে, ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সী তরুণেরাই বেশি বেকার। যার সংখ্যা ৩৮ লাখ। তারা কোনো কাজকর্ম না করেই বছরের পর বছর চাকরির পেছনে ছুটছে।’ ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, বৃহস্পতিবার আজকের পত্রিকার শীর্ষ সংবাদে এমন খবর প্রকাশিত হয়েছিল।
দেশের অনেক বিজ্ঞ ও জ্ঞানী ব্যক্তিদের মুখে শোনা যায়, বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা মূলত বেকার তৈরির কারখানা। কিন্তু এই বেকার তৈরির কারখানা নামক চক্রব্যূহ থেকে বের হওয়ার শক্তিশালী পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না কাউকে। শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কথা তুললেই শুনতে হয় কর্মমুখী শিক্ষার কথা, বৃত্তিমূলক শিক্ষার কথা। তবে এমন শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলা বা যেটুকু আছে তাকে লালন করার কোনো ব্যবস্থা বা আগ্রহ কোনো পর্যায়েই দেখা যায় না। দেশের ক্ষমতার বলয়ের মানুষদের কথা এবং কাজের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্যের কারণেই আজ কর্মক্ষম তরুণদের একটা বিশাল অংশ হয় বছরের পর বছর চাকরির পেছনে ঘুরে জীবনের ব্যর্থতার লজ্জাকে মাথায় নিয়ে বিপথগামী হয়ে পড়ছে, অথবা ছোট্ট একটি নৌকা বা জাহাজের খোলে লুকিয়ে বিদেশে পাড়ি জমাতে গিয়ে অকালে প্রাণ হারাচ্ছে। অবস্থা দেখে প্রায়ই মনে হয়, আমাদের মসনদপ্রেমী ক্ষমতাবানরা সত্যিই কি জনগণকে দেশ ও জাতির কল্যাণে শিক্ষিত করতে চান?
দেশের সাধারণ জনগণ মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত দেশে যে বৈষম্যহীন সমাজ প্রত্যাশা করেছিল, তার ধারেকাছে কেউ যায়নি এ পর্যন্ত। বরং ক্ষমতালোভী মানুষেরা দুর্নীতি ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে অর্জিত অর্থ দিয়ে এক অভিজাত সমাজ গড়ে তুলছে। দেশের সাধারণ শিক্ষা নিয়ে গিনিপিগের চেয়েও বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চলেছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা এবং আরও দুর্ভাগ্যের বিষয়, এই বিচিত্র পরীক্ষার সবটুকুই স্বপ্ন থেকে পাওয়া। কোনো সমীক্ষা বা বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনার মধ্য দিয়ে এ পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুপারিশ এসেছে, তা দাবি করতে পারবে না কেউ।
এই অবস্থাদৃষ্টেই সাধারণ মানুষকে বুঝে নিতে হবে ক্ষমতাসীনেরা দেশের শিক্ষাব্যবস্থাকে কীভাবে এবং কোন দৃষ্টিতে মূল্যায়ন করে থাকেন। তাই সাধারণ জনগণের একটা অংশ অভিজাত শ্রেণিভুক্ত হওয়ার জন্য সন্ত্রাস, মাদক কারবারি, চাঁদাবাজি ও সিন্ডিকেট বাণিজ্যের মতো ন্যক্কারজনক কাজে নিজেদের নিয়োজিত করছে। সাধারণ মানুষের আজকের এই বিপথগামিতায় সমাজের ভূমিকাকে অস্বীকার করা যাবে না কোনোভাবেই। শিক্ষাব্যবস্থার পরিসংখ্যানের দিকে চোখ রাখলে আমরা দেখি, সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রাথমিক শিক্ষায় অন্তর্ভুক্ত মাত্র ২০ শতাংশ শিক্ষার্থী কাঙ্ক্ষিত মান অর্জনে সমর্থ হয়। যদি এই পরিসংখ্যানকে বিশ্বাস করা যায় তাহলে দেশের মাধ্যমিক এবং উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন স্বাভাবিকভাবেই সামনে এসে দাঁড়ায়। এহেন মানের শিক্ষায় শিক্ষিতরা বেকার হবে না তো কী? অন্য কোনো প্রত্যাশা কি দেশবাসী করতে পারে?
