ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র
মেছো বিড়াল। এটি দেখতে মাঝারি আকারের। এটি একটি বিড়ালগোত্রীয় স্তন্যপায়ী প্রাণী। একে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাওয়া যায়। ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে পাওয়া যায়। বাংলাদেশের সুন্দরবন, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকায় মেছো বিড়াল দেখা যায়। এর গড় উচ্চতা ৭০ থেকে ৮৫ সেন্টিমিটার। এর ওজন ৮ থেকে ১৬ কেজি। পুরুষের ওজন ৮ থেকে ১৪ কেজি আর স্ত্রী মেছো বিড়ালের ওজন ৫ থেকে ৯ কেজি। এর বর্ণ জলপাই-ধূসর। এতে কালো কালো দাগ থাকে। ছোট লেজ আছে। এদের গাল সাদাটে। দাঁত বড়। কান গোলাকার ও ছোট। পেটের নিচের দিকটাও সাদা বর্ণের। মাথার দিকে ৬ থেকে ৮টি গাঢ় রেখা থাকে। রেখাগুলো কপাল বেয়ে ঘাড়ের নিচের দিকে চলে গেছে। এর মাথা গোলাকার। শরীর লম্বাটে। পা ঝিল্লিযুক্ত। আর পানিতে ডুব দেওয়ার সময় কান ভাঁজ করে পানি প্রবেশে বাধা দেয়। এ জন্য সহজেই পানিতে মাছ শিকার করতে পারে। ২০০৮ সালে আইইউসিএন একে বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। এরা সাধারণত জলাভূমি, ধানখেতসংলগ্ন বনভূমি, নদী ও বিলসংলগ্ন এলাকায় বসবাস করে। নিশাচর স্বভাবের। দিনের বেলায় ঝোপঝাড়, গর্ত ও গাছের বড় ডালে ঘুমায়। পানিতে ডুবে মাছ ধরতে বিশেষভাবে দক্ষ।
তবে নানা কারণে বন্য প্রাণীটি আজ সংকটে পড়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে ২০১৬ সাল থেকে প্রতি ১৫ দিনে একবার করে মেছো বিড়াল ও মানুষের মধ্যে সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। এসবের মধ্যে প্রায় ৫০ ভাগ ঘটনা ঘটেছে মেছো বিড়ালের প্রতি প্রতিশোধমূলক আচরণ থেকে। ২৫ ভাগের মতো ঘটনা ঘটেছে হাঁস-মুরগি খাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে। ১০ শতাংশ গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। এ ছাড়া ২০ ভাগ ঘটনায় ফাঁদ পাতার বিষয়টি দেখা গেছে। সমীক্ষাটি করা হয় ২০০৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত যেসব সংঘাতের খবর পত্রিকায় এসেছে সেসবের তথ্য বিশ্লেষণ করে। ৩৬১টি ঘটনায় ৫৬৪টি মেছো বিড়ালের সঙ্গে সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে।
মেছো বিড়ালগুলোর মধ্যে ৩৯৫টি ছিল পূর্ণবয়স্ক আর ১৭০টি অপ্রাপ্তবয়স্ক। এসব ঘটনায় মারা পড়েছিল ১৬০টি মেছো বিড়াল। সমীক্ষায় দেখা যায় বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব, উত্তর-পশ্চিম, দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকায় বেশি সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। এতে ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও খুলনা বিভাগে মেছো বিড়ালের উপস্থিতি বেশি বলে দেখানো হয়। ২০১২ সালে শুধু ঝিনাইদহ জেলাতেই ২২টি বিপন্ন প্রজাতির মেছো বিড়াল হত্যা করা হয়েছে। তবে এর উল্টোটাও দেখা গেছে। ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ৬৬টি মেছো বিড়ালের মধ্যে ৩১টি মেছো বিড়ালের বাচ্চাকে তাদের মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
