বিভুরঞ্জন সরকার
ভোট হবে বাংলাদেশে, কিন্তু এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হলো লন্ডনে। যুক্তরাজ্যে সফররত প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বহুল আলোচিত ও প্রত্যাশিত বৈঠক করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে আগামী বছরের রমজানের আগেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব করেন তারেক রহমান। জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, সব প্রস্তুতি শেষ করা গেলে রমজান শুরুর আগের সপ্তাহেও নির্বাচন করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি প্রয়োজন।
কয়েক দিন ধরেই সবার নজর ছিল লন্ডনে। আজ শুক্রবার বৈঠক শেষে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে নানামুখী আলোচনা, বিতর্ক ও গভীর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ। কেউ বলছেন, এটা নিছক একটি বৈঠক নয়, বরং আগামী দিনের বাংলাদেশের নির্বাচন ও ক্ষমতার সমীকরণে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁকবদলের ইঙ্গিত। প্রশ্ন উঠছে, ভোট হবে ঢাকায়, কিন্তু সংলাপ, সমঝোতা ও সিদ্ধান্তের কেন্দ্র কেন লন্ডন?
তারেক রহমান ২০০৮ সাল থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসনে আছেন। দুর্নীতির একাধিক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় তিনি দেশে ফিরতে পারছিলেন না। কিন্তু দুই দশক ধরে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত লন্ডনে তারেক রহমানের দিকে তাকিয়ে থাকে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর ক্ষমতা কার্যত পূর্ণাঙ্গ চেয়ারম্যানের চেয়েও বেশি। দল চালাচ্ছেন তিনি ভার্চুয়ালি, নির্দেশনা দিচ্ছেন স্কাইপে, হোয়াটসঅ্যাপে, গোপন টেলিগ্রামে। বাংলাদেশে বিএনপির আন্দোলনের রূপরেখা হোক কিংবা আন্তর্জাতিক কূটনীতির কৌশল নির্ধারণ—সবকিছুতেই তিনি দৃশ্যমান থেকেও অদৃশ্য।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর পরিস্থিতি বদলেছে, তারেক রহমানের সব মামলা উঠে গেছে। তিনি সব অভিযোগ থেকে ‘নির্দোষ’ হয়েছেন আদালতের নির্দেশে। তারপরও তিনি কেন দেশে ফিরছেন না, সে প্রশ্ন অনেকের মনেই আছে। দুই দিন আগে জানানো হয়েছে, তিনি শিগগির দেশে ফিরবেন। এ অবস্থায় প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে লন্ডনে তাঁর সরাসরি বৈঠক শুধু রাজনৈতিকভাবে নয়, মনস্তাত্ত্বিকভাবেও কি কোনো বিশেষ বার্তা বহন করছে না?
এই বৈঠক ভার্চুয়ালি না হয়ে লন্ডনে গিয়ে হওয়ায় কারও কারও মনে কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ড. ইউনূস চাইলে জুমে, গুগল মিটে বা অন্য যেকোনো ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে এই আলোচনা সেরে ফেলতে পারতেন। তাহলে কী কারণে তিনি শত শত মাইল পাড়ি দিয়ে লন্ডনে গিয়েছেন? একে কি বিলাতের প্রতি একধরনের অতি আকর্ষণ বলা যায়? যেহেতু আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে যোগাযোগের বড় একটি ঘাঁটি হলো লন্ডন, তাই কি এই সিদ্ধান্তও লন্ডন থেকেই নিতে হলো?
এখানে আরেকটি দিক উঠে আসে। বিএনপিতে তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়েছিল ২০১৮ সালে খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় কারাগারে যাওয়ার পর। তখন বলা হয়েছিল, এটি ‘অস্থায়ী’ পদক্ষেপ, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ফিরে এলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। এখন বেগম জিয়াও কারামুক্ত, মামলামুক্ত, নির্দোষ। তিনি অবশ্য কিছুটা অসুস্থ। এই লন্ডন থেকে উন্নত চিকিৎসা নিয়ে মোটামুটি সুস্থ হয়ে দেশে ফিরেছেন।
এই মুহূর্তে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক আলোচনায় চূড়ান্ত মুখ তো বেগম খালেদা জিয়ারই হওয়ার কথা। তা না হয়ে ‘ভারপ্রাপ্ত’ চেয়ারম্যান কেন প্রধান হয়ে উঠলেন? শোনা যাচ্ছে, লন্ডন বৈঠকের নেপথ্যেও নাকি মূল খেলোয়াড়ের ভূমিকায় ছিলেন খালেদা জিয়াই। তবে কি লন্ডন বৈঠক বিএনপির ভেতরের শক্তির ভারসাম্যও প্রকাশ করছে?