স্বাধীনতার ৫৩ বছরে কোনো সরকারই দেশ ও জাতির কল্যাণ বিবেচনায় শিক্ষার উন্নয়নে ব্রতী হয়নি। সরকার যদি জনগণের জন্য ভাবত, যদি জনকল্যাণের কথা বিন্দুমাত্র মনে রাখত, তাহলে মানবসম্পদ পরিকল্পনা করতে উদ্যোগী হতো, শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে সার্বিক পরিকল্পনার কথা ভাবত। কিন্তু অর্ধ শতকে কোনো সরকারের মাথায়ই আসেনি দেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে কোন পেশার জন্য কতজন জনশক্তি প্রয়োজন, তার হিসাব অত্যন্ত জরুরি। জনগণ বিশ্বাস করে, সরকার এই হিসাব করলেই প্রকৃত শিক্ষার দাঁত বের হয়ে পড়বে। যেমন ধরা যাক, দেশের কারিগরি কর্মক্ষেত্রে স্থপতি, নকশাকার ও পরিকল্পনাবিদদের কাজ ১০ শতাংশের বেশি নয়। বাকি ৯০ শতাংশ কাজ মধ্যম স্তরের দক্ষ জনশক্তির যাঁরা তত্ত্বাবধান, মেরামত ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু আমাদের অভিজাত সমাজ বেহিসাবিভাবে উচ্চ শ্রেণির জনশক্তি তৈরির উপযোগী শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়নে নিবেদিত। ফলে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিতরা তাঁদের শিক্ষা অনুযায়ী কর্ম না করে নিম্ন পদের কাজে নিয়োজিত। তবে সে উচ্চস্তরের শিক্ষাও এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে উচ্চ শ্রেণির জনশক্তির সিংহভাগ তাদের কাজের ক্ষেত্রে বিদেশনির্ভর হয়ে পড়েছে। এখানে কর্মক্ষেত্রের পিরামিড উল্টো হয়ে গিয়েছে।
আবার একজন চিকিৎসক যিনি সেবা দিতে পারেন তার বিপরীতে কতজন নার্স ও অন্যান্য দক্ষ জনশক্তি প্রয়োজন, সে ধরনের কোনো হিসাব না থাকায় জনগণের চিকিৎসাসেবারও অবস্থা বেহাল। এখানেও পিরামিড উল্টো হওয়ায় দুইজন চিকিৎসকের বিপরীতে একজন নার্স এবং অন্যান্য দক্ষ জনশক্তির কর্মীও পাওয়া যায় না। কোনো ধরনের কোনো অনুপাতই হিসাবের মধ্যে নেই। মানবসম্পদ পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা বিবেচনার ক্ষেত্র হিসেবে এই দুই কর্মক্ষেত্রের উদাহরণই যথেষ্ট মনে হয়। আরও অনেক উদাহরণ দেওয়া যায়, তাতে শুধু কলেবর বৃদ্ধি পাবে। তাই সব কর্মক্ষেত্রে পিরামিড ঠিক করে শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো প্রয়োজন।
দেশে পরিকল্পিত শিক্ষাব্যবস্থা না থাকায় মধ্যম শ্রেণির কারিগরি জনশক্তি সৃষ্টিতে ৪৯টি সরকারি পলিটেকনিক এবং পাঁচ শতাধিক বেসরকারি পলিটেকনিক স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি টিটিসিতেও এই কোর্স পড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু সরকার এই ব্যাপক আয়োজনে কত টাকা বাজেট বরাদ্দ করেছে বা বাজেট বৃদ্ধি করেছে? কতজন প্রশিক্ষিত শিক্ষক নিয়োগ করেছে? ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য আধুনিক যুগোপযোগী যন্ত্রপাতি এবং কাঁচামালের ব্যবস্থা করেছে? এসব প্রশ্ন কিন্তু এসেই যায়। উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা যায় সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানদের ট্যাকফুল হওয়ার উপদেশ দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেছে। ফলে মানহীন জনশক্তির একটা বিশাল বোঝা জনগণের ঘাড়ে চেপে বসেছে। এরা না পারছে দেশের কলকারখানা রক্ষা করতে, না পারছে নিজেদের বেকার জীবন থেকে বের হতে। শুধু বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ঢাল-তলোয়ারবিহীন হওয়ার পর অর্থের বিনিময়ে সনদ বিক্রি করে আঙুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছে। বিপরীতে সরকার গ্রামে গ্রামে সাধারণ শিক্ষার কলেজ খুলে বেকার সৃষ্টির প্রক্রিয়া বেগবান করছে আর নিজেদের জয়জয়কার শুনে আনন্দে বগল বাজাচ্ছে।
সরকার পরিকল্পনাবিহীন শিক্ষাব্যবস্থা চালু রেখে দেশকে মানহীন শিক্ষার ক্ষেত্র হিসেবে তৈরি করে শুধু শিক্ষিত বেকারই তৈরি করেনি, পাশাপাশি দেশের প্রধান জনশক্তিকে অবহেলার শিকারে পরিণত করছে। এই স্বপ্নে পাওয়া শিক্ষাব্যবস্থা দেশ ও জাতির স্বার্থে চলতে পারে না। আজকের তরুণেরাই আগামীর ভবিষ্যৎ, সে বিবেচনায় মানবসম্পদ পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে কোন পেশায় কত জনশক্তির প্রয়োজন, সে সম্ভাব্য সংখ্যা নির্ধারণ করা জরুরি। তারপর মানসম্মত শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনে সরকার শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ে রূপান্তর করতে পারে। সাদা কলারের জনশক্তির চেয়ে যে তেল-কালিমাখা জনশক্তির প্রয়োজনীয়তা বেশি, তা যত তাড়াতাড়ি দেশের ক্ষমতাবানেরা অনুধাবন করতে সক্ষম হবেন, ততই মঙ্গল। দেশের কর্মক্ষেত্রের জন্যই শুধু নয়, বিদেশি রেমিট্যান্স পাওয়ার ক্ষেত্রেও বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ।
লেখক: সাবেক সভাপতি, ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ
লেখার শিরোনাম দেখেই যদি কেউ ভেবে থাকেন, এখানে অমূল্য রতন পেয়ে যাবেন, তাহলে ভুল করবেন। ফেব্রুয়ারি আর এপ্রিল নিয়ে এমন এক গাড্ডায় পড়েছে নির্বাচন যে, কোনো ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী করার শক্তি কারও নেই। বিএনপির হাতে মুলা ধরিয়ে দিয়ে এই সরকারই আরও অনেক দিন ক্ষমতায় থাকার বাসনা পোষণ করছে কি না...
৫ ঘণ্টা আগেবিশ্বে পরিবেশদূষণকারী হিসেবে ১৫টি প্রধান দূষক চিহ্নিত করা হয়েছে। পয়লা নম্বরে আছে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার। বিশ্বব্যাপী পরিবেশদূষণে ৫ নম্বর দূষণকারী এখন প্লাস্টিক। দূষণের মাত্রা অনুযায়ী এই অবস্থান নির্ধারিত হয়েছে।
৫ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত ‘সিটিজেন পারসেপশন সার্ভে (সিপিএস) ২০২৫’-এর প্রাথমিক প্রতিবেদন আমাদের সামনে একটি হতাশাজনক বাস্তবতা তুলে ধরেছে।
৬ ঘণ্টা আগেঅন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে লন্ডনে অনুষ্ঠিত সভা এখন অতীত বিষয়। ওই সভার পর দেশের রাজনীতিতে অনেক কিছুই সমন্বয় হয়ে গেছে এবং এখনো হয়ে যাচ্ছে। রাজনীতি একটি দ্রুত অগ্রসরমাণ বিষয়। তার কয়েক দিনও এক জায়গায় অবস্থানের সুযোগ নেই।
১ দিন আগে