মেছা বিড়াল বেশির ভাগ সময় মরা ও রোগাক্রান্ত মাছ খেয়ে থাকে। এতে করে ওই জলাশয়ের মাছের রোগ নিয়ন্ত্রিত হয়। এতে করে মাছের পরিমাণও বাড়ে। এরা ইঁদুর, সাপ, ব্যাঙ, কাঁকড়া ও পোকামাকড় খায়। এর ফলে ফসল কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কৃষকের উপকার করে। ইঁদুর দমনে এরা বিশেষভাবে পারদর্শী। এ জন্য একে কৃষকের পরম বন্ধুও বলা হয়। এরা জলাশয়ের পাখি, গুইসাপসহ অনেক প্রজাতিও খেয়ে থাকে। অর্থাৎ এরা শিকারি প্রাণীদের খেয়ে খাদ্যশৃঙ্খলা ঠিক রাখে। মেছো বিড়ালের উপস্থিতি ও অনুপস্থিতির মাধ্যমে বোঝা যায় বাস্তুতন্ত্র ঠিকভাবে কাজ করছে কি না। এ ছাড়া এরা সাধারণত ম্যানগ্রোভ বা জলাভূমিতে বাস করে সেখানকার পরিবেশ রক্ষা করে। মেছো বিড়ালকে এক প্রকার নির্দেশক প্রজাতি বলা হয়। এর উপস্থিতি স্বাদু পানি বাস্তুতন্ত্রের সুস্বাস্থ্যকে নির্দেশ করে। এই প্রজাতির বিলুপ্তি বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতিকর ব্যবস্থাকে নির্দেশ করে।
কিন্তু এই বন্য প্রাণীটি মেছো বাঘ হিসেবে অর্থাৎ বাঘ হিসেবে পরিচিত বলে হত্যার শিকার হচ্ছে সব সময়। অনেক মানুষ একে দেখলে আতঙ্কিত বোধ করে। অথচ উল্টা এই বন্য প্রাণীটিই মানুষকে
দেখলে ভয় পায়। এ ছাড়া এদের আবাসস্থল ধ্বংসের মুখে পড়েছে। বিশেষ করে আগের মতো এখন আর জলাশয় না থাকার কারণে এদের অস্তিত্বও সংকটের সম্মুখীন। তাই জলাভূমি রক্ষা করে মেছো বিড়ালের পুনরুদ্ধার জরুরি।
ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র, শিক্ষক ও গবেষক
মেছো বিড়াল। এটি দেখতে মাঝারি আকারের। এটি একটি বিড়ালগোত্রীয় স্তন্যপায়ী প্রাণী। একে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাওয়া যায়। ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে পাওয়া যায়। বাংলাদেশের সুন্দরবন, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকায় মেছো বিড়াল দেখা যায়। এর গড় উচ্চতা ৭০ থেকে ৮৫ সেন্টিমিটার। এর ওজন ৮ থেকে ১৬ কেজি। পুরুষের ওজন ৮ থেকে ১৪ কেজি আর স্ত্রী মেছো বিড়ালের ওজন ৫ থেকে ৯ কেজি। এর বর্ণ জলপাই-ধূসর। এতে কালো কালো দাগ থাকে। ছোট লেজ আছে। এদের গাল সাদাটে। দাঁত বড়। কান গোলাকার ও ছোট। পেটের নিচের দিকটাও সাদা বর্ণের। মাথার দিকে ৬ থেকে ৮টি গাঢ় রেখা থাকে। রেখাগুলো কপাল বেয়ে ঘাড়ের নিচের দিকে চলে গেছে। এর মাথা গোলাকার। শরীর লম্বাটে। পা ঝিল্লিযুক্ত। আর পানিতে ডুব দেওয়ার সময় কান ভাঁজ করে পানি প্রবেশে বাধা দেয়। এ জন্য সহজেই পানিতে মাছ শিকার করতে পারে। ২০০৮ সালে আইইউসিএন একে বিপন্ন প্রজাতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে। এরা সাধারণত জলাভূমি, ধানখেতসংলগ্ন বনভূমি, নদী ও বিলসংলগ্ন এলাকায় বসবাস করে। নিশাচর স্বভাবের। দিনের বেলায় ঝোপঝাড়, গর্ত ও গাছের বড় ডালে ঘুমায়। পানিতে ডুবে মাছ ধরতে বিশেষভাবে দক্ষ।
তবে নানা কারণে বন্য প্রাণীটি আজ সংকটে পড়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ পরিচালিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে ২০১৬ সাল থেকে প্রতি ১৫ দিনে একবার করে মেছো বিড়াল ও মানুষের মধ্যে সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। এসবের মধ্যে প্রায় ৫০ ভাগ ঘটনা ঘটেছে মেছো বিড়ালের প্রতি প্রতিশোধমূলক আচরণ থেকে। ২৫ ভাগের মতো ঘটনা ঘটেছে হাঁস-মুরগি খাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে। ১০ শতাংশ গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে। এ ছাড়া ২০ ভাগ ঘটনায় ফাঁদ পাতার বিষয়টি দেখা গেছে। সমীক্ষাটি করা হয় ২০০৫ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত যেসব সংঘাতের খবর পত্রিকায় এসেছে সেসবের তথ্য বিশ্লেষণ করে। ৩৬১টি ঘটনায় ৫৬৪টি মেছো বিড়ালের সঙ্গে সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে।