এটা শুধু রাজনৈতিক কৌশল নয়, বরং প্রতীকী বার্তা বহন করছে বলে মনে করার কারণ আছে। এর অর্থ, বিএনপির প্রকৃত নেতৃত্ব এখন তারেক রহমানের কাছেই, খালেদা জিয়া কার্যত ছায়ামূর্তি ভূমিকায়। দলের মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরা যেমন এই বার্তাটা বুঝেছেন, আন্তর্জাতিক মহলেও এটি স্পষ্টভাবে গেছে। ফলে, লন্ডন বৈঠক হয়ে উঠেছে একটি ‘লিগিটিমাইজিং অ্যাক্ট’—তারেক রহমানকে বিএনপির চূড়ান্ত নেতৃত্ব হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার একটি প্রচ্ছন্ন পদক্ষেপ।
আবার এই বৈঠকের মাধ্যমে ড. ইউনূস নিজেকে কেবল বিএনপির সঙ্গে সংলাপকারী বা নিরপেক্ষ উদ্যোক্তা হিসেবে তুলে ধরতে চাইলেই তা কি হয়ে উঠছে? বরং এর মাধ্যমে তাঁর নিরপেক্ষতার প্রশ্নও নতুনভাবে আলোচিত হচ্ছে।
কেউ কেউ বলছে, এই বৈঠক দেখিয়েছে যে ইউনূস নিজেই পক্ষ হয়ে পড়েছেন। আবার বিএনপির ভেতরে কেউ কেউ বলছেন, এই সাক্ষাৎ কি তারেক রহমানকে ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্যতা দেওয়ার প্রস্তুতি?
লন্ডন বৈঠকের সময়কাল, প্রেক্ষাপট এবং সমাপতনগুলোও খুব তাৎপর্যপূর্ণ। এটি যদি বিএনপিকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ার ইঙ্গিত হয়, তাহলে সেটা কি তাঁকে যারা ক্ষমতায় বসিয়েছে তাদের কাছে পছন্দের হবে? এটা কি এনসিপির ওপর একধরনের চাপ তৈরির কৌশল?
আবার এটাও বলা যায়, ইউনূস তাঁর নিজস্ব মধ্যস্থতাকারী অবস্থানকে আন্তর্জাতিকভাবে দৃশ্যমান করার প্রয়াস নিচ্ছেন, যাতে ভবিষ্যতে যদি কোনো নির্বাচনী সমঝোতার সরকার গঠন হয়, সেখানে তিনি নিজের ভূমিকাকে অনিবার্য করে তুলতে পারেন।
তবে এ-ও মানতে হবে, বিএনপি এবং তারেক রহমান নিজেও এই বৈঠককে কৌশলগত সাফল্য হিসেবে নিচ্ছেন। এত দিন ধরে ‘নির্বাসিত’, ‘সাজাপ্রাপ্ত’, ‘পলাতক’ নেতা হিসেবে তারেক রহমানকে আওয়ামী লীগ যেভাবে উপস্থাপন করে এসেছে, এই বৈঠক তাঁর রাজনৈতিক ভাবমূর্তিতে একটি ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। এখন তিনি শুধু ‘দলীয় প্রধান’ নন, বরং একজন আলোচনার কেন্দ্রস্থলে থাকা আন্তর্জাতিক চরিত্র।
সব মিলিয়ে, লন্ডন বৈঠক থেকে তাৎক্ষণিক কোনো চুক্তি, সিদ্ধান্ত বা পরিকল্পনার ঘোষণা না এলেও এটি রাজনৈতিকভাবে ছিল অত্যন্ত কৌশলগত একটি পদক্ষেপ। এটি যেমন ইউনূসের আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারী ভূমিকাকে দৃঢ় করার চেষ্টা, তেমনি বিএনপির অভ্যন্তরীণ নেতৃত্ব কাঠামোর অবস্থানও পুনরায় চিহ্নিত করা হলো।
প্রশ্ন রয়ে গেল, বাংলাদেশে ভোট হবে ঠিকই, কিন্তু ভবিষ্যতের ক্ষমতার রূপরেখা যদি লন্ডনে বসে আঁকা হয়, তবে সেটা কি গণতন্ত্রের নতুন রূপ, না কি আত্মনির্ভরতা হারিয়ে ফেলার এক সংকেত?
উত্তর এখনো মেলেনি। কিন্তু লন্ডন থেকে আসা রাজনীতির এই হাওয়া যে ঢাকার রাজনীতিতে ঝড় তুলবে বা তুলেছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
ভোট হবে বাংলাদেশে, কিন্তু এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হলো লন্ডনে। যুক্তরাজ্যে সফররত প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বহুল আলোচিত ও প্রত্যাশিত বৈঠক করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বৈঠকে আগামী বছরের রমজানের আগেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাব করেন তারেক রহমান। জবাবে প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, সব প্রস্তুতি শেষ করা গেলে রমজান শুরুর আগের সপ্তাহেও নির্বাচন করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে সংস্কার ও বিচারের বিষয়ে পর্যাপ্ত অগ্রগতি প্রয়োজন।
কয়েক দিন ধরেই সবার নজর ছিল লন্ডনে। আজ শুক্রবার বৈঠক শেষে রাজনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে নানামুখী আলোচনা, বিতর্ক ও গভীর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ। কেউ বলছেন, এটা নিছক একটি বৈঠক নয়, বরং আগামী দিনের বাংলাদেশের নির্বাচন ও ক্ষমতার সমীকরণে একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁকবদলের ইঙ্গিত। প্রশ্ন উঠছে, ভোট হবে ঢাকায়, কিন্তু সংলাপ, সমঝোতা ও সিদ্ধান্তের কেন্দ্র কেন লন্ডন?
তারেক রহমান ২০০৮ সাল থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসনে আছেন। দুর্নীতির একাধিক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় তিনি দেশে ফিরতে পারছিলেন না। কিন্তু দুই দশক ধরে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত লন্ডনে তারেক রহমানের দিকে তাকিয়ে থাকে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর ক্ষমতা কার্যত পূর্ণাঙ্গ চেয়ারম্যানের চেয়েও বেশি। দল চালাচ্ছেন তিনি ভার্চুয়ালি, নির্দেশনা দিচ্ছেন স্কাইপে, হোয়াটসঅ্যাপে, গোপন টেলিগ্রামে। বাংলাদেশে বিএনপির আন্দোলনের রূপরেখা হোক কিংবা আন্তর্জাতিক কূটনীতির কৌশল নির্ধারণ—সবকিছুতেই তিনি দৃশ্যমান থেকেও অদৃশ্য।
গত বছরের ৫ আগস্টের পর পরিস্থিতি বদলেছে, তারেক রহমানের সব মামলা উঠে গেছে। তিনি সব অভিযোগ থেকে ‘নির্দোষ’ হয়েছেন আদালতের নির্দেশে। তারপরও তিনি কেন দেশে ফিরছেন না, সে প্রশ্ন অনেকের মনেই আছে। দুই দিন আগে জানানো হয়েছে, তিনি শিগগির দেশে ফিরবেন। এ অবস্থায় প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে লন্ডনে তাঁর সরাসরি বৈঠক শুধু রাজনৈতিকভাবে নয়, মনস্তাত্ত্বিকভাবেও কি কোনো বিশেষ বার্তা বহন করছে না?
এই বৈঠক ভার্চুয়ালি না হয়ে লন্ডনে গিয়ে হওয়ায় কারও কারও মনে কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। ড. ইউনূস চাইলে জুমে, গুগল মিটে বা অন্য যেকোনো ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে এই আলোচনা সেরে ফেলতে পারতেন। তাহলে কী কারণে তিনি শত শত মাইল পাড়ি দিয়ে লন্ডনে গিয়েছেন? একে কি বিলাতের প্রতি একধরনের অতি আকর্ষণ বলা যায়? যেহেতু আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে যোগাযোগের বড় একটি ঘাঁটি হলো লন্ডন, তাই কি এই সিদ্ধান্তও লন্ডন থেকেই নিতে হলো?
