Ajker Patrika

ডিগবাজি: যেখানে জাতীয় পার্টি আর জায়েদ খানের মিতালি

গোলাম ওয়াদুদ, ঢাকা
আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০২৩, ০১: ১৫
ডিগবাজি: যেখানে জাতীয় পার্টি আর জায়েদ খানের মিতালি

জায়েদ খান, একজন বাংলাদেশি অভিনেতা। বড় পর্দায় অভিনয় করেন। বড় পর্দায় দর্শক না পেলেও সাড়ে ছয় ইঞ্চির স্ক্রিনে তিনি আছেন দাপটের সাথে। ক্যামেরা দেখলেই তাঁর মুখে খই ফোটে! শোবিজে তাঁর খবর নেই। তিনি নিজেই খবর তৈরি করেন। খবরের খরায় থাকা গণমাধ্যমের বিনোদন বিভাগ সেগুলোই লুফে নেয়। তিনি আলোচনায় থাকতে চান। আলোচনায় থাকার সহজ তরিকাও জানা আছে তাঁর। তাই দৈনিকই ক্যামেরার সামনে তাঁকে দেখা যায়। 

অবশ্য রাজনীতির গরম বাজারে সহজ তরিকা হালে পানি পাচ্ছিল না। তাই নতুন কৌশল। এবার শরীর দিয়ে কসরত শুরু করেছেন তিনি। কথায় আর চিড়ে ভিজছে না, তাই এবার ঘাম ঝরাচ্ছেন। জায়েদ খানের নতুন ট্রেন্ড—ডিগবাজি। মাঠে, মঞ্চে সবখানে তিনি ডিগবাজি দিচ্ছেন। ট্রেন্ডের সঙ্গে থাকার কৌশল যে তিনি ভালোই রপ্ত করেছেন, সেটি মানতেই হবে—ডিগবাজি দিয়ে ভোটের সময়ে খুবই প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছেন জায়েদ খান। একটি রাজনৈতিক দলের মূর্ত প্রতীক হয়ে উঠেছেন যেন! 

রাজনীতির মাঠে ডিগবাজিতে যুগ যুগ ধরে একাধিপত্য ধরে রেখেছে জাতীয় পার্টি (জাপা)। দলটির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ডিগবাজির জন্য মশহুর ছিলেন। তিনি আর আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু অ্যাক্রোবেটিক প্রদর্শনী থেমে নেই। নির্বাচনের আলাপ শুরু হলেই তাঁরা ওয়ার্মআপ শুরু করেন। তাঁরা সব সময় ক্ষমতালগ্ন থাকতে চান। দর কষাকষিতে ওস্তাদ! শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাঁরা বিভ্রান্তিকর কথা বলেন। সমাপ্তি টানেন ডিগবাজি দিয়ে! 

আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণের তফসিল ঘোষণা হয়ে গেছে। সরকার সংলগ্ন দলগুলো নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল আগে থেকেই। কিন্তু জাতীয় পার্টি কিছুই খোলাসা করে না। চেয়ারম্যান জিএম কাদের বিভিন্ন সভা সমাবেশে নির্বাচনে যাবেন না, পরিবেশ নেই ইত্যাদি বলে বেড়াচ্ছিলেন। কণ্ঠ মিলিয়ে যাচ্ছিলেন মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। 

তবে দলের প্রধান পৃষ্টপোষক রওশন এরশাদ প্রথম থেকেই বল আসছেন, যেকোনো পরিস্থিতে তাঁর দল নির্বাচনে যাবে। তাঁরা নির্বাচনমুখী দল। দলে প্রধান পৃষ্ঠপোষক আর চেয়ারম্যানের এখতিয়ার নিয়ে দ্বন্দ্ব মাঝেমধ্যেই প্রকাশ্য হয়। 

তফসিলের পর জাতীয় পার্টি তৃণমূলের নেতাদের নিয়ে সভা করে। সেখানে ৫৯ জনের মধ্যে ৫৮ জন বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনে না যাওয়ার পরামর্শ দেন। মাত্র একজন বিপরীত অবস্থান নেন। গণমাধ্যমে সেসব এসেছে। 

সেই সভায় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছিলেন, ‘নির্বাচনে গেলে স্যাংশন আসারও আশঙ্কা আছে। এই অবস্থায় যদি আমরা নির্বাচনে যাই, আর যদি পরবর্তীতে সরকার সমস্যায় পড়ে, তাহলে কী হবে? আমরা আর কোনো দলের মুখাপেক্ষী থাকতে চাই না। এখন দলগতভাবে আমরা অনেক শক্তিশালী।’ 