মেছো বিড়ালগুলোর মধ্যে ৩৯৫টি ছিল পূর্ণবয়স্ক আর ১৭০টি অপ্রাপ্তবয়স্ক। এসব ঘটনায় মারা পড়েছিল ১৬০টি মেছো বিড়াল। সমীক্ষায় দেখা যায় বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব, উত্তর-পশ্চিম, দক্ষিণ-পশ্চিম এলাকায় বেশি সংঘাতের ঘটনা ঘটেছে। এতে ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও খুলনা বিভাগে মেছো বিড়ালের উপস্থিতি বেশি বলে দেখানো হয়। ২০১২ সালে শুধু ঝিনাইদহ জেলাতেই ২২টি বিপন্ন প্রজাতির মেছো বিড়াল হত্যা করা হয়েছে। তবে এর উল্টোটাও দেখা গেছে। ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত ৬৬টি মেছো বিড়ালের মধ্যে ৩১টি মেছো বিড়ালের বাচ্চাকে তাদের মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
মেছা বিড়াল বেশির ভাগ সময় মরা ও রোগাক্রান্ত মাছ খেয়ে থাকে। এতে করে ওই জলাশয়ের মাছের রোগ নিয়ন্ত্রিত হয়। এতে করে মাছের পরিমাণও বাড়ে। এরা ইঁদুর, সাপ, ব্যাঙ, কাঁকড়া ও পোকামাকড় খায়। এর ফলে ফসল কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কৃষকের উপকার করে। ইঁদুর দমনে এরা বিশেষভাবে পারদর্শী। এ জন্য একে কৃষকের পরম বন্ধুও বলা হয়। এরা জলাশয়ের পাখি, গুইসাপসহ অনেক প্রজাতিও খেয়ে থাকে। অর্থাৎ এরা শিকারি প্রাণীদের খেয়ে খাদ্যশৃঙ্খলা ঠিক রাখে। মেছো বিড়ালের উপস্থিতি ও অনুপস্থিতির মাধ্যমে বোঝা যায় বাস্তুতন্ত্র ঠিকভাবে কাজ করছে কি না। এ ছাড়া এরা সাধারণত ম্যানগ্রোভ বা জলাভূমিতে বাস করে সেখানকার পরিবেশ রক্ষা করে। মেছো বিড়ালকে এক প্রকার নির্দেশক প্রজাতি বলা হয়। এর উপস্থিতি স্বাদু পানি বাস্তুতন্ত্রের সুস্বাস্থ্যকে নির্দেশ করে। এই প্রজাতির বিলুপ্তি বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতিকর ব্যবস্থাকে নির্দেশ করে।
কিন্তু এই বন্য প্রাণীটি মেছো বাঘ হিসেবে অর্থাৎ বাঘ হিসেবে পরিচিত বলে হত্যার শিকার হচ্ছে সব সময়। অনেক মানুষ একে দেখলে আতঙ্কিত বোধ করে। অথচ উল্টা এই বন্য প্রাণীটিই মানুষকে
দেখলে ভয় পায়। এ ছাড়া এদের আবাসস্থল ধ্বংসের মুখে পড়েছে। বিশেষ করে আগের মতো এখন আর জলাশয় না থাকার কারণে এদের অস্তিত্বও সংকটের সম্মুখীন। তাই জলাভূমি রক্ষা করে মেছো বিড়ালের পুনরুদ্ধার জরুরি।
ড. বিভূতি ভূষণ মিত্র, শিক্ষক ও গবেষক
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকার অবসানের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। এ উপলক্ষে কয়েক দিন ধরে পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনের টক শোতে চলছে এক বছরের মূল্যায়ন।
৩ ঘণ্টা আগেদেশে নারী জাগরণ অভূতপূর্ব। এটা বলে বোঝানোর দরকার পড়ে না। বীরকন্যা প্রীতিলতা, বেগম রোকেয়া থেকে জাহানারা ইমামে এর উজ্জ্বলতা ছড়িয়ে রয়েছে। বাংলাদেশ শাসিত হয়েছে নারীর অধীনে। এরশাদের পতনের পর সরাসরি সামরিক শাসনের অবসান হলে খালেদা জিয়া দেশ শাসনে আসেন।
৩ ঘণ্টা আগেআকাশের দিকে তাকিয়ে কিছুদিন পরেই বৃষ্টিতে নাজেহাল হয়ে ওঠা মানুষদের এমনটাই মনে হবে। বাইরে হয়তো রোদ তখন তেমন কড়া নয়, আবার কড়াও হতে পারে, শেফালির শাখে বিহগ-বিহগী কে জানে কী গেয়ে যাবে!
৩ ঘণ্টা আগেচাঁদপুরের মতলব উত্তরের ছোট্ট গ্রাম সাড়ে পাঁচআনি। এখানেই বড় হচ্ছে সোহান—মাত্র সাড়ে পাঁচ বছরের এক বিস্ময়বালক, যার পায়ের জাদু দেখে বিস্মিত হচ্ছে দেশজুড়ে মানুষ।
৩ ঘণ্টা আগে