এখানে আরেকটি দিক উঠে আসে। বিএনপিতে তারেক রহমানকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান করা হয়েছিল ২০১৮ সালে খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় কারাগারে যাওয়ার পর। তখন বলা হয়েছিল, এটি ‘অস্থায়ী’ পদক্ষেপ, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ফিরে এলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। এখন বেগম জিয়াও কারামুক্ত, মামলামুক্ত, নির্দোষ। তিনি অবশ্য কিছুটা অসুস্থ। এই লন্ডন থেকে উন্নত চিকিৎসা নিয়ে মোটামুটি সুস্থ হয়ে দেশে ফিরেছেন।
এই মুহূর্তে একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক আলোচনায় চূড়ান্ত মুখ তো বেগম খালেদা জিয়ারই হওয়ার কথা। তা না হয়ে ‘ভারপ্রাপ্ত’ চেয়ারম্যান কেন প্রধান হয়ে উঠলেন? শোনা যাচ্ছে, লন্ডন বৈঠকের নেপথ্যেও নাকি মূল খেলোয়াড়ের ভূমিকায় ছিলেন খালেদা জিয়াই। তবে কি লন্ডন বৈঠক বিএনপির ভেতরের শক্তির ভারসাম্যও প্রকাশ করছে?
এটা শুধু রাজনৈতিক কৌশল নয়, বরং প্রতীকী বার্তা বহন করছে বলে মনে করার কারণ আছে। এর অর্থ, বিএনপির প্রকৃত নেতৃত্ব এখন তারেক রহমানের কাছেই, খালেদা জিয়া কার্যত ছায়ামূর্তি ভূমিকায়। দলের মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীরা যেমন এই বার্তাটা বুঝেছেন, আন্তর্জাতিক মহলেও এটি স্পষ্টভাবে গেছে। ফলে, লন্ডন বৈঠক হয়ে উঠেছে একটি ‘লিগিটিমাইজিং অ্যাক্ট’—তারেক রহমানকে বিএনপির চূড়ান্ত নেতৃত্ব হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার একটি প্রচ্ছন্ন পদক্ষেপ।
আবার এই বৈঠকের মাধ্যমে ড. ইউনূস নিজেকে কেবল বিএনপির সঙ্গে সংলাপকারী বা নিরপেক্ষ উদ্যোক্তা হিসেবে তুলে ধরতে চাইলেই তা কি হয়ে উঠছে? বরং এর মাধ্যমে তাঁর নিরপেক্ষতার প্রশ্নও নতুনভাবে আলোচিত হচ্ছে।
কেউ কেউ বলছে, এই বৈঠক দেখিয়েছে যে ইউনূস নিজেই পক্ষ হয়ে পড়েছেন। আবার বিএনপির ভেতরে কেউ কেউ বলছেন, এই সাক্ষাৎ কি তারেক রহমানকে ভবিষ্যৎ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্যতা দেওয়ার প্রস্তুতি?
লন্ডন বৈঠকের সময়কাল, প্রেক্ষাপট এবং সমাপতনগুলোও খুব তাৎপর্যপূর্ণ। এটি যদি বিএনপিকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়ার ইঙ্গিত হয়, তাহলে সেটা কি তাঁকে যারা ক্ষমতায় বসিয়েছে তাদের কাছে পছন্দের হবে? এটা কি এনসিপির ওপর একধরনের চাপ তৈরির কৌশল?
আবার এটাও বলা যায়, ইউনূস তাঁর নিজস্ব মধ্যস্থতাকারী অবস্থানকে আন্তর্জাতিকভাবে দৃশ্যমান করার প্রয়াস নিচ্ছেন, যাতে ভবিষ্যতে যদি কোনো নির্বাচনী সমঝোতার সরকার গঠন হয়, সেখানে তিনি নিজের ভূমিকাকে অনিবার্য করে তুলতে পারেন।
তবে এ-ও মানতে হবে, বিএনপি এবং তারেক রহমান নিজেও এই বৈঠককে কৌশলগত সাফল্য হিসেবে নিচ্ছেন। এত দিন ধরে ‘নির্বাসিত’, ‘সাজাপ্রাপ্ত’, ‘পলাতক’ নেতা হিসেবে তারেক রহমানকে আওয়ামী লীগ যেভাবে উপস্থাপন করে এসেছে, এই বৈঠক তাঁর রাজনৈতিক ভাবমূর্তিতে একটি ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। এখন তিনি শুধু ‘দলীয় প্রধান’ নন, বরং একজন আলোচনার কেন্দ্রস্থলে থাকা আন্তর্জাতিক চরিত্র।
সব মিলিয়ে, লন্ডন বৈঠক থেকে তাৎক্ষণিক কোনো চুক্তি, সিদ্ধান্ত বা পরিকল্পনার ঘোষণা না এলেও এটি রাজনৈতিকভাবে ছিল অত্যন্ত কৌশলগত একটি পদক্ষেপ। এটি যেমন ইউনূসের আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারী ভূমিকাকে দৃঢ় করার চেষ্টা, তেমনি বিএনপির অভ্যন্তরীণ নেতৃত্ব কাঠামোর অবস্থানও পুনরায় চিহ্নিত করা হলো।
প্রশ্ন রয়ে গেল, বাংলাদেশে ভোট হবে ঠিকই, কিন্তু ভবিষ্যতের ক্ষমতার রূপরেখা যদি লন্ডনে বসে আঁকা হয়, তবে সেটা কি গণতন্ত্রের নতুন রূপ, না কি আত্মনির্ভরতা হারিয়ে ফেলার এক সংকেত?
উত্তর এখনো মেলেনি। কিন্তু লন্ডন থেকে আসা রাজনীতির এই হাওয়া যে ঢাকার রাজনীতিতে ঝড় তুলবে বা তুলেছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে লন্ডনে অনুষ্ঠিত সভা এখন অতীত বিষয়। ওই সভার পর দেশের রাজনীতিতে অনেক কিছুই সমন্বয় হয়ে গেছে এবং এখনো হয়ে যাচ্ছে। রাজনীতি একটি দ্রুত অগ্রসরমাণ বিষয়। তার কয়েক দিনও এক জায়গায় অবস্থানের সুযোগ নেই।
২০ ঘণ্টা আগেসম্প্রতি বিশ্বজুড়ে আলোচনায় এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়—শুধু গবেষণায় নয়, মানবিক দায়বদ্ধতায়ও। যুক্তরাষ্ট্রের একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে নেমে বিশ্ববিদ্যালয়টি দেখিয়ে দিয়েছে, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেবল জ্ঞানচর্চার স্থান নয়; বরং তা ন্যায়, স্বাধীনতা ও দায়িত্বশীল...
২১ ঘণ্টা আগেএই জীবনে মানুষ হয়ে জন্মানো আর মানুষ হয়ে ওঠা—এই দুইয়ের মাঝে যে সংযোগ, তাকে যদি ‘ম্যাজিক রিয়্যালিজম’ বলি? কথাটির সহজ কোনো মানে কি করা যায়? জীবনের শুরুতে কিংবা বেড়ে উঠতে উঠতে কতটুকুইবা বুঝতে পারা যায়? বোঝাটুকুর জন্যই যে মনের বৃদ্ধি দরকার!
২১ ঘণ্টা আগেআমাদের দেশে ক্রমান্বয়ে নদী হারিয়ে যাচ্ছে। নদী হলো পরিবেশ, কৃষি, মৎস্য সম্পদ আহরণ, যোগাযোগব্যবস্থা ও সেচের অন্যতম মাধ্যম। সমাজ-সভ্যতার ক্রমবিকাশে নদীর ভূমিকা অনেক। কিন্তু দিন দিন বিভিন্ন কারণে নদী দখল হয়ে যাচ্ছে। নদীতে বর্জ্য ফেলে যখন নদীকে দূষিত করা হয়, তখন বোঝা যায় আমরা জাতি হিসেবে কতটুকু...
২১ ঘণ্টা আগে