চিত্রনাট্যের আরেক পর্বে নতুন ক্লাইমেক্স তৈরি করে ইসিতে পাল্টাপাল্টি চিঠি। রওশন এরশাদ চিঠি দিয়ে বললেন, জোটবদ্ধভাবে নির্বাচনে যাচ্ছেন এবং তিনিই দলীয় মনোনয়ন দেবেন। জিএম কাদের পাল্টা চিঠিতে বললেন, মনোনয়ন দেওয়ার এখতিয়ার তাঁর ভাবির নেই। এ নিয়ে দিনভর আলোচনা চলল। রাতে সেই আলোচনায় জল ঢাললেন রওশন নিজেই! তিনি জানালেন, চিঠির বিষয়বস্তু সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারণাই নেই। ভুল বুঝিয়ে স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। তথাকথিত রওশনপন্থীরা বললেন, বয়স ও অসুস্থতার কারণে মাঝে মধ্যে তিনি হুঁশে থাকেন না! 

এদিকে সোমবার (২০ নভেম্বর) দুপুর থেকে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে জাতীয় পার্টি। উৎসবমুখর পরিবেশে জাপা চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে মনোনয়ন ফরম বিক্রি চলছে। 

কিন্তু নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়ে নাকি এখনো তাঁদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি! তাঁরা আসন্ন রবি মৌসুমের জন্য জমি প্রস্তুত করছেন! জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলছেন, তাঁরা নির্বাচনের প্রক্রিয়াতে আছেন। তবে নির্বাচনে যাবেন কি না এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি। মনোনয়ন ফরম বিক্রি নির্বাচনী প্রক্রিয়ার অংশ। তাঁরা কাজ এগিয়ে রাখছেন। 

আবার জায়েদ খানের আলাপে ফিরে আসি। ঠিক এই জায়গাতেই তিনি জাতীয় পার্টির কাছে মার খেয়ে গেছেন। আপাতদৃষ্টিতে তিনি সরল; এককথার মানুষ। যা বলার সরাসরি বলেন। রিয়েলিটি শোর র‍্যাপিড ফায়ারের মুডে থাকেন সব সময়! 

ফলে জায়েদ খান প্রেডিক্টেবল। কিন্তু জাতীয় পার্টি এক প্রহেলিকার নাম। জ্ঞানীরা চলেন ডালে ডালে, তাঁরা চলেন পাতায় পাতায়! 

২০১৪ সালের নির্বাচনের কথাই ধরা যাক। হুসাইন মুহাম্মদ এরশাদ তখন জীবিত। প্রথমে তিনি বললেন, নির্বাচনে যাবেন না। নির্বাচনে গেলে জনগণ তাঁকে ‘থুতু’ দেবে। এরপর ভর্তি হলেন হাসপাতালে। ফিরে এসে বললেন, ‘নির্বাচনে যাব। নির্বাচনে না গেলে জনগণ আমাদের থুতু দেবে!’ 

২০১৮ সালেও একই অবস্থা। যাব, যাব না, যাব, যাব না। এই করে তলে তলে চালিয়ে গেলেন দর কষাকষি। ২০১৪ সালে কয়েকজন মন্ত্রণালয় বাগিয়েছিলেন তাঁরা। এরপর অবশ্য গোটাকতক এমপি ছাড়া দৃশ্যমান তেমন কিছু পাননি। 

এবার মনে হয় শিক্ষা হয়ে গেছে! এবার আর ছাড় দিতে চান না তাঁরা। সেটি অনুমান করা গেল রংপুরের মেয়রের কথায়। তিনি জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য। তিনি নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে না। তবে বলেছেন, ‘যদি দালালি করতেই হয়, তাহলে ১০০ এমপি ও ১০ মন্ত্রী দিতে হবে। রংপুরে ২২টি আসন দিতে হবে।’ 

এই দর কষাকষিতে তাঁরা এবার কতোখানি সফল হতে পারবেন তা বলা বরাবরের মতোই মুশকিল। ঘরে বসে সুবিধা আদায় করতে গিয়ে দলের যে বারোটা বাজিয়ে ফেলেছেন সেটি একাধিক দলীয় সভায় স্বীকার করেছেন খোদ চেয়ারম্যান জিএম কাদের। এখন দেখার অপেক্ষা, ডিগবাজির কৌশল ছেড়ে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে জাতীয় পার্টি টিকে থাকবে, নাকি এবারও ক্ষমতার কোলে উঠে দলের মাথা খাবেন নেতারা? 

লেখক: সহসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত